আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিনাক্স কি? কেন? কিভাবে? লিনাক্সের ইতিহাস সংক্ষেপে

জীবনকে এমন ভাবে সাজান যেন আপনার ব্যক্তিগত ডায়েরীটা কখনো লুকাতে না হয়। সীমাহীন পাগলামি!!! এমআইটির আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবে ক্যারিয়ার শুরু করা রিচার্ড স্টলম্যান আধপাগলা ছিল না পুরা পাগলা ছিল সেটা গবেষনার বিষয়। কিন্তু এটা ঠিক যে এই লোকটির জন্যই আজকে পৃথিবীতে মুক্ত সফটওয়্যারের জোয়ার শুরু হয়েছে। আশির দশকের প্রথমভাগে কমার্শিয়াল সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো মোটা টাকা দিয়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবের ব্রিলিয়ান্ট প্রোগ্রামারদের হাত করতে শুরু করল। সেই সাথে তারা তাদের সফটওয়্যারের সোর্স কোড ও গোপন করা শুরু করলো।

মোদ্দাকথা আপনার আমার মতো সাধারন মানুষদের কোন অধিকারই নাই কিভাবে কোন সফটওয়্যার তৈরি হল সেটা জানার। কেন এই পাগলামি? টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করার মধ্যেই সাধারন মানুষ সীমাবদ্ধ। কেউ যদি সেটা জানতেও চায় তাহলে পড়ে যাবে আইনের মারপ্যাচে কারন সেসব আবার কপিরাইটেড! বুঝুন অবস্থা! যদি আপনার টাকা থাকে তাহলে আপনি সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে পারবেন। আর যদি কেনার সামর্থ্য না থাকে তাহলে সফটওয়্যার আপনার জন্য না। কিন্তু রিচার্ড স্টলম্যানের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অন্য রকম।

তার মতে এইসব বাধাধরা নিয়ম দিয়ে সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনাকে আটকে ফেলা পুরোপুরি অনুচিত ও অনৈতিক। তার ধারনা মতে সফটওয়্যার হতে হবে মুক্ত, এতে করে সফটওয়্যারকে যে কেউ তার মত করে সাজিয়ে নিতে পারবে, ফলে সফটওয়্যারের উন্নয়নও দ্রুত হবে। শুধুই কি পাগলামি? সফটওয়্যারের স্বার্থেই একে কোন নিয়মনীতি দিয়ে আটকে ফেলা উচিত না। তিনি শুরু করলেন মুক্ত সফটওয়্যারের আন্দোলন, গড়ে তুললেন সমমনাদের নিয়ে সংগঠন, নাম দিলেন “গ্নু” (GNU)। শুরু হল মুক্ত সফটওয়্যার লেখার কাজ।

কিন্তু এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে দরকার ছিল একটা মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু সেজন্য দরকার প্রয়োজনীয় আরো সফটওয়্যার, বিশেষ করে একটা কম্পাইলার। সে লক্ষ্যে স্টলম্যান শুরু করলেন সি কম্পাইলার লেখার কাজ। তার কিংবদন্তিতূল্য প্রোগ্রামিং দক্ষতায় অল্প দিনেই তিনি শেষ করে ফেললেন কম্পাইলার লেখার কাজ, নাম দিলেন গ্নু সি কম্পাইলার বা জিসিসি (GCC)। নবযুগের সূচনা !!! জিসিসিকে অন্যতম রকসলিড এবং কার্যকরি একটা কম্পাইলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এরপর গ্নু হাত দিল অপারেটিং সিস্টেম লিখার কাজে। যেকোন অপারেটিং সিস্টেমের প্রান হচ্ছে তার কার্নেল। কার্নেলের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে যে কোন অপারেটিং সিস্টেম। গ্নু হার্ড (HURD) নামে একটা কার্নেলও বানিয়ে ফেললো। কিন্তু সেটা ডেভেলপারদের আকর্ষন করতে ব্যর্থ হয়।

যার ফলে একটা অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া গ্নু অসম্পূর্ন থেকে যায়। গ্নুকে সম্পুর্ন করতে দরকার একটা মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম, তারও আগে দরকার একটা মুক্ত কার্নেল। নাহলে মুক্ত সফটওয়্যারের পুরো আন্দোলনই যে থেমে যাচ্ছে। হার্ডওয়্যার আছে। সফটওয়্যার....?!? সময়টা ১৯৯১ সাল যখন লিনুস হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন আইবিএমের ইন্টেল ৩৮৬ প্রসেসরের একটা পার্সনাল কম্পিউটার কিনল।

এই প্রেসেসরটি ছিল ইন্টেলের আগের প্রসেসরগুলোর তুলনায় অত্যধিক উন্নত। সেসময় আইবিএমের সাথে পাওয়া যেত এমএসডস অপারেটিং সিস্টেম। এমএসডস ব্যবহার করে লিনুস পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ল, কারন ইন্টেলের ৩৮৬ প্রসেসরকে পুরোপুরি ব্যবহার করার ক্ষমতা সেটার ছিলনা। লিনুস চাচ্ছিল আরো ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে। এর অন্য কারন অবশ্য ছিল সে তার ভার্সিটিতে ইউনিক্স ব্যবহার করে অভ্যস্ত।

তাই নিজের পিসিতে একই অপারেটিং সিস্টেম থাকলে কাজ করতে সুবিধা। কিন্তু ইউনিক্স পাবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো যখন দেখলো যে ইউনিক্সের দাম ৫০০০ মার্কিন ডলার! আবারো মাথার ভেতর ফড়িং নাচন? লিনুস তখন মিনিক্স নিয়ে পড়ল। মিনিক্স ছিল ডাচ প্রফেসর এন্ড্রু টানেনবমের লেখা ইউনিক্সের মত একটা অপারেটিং সিস্টেম। সোজা কথায় বলা চলে মিনিক্স ছিল ইউনিক্সের ছোটখাট একটা ক্লোন, তবে পুরোপুরি ক্লোন নয়। প্রফেসর সাহেব তার ছাত্রদের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ক্লাশ নেবার সময় অপারেটিং সিস্টেমের ভিতরের খুটিনাটি বুঝাতে মিনিক্সকে ব্যবহার করতেন।

তবে মিনিক্সের কোড কিছুটা উন্মুক্ত ছিল। সেসময় যে কেউ প্রফেসর টানেনবমের লেখা “অপারেটিং সিস্টেমঃ ডিজাইন এ্যান্ড ইম্পলিমেন্টেশন” বইটা কিনলেই সাথে করে মিনিক্সের ১২০০০ লাইনের কোডটা পেত। যদিও পুরো কোড উন্মুক্ত নয় তারপরও সেই সময় কোন অপারেটিং সিস্টেমের আংশিক কোড পাওয়াটাও ছিল ভাগ্যের ব্যপার। যা আছে কপালে, মারো ঠেলা হেইয়ো? কিন্তু সমস্যা একটা ছিল, সেটা হল মিনিক্সের কোডকে নিজের ইচ্ছেমত পাল্টানোর লাইসেন্স ছিলনা। তাছাড়া এটা ছিল ছাত্রদের শিখানোর একটা উপকরনমাত্র, পুর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম বলতে যা বোঝায় সেটা না।

যাই হোক আমাদের লিনুস সেই জিনিস একটা কিনে ফেললো। তারপর গুতোগুতি করতে গিয়ে টের পেলো যে এটাও তার চাহিদা পূরণের জন্য উপযুক্ত না। এরপর দুম করেই এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো লিনুস, “নিজেই একটা অপারেটিং সিস্টেম বানিয়ে ফেলবে। ” তাও আবার একদম শূন্য থেকে, মিনিক্স আর ইউনিক্সের আদলে, পুরোপুরি নতুন একটা অপারেটিং সিস্টেম! এই সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে কি বুঝতে পেরেছিল যে তার এই স্বিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তার আইবিএমের পিসিকেই পাল্টে দেবেনা বরং তার জীবন এবং পুরো পৃথিবীকেও পাল্টে দেবে! মনে হয় না। ও ভাই কে কোথায় আছো হাত লাগাও? উনিশশো একানব্বইয়ের এপ্রিলে লিনুস শুরু করল তার অপারেটিং সিস্টেমের কাজ।

টেক্সটবেজড ইউজার ইন্টারফেসের জন্য গ্নু ব্যাশ শেল আর কম্পাইলিং এর জন্য স্টলম্যানের বানানো গ্নু সি কম্পাইলার (GCC) যুক্ত করে মোটামুটি একটা কাঠামো দাঁড় করিয়ে লিনুস চাইলো মিনিক্স ইউজার গ্রুপের সবাইকে তার নতুন অপারেটিং সিস্টেমের কথা জানাতে। মনে ভয় ছিল শুনে হয়তো সবাই হাসাহাসি করবে, আবার আশাও ছিল হয়তো কয়েকজন তাকে এ ব্যাপারে সাহায্যও করতে পারে। দুরুদুরু মনেই সে নিচের ঐতিহাসিক ইমেইলটা গ্রুপে পোস্ট করে ফেললঃ From: (Linus Bene­dict Tor­valds) News­groups: comp.os.minix Sub­ject: What would you like to see most in minix? Sum­mary: small poll for my new oper­at­ing sys­tem Message-ID: Date: 25 Aug 91 20:57:08 GMT Orga­ni­za­tion: Uni­ver­sity of Helsinki Hello every­body out there using minix - I’m doing a (free) oper­at­ing sys­tem (just a hobby, won’t be big and pro­fes­sional like gnu) for 386(486) AT clones. This has been brew­ing since april, and is start­ing to get ready. I’d like any feed­back on things peo­ple like/dislike in minix, as my OS resem­bles it some­what (same phys­i­cal lay­out of the file-system(due to prac­ti­cal rea­sons) among other things). I’ve cur­rently ported bash(1.08) and gcc(1.40),and things seem to work. This implies that I’ll get some­thing prac­ti­cal within a few months, andI’d like to know what fea­tures most peo­ple would want. Any sug­ges­tions are wel­come, but I won’t promise I’ll imple­ment them Smile Linus () PS. Yes — it’s free of any minix code, and it has a multi-threaded fs. It is NOT protable (uses 386 task switch­ ing etc), and it prob­a­bly never will sup­port any­thing other than AT-harddisks, as that’s all I have Frown. নতুন কান্ডারীর আবির্ভাব !!! এই বিখ্যাত মেইলটা পড়ে কিন্তু বোঝা যায় যে লিনুস নিজেও কল্পনা করতে পারে নাই যে তার শখের বশে বানানো অপারেটিং সিস্টেম পৃথিবীতে বিশাল একটা পরিবর্তন আনবে। ঐ বছরেরই ১৭ই সেপ্টেম্বর লিনুস আর অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম ভার্সন ০.০১ বের করে। ধীরে ধীরে অন্যরা জড়ো হতে থাকে।

তারা ওএসটি ডাউনলোড করে নিজের সুবিধামত পরীক্ষা-পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে পরিবর্তিত ভার্সনটি পাঠাতে থাকে লিনুসকে। গড়ে উঠতে থাকে লিনুসের নতুন অপারেটিং সিস্টেম। ৫ই অক্টোবর বের হল প্রথম অফিসিয়াল রিলিজ ভার্সন ০.০২। সংগে লিনুসের তরফ থেকে আরেকটি মেইলঃ From: (Linus Bene­dict Tor­valds) News­groups: comp.os.minix Sub­ject: Free minix-like ker­nel sources for 386-AT Message-ID: Date: 5 Oct 91 05:41:06 GMT Orga­ni­za­tion: Uni­ver­sity of Helsinki Do you pine for the nice days of minix-1.1, when men were men and wrote their own device dri­vers? Are you with­out a nice project and just dying to cut your teeth on a OS you can try to mod­ify for your needs? Are you find­ing it frus­trat­ing when every­thing works on minix? No more all-nighters to get a nifty pro­gram work­ing? Then this post might be just for you Smile As I men­tioned a month(?)ago, I’m work­ing on a free ver­sion of a minix-lookalike for AT-386 com­put­ers. It has finally reached the stage where it’s even usable (though may not be depend­ing on what you want), and I am will­ing to put out the sources for wider dis­tri­b­u­tion. It is just ver­sion 0.02 (+1 (very small) patch already), but I’ve suc­cess­fully run bash/gcc/gnu-make/gnu-sed/compress etc under it. Sources for this pet project of mine can be found at nic.funet.fi (128.214.6.100) in the direc­tory /pub/OS/Linux. The direc­tory also con­tains some README-file and a cou­ple of bina­ries to work under linux (bash, update and gcc, what more can you ask for Smile. Full ker­nel source is pro­vided, as no minix code has been used. Library sources are only par­tially free, so that can­not be dis­trib­uted cur­rently. The sys­tem is able to com­pile “as-is” and has been known to work. Heh. Sources to the bina­ries (bash and gcc) can be found at the same place in /pub/gnu. লিনাক্স কি? কয়েক সপ্তাহের মাঝে বের হল ভার্সন ০.০৩। ঐ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বের হল ভার্সন ০.১০।

এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে লিনাক্স। লিনুসের খুব শখ ছিল তার অপারেটিং সিস্টেমের নাম হবে “ফ্রিক্স” (FREAKS) যেটা কিনা “Free”, “Freak” আর “Unix” শব্দ তিনটার মিলিত একটা রূপ। কিন্তু নামটা পছন্দ হয়নি এ্যারি লেম্কের। এ্যারি লেম্কে ছিল লিনুসের বন্ধু ও সহকর্মী এবং হেলসিংকি ইউনিভার্সিটির এফটিপি সার্ভারের এডমিনিস্ট্রেটর। এফটিপি সার্ভার দিয়ে খুব সহজেই যেকোন ফাইল সবার সাথে শেয়ার করা যায়।

এ্যারিই লিনুসকে বুদ্ধি দিল যে নতুন ওএসের সোর্সকোডকে এফটিপি সার্ভারে শেয়ার করতে, যাতে করে পৃথিবীর সবার জন্যই এর কোডটা উন্মুক্ত থাকে আর যে কেউ সেটা নামিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে। তবে এজন্য “ফ্রিক্স” নামটা পছন্দ হলনা এ্যারির। সে “লিনাক্স” নামের এক ফোল্ডারে এফটিপি সার্ভারে সেই কোডগুলো রেখে দিলেন। সেই থেকে নাম হয়ে গেল “লিনাক্স”। ওহ, বলতে তো ভুলেই গেলাম কেন এর নাম লিনাক্স হল, সহজ ব্যাপার “Linus’s Unix” থেকেই এ্যারির মাথায় লিনাক্স নামটা চলে আসে।

আসল নাম হারিয়ে লিনাক্স এখন যে নামে পরিচিত সেটা আসলে তার ডাউনলোড করার জন্য রাখা ফোল্ডারের নাম। আবারো পাগল, তবে এবারে এক রাজপুত্র সার্জন বাবা আর স্কুল টিচার মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া মার্ক শাটলওর্থ যখন ইউনিভার্সিটি অফ কেপটাউন থেকে ব্যবসায় ডিগ্রি পেলো তখনো সে জানতনা যে তার জন্য ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে! পড়াশুনা করা অবস্থায় মার্ক কয়েকটি কম্পানিতে লিনাক্স সার্ভার ইনস্টল করে এবং সেই কম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট দেখাশুনা করে কিছু রোজগার করত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকানোর পর ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা তাকে বেশ নাড়া দেয়। ১৯৯৫ সালে শুরু করে নিজের কোম্পানি “থট” (Thawte)। এটা ছিল একটা কন্সাল্টিং ফার্ম যেটা ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোম্পানির সিকিউরিটির জন্য ডিজিটাল সার্টিফিকেটের সাপোর্ট দিত।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে সে সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেটস্কেপের অফিসে যায় তার এই সার্টিফিকেট সাপোর্টকে ব্রাউজারের আওতায় আনার জন্য। নেটস্কেপ লুফে নেয় তার এই সার্টিফিকেটিং প্রোটকলগুলো। ফলস্বরূপ পরবর্তীতে মাইক্রোসফটও সেই সার্টিফিকেশন গ্রহন করে। বছর খানেকের মধ্যে যখন ইন্টারনেটের জোয়ার শুরু হল তখন বিভিন্ন কোম্পানি মার্কের এই কম্পানির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। “ভেরিসাইন” নামে এক কোম্পানি মার্কের কাছ থেকে কিনে নেয় “থট”কে।

পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুনের আমদানী মহাকাশ অভিযানের পর মার্ক যে কাজ করল সেটা সেসময় সবাই বলেছিল স্রেফ পাগলামি। কারন মার্ক তার টাকা দিয়ে লিনাক্সকে ডেস্কটপের দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেবার জন্য ইংল্যান্ডে ক্যানোনিকাল নামে এক কম্পানি খুলে বসে। সেই সময় এটা কেবল হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না। কারন অনেক কম্পানিই চেষ্টা করেছে ডেস্কটপের জন্য লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে পারলেও সেটাকে সেই অর্থে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেনি।

এবার মার্কের পালা। ২০০৪ সালের ঘটনা এটা। মার্ক তার কম্পানিতে লোক নিয়োগের জন্য ডেবিয়ানের (আরেকটি লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম) ছয় মাসের মেইলিং লিস্টের আর্কাইভ সাথে নিয়ে এন্টার্টিকা বেড়াতে যায়। সেখান এক আইসব্রেকার জাহাজে বসে সেই লিস্ট থেকে বেছে বেছে সে উপযুক্ত লোক নির্বাচন করে। পরে তাদের নিয়ে ক্যানোনিকালের পক্ষ থেকে উবুন্টু নামে এক নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কাজে নেমে যায়।

পাগলামির চুড়ান্ত ২০০৪ সালে যখন উবুন্টু নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়, তখন উবুন্টুর বা ক্যানোনিকালের কোন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ছিলনা। http://no-name-yet.com নামের ওয়েবসাইটেই তাই সব ধরনের কাজকর্ম করা হত। মজার ব্যাপার হল এই সাইট এড্রেসটি এখনো কাজ করে! উবুন্টু প্রজেক্ট শুরু হবার সময়ই স্বিদ্ধান্ত নেযা হয়েছিল যে অপারেটিং সিস্টেমটি প্রতি ছয় মাস পরপর আপডেট করা হবে। সেই হিসেবে প্রথম ভার্সন মুক্তি দেয়ার তারিখ ঠিক করা হয় ২০০৪ সালের অক্টোবরে। আর নাম ঠিক করা হয় উবুন্টু ৪.১০।

উবুন্টুর ভার্সনগুলোর নামে মুক্তির সাল আর মুক্তির মাস দেয়া থাকে। যেমন উবুন্টু ৪.১০ ভার্সনে ৪ মানে হল ২০০৪ সাল আর ১০ মানে হল অক্টোবর মাস। কিন্তু যখন উবুন্টু ৪.১০ ডেভেলপমেন্টে ছিল তখন একে একটা কোড নামে ডাকা হত যার নাম ছিল “ওয়ারটি ওয়ারহগ” (Warty Warthog)। ওয়ারহগ হচ্ছে এক ধরনের বুনোশুকর আর ওয়ারটি হচ্ছে তার খসখসে চামড়া। পরে দেখা গেল আসল নামের চেয়ে কোডনেমই বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেল।

তাই এরপর থেকে প্রতিবারই কোন না কোন প্রানীর নামের সাথে মিলিয়ে কোডনাম রাখা হত যার শেষের অংশে থাকে প্রানীটির নাম আর প্রথম অংশে থাকে বিশেষন। সবার জন্যই মানবতা “নতুন ডেস্কটপ পিসির বাজারে সিংহভাগ শেয়ারই মাইক্রোসফটের। এটা একটা বাগ। এটাকে ফিক্স করার জন্যই উবুন্টুকে ডিজাইন করা হয়েছে। ” এটাকে বলা হয় “বাগ নম্বর ওয়ান”।

বাগ হচ্ছে কম্পিউটার সফটওয়ার বা প্রোগ্রামে যে কোন ত্রুটি। উবুন্টু নামে অপারেটিং সিস্টেমের যত ত্রুটি পাওয়া যাবে ব্যবহারকারীরা যাতে সেগুলো রিপোর্ট করতে পারে সেজন্য ক্যানোনিকাল একটি ওয়েবসাইট বানায় যার নাম “লাঞ্চপ্যাড”। এই সাইটে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যবহারের সময় পাওয়া উবুন্টুর বিভিন্ন ত্রুটিগুলো রিপোর্ট করে। সেখানে মার্ক প্রথম এই বাগটি রিপোর্ট করেন যেটি ইতিহাসে ''বাগ নম্বর ওয়ান'' নামে খ্যাত। “উবুন্টু” হল একটি দক্ষিন আফ্রিকান শব্দ, যার অর্থ হল “human­ity to others” বা “সবার জন্যই মানবতা”।

অপারেটিং সিস্টেম উবুন্টুর লক্ষ্য হচ্ছে মানুষ যাতে কম্পিউটারে বিনামূল্যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে। শুধু তাইনা, ওপেন সোর্সের মন্ত্রে উজ্জীবিত উবুন্টুও বিশ্বাস করে যে কমপিউটার সফটওয়্যার কারো কুক্ষিগত হতে পারেনা, সবাই স্বাধীনভাবে এটা ব্যবহার করার অধিকার রাখে। সেজন্য উবুন্টু ব্যবহার করতে কোন টাকা পয়সা দিতে হয় না এবং এই বিনে পয়সার উবুন্টু ব্যবহার করা পুরোপুরি বৈধ। সত্যিকারের স্বাধীনতা উবুন্টুর স্লোগান হচ্ছে “Linux for Human Beings”। অনুবাদ করলে দাঁড়াচ্ছে “সবার জন্য লিনাক্স”।

মানে গিকদের খটমটে দুনিয়া থেকে লিনাক্সকে সরিয়ে এনে সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারকারিদের জন্য সেটাকে উপযোগী করে তোলা। সুপার কম্পিউটার আর সার্ভারের দুনিয়াকে একচেটিয়া দখলে রাখার পর উবুন্টুর মাধ্যমে লিনাক্স ডেস্কটপের দুনিয়ায়ও প্রবেশ করল। বলা হয়ে থাকে যে যদি লিনাক্সের পতাকা বহন করার কেউ থাকে তবে সেটা উবুন্টুর আছে। ডেস্কটপ ইউজারদের ওপেনসোর্স ফ্রি সফটওয়ারের স্বাদ দেবার জন্য উবুন্টু ডেস্কটপকে এত সহজ করে দিয়েছে যে নিজে চেখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কম্পিউটার নিয়ে যার তেমন কোন জ্ঞান নেই সেও বেশ সহজে উবুন্টু ব্যবহার করতে পারবে।

আর উবুন্টু ইন্সটল করলেই অফিস থেকে শুরু করে অডিওভিডিও প্লেয়ারসহ প্রয়োজনীয় সব সফটওয়ার ইন্সটল হয়ে যায়। মানে হলো একজন সাধারন ডেস্কটপ ইউজারের জন্য তার পিসি পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা হল উবুন্টু ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সিং বাবদ কোনরকম টাকা-পয়সা খরচও করতে হয়না। সত্যিকারের স্বাধীনতা হয়তো একেই বলে। লিনাক্স মিন্ট কি? লিনাক্স মিন্ট উবুন্টুর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা একটি ডেক্সটপ অপারেটিং সিস্টেম।

এটি ৩২ বিট ও ৬৪ বিট উভয় প্রকৃতির প্রসেসিং সাপোর্ট করে। এর ডেভেলপমেন্ট শুরু হয় ২০০৬ সালে। লিনাক্স মিন্ট ও রিলিজ সমূহের সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে থাকে উবুন্টুর ন্যায় এবং লিনাক্স মিন্ট ডিস্ট্রো সাংকেতিক নামেই বেশী পরিচিতি পেয়ে থাকে। বর্তমান রিলিজের নাম হলো লিনাক্স মিন্ট ১০ এবং এর সাংকেতিক নাম হলো 'জুলিয়া'। রিলিজ ৫ বা এলিস্যা থেকে উবুন্টুর ন্যায় প্রতি ৬ মাস অন্তর লিনাক্স মিন্ট ও রিলিজ হয়ে আসছে এবং ইনশাল্লাহ রিলিজ হবে।

মাইনর আপডেট রিলিজের ক্ষেত্রে মূল ভার্সনের পর দশমিক চিহ্ন দিয়ে তারপর মাইনর আপডেট রিলিজে সংখ্যাটা যুক্ত করা। যেমন ৩.১ বা সেলেনা হলো ভাসর্ন ৩ এর মাইনর আপডেট রিলিজ। লিনাক্স মিন্টের রিলিজের সাংকেতিক নামগুলো মূলত মেয়েদের নামেই করা হয়। এক্ষেত্রে নামের প্রথম অক্ষর রিলিজ ক্রমানুসারে ইংরেজী বর্নমালা থেকে নেয়া হয় এবং শেষ অক্ষরটা 'a' রাখা হয়। এটি পুরোপুরি অনলাইন কমিউনিটি ডেভেলপড বিধায় এতে কোন রকম বিধি নিষেধ কিংবা লাইসেন্সিং জটিলতা নেই।

লিনাক্স মিন্ট রিলিজগুলো ১.০ আডা (Ada) ২.০ বারবারা (Barbara) ২.১ বিয়া (Bea) ২.২ বিয়ান্সা (Bianca) ৩.০ ক্যাসান্ড্রা (Cassandra) ৩.১ সেলেনা (Celena) ৫ এলিস্যা (Elyssa) ৬ ফেলিসিয়া (Felicia) ৭ গ্লোরিয়া (Gloria) ৮ হেলেনা (Helena) ৯ ইসাডোরা (Isadora) ১০ জুলিয়া (Julia) ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.