আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

করবীর রান্না চিকেন বিরিয়ানি আর মাটন বিরিয়ানি খেয়ে ক্লিফের আক্কেল গুড়ুম । এতই মজা লেগেছে তার যে কম্প্লেইন করলো আমি কেন কখনও এই জিনিস রান্না করে খাওয়ালাম না তাকে । আরে বাপ কলার মোচা, কঁাঠালের এচঁোড় আর কলা গাছের এঁটের মতন কষ্টকর রান্নার জিনিস খাওয়ানোর পরেও এই কম্প্লেইন প্রানে সয় ? শুধুই কি তাকে খাইয়েছি? ওর দেশ বিদেশের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে পোলাও কোর্মার সাথে যত সব বাংগালী খাবার আর এই কলার মোচা, কঁাঠালের এঁচোড়, কঁাঠালের বিচি ভর্তা, কলার এঁটে - এগুলো মাস্ট আইটেম হিসেবে রাধতে হয়েছে। এখন ইচ্ছে করে, করবীর মাথা ফাটাই , আরে বাপ তোর এত মজা করে রান্না করার দরকারটা ছিলটা কি? যাই হোক, যার সাথে ২৪ ঘন্টা বসবাস তাকে অখুশি রাখাও তো একটা সমস্যা । এ দরকারে ও দরকারে এই লোকটাই তো হাতের পঁাচ আঙুল ।

আমার ভালবাসা পাবার উৎসটাও তো সে, আর সুখ, শান্তি উৎপাদনেও তো সে'ই মাষ্টার মেশিন । আবার ১০০% টেক কেয়ার করা, না চাইতেই উপহার কিনে দেয়া থেকে শুরু করে সব দিকে নজর রাখায় তার মতন মানুষ পাওয়াও খুবই কঠিন । তাই করবীর কাছে রেসিপিটা জেনে নিয়ে ফিঙার ক্রস করে রান্না বসালাম চিকেন বিরিয়ানি। এতে যা উৎপাদিত হলো তা নিয়ে সারাদিন টেনশনে অস্থির হয়ে এদিক সেদিক করে বেড়ালাম আর মনে মনে করবীর মাথাটা আরো ১০০ বার ফাটালাম এই ভেবে, যদি এই চিকেন বিরিয়ানির স্বাদ করবীর টার মতন না হয় তবে করবীর মাথা আরো ২০০ বার ফাটাবো ! ক্লিফের জ্বিভ কঠিন জিনিস, খুব মজা না হলে সে মুখে তেমন কিছু বলবেনা। আর মজা হলে তার কথা হাজার বার বলতে থাকবে ননস্টপ ভাবে।

নিজের অপারগতার অশহায়ত্ব ঢাকতে সারাদিন করবীকে সাপ সাপান্ত করতে শুধু বাকি রাখলাম । বিকেলে ডিনারে দেখে ক্লিফ বলে এটা কি জিনিস? আমার মন তো দুই হাজার গুন খারাপ হয়ে গেল এই মনে করে নিশ্চই এটা করবীর টার মতন হয়নি , মনে মনে বলি দাঁড়া করবী তোরে পেয়ে নেই নেক্সটাইম ! বললাম, "মনে নেই সেদিন করবী যে তোমাকে খাওয়ালো বাংলাদেশি পিকনিকে, আবার প্যাক করেও দিয়ে ছিল তোমার জন্য যখন আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম ওর বাড়ি"। শুনেই ক্লিফের মুখ খুশিতে ২০০০ খানা হয়ে গেল, আলোয় আলোকিতো হয়ে গেল মুহুর্তেই!! খেতে শুরু করলে আমি চুপচাপ ওর মুখ দেখি কি বলে দুরুদুরু মনে। ৩ মিনিট পরে সে কথা বলার সুযোগ পেল! "খুবই মজাতো, উমমম ইয়াম্মি!!" আর দুই মিনিট পর পর একই কথা বলতে থাকলো ক্রমাগত। আমি হাফ ছেড়ে বাচি বুঝলাম রান্না তবে ভালই হয়েছে আর করবীর রেসিপিটাও চমৎকার।

ভাবি এ যাত্রা করবী জানে বেচে গেল আরকি আমার এই সৌভাগ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এই জন্য যে আপনারা দলে দলে করবীর দরজায় আঘাত করুন এই আমৃত স্বাদ খাবারের রেসিপির জন্য! বিশ্বাস করুন পস্তাবেন না যদি লম্বা কিউয়েও দাড়াতে হয় ছয়/সাত ঘন্টা এই রেসিপি পাবার জন্য দিন শেষে সোনা জিতেছেন বলে স্বিকার করবেন। সোনা'ই তো! প্রিয় মানুষের মুখের সুখ মাখা হাসিটা কি সোনার চাইতেও দামি নয়? আপানারা আমার বন্ধু তাই আপনাদের সাথে আমার এই সোনা জেতা শেয়ার না করে একা একা খুশি হতে মন চাইলো না। আপনারা নিজেরা এই সোনা জিতুন আর অন্যদেরও এই সোনা পাবার ব্যবস্থা করে দিন - একেই বলে Sharing is Caring. নিজে খুশি হোন অন্যকেও খুশি করুন বা খুশি হতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। জোরে জোরে কড়া নাড়ুন করবীর দরজায় দেখবেন দরজা যেন ভেংগে না পরে তাই বলে, ওটা ভাংলে আমাকেই আবার বানিয়ে দিতে হবে তো - ( করবী, তোমার বারোটা বাজালাম বাড়ি থেকে পালাতে চাইলে এখনই সময় তবে শোনো, সত্যিই ধন্যবাদ রেসিপির জন্য) এবার আসল কথায় আসি যা দিয়ে এই লেখার শিরোনাম। তবে না, খাওয়াবার জন্য কৃতজ্ঞতা নয়, ইয়াম্মি খাবার রাধতে ও খাওয়াতে অনেকেই পারে, আমিও পারি ।

ব্রিসবেনে আসার পরে অনেকেই আপনারা জানেন, যারা আমার তখনকার লেখা গুলো পড়েছেন, আমার কেমন কষ্ট হয়েছে প্রানের শহর সিংগাপুরকে ছেড়ে আসতে, কি কষ্টই না হয়েছে সিংগাপুরকে ভুলতে আর এখানে শিকড় গাড়তে। আমার সেই স্ট্রাগলের সময় কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছেন ব্রিসবেনে আমার জিবনটাকে বসবাসের জন্য সহজ করে দেবার চেষ্টায় যাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা দেখানো হয়নি। প্রথমেই আসি ব্লগার হোদোল রাজার কথায়। এই মানুষটা সত্যিই উদার ও বিশাল মনের অধীকারি, একথা যারা উনাকে চেনেন অবশ্যই স্বীকার করবেন। উনি প্রথমেই আমাকে যোগাযোগ করে নানান ইনফরমেশন দিয়ে শুধু সাহায্যই করেননি আবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ব্রিসবেনবাসী বাঙালী ব্লগার ম্যাকনিক ও নাআমি'র সাথে আর সুযোগ করে দিয়েছেন এই অপরিচিত ও বিরান ভূমিতে এঁদের মতন চমৎকার মনের বন্ধু পেতে।

শুধু তাই নয় উনার দেয়া তথ্যে আজ আমি এমন একটা ফোন ব্যবহার করি যা দিয়ে আমি বাংলাদেশে সহ পৃথিবীর আরো কয়েকটা দেশে আমার আত্বিয় ও বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা অলমোস্ট ফ্রী কথা বলি!! তাছাড়াও আরো অন্যান্য ইনফরমেশন উনি ক্রমাগতই দিয়েছেন যা সত্যিই অনেক কিছু জানতে সাহায্য করেছে আমাদের। হোদোল আপনাকে ধন্যবাদ ও আমরা দু'জনই কৃতজ্ঞ এর জন্য। ব্লগার ম্যাকানিক, উনি আমাকে বাংগালী জিনিসের দোকানের ঠিকানা থেকে শুরু করে এখানে বাংগালী রেডিও সেন্টার ও বাংগালী এসোসিয়াশন ও কমিউনিটির ইনফরমেশন দিয়েছেন যাতে আমি যেন আরো বাংগালী বন্ধু পাই!! আর উনারই বদৌলতে আমাদের এখানে বাংগালী এসোসিয়েশনের পিকনিকে যাবার ও আরো বাংগালীদের সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়েছে। গাড়ির সম্পর্কেও যথেষ্ট তথ্য দেয়ায় আমি আজ চমৎকার একটা গাড়ি পাবার সুযোগও পেলাম উনারই জন্য। ম্যাকানিক আপনাকে অসংক্ষ ধন্যবাদ আমাদের দু'জনের পক্ষ থেকে।

ভাবী ও বাচ্চাদের নিয়ে একদিন অন্তত আমার গাড়িটা দেখতে আসবেন। ওটা আপনার দেয়া ওয়েব সাইট থেকেই পাওয়া । করবীর কথা আর কি বলব আরেকটু হলেই এই মেয়েটা মাথাহীন হয়ে যাচ্ছিল । এর মাথার ইনশুরেন্স করা অতি জরুরি হয়ে দঁাড়িয়েছে এখন। অসাধারন উদার মনের চমৎকার মেধাবী এই মেয়ে আমার মন জয় করে নিয়েছে প্রথম দেখাতেই! মানসিক ভাবে অত্যন্ত শিক্ষিত সে।

শুধু তাই নয় বাংলায় পড়াশুনা করা আসা মেয়েটি চমৎকার সব কবিতা লেখেন যা পড়ে আমার অঙ্কেল ঘুড়ুম!! আর ওর রান্নার কথা কি বলব। ওর রান্না খেয়ে ক্লিফকে ফোনে বলেছিলাম, "আমি গত ১০ বছরে এমন সুস্বাদু বাংগালী খাবার খাইনি" - কথা ১০০০% সত্য, বিফলে মূল্য ফেরত । না তবে খওয়াবার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার নয়....একদিন সে খাওয়ালে আমিও ওকে আরেকদিন বাড়ি এনে আমার স্পাসালিটি খাইয়ে ভচকে দেব কি বলেন? এই মেয়েটি আমাকে আর ক্লিফকে তার পরিবারের সরল বন্ধুত্ব দিয়ে আপন করে নিয়েছে, সাথে করে নিয়ে গেছে ম্যাকানিকের দেয়া বাংগালী এসোসিয়েশনের পিকনিকে আর পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ওর বন্ধুদের সাথে। যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি চমৎকার কিছু নতুন বাংগালী বন্ধু!! যারা মানুষ হিসেবে সত্যিই চমৎকার। আমাদের তারা শুধু বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন নাই বরং সাহায্য মূলক আরো ত্বথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন আমরা ব্রসিবেনে নতুন বলে।

করবীর কাছে আমাদের দু'জনের কৃতজ্ঞতা সেজন্য। সত্যিই তোমার মতন বন্ধু পাওয়া বড় ব্যপার করবী। শ্রাবনের শুন্যতা তুমি অনেকটাই পুরন করছ হা হা হা শ্রাবনকে একটু জেলাস করাই আরকি । তবে, না শ্রাবন, কেউ কারো শুন্যতা পূরন করতে পারেনা। শ্রাবনকে প্রতি মূহুর্তেই ভাবি ও মিস করি ।

একদিন ফোনে কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না আমার । এর মাঝে আমার ছোট বোনটার কথা না বললে'ইনা। আমার ছোট বোনটিও বাংলাদেশে বসে সে তার ব্রসবেনবাসী বাংগালী বান্ধবীর ঠিকানা দিয়েছে যাতে আমি একলা না ফিল করি। আমকে নিয়ে তার এই উদার চিন্তা আমাকে অবিভূত করে। আমারা দু'জনই কৃতজ্ঞ আমার মিস্টি ছোট বোনটির কাছে।

এই মানুষ গুলোর ভালবাসার হাত বাড়ানো দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে এই বিরান বিদেশ বিভুইয়ে পরিবার পরিজন ছারা জীবনে। সিংগাপুরে আমার বাংগালী বন্ধু ছিলনা বললেই চলে। একজন মাত্র বাংগালী বন্ধু ছিল আমার ওখানে বাকি সবাই বিদেশি বন্ধু। আমার জীবনে বাংগালী বন্ধুদের চাইতে বিদেশি বন্ধুর সংখাই বেশি। আজ ৫/৬ মাস হলো ব্রিসবেনে এসে এই চমৎকার মানুষ গুলোর সাহায্যে অল্প সময়েই অনেক গুলো বাংগালী বন্ধু পেয়ে গেলাম তাই এই মানুষ গুলোকে কৃতজ্ঞতা না জানালে কি চলে।

নিজে খুশিতে থাকা, অন্য কে খুশি করা আর সবাই কে নিয়ে খুশিতে থাকবার মতন আনন্দ আর কিছুতে কি আছে? সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা সামুর কাছে। সে না থাকলে এই চমৎকাট মানুষ গুলোকেই জানতে পারতাম না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।