আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্তানরা জেগে উঠেছে_প্রিয় পিতা-মাতারা আপনার আর কত ঘুমিয়ে থাকবেন? || ফয়সল অভি

শরীরে শরীর নয়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখাও নয়, মূহুর্তের ছোঁয়াও নয়, একটু দেখাতেই লিটার খানেক অগ্নিজলের ঘোর। ফেসবুকে ফয়সল অভির দেয়া এই লেখাটি শেয়ার করছিঃ সন্তানরা জেগে উঠেছে_প্রিয় পিতা-মাতারা আপনার আর কত ঘুমিয়ে থাকবেন? ফয়সল অভি ১৩.০৭.১১ চট্টগ্রাম এরা কারা? আপনারা কেউ এদের চিনেন? না চিনবেন না । এরা তেমন বড় মাপের যদু মধু না_এদের কোন ফেইস ভ্যালুও নেই । এরা সবাই চট্টগ্রাম মহানগরে অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী একদম নবীন প্রজন্ম আর প্রচলিত ভাষায় এরা পরস্পর ভাই ব্রাদার । ১৩ই জুলাই চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবের সামনে কানকো-ফিলিপসের সাথে আওয়ামীলীগ সরকারের দেশীয় স্বার্থ বিরোধী যে চুক্তি করেছে তার সরাসরি ও ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্থ ভিকটিম হিসেবে এরা একটা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ।

সেই মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা কানকো-ফিলিপসের সাথে আওয়ামীলীগ সরকারের চুক্তি বিষয়ে এবং দেশী স্বার্থ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইত্যাদি তথ্য নিয়ে অপরিপক্ক হাতে একটা লিফলেটও বিলি করেছে । আমার যখন প্রথম ওদের দেখা হয়েছিল চেরাগী পাহাড়ের আড্ডায়_আমি বেশ অবাকই হয়েছি । চশমা চোখে আর ব্যাগ কাঁধে মায়া মায়া চেহারার ছোট ছোট ছেলে গুলো চুক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করছে? তাও এমন একটি ইস্যু নিয়ে যেখানে রাষ্ট্র কঠোর দমনের পন্থা বেচে নিয়েছে_যার প্রকৃত রূপ আমরা দেখেছি ৩ তারিখ অর্ধদিবস হরতালে । সেই হরতালে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্লগার ও অনলাইন একটিভিস্টসহ অন্য শ্রেণী পেশার জনগণকে গণহারে লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার করলো । সত্যিই আমি আরো অবাক হলাম যখন ওদের জিজ্ঞাসা করলাম : তোমরা কি কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্মের সাথে জড়িত ? ওদের উত্তর : না ভাইয়া আমরা কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্মের সাথে জড়িত না ।

আমি ওদের আবারো প্রশ্ন করলাম : তোমরা কি কোন বামদলের নেতৃত্বে বা সহচার্যে এই ইস্যু নিয়ে কাজ করছো?? ওরা বললো : না ভাইয়া আমরা কোন বামদল কিংবা ডানদল কোন দলের নেতৃত্বে বা সহচার্য এই ইস্যু কাজ করছি না । ব্লগ ও ফেইসবুকে কানকো-ফিলিপস এর জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন লেখা পড়ে আমাদের মনে হলো_এই চুক্তি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে অদুর ভবিষ্যতে এর সকল ফলাফল আমাদেরই ভোগ করতে হবে_আপনারা তো সব মরে যাবেন এবং আজকে যারা কমিশনভোগী ও সাম্রাজ্যবাদীদের গোলাম তারাও মরে যাবে_এমন কি তাদের উত্তরসুরিরাও এর ফল ভোগ করবে না কারণ তারা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর_যা হবে আমাদেরই হবে তাই আমরা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেইসবুক ও ব্লগের মাধ্যমের নিজেদের ভাই ব্রাদার নিয়ে নিজেদের স্বার্থে এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হলাম । নবীন প্রজন্মের মুখে এই কথা শুনে হৃদয়ের ভেতর এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হলো । সাম্রাজ্যবাদীদের গোলাম সুশীল(চুতিয়াশীল) সমাজ এবং বাঙলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে নবীন প্রজন্মের ভেতর “আমি রাজনীতি ঘৃণা করি” টাইপ মনোভাব তৈরি করতে সফল হয়েছে_আজ সেই সময়ে কিছু নবীন প্রজন্ম একটা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মাঠে নামছে । এই কথা ভেবে আমি অনেক সাহসী হই_ভীষণ রকম মনোবল পাই ।

বাঙলাদেশের জনমানুষ আশায় বুক বাধুক_তাদের সন্তানরাই তাদের হাল ধরবে সকল অক্টোপাসের শৃংখল ভেঙ্গে । রাষ্ট্রের ব্যবস্থা যতই নবীন প্রজন্মকে যত অন্ধ করুক_সাম্রাজ্যবাদীদের গোলাম ও গেলমানরা যতই চেষ্টাই করুক প্রজন্মকে ভুলি বালিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় । অবধারিতভাবে প্রজন্ম জেগে যাবে সকল হায়েনার বিরুদ্ধে_এই জেগে যাওয়ার রূপ কোমল থেকে ক্রমশঃ সর্বোচ্চ আচরণ ধারণ করবে সেটা আমি বিশ্বাস করি । জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এই চুক্তিতে দেশের সকল সাম্রাজ্যবাদীদের গোলাম ও গেলমানসহ তথাকথিক সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবিরাও পেটে পেটে এক এবং সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট । এরা কেউ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে যেতে রাজি নয় ।

সবাই সাম্রাজ্যবাদীদের গোলামী করে ক্ষমতায় থাকতে চায়_যেতে চায় আর আরাম আয়েশ করে মজা লুটতে চায় । তবে ওদের সুখ কত দিন সইবে ঠিক জানা নেই । কেননা খুব নিরবেই নবীন প্রজন্মের ভেতর পরিবর্তন আসছে । যারা এতোকাল ধরে ভেবেছে বাঙলাদেশের নবীন প্রজন্ম ঘুমিয়ে গেছে ওরা আর জাগবে না_ওদের জন্য এটা সতর্ক বার্তা । জাতীয় স্বার্থে ও নবীন প্রজন্মের নিজেদেরই স্বার্থে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওরা এখন এক একটা বিপ্লবী ।

কিভাবে রুখবে ওদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি? আমি আমাদের পিতা-মাতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই_দেখুন আজ আপনাদের সন্তানেরা জাতীয় স্বার্থে এবং নিজেদের ভবিষ্যত প্রয়োজনে জেগে ওঠেছে । প্রিয় পিতা-মাতারা সন্তানদের এই জেগে ওঠা মুহূর্তেও আপনারা কিভাবে ঘুমিয়ে থাকবেন? আপনারা ঘুমিয়ে থাকতে পারবেন?? নিশ্চয় সন্তানদের এই সাম্রাজ্যবাদী গোলামদের বিরুদ্ধে যত স্লোগান ও অগ্নি কণ্ঠ আপনাদের ঘুম কি ভাঙ্গাবে না । অবশ্যই ভাঙ্গবে । কেননা আমরা অপেক্ষা করে আছি, প্রিয় পিতা-মাতারা জেগে ওঠলে এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপ্লবের এই পথে এগিয়ে যাবো । এভাবে হাজারো নবীন প্রজন্ম জাতীয় স্বার্থে পথে নামবে এবং সাম্রাজ্যবাদী বিরুদ্ধেো সোচ্চার ।

সংযোজন: এই নবীন প্রজন্ম তাদের প্লাটফর্মের নাম দিয়ে “অল চিটাগাং স্টুডেন্ট’স ফোরাম” । এই ফোরাম কোন বাম কিংবা ডান দলের মুখপাত্রও না এবং কারো সহচার্যেও সৃষ্টি না । চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ও ফেইসবুক একটিভিস্টদের একটা স্বাধীন প্লাটফর্ম । এই ফোরামের পরবর্তী কর্মসূচি হচ্ছে, কানকো-ফিলিপসের সাথে আওয়ামীলীগ সরকারের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল এবং সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে দেশী খনিজ সম্পদ বিক্রি বন্ধের জন্য ও দেশী প্রতিষ্ঠান দিয়ে দেশের খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণস্বাক্ষর অভিযান । আমরা জানি এই জাগরণের খবর কোন প্রিন্ট মিডিয়া আসবে না_কোন টিভি মিডিয়াও আসবে ।

কারণ সাম্রাজ্যবাদীরা এই জাগরণকে ভয় পায় । তাই বলে আমরা আশাবাদী হওয়ার মত খবরগুলো থেকে আড়াল থাকবো । কখনও না ফেইসবুগে, ব্লগে এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ও নিজেদের আড্ডায় এই জাগরণের খবর ছড়িয়ে দিবো এবং অন্যদেরও জাগাবো । মানবন্ধন পরবর্তী “অল চিটাগাং স্টুডেন্ট’স ফোরাম” এর প্রেস রিলিজ : অল চিটাগাং স্টুডেন্ট'স ফোরাম অস্থায়ী কার্যালয় : ৭নং দেবপাহাড়, চকবাজার, চট্টগ্রাম। তাং - ১৩/০৭/২০১১ ইং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী গ্যাস চুক্তি বাতিলের দাবীতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সিদ্ধান্ত না নিয়ে বর্তমান সরকার এবং অতীত সরকারগুলো যেভাবে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সাথে একের পর এক তেল-গ্যাস চুক্তি করে যাচ্ছে সেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সর্বশেষ বর্তমান সরকার কনোকো-ফিলিপস নামের একটি মার্কিন কোম্পানীর সাথে সমুদ্র বক্ষের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক নিয়ে চুক্তি করেছে। এটা সম্পূর্ণ ভাবেই জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। চুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক থেকে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন লাভই হবে না, বরং প্রায় সমস্ত গ্যাসই বিদেশে রপ্তানী হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। একই সাথে এই চুক্তির ভয়াবহতার শিকার হতে হবে আমাদের দেশের অধিকাংশ দরিদ্র জনগণকেই।

আমরা এই দেশের সন্তান হিসাবে সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে চাই, জনগনের সম্পদ দেশী বা বিদেশী বহুজাতিক কাউকেই নির্বিচার লুটপাট করতে দেব না। আমরা চাই তেল-গ্যাস সম্পদ দেশের ও দেশের জনগণের জীবন উন্নয়নের পেছনে ব্যয় হোক। সুদ দিয়ে বিদেশীদের কাছ থেকে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ভিক্ষা না করে তেল-গ্যাস সম্পদ অভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে ব্যয় হোক, আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মানব বন্ধন থেকে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহন করেন।

মানববন্ধনের একপর্যায়ে পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাত তুলে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সংগঠনের সদস্যরা পুলিশী আচরণের প্রতিবাদ করে মানববন্ধন সমাপ্ত করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, তাহসিন মাহমুদ, তুলি চৌধুরী ও রিয়াদুল হাসান প্রমুখ। by: Faysal Ovi Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.