আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তনবাদ ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের কোন তত্তের কাজ কী? একেকটা তত্ত্ব মহাবিশ্বের একেকটা ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে । যে তত্ত্ব এ কাজ যত ভাল পারে – সেটা ততই ভাল তত্ত্ব । আমার ওপরের লাইন থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে ১ টা তত্ত্ব যে ঘটনাটার (যেই ঘটনার তত্ত্ব) সবতুকুই ব্যাখ্যা করতে পারবে- এমনটা না। রাদারফোর্ড যখন তার পরমাণুর মডেল দিয়েছিলেন- তা বেশ কিছু জিনিস ব্যাখ্যা করতে পারলেও অনেক কিছুই পারে নাই । তখন বিজ্ঞানীরা কি করলেন? তারা সেই তত্তকেই মডিফাই করার চেষ্টা করতে থাকলেন এবং এভাবেই আসল বোর থিউরি ।

সেটাতেও ছিল অনেক ঝামেলা । গবেষণা চলতে থাকল । তত্ত্বও শক্তিশালী হতে থাকল । বর্তমান এই যুগেও আমরা যখন পরমানু নিয়ে পরতে যাই, তখনও- আমরা সেই ডাল্টন থেকে শুরু করি – যা ছিল “ভুলে ভরা” । কিন্তু তার পরও আমার ডাল্টনকে সম্মান করি ।

কারন তার সেই “ভুলেভরা তত্ত্বে”র হাত ধরেই এসেছে সবকিছু । বিজ্ঞান কিন্তু ত্রুতির কারনে ১টা তত্ত্বকে গালি দেয় না । আরেকটা তত্ত্ব খোঁজা । যতক্ষণ না পাওয়া যায়- আমরা আগেরটাই ধরে থাকি । এই ব্যাপারটাই আসলে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য ।

কোন কিছুই “Fixed” না। গবেষণা চলে নিরন্তর । আমাদের পৃথিবীতে কীভাবে এত জীব-বৈচিত্র্য সৃষ্টি হল , কীভাবে এত প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে – তা নিয়ে আলোচনা করে ১ টা মাত্র তত্ত্ব – “বিবর্তনবাদ” । এর সপক্ষে- বিপক্ষে অনেক কথাবার্তা আছে । ১ টা দল আছে (অনেক বড় দল) যারা ডারউইন আর তার এই তত্তের মুণ্ডুপাত করতে পারলে বাঁচে ।

আদের মাঝে কিছু পুরাপুরি মূর্খ- “এই প্রানীর বিবর্তন হয় নি- ওর হয়নি” বলে তারা অদ্ভুত যুক্তি দেখায় । আর কিছু আছে যারা বেশ জানেন । তাদের কাজ হল বিবর্তনবাদ যেসব জিনিস ব্যাখ্যা করতে পারে না- সেগুলো তুলে ধরা আর বোঝানোর চেষ্টা করা এই তত্ত্ব ভুল , বিবর্তনে “বিশ্বাসীরা”(যদিও বিজ্ঞান বিশ্বাসের ব্যাপার না, যুক্তি-তর্ক প্রমানের ব্যাপার ) পুরা ছাগল । কিন্তু তারা ১তা জিনিস ভুলে যায় - বিবর্তনবাদ ছাড়া আর কোন তত্ত্ব আমাদেরকে বলে কীভাবে এত প্রানী- এত বৈচিত্র্য পৃথিবীতে আসল ?? বিবর্তন ছাড়া আর কোন তত্ত্ব তা ব্যাখ্যা করার অন্তত “চেষ্টা” চালায় ??আর কোনভাবে পারবেন পৃথিবীতে কীভাবে এত প্রজাতি আসল তা ব্যাখ্যা করতে ?? পারবেন না। যারা বিবর্তনে “বিশ্বাসী” না , তারা বলবেন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তৈরি হয়েছে – তিনি বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন ।

কীভাবে সেটা হয়েছে ? অদৃশ্য থেকে হঠাৎ দৃশ্যমান হয়েছে সব প্রানী ?? নাকি আকাশ থেকে প্যারাসুটে করে নেমে এসেছে? তার চেয়ে বিবর্তন সহজবোধ্য না?আমাদের জ্ঞানের নিরিখে সেটা ব্যাখ্যা করে । আর বিজ্ঞানের কাজ জ্ঞানের নিরিখে সবকিছু ব্যাখ্যা করা । যারা ধার্মিক, তাদের মত করেই বলি(কারন তারাই বিবর্তনবাদের সবচেয়ে বড় অ-সমর্থক)- সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় হয়। কিন্তু তিনি হাতে ধরে কিছু করান না। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে- এটা একা একাই ঘুরছে ।

আল্লাহ যা করেছেন তা হল F=G*(Mm)/d2 নিয়মটি তৈরি করে দিয়েছেন । আর এর ফলে পুরো বিশ্ব চলছে । নিউটন – “ঈশ্বরের ইচ্ছায় পৃথিবী ঘোরে”- এই তত্ত্ব দেন নাই । কারন এটা সাইন্স না । সাইন্স কোন কিছুই “আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় হয়” বলে না ।

অবশ্যই তার ইচ্ছায় হয়(আমি ধার্মিকদের মত করেই বলছি) , কিন্তু কীভাবে হয়- সেটা খুজে বের করাই বিজ্ঞানের কাজ । আর তাতে একদিন সফল হয় । সৃষ্টিকর্তা কিছুই তার হাতে রেখে দেন নি । সব রহস্য আমাদের জন্য OPEN । (এটাই বিজ্ঞানের চেতনা, যা গোঁড়ারা মানেন না) কিন্তু তার জন্য সময় লাগে- গবেষণা লাগে, কষ্ট লাগে ।

F=G*(Mm)/d2 ও একদিনে হয় নাই । এর আগে কোপার্নিকাস , গ্যালিলিও সহ অনেকে অনেক কিছু করেছেন । অনেক তত্ত্ব দিয়েছেন । তখনও গোঁড়া ধার্মিকরা তাদের বিরুদ্ধে ছিল । এই বিজ্ঞানীদেরকে কতটা কষ্ট পেতে হয়েছে তা আমরা জানি ।

সেগুলোও “ভুলে ভরা” ছিল। কিন্তু সেটাই ছিল ভবিষ্যতের পাথেয় । তাই আবার বলি – বিবর্তন হয়ত লিঙ্গবিভেদের মত কিছু জিনিস ব্যাখ্যা করতে পারে না । (হয়ত পারে । ইন্টারনেটে বিবর্তন কি পারে না – সেটার লিস্ট এত লম্বা যে সত্যিটা বোঝা কঠিন) কিন্তু যতটুকু পারে , তাও আর কেউ পারে না।

আপনাদের ধর্ম বিশ্বাসের জন্য হয়ত আপনারা তা মানতে নারাজ । কিন্তু বিজ্ঞান “বিশ্বাস” না । এটা আক্ষরিক অর্থেই “অবিশ্বাস” । সবকিছুকে প্রশ্ন করাই বিজ্ঞান । আর সেই প্রশ্নের উত্তর সে খোঁজে মানুষের জ্ঞানের সীমার মাঝের কোন তত্ত্ব দিয়ে ।

অতিপ্রাকৃত কিছু দিয়ে না। আর তাই এরপর বিবর্তনের বিরোধিতা করার সময় এর ত্রুটিগুলো দেখিয়ে গালি না দিয়ে অন্য কোন “বিজ্ঞানসম্মত” তত্ত্ব দাঁড়া করাবেন, যেটা পৃথিবীর এই প্রানের খেলা ব্যাখ্যা করতে পারে । তারপর আমরা বিবর্তনকে ছুঁড়ে ফেলে দেব । তার আগে না। পুনশ্চঃ যারা মনে করেন “বিবর্তনবাদ সায়েন্টিফিক না, ভুল আছে, বড় বড় বিজ্ঞানীরা এটা মানেন না” http://www.nationalacademies.org/evolution এটা ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমীর ওয়েবসাইট।

নিশ্চই এখানে “অবিজ্ঞনীরা” থাকেন না... বাংলায় পড়তে পারেন- http://mukto-mona.com/evolution/ উইকিপিডিয়ার মত- http://en.wikipedia.org/wiki/Evolution Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Evolution_as_theory_and_fact যদি আপনি সত্যিটা জানতে চান- আমার মনে হয় না আর কিছু লাগবে। আর যদি "অন্ধবিশ্বাস" নিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে তর্ক করেন, তাহলে তা শেষ হবার নয়- সেটায় অংশ নেয়ার ধৈর্য আমার নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.