আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালী সংস্কৃতির আবহে ফিরতে চান বিতর্কিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন

INTRO: বিতর্কিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার দ্বিতীয় ভূমি কোলকাতায় ফিরে আসতে চান। কোলকাতায় লেখিকার ঘনিষ্ঠ জনদের সাথে কথা বলে লেখিকার এই ইচ্ছার কথা জানা গেছে। তবে বাংলাদেশে ফেরার বিষয়ে লেখিকার পরিস্কার কোন অবস্থানের কথা এখনো জানা যায়নি। তার লেখা বই ইসলামের জন্য অবমাননাকর এমন অভিযোগে ১৭ বছর আগে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে । মুলত: ইসলামী মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন।

পরে ২০০৫ এ তিনি ভারতের পশ্চিম বংঙ্গের রাজধানী কলকাতায় দ্বিতীয় আবাস গড়েন। তবে বছর দুই পার হতে না হতেই কলকাতার মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে বাধ্য হয়ে নতুন দিল্লিতে যেতে হয় তাকে। এরপর বাংলাদেশের রাজনীতি নানারকম উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। অসাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে নিজেদের দাবী করা সরকার্ও ক্ষমতায় এসেছে।

আদালতের মাধ্যমে ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের আচরন কি হবে? রাষ্ট্র ধর্ম থাকবে কি থাকবে না এই বিতর্কটি এখনো মুখরোচক। তবে নির্বাসিত ওই লেখিকার কি হবে? এ নিয়ে বাংলাদেশের কোথাও বিশেষ কোন আলোচনা আর চোখে পড়েনা। তবে কেমন আছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, জানার চেষ্টা করেছেন প্রতিবেদক.... সম্প্রতি ভারতে ৩৪ বছর পর রাজ্য সরকারে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন কলকাতায় তার ফিরে আসার আলোচনাকে পুনরায় চাঙ্গা করেছে। তবে কলকাতার বাসিন্দারা তাকে মেনে নিতে কতটা প্রস্তুত জানা যাক... "দ্বিতীয় স্বদেশ কোলকাতা থেকে উচ্ছেদের আগে তসলিমা নাসরিন এই কবিতাটি লিখেছিলেন “....I keep on calling – Kolkata, Kolkata. Now even you stop loving me, Even if you shoo me away, I shall remain standing here, Holding on to you like a disobedient girl..” তসলিমা আসলেই কলকাতাকে অনেক ভালোবাসেন এবং এখানে ফিরতে চান।

" বলছিলেন কলকাতার মানবাধিকার কর্মী এবং তসলিমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুজাতা ভদ্র। তিনি বলছেন, " তসলিমা আবার লেখালেখি শুরু করতে চান, বাঙালি সাংস্কৃতিক আবহে থাকতে চান তিনি। তাকে এ রাজ্য ছাড়া করতে একটি ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। বাম সরকার কিছু মুসলিম মৌলবাদীদের দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মিছিল করায়, যার অজুহাতে তাকে রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হয়। " তার বন্ধুরা আশা করছেন কলকাতার নবনির্বাচিত সরকার তার আবেদনের প্রতি এবার সহানুভূতিশীল হবে।

সুজাতা ভদ্র বললেন “তার কলকাতা ফেরার বিরুদ্ধে কোন চাপ বা শক্তির কাছে আমাদের সরকারের নত হওয়া ঠিক হবেনা। তাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে এখানে শান্তিতে বাস করতে দেওয়া উচিত। তাছাড়া সরকারের খেয়াল রাখা উচিত যাতে তার বহিষ্কার চেয়ে পশ্চিম বাংলায় আর কোন বিক্ষোভ না হয়। ” সম্প্রতি তসলিমা বলেছেন, তিনি পশ্চিম বাংলা সরকারের কাছে কলকাতায় ফেরার আবেদন জানাবেন। তবে পশ্চিম বাংলার দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, তার সরকার এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তসলিমার চিঠির জন্যে অপেক্ষা করবে।

তসলিমা আলোচনায় আসেন ১৯৯৩ সালে তার উপন্যাস ‘লজ্জা’ প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে। বইটিতে বাংলাদেশে মুসলমানদের দ্বারা হিন্দুদের নির্যাতিত হওয়া কিছু ঘটনা স্থান পায়। পরে উপন্যাসটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় এবং মৌলবাদীরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভারতে আসার আগে ১১ বছর তিনি ইউরোপসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে কাটিয়েছেন। কিন্তু ভারতেও তিনি শান্তিতে থাকতে পারেননি।

২০০৭ এর আগস্ট মাসে দক্ষিণ ভারতীয় শহর হায়দ্রাবাদে একটি মুসলিম দল চেয়ার ও পাথর ছুঁড়ে এবং চিৎকার করে তসলিমার উপর আক্রমণ করে। তারা তার আত্মজীবনী নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল যেটা তাদের মতে, বইটি নবী ও রাসুল মুহাম্মদের (স এর বিবাহিত জীবনকে উপহাস করে লেখা। এর মাস তিনেক পর কলকাতা থেকে তার বহিষ্কার চেয়ে হাজার দশেক মুসলিম শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ করে। এই বিক্ষোভ এতোই সহিংস হয় যে তাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। তসলিমা সাথে সাথেই চলে যান।

তবে কলকাতার রাস্তায় ঘুরে প্রতিবেদকের মনে হয়নি পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন হয়েছে। বসির আলী কলকাতায় একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন। বললেন “আমরা চাইনা সে এই শহরে ফিরে আসুক। মুসলমানরা এমনিতেই রাগী। মুসলমানরা এতে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে এবং ২০০৭ এর মতো দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হবে।

আমরা চাইনা এমন হোক। আমরা শান্তি চাই। কাজেই আমরা চাইনা তসলিমা কলকাতায় ফিরুক। ” মুসলিম হয়ে জন্ম হলেও এখন তসলিমা নিজেকে নাস্তিক মনে করেন। তার মতে, ইসলাম ধর্মে নারীরা অত্যাচারিত এবং তারা যেহেতু কথা বলতেও ভয় পায় কাজেই তিনি তাদের হয়ে লড়াই করছেন।

কিন্তু পশ্চিম বাংলার ইসলামী কলেজ শিক্ষক নিখাত পারভিন এর দৃঢ় প্রতিবাদ জানালেন, “তিনি জানেন না ইসলামে নারীদের কতোটা স্বাধীনতা ও সম্মান দেওয়া হয়েছে। মুসলিম মেয়েদের স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বামীদের জোরপূর্বক স্ত্রীদের আয়ে ভাগ বসাতে বারণ করা হয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে তসলিমার উচিত এই ধর্ম ভালো করে পড়া।

” পশ্চিম বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোকই মুসলিম। আর রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন ক্ষমতায় থাকতে হলে মুসলমানদের সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতার রাজনীতি বিশ্লেষক আব্দুর রউফের বিশ্বাস, নতুন সরকার তাকে নিযে কোন ঝুঁকি নেবে না। বললেন, “তসলিমা কলকাতায় ফিরলে তার বিরুদ্ধে যে মুসলমানরা ব্যাপক বিক্ষোভ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মমতা ভালো করেই জানেন এবার সংখ্যালঘু মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন থাকার কারণেই তারা তিন দশকের পুরানো সরকারের হটাতে পেরেছেন।

কোন কারণেই তিনি এই মুসলিম সমর্থনের ভিত নড়াতে চাইবেন না। ” ইসলামী প্রভাষক নিখাত পারভিনের মতে, যেসব মুসলিম তার সাথে একমত নন তারা তাকে গণ্য না করলেই চলে। বললেন, “তাহলে মুসলিম বিরোধী দলগুলো তাকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করবে এবং তিনি আলোচনার বাইরে চলে যাবেন। মুসলিমরাই পারে তসলিমাকে কোন পাত্তা না দিয়ে তার ডানা ভেঙ্গে দিতে। ” তবে বাংলাদেশের লেখক মহল এবং বর্তমান সরকারের অবস্থান জানার কোন চেষ্টাই করেন নি প্রতিবেদক।

( লেখাটি প্রতিবেদন গোছের কিছু নয় আবার যা লিখা হযেছে তা মিথ্যাও বলা যাবেনা) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.