আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ

ক্ষণকালের এ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ভবিষৎ "মৃত্যু"। তাই, এসো সে মৃত্যুকে মহান করে তুলি প্রতিদিন অন্তত একটি ভাল কাজের মধ্য দিয়ে। সেদিন পত্রিকায় একটা খবর পড়লাম। নীলফামারীর, ঠনঠনিয়াপাড়া গ্রামের ৪০ বছর বয়সি কৃষক তাজুল ইসলাম কষ্টে আবাদ করা আলু রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে গত সোমবার ৩টি বস্তায় ২৪০কেজি আলু ভরে হাটে বিক্রি করতে যান। প্রতি বস্তায় ৮০কেজী আলু ছিল।

প্রতি বস্তা ৪০০টাকা (প্রতি কেজি ৫টাকা) দাম বলায় তাজুল হতভম্ব হয়ে পড়েন। বলতে থাকেন, " দাম না পাইলে এবার খাব কী? বাঁচব কেমন করে?" এরপরই তিনি ব্যথায় বুক চেপে ধরে আলুর বস্তার ওপর পড়ে যান। স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আলু বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি কেজি আলু ৫টাকা শুনে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। কৃষক তাজুলের ছয় সদস্যের একটি সংসার রয়েছে।

প্রায় সময় লক্ষ্য করা যায়, কোন কোন সব্জি অধিক উৎপাদনের ফলে, চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে সেই দ্রব্য তার ন্যায্য দাম হারায়। যার ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষককুল। এক্ষেত্রে সরকারের কৃষি বিভাগকে প্রতিবছর একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কোন ফসল এর কতটুকু চাহিদা, সে চাহিদা অনুসারে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষবাসে উৎসাহিত করা। লক্ষণীয় যে, এ মৌসুমে যে সব্জির দাম বেশী থাকে, কৃষকরা বেশী দাম পাবার আশায় পরের মৌসুমে সেই সব্জির দিকে ঝুকে পড়ে। আর তখনই অধিক যোগানের ফলে দাম পড়ে যায়।

আর নি:স্ব হয় কৃষক। আমার দেশের প্রতি ১০০ জন মানুষের মাঝে ৮০জন মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা অর্জন করে। আর এই কৃষকরা সবসময় তাদের ন্যয্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা শুধু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য হৈচৈ করি। কিন্তু খেটে খাওয়া মেহনতী এই কৃষকরা যারা দিনরাত পরিশ্রম করে লাংগল চালিয়ে, গরু গুলোকে খাদ্য যুগিয়ে, ২০০টাকা রোজে একাধীক কামলা খাটিয়ে, নিজে ও নিজের বৌ ঝিরা ১বেলা খেয়ে না খেয়ে তাদের সুন্দর সময় গুলো সেখানে ব্যয় করে, বীজ বুনে, সার দিয়ে, পরিচর্যা করে, পানি দিয়ে, ফসল ফলায়।

সেই ফসল বিক্রি করে সেই অর্থে তার স্ত্রী-সন্তানদের মুখে একটু খাবার তুলে দিবে, দিবে কোন তাতের শাড়ি, কাচের চুড়ি, শোধ করবে মহাজনের ঋণ। তারপর আবার নামবে নুতন ফসল ফলানোর সংগ্রামে .... কিন্তু সেই ফসলের দাম দিয়ে যদি ফসল বাজারে আনার যাতায়াত খরচটাও না ওঠে .........তাহলে আমাদের সোনার ছেলেরা কিভাবে টিকে থাকবে। তাজুল ভাইতো মরে গিয়ে বেচেই গেলেন। কিন্তু এমন লক্ষ লক্ষ তাজুল বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে, ঋণ শোধ করতে না পারায় মহাজনীদের গালমন্দ শুনে, তারপরও তাজুলরা এই আমাদের জন্য ফসল ফলিয়ে যায়, এই সোনার বাংলার সোনার মাটিতে, সোনা ফলিয়ে যায় ................আর এভাবেই আমাদের কৃষক সমাজ দারিদ্রের দুষ্টুচক্রে পড়ে গরীব থেকে গরীব হতে থাকে। মাঝে আলু-পটলের মধ্যসত্তাভোগীদের পোয়াবার।

"মাথাল মাথায়, কাস্তে হাতে ওই কালো চাষা ওরাই মায়ের আপন ছেলে-ওরাই মায়ের ভালোবাসা। " -গোলাম মোস্তফা ________________________________________________ সংবাদের সূত্র : শিরোনাম-"হাটেই মারা গেলেন কৃষক", প্রথম আলো, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩। ” Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.