আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মবিশ্বাস ও ডারউইনের বিবর্তনবাদ

ফরাসী বিপ্লবের বীজ থেকে জন্ম নেয়া ইউরোপীয় নতুন এনলাইটেনমেন্ট এর নেতৃত্ব দানকারী 'জেকোবিয়ান', 'কমিটি অব পাব্লিক সেফটি’র মত দলগুলো ছিল বামপন্থী ঘরানার। এরা অত্যাচারী, ক্ষমতালোভী ও এলিটদের পদলেহনকারী চার্চ এর উপর খড়গহস্ত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার সূচনা করে। আর এই ধর্মনিরপেক্ষতার হাত ধরে ধর্ম কোণঠাসা হয়ে পড়লেও নাস্তিকতা নতুন উদ্যমে আসন গাড়তে থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, নাস্তিকতা স্থানভেদে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার নাস্তিকতা ও পুজীবাদী পাশ্চাত্যের নাস্তিকতার রূপ ভিন্ন।

সমাজতান্ত্রিক নাস্তিকতা ছিল সাম্যবাদকে কেন্দ্র করে, সেখানে ইউরোপীয়ান নাস্তিকতা প্রথমদিকে ‘সমানাধিকার’ এর কথা বললেও শীঘ্রই নিজেকে জাহির করে ভোগবাদী হিসেবে। এখনতো ডকিন্সরা ও তাদের প্রাচ্য-প্রাতীচ্যের শিষ্যরাও সেই ভোগবাদের কথাই বলে। ‘সাম্যবাদী’ সমাজতান্ত্রিকরা এখনতো শুধুমাত্র ধর্মের বিরোধীতার খাতিরে ভোগবাদীদের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। আর ভারতীয় উপমহাদেশের নাস্তিকরা এই মিল খুঁজে আহ্লাদিত হতে পারে যে, ভোগবাদ প্রাচীন ভারতীয় নাস্তিকদেরও (চার্বাকদের) দর্শনের অঙ্গ! চার্বাকদের ‘ধার করে হলেও ঘি খাওয়া’- ভোগবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নাস্তিকতা স্রষ্টার বিরোধীতা করে সৃষ্ট, কিন্তু নিজে বৈশিষ্ট্যহীন।

নাস্তিকদের মধ্যে তাদের মূল চীরচেনা রূপ ধর্মের বিরোধীতার প্রাধান্য থাকলেও ডারউইনের বিবর্তনবাদের মধ্যে নাস্তিকতা কিছুটা হলেও হাল পায়। কারণ বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী ধারণা করা হতো যে সরল এককোষীতে প্রাণের উৎপত্তি তা স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জড়বস্তু থেকে সৃষ্ট। কিন্তু পরবর্তীতে এই স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়ার ধারণাটি বিফলকাম হওয়ায় এখন দৃষ্টি মহাশুণ্যের ভিনগ্রহের দিকে (যেখান থেকে এই গ্রহে প্রাণের আগমণের সম্ভবনা)! এসবের কোথাও স্রষ্ট্রার স্থান নেই! এখানে একথা জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন যে, যারা বিবর্তনবাদের বিরোধীতা করছে তারা ‘বর্তমানে প্রচলিত বিবর্তনবাদকে’ (ডারউইনিয়ান বিবর্তনবাদকে) যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তারই বিরোধীতা করছে। এই ব্যাখ্যার মধ্যেই বিরোধীতার যথেষ্ট উপাদান বিদ্যমান থাকায় যেমন বিরোধীতা করছে তেমনি করছে অনেকটা অনুমানের উপর ভিত্তি করে স্রষ্টাকে নাকচ করা নিয়ে। ডারউইনিয়ান বিবর্তনবাদ যদি ডগমাটিক না হয়ে, প্রজাতির সৃষ্টির ব্যাপারে কেবল একটি সরলতম ব্যাখ্যা [১] হিসেবে ধরা হয় তাহলে বিতর্কের পরিধি অনেক কমে যায়।

কারণ বিজ্ঞান অনুযায়ী সেই সরলতম ব্যাখ্যা সঠিক হওয়া মূখ্য না। ডারউইনিয়ান বিবর্তনবাদ যেখানে স্রষ্টার জন্য কোন জায়গা রাখেনি, সেখানে বিবর্তনবাদের ব্যাপারে প্রধান ধর্মগুলোর (অনুসারী হিসেবে) অবস্থান কী তা জানাটা আবশ্যক। বিবর্তনবাদ ও ইসলাম বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী যেখানে প্রাণ স্রষ্ট্রার ভুমিকা ছাড়াই স্বতস্ফূর্তভাবে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সেখানে স্রষ্টাকে আনাটা বাহুল্যতাই। স্রষ্টা বিষয়ে বিবর্তনবাদের সাথে ইসলামের যে বিরোধ অন্য প্রায় সব প্রধান ধর্মগুলোর সাথেই সে বিরোধ থাকার কথা! বিবর্তনবাদ মানুষকে পশুর একটি উন্নত রূপ হিসেবেই দেখে থাকে। অপরদিকে ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, প্রথম মানুষ আদম (আঃ) স্রষ্টার সরাসরি সৃষ্টি।

কিছু মুসলিম বিবর্তনবাদীকেও পাওয়া যায় যারা আদম (আঃ) এর সৃষ্টিকে বিবর্তনের প্রক্রিয়া বলেই চালাতে চায়। কিন্তু এ ধরণের বিশ্বাস বিবর্তনবাদ ও ইসলাম উভয়ের সাথেই সাংঘর্ষিক। বিবর্তনবাদ অনুসারে যে প্রাইমেট থেকে মানুষ এর সৃষ্টি তা একক কোন ব্যক্তি বা প্রাণী নয়, বিবর্তন ঘটার কথা একটি প্রাণীসমষ্টিতে। কিন্তু কুরআনের ভাষ্যমতে প্রাণীসমষ্টিকে পাওয়া যায় নাঃ "হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।

নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। " (সুরা আল-হুজজাত ৪৯: ১৩) এছাড়া আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সরাসরি তৈরীর কথাই পাওয়া যায়, কিন্তু কোন চক্রের কথা পাওয়া যায় নাঃ "নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। " (সুরা আল ইমরান, ৩:৫৯) আরেকটি সম্পর্কযুক্ত আয়াতঃ "হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর।

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। " (সুরা নিসা, ৪:১) আদম (আঃ) কিভাবে পৃথিবীতে আবির্ভাব হলেন সে ব্যাপারে কুরআন থেকে এখনও স্পষ্ট করে কিছু পাওয়া যায় না, হতে পারে মানুষ হিসেবে আমাদের বোঝার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু আদম (আঃ) যে একক ব্যক্তি তা কোরআন থেকে স্পষ্টভাবেই পাওয়া যায়। আর, বিবর্তনবাদ তত্ত্বের নিজেরই বিবর্তন হচ্ছে। ফলে মুসলিমদের বিবর্তন তত্ত্বকে বিজ্ঞানের একটি চলমান গবেষণা হিসেবে দেখলে সেটাই হবে বেশী যৌক্তিক।

বিবর্তনবাদ ও খৃষ্টান ধর্ম (ক্যাথলিক) বাইবেলের জেনেসিসের বর্ণনা অনুযায়ী [২], ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টির ৬ষ্ঠ দিনে এডাম (আদম (আঃ))-কে সৃষ্টি করেন, সে হিসেবে পৃথিবীর বয়স ছয় হাজার বছরের বেশী না। বাইবেলে বর্ণিত ৬০০০ বছরের পৃথিবী শুধু বিবর্তনবাদ না বিজ্ঞানের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায়। আইরিশ আর্চবিশপ জেমস উশার (১৫৮১-১৬৫৬) [৩] দ্যা এনালস অব দ্যা ওয়ার্ল্ডে বাইবেলের মেসোরেটিক টেক্সট থেকে উশার হিসেব কষে পৃথিবীর এই বয়স বের করেছিলেন। অন্যান্য ইতিহাসবিদ ও বাইবেল বিশারদরা পৃথিবীর যে বয়স পেয়েছেন তার মান এই ৬০০০ এর কাছাকাছি। [সংক্ষেপেঃ জেনেসিসের চাপ্টারঃ ৫ অনুযায়ী [৪], এডাম (আদম (আঃ)) ১৩০ বছর বয়সে সিথ নামে এক সন্তান লাভ করেন, সব মিলিয়ে তিনি ৯৩০ বছর বেচে থাকেন।

[৫], সিথ ১০৫ বছর পরে সন্তান ইনুছকে লাভ করেন…………… নোয়া (নুহ (আঃ)) এর বয়স যখন ৬০০ বছর তখন বন্যা হয় (জেনেসিস ৭:১১)………… আব্রাহাম (ইব্রাহীম (আঃ)) এর জন্মের সময় (জেনেসিস ১১:২৬) এডামের আবির্ভাবের ১৯৪৯ সাল পরে। রাজা সলোমান (১ কিং ১১:৪২) এর সময়কাল এডামের (আদম (আঃ)) আবির্ভাবের ৩৪৫২ বছর পরে যা খৃষ্টপূর্ব ৯৬২ সালের দিক………] যাক বিজ্ঞানের সাথে দ্বন্দ্ব বলার কারণ বাইবেলের পৃথিবী সৃষ্টির যে বর্ণনা করা হয়েছে, তার সাথে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রত্যক্ষ বিরোধ রয়েছে। জীবাষ্ম গবেষণার ফলে মিলিয়ন বছর আগের প্রাণীর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। কার্বন-১৪ এর ফলে ৬০,০০০ বছর আগের জীবাষ্মের ও পটাশিয়াম-৪০ ডেটিং এর ফলে ১.৩ বিলিয়ন বছর আগের জীবাষ্মের বয়স সম্পর্কে সঠিকভাবে বলা সম্ভব। জেনেসিসের প্রথম চাপ্টার অনুযায়ী আলোর সৃষ্টি প্রথম দিনে অথচ আলোদায়ী নক্ষত্র ও সূর্যের সৃষ্টি ৪র্থ দিনে! তৃতীয় দিনেই পৃথিবীতে উদ্ভিদ সৃষ্টির কথা বলা আছে, অথচ এই উদ্ভিদের বেঁচে থাকতে অত্যাবশকীয় সালোক-সংশ্লেষণের জন্য যে সূর্যের প্রয়োজন তার সৃষ্টি ৪র্থ দিনে।

এখন অনেক বাইবেলবিদরা দাবী করেন যে ‘দিন’ এর কথা বাইবেলে আছে সে ‘দিন’ এখনকার দিনের মত নয়, অনেক দীর্ঘ সময়। তাহলে বিষয় আরো জটিল হয়ে যায়, কারণ এতোদিন এসব উদ্ভিদ বেঁচে থাকল কিভাবে! জেনেসিস ১:১ থেকে ২:৩ তে বর্ণিত সৃষ্টিক্রমে পঞ্চম দিনে সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী পাখি এসেছে জলজ প্রাণীর পরে [৬]। বাইবেলের সৃষ্টিপ্রক্রিয়া বিজ্ঞান ও বিবর্তনবাদ দুটোর সাথেই যথাযথভাবে খাপ না খাওয়ায় খৃষ্টানদের মধ্য থেকে প্রতিবাদ আসাটা স্বাভাবিকই ছিল। চার্চ কর্তৃক বিজ্ঞানী ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা, গ্যালিলিওর হাজতবাস ইত্যাদির কারণেই চার্চ এর সাথে বিজ্ঞানের একটা বিরোধ আগে থেকেই ছিল। ফরাসী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত চার্চ এর গণ্ডির বাইরে বিজ্ঞানের বের হয়ে আসার উপায় প্রায় ছিলই না।

চার্চ এর মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, পুরোহিততন্ত্র, সামন্তপ্রভূদের প্রতি চার্চ এর সমর্থন ইত্যাদি কারণে অবশ্যম্ভাবী ফরাসী বিপ্লব চার্চকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে। চার্চের সীমা ধর্মীয় আচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ যা ডারউইনের বিবর্তনবাদকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত অবস্থায় ছিল না। অনেক অনীহা সত্ত্বেও খৃষ্টানদের সবচেয়ে বৃহৎ ক্যাথলিক চার্চ বিবর্তনবাদকে সকল প্রাণের বিকাশের একটি বৈজ্ঞনিক বর্ণনা হিসেবে শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছে। তবে প্রজাতির বিবর্তনের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক নির্বাচনকে স্রষ্টার একটি উপায় হিসেবেই দেখে থাকে, যাকে আরো বিস্তারিতভাবে ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বিবর্তনবাদ ও বৌদ্ধ ধর্ম মহাবিশ্ব শুরুর ব্যাপারে বৌদ্ধ ধর্মমতে স্রষ্টার কোন ভুমিকা নেই [৭]।

আগান্না সুত্রা অনুসারে [৮], মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস একটা চক্রে অবিরত ঘটে চলেছে। এই ধ্বংস ও সৃষ্টিতে স্রষ্টার কোন হাত নেই। [৯] বিবর্তনবাদও স্রষ্টাবিহীন সৃষ্টির কথা বলে বিধায় কিছু বৌদ্ধপণ্ডিত বৌদ্ধ ধর্মের সাথে বিবর্তনবাদের মিল খুঁজে পান। বর্ণনা সেখানেই থেমে গেলে মিলটা চমৎকার হতো! কিন্তু তা আরো বহুদূর গড়িয়েছে এভাবেঃ প্রাথমিক অবস্থায় মহাবিশ্বে কেবল পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল, কোন ভূমি বা আলো ছিল না। পরবর্তীতে যখন ভূমি হল তখন আত্না তাকে উপভোগ করতে আসল।

লোভের ফলে সেইসব আত্নারা কঠিন হয়ে পুরুষ ও নারীতে রূপান্তরিত হয়। এই অবস্থায় আত্নারা তাদের দীপ্তি হারায়, আর তখনই সূর্য ও চন্দ্রের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রিপুর কারণে পৃথিবী একটি মনোরম স্থান হিসেবে তার অবস্থান হারায়। আগান্না সুত্রের এই বর্ণনায়, মহাবিশ্বের ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্রের সাথে বিজ্ঞানের কিছু মিল পাওয়া গেলেও, সৃষ্টির পুরো বর্ণনা সামঞ্জ্যস্যহীন কল্পকাহিনী ছাড়া আর বেশী কিছু না। তাই, অনেক বৌদ্ধ পণ্ডিতই আগান্না সুত্রকে আধ্যাত্নিকতার বাইরে ভাবতে চান না।

তাছাড়া হিন্দুদের মতই বৌদ্ধরাও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী, যে জন্মান্তরবাদ একটি অসীম চক্রে বন্দী। তবে বৌদ্ধধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জন্ম মৃত্যুর এই সীমাহীন চক্র থেকে মুক্তির উপায় নির্ভানা (বোধিপ্রাপ্তিতা)। জন্মান্তরবাদে বর্ণনাকৃত প্রাণীর বিভিন্ন রূপে আগোছালোভাবে আবির্ভাবের সাথে বিবর্তনবাদে বর্ণনাকৃত প্রাণীর পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাবের মিল খোঁজাটা একেবারেই অযৌক্তিক। তারপরও বৌদ্ধ ধর্মে বিজ্ঞানের ব্যাপারে অপ্রতুল তথ্যের কারণে বৌদ্ধ ধর্মানুসারীরা বিবর্তনবাদের প্রতি এক ধরণের নির্মোহ সমর্থন দিয়ে থাকে। বিবর্তনবাদ ও হিন্দুধর্ম হিন্দু ধর্মমতে ‘অং’ হল সৃষ্টির শুরুতে প্রথম শব্দ।

ছান্দগিয়া উপনিষদ অনুযায়ী সৃষ্টি হল “ডিম এর ভাঙ্গন”। আবার বেদ অনুযায়ী স্রষ্টা কাঠের কারুকারের মত কাঠ দ্বারা মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। আবার ‘ঋগবেদ’ অনুযায়ী এক মহাজাগতিক পুরুষের শরীর থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। বিষ্ণুপূরাণ অনুযায়ী বিষ্ণু হলেন স্রষ্টা যিনি, সৃষ্টি, ধ্বংস ও পূণঃসৃষ্টি করেন [১০]। বৌদ্ধধর্মের মতই এই ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রক্রিয়াটির কারণে অনেক হিন্দু পণ্ডিত তাদের ধর্মের সাথে বিবর্তনবাদের মিল খুঁজে পান।

তাছাড়া হিন্দু পণ্ডিতরা বিবর্তনবাদের সাথে পৌরণিক কল্পকাহিনীর সাদৃশ্য দেখতেও উৎসাহ দেখিয়ে থাকেন। তবে আদতে তাদের বর্ণনাকৃত বিবর্তনবাদ, ডারউইনিয়ান বিবর্তনবাদ থেকে ভিন্ন। বিবর্তনবাদের হিন্দু ভার্শন প্রকৃতপক্ষে বিকৃত বিবর্তনবাদ! হিন্দু বিশ্বাস মতে বিষ্ণুর দশটি অবতার বিভিন্ন সময়ে আবির্ভাব হয়ে ধর্মকে রক্ষা করেছে [১১]। বিষ্ণুর দশটি অবতার হল মৎস্য, কচ্ছপ, বরাহ (শুকর), নরসীমা, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, কৃষ্ণ, ও কল্কি। বিষ্ণুর এই পূণর্জন্মকে বিবর্তনবাদের সমার্থক বলে দাবী করা হয়।

ডারউইনের বিবর্তন এককোষী থেকে শুরু হলেও, হিন্দুদের বিবর্তনবাদের শুরু বহুকোষী মাছ (মৎস্য) থেকে। ডারউইনের বিবর্তনবাদের ক্রমের মত, মাছের পরই উভচর প্রাণীর (কচ্ছপ) আগমণকে ‘হিন্দু বিবর্তনবাদ’র সাথে মিল হিসেবে দেখছেন এই ধর্মের বিবর্তনবাদীরা। কিন্তু এরপরে বরাহ (শুকর) এর আবির্ভাব ব্যাপক ছন্দপতন ঘটায়! আরো উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল বিষ্ণুর এই দশ আবির্ভাবের মধ্যে তাকে ‘বরাহ (শুকর)’ হিসেবে পাওয়া গেলেও বানর জাতীয় (!) কোন প্রাণী হিসেবে পাওয়া যায় না! তবে হিন্দু ধর্মের অনেক ‘ট্রাঞ্জিশনাল প্রাণী’র মত বিষ্ণুর একটি ‘ট্রাঞ্জিশনাল অবতার’ ‘নরসীমা’কে পাওয়া যায়! এরকম অনেক কল্পকাহিনীর সাথে বিবর্তনবাদের মিল ও অমিলের মাঝেও সাধারণত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবর্তনবাদের সমর্থক হিসেবে পাওয়া যায়। সূত্রঃ ১. ‘অক্কামের ক্ষুর’- ক্ষুরটা চলে কীভাবে? ২. http://pewforum.org/Science-and-Bioethics/Religious-Groups-Views-on-Evolution.aspx ৩. http://www.creationtips.com/earthsage.html ৪. http://lds.org/scriptures/ot/gen/5.1?lang=eng ৫. http://bridavis.chickenfactory.net/timeline.htm ৬. http://etext.virginia.edu/etcbin/toccer-new2?id=KjvGene.sgm&images=images/modeng&data=/texts/english/modeng/parsed&tag=public&part=1&division=div1 ৭. http://www.bbc.co.uk/religion/religions/buddhism/beliefs/universe_1.shtml ৮. http://www.buddhanet.net/e-learning/qanda03.htm ৯. http://pewforum.org/Science-and-Bioethics/Religious-Groups-Views-on-Evolution.aspx ১০. http://www.bbc.co.uk/schools/gcsebitesize/rs/environment/hinduismbeliefsrev1.shtml ১১. http://www.washingtonpost.com/blogs/on-faith/post/ancient-hinduism-enlightens-modern-notions-of-evolution/2011/08/24/gIQA33A0bJ_blog.html পাদটীকা: লেখাটি ইতিপূর্বে সদালাপে প্রকাশিত হয়েছে। আমি সেখানে শামস নামে লিখে থাকি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.