আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃতজ্ঞতা

ছাত্র ফাহিমকে পড়নো শেষ করে রাস্তায় নেমেছি। হাটতে হাটতে রিক্সাস্ট্যান্ডে এসে দেখি কোনো রিক্সা নেই। রিস্কার জন্য কিছুক্ষন দাড়াব ভাবছি। এক বিন্দু দুই বিন্দু করে বৃষ্টি পরতে শুরু করছে। বছরের প্রথম বৃষ্টির ছোয়া আমার গায়ে আচড় কেটে গেলো।

হালকা বাতাসে শীত ও বসন্তের জমাট হওয়া আবর্জনা ধুলা হয়ে উড়ছে। হেটে বাসায় আসতে পনের মিনিটের মতো লাগবে। কিছুক্ষন অপেক্ষার পর রিক্সা না পেয়ে নিজের ১১ নাম্বার গাড়ির উপর নির্ভর করে হাটতে শুরু করলাম। দ্বীন মোহাম্মদ কলোনী হতে বের হয়ে দামাল কোট ভূমি উন্নয়ন প্রজেক্ট যা আগে বস্তি ছিলো, এখন সেনাবাহিনী উদ্ধার করে প্রজেক্টের অধীনে মাছ ও গরুর খামার করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং তা এখন বাস্তবায়নাধীন, আর এখানে নৌ-প্রধানের বাসভবন হবে বলে সাইনবোর্ড টানানো আছে, যে প্রজেক্টের জমি আনুমানিক কয়েক একর তার মাঝামাঝি এসে পৌছেছি। দক্ষিন দিক হতে বাতাস বয়্ছে আর আমি উত্তর হতে দক্ষিন দিকে যাচ্ছি।

নিজের চোখ বাঁচিয়ে আমি হাটছি। সামনে আসছি আর বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে। আমি যখন নৌ-প্রধানের নির্মানাধী বাসা, যদিও মাটি ভরাট কাজ এখনো সমাপ্ত হয়্নি, কী প্রয়োজনে কেন জানি একটা টিনের চালা আছে এখানে তার কাছাকাছি আসতেই বাতাসের গতিবেগ হটাৎ বেড়ে গেলো। ধুলা বালি চোখে-মুখে এমন ভাবে আঘাত করতেছে নিজেকে মরু ঝড়ে আক্রান্ত বেদুঈনের মত মনে হচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি কিছুটা আশ্রয়ের জন্যে নিজেকে টীনের চালের নিচে নিয়ে যাবার।

দৌড়ে দুই তিন হাতের মত এগিয়েছ, কিন্তু ধুলা-ময়ালা আমার দিকে উড়ে আসার কারনে আমি এগোতে পারলাম না। মাত্র বিশ হাত দূরে হোয়া সত্বেও বাতাসের তীব্রতা আর ধুলার গভীরতার কাছে হার মানতে হলো। বাধ্য হয়ে নিজের নাক কান চেপে চোখ বন্ধ করে উত্তর দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে পরলাম। বাতাসের গতিতে টিনের চাল উড়ে যায় যায় অবস্থা টের পেলাম। কি ঘটতে পারে কল্পনা করছি।

দেখতে পাচ্ছি এক খন্ড টিন বাতাসে উড়ে এসে আমার শরীরে আঘাত করছে আর আমার শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ কেটে গেছে। অন্যদিকে ঝড়ও থামছে না। যদি কোনো কারনে টিন উড়ে আসে আর আমার গায়ে আঘাত করে ইন্জুরির মাত্রা কমানোর উদ্দেশ্যে আমি দক্ষিন দিকে মাথা দিয়ে, মাথাটাকে হাত দিয়ে যতদূর সম্বব ডেকে সিজদার মতো উবু হয়ে শুয়ে আছি। এমন সময় উপর্যপুরি গাড়ির কয়েকটি হর্ণ শুনে মাথা উচুঁ করলাম| ড্রাইভিং সিটে একজন ছাড়া অন্য কাউকে দেখিনি গাড়িতে। তিনি আমাকে হাতের ইশারায় গাড়িতে উঠতে বললেন।

আমি কোন প্রকার চিন্তা ছাড়াই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বাতাশকে পড়াস্ত করে গাড়িতে ডুকিয়ে দিলাম নিজের দেহ। মহান শক্তিধর কেউ কেউ নাকি মানুষের প্রান রক্ষা করতে পারে, লোকটিকে আমার তেমন একজনই মনে হল। লোকটিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তিনিও ভদ্রতাশোলব ওয়েলকাম বলেন, যদিও তা না বললে তার মহানুভবতা একটুও ম্লান হতো না আমার কাছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে।

মাথায় হাত দিয়ে অনুভব করতে পারি মাথা মোটামুটি বালির খনি। গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা জীবন্ত বালির ভাস্কর্য। গাড়ি এক মিনিট চলার পর দেখি ঝড় থেমে গেছে আর মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বছরের প্রথম ঝড়, অতঃপর বৃষটি। প্রথম ঝড় যেহেতু আমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে নিজেকে একটা ভাস্কর্য মানবে রুপান্তরিত করে গেল, সেই ভাস্কর্য মানবকে আসল মানবে রুপান্তরিত করতে লোকটাকে বললাম আমাকে নামিয়ে দিতে।

গাড়ি থামলে তাকে পুনরায় ধন্যবাদ দিয়ে আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। বৃষ্টিতে হাটছি। দুই মিনিট আগের ফেলে আসা সময় মাথায় জাবর কাটছে। এর জন্য কার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব? কিছুদিন আগে হলেও ২য় কোনো অবাস্তব চেহেরা চোখের সামনে বেসে উঠতো। এখন প্রথম কৃতজ্ঞতা গাড়িওয়ালা দেবতাকে।

২য় কৃতজ্ঞতা স্বয়ং ঝড়কে যার কল্যানে এখন আমি বৃষ্টিতে হাটছি। বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়, আর বৃষ্টির কল্যানে পরের টিউশন বাতিল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।