আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্তনবাদ, ইসলাম ও মানব সৃষ্টি রহস্য।



পৃথিবীতে কি করে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর আবির্ভাব হলো এ ব্যাপারে এক বিরাট বিরোধ চলে আসছে। আর এ ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই। তো আজ বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু লেখালেখির চেষ্টা করব। নিজে থেকে তো আর কিছুই লিখতে পারবনা কারন আমার মত মুর্খের নিজে কিছু করার ক্ষমত আগেও ছিল না, এখনো নেই। বিভিন্ন বই ও স্কলারদের লেখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়েই আমার এ লেখা।

ইসলাম সৃষ্টির তত্বে বিশ্বাস করে আর ডারউইনবাদীরা বিশ্বাস করে বিবর্তন তত্বে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ মানুষের মনকে দারুনভাবে আলোড়িত করেছে। বিবর্তনবাদ অনুসারে একটি সরল জীবকোষ থেকে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র জীব জগতের সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে এর ব্যাখ্যা থাকলেও ইসলাম এর দৃষ্টিকোন থেকে এটি মেনে নেওয়া একটু কষ্টকর। কারন ইসলাম বলে যে একমাত্র আল্লাহ ই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি্কর্তা এবং তিনি এই মহাবিশ্ব ও মানুষকে একটি নির্দিষ্ট কারনে পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন।

শুধু মাত্র এই পৃথিবীর বুকেই মিলিয়ন মিলিয়ন ধরণের জীব-জন্তু ও উদ্ভিদ প্রজাতি আছে। লক্ষ লক্ষ ধরণের ফল-মূলের গাছ ,লক্ষ লক্ষ ধরণের ফুলের ,ফল-ফুল বিহীন গাছ ,শাক-সব্জি ,মাছ ও অন্যান্য জলজ জীব ,কীট-পতঙ্গ ,সরীসৃপ ,পাখি আছে–যাদের মধ্যে একটি অংশ আবার উড়তে পারে না। লক্ষ লক্ষ ধরণের পশু আছে। পাশাপাশি মানুষ তো আছেই। প্রাণী জগত ও উদ্ভিদ জগতের মধ্যে একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতি বিভিন্ন দিক থেকে যে কতটা আলাদা–তা সহজেই লক্ষ্য করা যায়।

বুদ্ধিমান মানুষ সহ বিভিন্ন পশু-পাখির শরীর যে কতটা জটিল ও সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত–সেটাও সবারই জানা। প্রজাতিগুলোর শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট একই রকম নয়। উপরের বিষয়গুলো নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হবেন যে, একটি মাত্র সরল জীব থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এত লক্ষ লক্ষ জীব সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। একটি মাত্র অরিজিন থেকে এত কিছু বিবর্তিত হতেই পারে না। অতএব বিবর্তনবাদ তত্ত্বের একদম মূলেই বিশাল কল্পনা ও প্রতারণা রয়ে ।

যার কোন প্রমান বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে হলে ফসিল দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কারণ একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতি বা একটি প্রাণী থেকে ভিন্ন একটি প্রাণীর মন্থর গতিতে বিবর্তনের যে গল্প শুনানো হচ্ছে সেগুলো আসলে অতীত ঘটনা। এই অতীত ঘটনাগুলোকে প্রমাণ করতে হলে ফসিল রেকর্ড ছাড়া অন্য কোন যৌক্তিক পন্থা নেই। বৈজ্ঞানিকগন যেসকল ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন সেগুলোকে পা, মস্তিস্ক, কোমড়ের হাড়, মাথার খুলির ইত্যাদির ক্রমোন্নতি পর্যবেক্ষন করে পাঁচটি জেনাসে ভাগ করেছেন। সেগুলি হলো: ১. অস্ট্রালোপিকেথাস ২. হোমো হাবিলিস ৩. হোমো ইরেকটাস ৪. হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস ৫. হোমো সেপিয়েন্স (পূর্ণাঙ্গ মানুষ) অস্ট্রালোপিথেকাস: প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ বৎসর আগে এরা দক্ষিন আফ্রিকায় বিচরণ করত।

এরা সম্পুর্ন বানর ছিল। এদের খুলির ধারন ক্ষমতা ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ ঘনসে.মি.। এদের একটি প্রজাতি অস্ট্রালোপিথেকাস আফরেনসিস (লুসি বলে খ্যাত) এর ফসিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারন এদের হাটুর সংযোগ ছিল এমন যে তারা সম্পুর্ণ সোজা হয়ে দাড়াতে পারত। তাছাড়া এদের সম্পুর্ণ শরীরই ছিল বানরের মত। হোমো হাবিলিস: বানর থেকে মানুষের বিবর্তন প্রমানের জন্য অবশ্য্ই বিজ্ঞানীদের প্রমান করতে হবে বানরের মস্তিষ্ক সময়ের আবর্তনে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এবং তাদের পায়ের হাড়ও আরো হটনযোগ্য হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একসময় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেললেন হোমো হাবিলিস প্রজাতির ফসিল (ও এইচ ১৬, ও এইচ ২৪, কে এন এইচ আর ১৪৭০ কে এন এইচ আর ১৮১৩, কে এন এইচ আর ১৮০৫) । বিবর্তনবাদীরা মনে করেন এরা হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাসের উত্তরসূরী। এদের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৬০০ ঘনসে. মি. যেখানে শিম্পান্জির ৩০০ এবং মানুষের গড়ে ১৪৫০ ঘনেসে.মি.। হোমো ইরেকটাস: হোমো হাবিলিসের পরের পর্যায় হলো হোমো ইরেকটাস।

৫ থেকে ১০ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়েছিল। এরা প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়েই বাস করত। জাভা, চায়না এবং আফ্রিকায় এদের মাথার খুলি, চোয়াল ও দাঁতের ফসিল পাওয়া গেছে। এদের কিছু উরুর হাড়ও পাওয়া গেছে যা দেখতে মানুষের হাড়ের মত হলেও অনেক ভারী। এদের মাথার হাড় বর্তমানের শিম্পান্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং এর মতই।

হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস: জার্মানীর নিয়ান্ডার্থাল নামক স্থানে এই প্রজাতির ফসিল প্রথম পাওয়া যায়। প্রায় ২ থেকে ১ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়। এরা মূলত ইউরোপের বাসিন্দা ছিল। তবে এদের ভৌগলিক রুপান্তর (যেমন মানুষ সবাই একই হলেও বিভিন্ন দেশে এদের রূপ ভিন্ন) পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও বাস করত। ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় এরা আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

হোমো সেপিয়েন্সঃ হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানবজাতির সাথে নিয়ান্ডার্থালদের এবং এদের সমসাময়িকদের পার্থক্য বিস্তর। মানুষ দুপায়ে চলাচলকারী প্রাণী। এদের মেরুদ্ন্ড পাশ থেকে দেখলে উপর ও নিচের দিকে দুটি বক্রতা দেখা যায়, যা ভারসাম্য রেখা বরাবর দেহের ওজনকে বিন্যস্ত করে। এই ভারসাম্য রেখা, দুই হীপ জয়েন্টের ঘুর্নন কেন্দ্রের পিছন দিকে অবস্থিত মেরুদন্ডের দ্বিতীয় হাড় বরাবর, লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত। এই ব্যবস্থা কোমড়ের হাড়কে ভাসাম্য রেখার পিছনে হেলে বাধুনীর মত লিগামেন্টের সাহায্যে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে।

এটা দুপায়ে দাড়িয়ে থাকার একটা অতি উন্নত ব্যবস্থা যা সংস্লিস্ট পেশীকে বিশ্রাম দিয়ে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। ফসিল রেকর্ড ইঙ্গিত দেয় হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে আধুনিক মানুষের এত বেশি যে, অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে মানুষর উদ্ভব হতে পারে না। এ পরিবর্তনের কোন ফসিল রেকর্ডও নেই। ফসিল রেকর্ড প্রমান করে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সমস্ত নিয়ান্ডার্থাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

তাছাড় সাম্প্রতিক জেনেটিক এনালিসিস সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমান করেছে যে, মানুষ নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে উদ্ভুত হয়নি। তাহলে মানুষের বা অন্যান্য জীব জন্তুর সৃষ্টি কি বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে হয়নি??এর উত্তর –না হয়নি। এর জবাব আল্লাহ কোরানে ত দিয়েছেন ই , এমনকি বাইবেল এ ও এর সুস্পষ্ট বর্ননা রয়েছে। আপনারা দেখতে চাইলে নিচের লিংকটিতে ক্লিক করুন। Click This Link এর পর সন্দেহের আর কোন অবকাশ থাকেনা।

দেখুন কোরানের কিছু আয়াতঃ তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন, এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। সূরা: ত্বা-হা, ২০: ৫৩ আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে, আর কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু করতে সক্ষম।

সূরা: আন নুর, ২৪: ৪৫ তিনিই জমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন—। সূরা: হুদ, ১১: ৬১ যিনি তার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদা মাটির থেকে মানব সৃষ্টি করেছেন। সূরা: সেজদাহ্, ৩২: ০৭ আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এটেল মাটি থেকে। সূরা: আস্ সাফ্ফাত, ৩৭:১১ উপরের আয়াতগুলি বার বার বলছে- আল্লাহ মাটি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সোজাসুজি। বিষয়টা এরকম- আল্লাহ মাটি দিয়ে মানুষের একটি মুর্তি তৈরী করেছেন, তার পর তার দেহে জীবন দান করে তাকে জীবন্ত মানুষ বানিয়েছেন।

এখন এর অর্থ কি বিবর্তনবাদ নাকি ? কোরানে ও মানুষের সৃষ্টিতত্বে বিবর্তনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা ডারউইনিসম না। আল্লাহ কোরানে বলেছেন “একমাত্র আল্লাহ, যিনি এই বিশ্ব ও বেহেশত কে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন” এখানে ছয় দিন বলতে সৃষ্টির বিভিন্ন স্তরকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ আরো বলেছেন, We] then formed the drop into a clot and formed the clot into a lump and formed the lump into bones and clothed the bones in flesh; and then brought him into being as another creature. Blessed be Allah, the Best of Creators! (Qur'an, 23:14) এই আয়াত গুলো কি ডারউইনবাদ কে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.