আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীরবতা ভেঙে

সাইফ শাহজাহান যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা আমাদের এক প্রতিভাবান কবির কবিতাÑ ‘যুদ্ধ মানে শত্র“ শত্র“ খেলা/যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা’। অভিমানাহত কবি তার প্রেমিকার উদ্দেশে এই দুটি পঙ্ক্তি নিবেদন করলেও আমার কাছে মনে হয় ছোট্ট এই লিরিকটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ণ-তাৎপর্যে প্রযোজ্য। এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা কেবল অবহেলারই শিকার নন, তারা অজস্রভাবে শিকার হয়েছেন শত্র“ শত্র“ খেলারও। যুদ্ধ করে যারা পারিজাত প্রতিম এই দেশটি স্বাধীন করেছেন, যুদ্ধে শুধু আহত হননি মৃত্যুর দুয়ার থেকে জীবন জয় করে ফিরে এসেছেন সেসব মৃত্যুঞ্জয়ী বীরও পরবর্তীতে স্বাধীন দেশে শিকার হয়েছেন গুপ্ত হত্যার, ঝুলেছেন ফাঁসির কাষ্ঠেÑ কখনও কখনওÑ দৃশ্যত, তাদের সহযোদ্ধারাই হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিপক্ষ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বোভৌম একটি দেশ অর্জন।

‘মুক্তিযুদ্ধ’ আমাদের ইতিহাসের মহত্তম ঘটনা। এতে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, যাঁরা এর সংগঠক তারাই তো আমাদের বীর। সেই বীরদের কাছ থেকেই, সেই বীরদের ভাষ্যেই লেখা প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শৈশবকে স্পর্শ করে আছে। এখনও মনে পড়ে বড়দের কোলে কাঁধে চড়ে কত না গহীন গ্রামের পথে আমরা হেঁটেছি।

পঁয়ত্রিশ বছর আগে যে গ্রামে পালিয়ে থাকার জন্য গিয়েছি প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে গত পঁয়ত্রিশ বছরে একবারও যাওয়া হয়নি সেই গ্রামে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এই আÍ-স্বার্থপরতার স্মৃতি ব্যথিত করলেও এই সত্য বাস্তবতাটির উল্লেখ করছি এ কারণে যে এটিই প্রকৃত বাস্তব অনেক মানুষের জীবনে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনার আমি কৌতূহলী পাঠক। আর তা যদি হয় এই যুদ্ধের অন্যতম সংগঠকদের লেখা তবে সেটা আমার জন্য মহার্ঘ্য। সে রকমই একটি বই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মুহম্মদুল্লাহ সাহেবের আÍজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘নীরবাত ভেঙে’।

বইটির ঐতিহাসিক মূল্য নির্ধারণ করবেন ইতিহাসবিদরা, আমি মুক্তিযুদ্ধের কৌতূহলী পাঠক হিসেবে বলব, লেখক ‘নীরবতা ভেঙে’তে অনেক কথাই বলেছেন এবং সেসব কথা বলতে গিয়ে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা, ভিন্ন মত এবং সত্যের প্রকাশে অসহিষ্ণু সমাজের কথাও উপলব্ধি করেছেন খুব তীব্রভাবেই এবং তা অনুভব করেই অনেক নীরবতাই ভাঙতে চাননি, ভাঙতে পারেননিÑ এটাই স্বাভাবিক। সত্য বড় ‘কঠিন’Ñ আর সেই ‘কঠিনে’রে ভালবাসার মত বীর রবীন্দ্রনাথের মত মহীরূহ ব্যক্তিত্ব বিরল স্বাধীন বাংলাদেশে। তকুও যেটুকু ‘নীরবতা ভেঙেছেন’ তিনি সেটুকুও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়Ñ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে তার কলমে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে এতে সন্দেহ নেই। বইটি রচনার মধ্য দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি তাঁর দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার দায় পালন করেছেন।

আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের ‘নীরবতা ভাঙা’র সময় উপস্থিত। নীরবতা ভেঙে আরও মুক্তিযোদ্ধারা লিখুন সেটাই কাম্য। তাহলেই মুক্তিযোদ্ধারা যে শত্র“ শত্র“ খেলার নির্মম শিকার হচ্ছেন আজও সেটার অবসান সম্ভব হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।