আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোহেল বাঁচতে চায়

কোন কিছু ঘটে কারণ সেটি ঘটার কথা ছিল। “তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়? দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয় তিলে তিলে তার ক্ষয়। । আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়। ’’ হ্যাঁ দেখেছি।

আমি মুকুল ঝরে যেতে দেখেছি। তবে কেবল মুকুলই নয়; আমি ফুটন্ত কলিও ঝরে যেতে দেখেছি। সোহেল কেবল মুকুল নয় সে সম্পূর্ণ ফুল হয়ে উঠতে যাওয়া একটি কলি। সামান্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর একটু সুযোগ পেলেই সে ফুল হয়ে উঠতে পারে।

আমি মোঃ সোহেল রানা’র কথা বলছি। আমার বন্ধু সোহেলের কথা বলছি। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র। আর ছয়টি মাস পার হলেই একজন গ্রাজুয়েট। কিন্তু হায়,ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস! এই পূর্ণিমা তিথির পূর্ণ চাঁদ উঠার আগেই তাকে গ্রাস করতে ছুটে এসেছে এক দুষ্টগ্রহ ।

সোহেলের কিডনীতে বাসা বেঁধেছে এক দূরারোগ্য ব্যধি। রোগটির নাম-Chronic Glomerulonephritis with Hypertension with End Stage Renal Failure on Heamo-dialysis.তার দুটি কিডনীই এখন অচল প্রায়। ডায়ালাইসিস করে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ছোট হয়ে গেছে তার কিডনী দুটি,ছোট হয়ে এসেছে তার পৃথিবী, কিন্তু বেঁচে থাকার আশাটা বড় বেশি তার। টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের এক দরিদ্র দিনমজুর মোঃ আব্দুস সামাদের বড় ছেলে সোহেল।

বাবা-মার ঘামে ভেজা অর্থে আর তার নিজের প্রচেষ্টাই সে আজ এখানে। মিরপুরে এক মামার বাসায় থেকে টিউশন করে,কোচিং সেন্টারে ক্লাশ নিয়ে নিজের এবং তার আদরের একমাত্র ছোট বোনটির পড়াশুনার খরচ চালাতো সে। অনার্স শেষ হলেই একটা চাকরি করবে,বোনটির দায়িত্ব নেবে আর বাবা-মা কে ছুটি দেবে; এই তার আশা। তার জীবন তার মত করে গুছিয়ে নেবে সে। কিন্তু তার সে আশা আজ থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।

তারাশঙ্কর সেই কবি’র মত করেই সোহেল বেডে শুয়ে আজ আমাকে প্রশ্ন করেছিল, “হায়! জীবন এত ছোট কেনে! এ ভুবনে জীবনে যা মিটল নাকো, মিটবে কি তা মরণে?’’ আমি তার এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর করতে পারি নি। আমতা আমতা করে যা বলে ছিলাম তা কোন উত্তর নয়;শুধু সান্ত্বনার বাণী। আমি বলেছিলাম, ‘জীবন কোনো দিন শূন্যে গিয়ে থামবে না। তবে দূঃখ? হ্যাঁ, দুঃখ আছে। থাকবে।

আর তা আছে বলেই মানুষ আশা দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে বিশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপাড়া করে বেঁচে থাকে। তোরও নিশ্চয় অসুখ সেরে যাবে। এ আর এমন কী! কিডিনী ট্রান্সপ্লান্ট করলেই তুই সুস্থ হয়ে যাবি। আগের মত ক্যাম্পাসে আসতে পারবি, আড্ডা দিবি ঠিক আগের মতই। একদম চিন্তা করবি না,আমরা আছি না তোর সাথে? জীবন তো এই রকমই-নানা বর্ণে বেদনায় রঞ্জিত এক উপন্যাসের মত।

’ জানি না এটি সত্য না কোন মিথ্য প্রলোভন। তাকে নিয়ে সৃষ্টিকর্তার খেয়ালও আমাদের অজানা। শুধু জানি, আমার বন্ধুটি এ পৃথিবীর রং-রূপ-রস ঠিক মত না বুঝেই চলে যেতে বসেছে। এই জীবনটা ভালো কিংবা মন্দ কিংবা যা-হোক-একটা-কিছু সে কথাটাও বোঝার সময় পাচ্ছে না সে। জীবন তাকে সে সুযোগ দিচ্ছে না।

কখন সে জীবনের মাঝে মগ্ন হয়ে জীবন কে উপভোগ করতে পারবে না আর। জীবনের ধারা চলতে চলতে তার যে সব চিহ্ন বিছিয়ে যায় সেগুলোর স্মৃতিচিহ্ন তার আশেপাশের মানুষদের কে বড় কষ্ট দেয়। আমরাও সেরকম কষ্টে ভুগছি। তার সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা আজ বারবার মনে পড়ছে,চোখের সামনে ভেসে উঠছে একেবারে জীবন্ত হয়ে। আমরা প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে শ্যাডোর নিচে আড্ডা দিতাম।

সোহেল বেশ রসিক ছিল। কথা কম বলতো;কিন্তু কথায় অনেক উইট থাকতো। তার বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকে আমরা হাসতে হাসতে ফেটে পড়তাম। আমরা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। অনেক ট্রাজেডি পড়েছি এবং পড়ছি আমরা ।

কিন্তু সোহেলের মত মর্মান্তিক জীবন্ত ট্রাজিক হিরো জীবনে দেখি নি। প্রকৃতির হাতে নির্মম-নির্দয় ট্রাজিক পরিণতি। সেই সোহেল আজ অসুস্থ। মারাত্বক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু বেঁচে থাকার আকুলতা তার প্রবল।

বাঁচার একমাত্র উপায় কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করানো। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। সে অর্থ তার কিংবা তার পরিবারের নাই। তাই বলে কি সোহেল অর্থাভাবে,চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে? তা কখনো হতে দেব না আমরা। জীবন মানুষের একটাই; সেই জীবন কে এভাবে খরচ হতে দেব না আমরা।

*** আমরা বন্ধুরা যে যার মত তাকে সহযোগিতা করছি। কেউ অর্থ দিয়ে,কেউ শ্রম দিয়ে। যার যা সামর্থ,সেই মোতাবেক তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করছি। আপনাদের কাছে আমার মিনতি,বেড়ে ওঠা গাছটিকে আপনারা এভাবে নষ্ট হতে দেবেন না। আর একটু সময় দিলেই এই গাছটি ফুল-ফল দেওয়া শুরু করবে।

আমরা নানান রকম অভ্যাসের পিছে প্রতি মাসে কত টাকা কত ভাবে খরচ করি তার ইয়াত্তা নাই। তার থেকে কিছু টাকা এ মাসে সোহেল কে দিয়ে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন কে বাঁচিয়ে রাখুন। *** '' মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনের জন্যে একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?'' তার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য সমস্ত প্রসেস শেষ করতে প্রায়২৫ লাখ টাকা লাগবে। সোহেল কে সাহায্যার্থে টাকা পাঠাতে প্রয়োজনীয় হিসাব নং ও ঠিকানা : একাউন্ট হোল্ডারঃ যৌথভাবে কাজল কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মোঃ মিজানুর রহমান। একাউন্ট নং-৩৪১১৫২৭৫ জনতা ব্যাংক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ।

[আপনি পড়ুন,দোয়া করুন,সামর্থমত সহযোগিতা করুণ আর আপনার ওয়ালে শেয়ার করে অন্যকে জানান। মোবাইলঃ জুনায়েদ-০১৬৭১১৮১৮৪৫,হাবিব-০১৯১৪৩৮৮২১১]  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।