আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রোমবুক (Chromebook)

আমার ব্লগে স্বাগতম তারিখটা ফেব্রুয়ারি মাসের ৭, ২০১১। প্রতিদিনের মত অফিস শেষে বাসায় ফিরে প্রথমেই লবিতে মেইল বক্স চেক করলাম। মেইল বক্সে দেখলাম ইউপিএস(UPS)-এর একটা ইয়োলো স্লিপ। ইয়োলো স্লিপ মানেই প্যাকেজ। কী ব্যাপার ! এই সময়ে তো কারো আমাকে কোন উপহার পাঠাবার কথা নয়, আবার কোন কিছু অর্ডারও করি নাই।

যাই হোক, রেন্টাল (Rental) অফিসে চলে গেলাম। রেন্টাল অফিস তখনো খোলাই ছিল। দেখলাম মাঝারি সাইজের একটা বাক্স এসেছে কিন্তু কোথা থেকে এসেছে তার কোন ঠিকানা নেই। বুঝলাম প্রেরক রহস্য করতে চাইছেন। বাক্স নিয়ে আমার অ্যাপার্টমেন্ট-এ এসে জামাকাপড় পরিবর্তন না করেই এন্টি-কাটার নিয়ে বসে গেলাম।

বাক্স খুলেই চক্ষু চড়কগাছ। গুগল আমাকে তাদের CR (Chromium) 48 (যা এখন ক্রোমবুক নামে পরিচিত) পাঠিয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে আবেদন করেছিলাম। সত্যি সত্যি যে আমি মনোনীত হব, তা ভাবি নাই। আইপ্যাড কেনার কথা ভাবছিলাম, যাক আপাতত আইপ্যাড আর কিনতে হবে না, এটা নিয়ে বেশ কিছুদিন ব্যস্ত থাকব।

ক্রোমবুক সম্পর্কে একদিকে ই-উইকের Clint Boulton মন্তব্য করেছেন, "Samsung's Chromebook is a fine, fun and fast operating little cloud computer machine”। আবার অপরদিকে New York Times-এর personal technology columnist David Pogue মন্তব্য করেছেন, "Chromebooks assume that you are online anywhere you go. We are not quite there yet. When you're not online, the chromebook is a three-pound 'paperweight,'। মন্তব্য পড়ে একটু খটকা লেগে গেল মনে হয়। তাহলে, চলুন দেখা যাক কী এই ক্রোমবুক ? আমি মূলত ক্রোমিয়াম (CR) 48 নিয়েই আলোচনা করব কেননা স্যামসাং (Samsung) এবং এসার (Acer) পরে এটিকেই ক্রোমবুক (অতি অল্প আপডেট) হিসেবে ১৫ ই জুন, ২০১১ বাজারে এনেছে। আমার ক্রোমবুকটি রাবার-সদৃশ কালো ম্যাট (matte finish) জাতীয় একধরণের উন্নতমানের প্লাস্টিক বা এইজাতীয় কোন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি।

সমস্ত ক্রোমবুকটি টাচ করলে সফট ও রাবারি (rubbery) মনে হয়। এটির মনিটর ১২.১ ইঞ্চি, প্রসেসর ইন্টেল-এর এটম, সিঙ্গেল কোর। র‍্যাম যদিও ২ গিগাবাইট, হার্ডড্রাইভ মাত্র ১৬ গি.বাইট। হার্ড ড্রাইভ কম দেওয়ার কারণ আছে, এটি আমরা একটু পরেই জানবো। সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপারটি, সেটি হল ব্যাটারির আয়ুষ্কাল ৮ ঘণ্টা।

এছাড়া ক্রোমিয়ামটিতে আছে বিল্ট-ইন ওয়েব ক্যাম, স্পিকার, ওয়াই-ফাই, থ্রি-জি, ব্লু-টুথ, মাইক্রোফোন, এসডি কার্ড রিডার, ইউএসবি পোর্ট। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, এটিতে ম্যাকবুকের মতই ট্র্যাকপ্যাড আছে অর্থাৎ দুই আঙ্গুলের সাহায্যে মাউসের সমস্ত কাজ করা যায়। জিমেইলে একাউন্ট থাকলে পাওয়ার বাটন চাপ দেবার এক মিনিটের মধ্যেই এটি ওপেন করা যায়। উইন্ডোজের মত দীর্ঘ সময় বসে থাকার দরকার নাই। আমি দেখেছি, এটা আমার অ্যাপল ম্যাকবুক প্রো -এর চাইতেও দ্রুত বুট হয়।

গুগল-এর ভাষায় “Chromebooks boot in 8 seconds and resume instantly.”। বুট হওয়ার সাথে সাথে এটা ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করে। ক্রোমবুক মূলত ব্রাউজার ভিত্তিক এবং সমস্ত কাজ হবে ক্লাউডে। তাই এটিকে ক্লাউড কম্পিউটার বলাটাই বোধহয় বেশি যৌক্তিক। যেহেতু এটি পুরোপুরি ইন্টারনেট ক্লাউড ভিত্তিক, তাই কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায় না।

সফটওয়্যারের দরকারও পড়ে না কারণ গুগলের ওয়েব স্টোরে প্রচুর ফ্রি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন আছে যেখান থেকে ইচ্ছে মত অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা যায়। আবহাওয়া, গেইম, মেসেঞ্জার, ই-বুক-রিডার - কি নেই? বর্তমান ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে মাইক্রোসফট অফিসেরও দরকার নাই। গুগলের আছে গুগল ডক আর মাইক্রোসফটের আছে ওয়েব অফিস। সেখান থেকে চাইলে ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশিট, পাওয়ার পয়েন্ট, ডাটাবেজ ব্যবহার করা যায়। এমনকি ক্লাউডে ফটো এডিটিং সফটওয়্যারও আছে যেমন পিকাসা।

আবার কম্পিউটারে অনেক বেশি জায়গার হার্ডড্রাইভেরও দরকার নেই কারণ যেকোনো ডকুমেন্ট, ছবি, গান ইত্যাদি যেকোনো ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারের (গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, আমাজন ইত্যাদি) হার্ডড্রাইভে সংরক্ষণ করা যায়। ক্লাউডে থাকলে বরং যেকোনো জায়গা থেকে (শুধু দরকার ইন্টারনেট) যেকোনো ডিভাইসে (ফোন, আইপ্যাড, ট্যাবলেট) ফাইল ওপেন করা যায়। এছাড়া হার্ডড্রাইভ ক্রাশ হয়ে বা ভাইরাসের আক্রমণে ফাইল মুছে যাওয়ার ভয় নাই। কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভের চুরি হওয়া কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হার্ডড্রাইভ নষ্ট হবারও ভয় নাই কারণ জনপ্রিয় ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার গুলোর দুর্যোগ-মোকাবেলার ব্যবস্থা আছে। ক্রোমবুকে হার্ডড্রাইভের পরিমাণ কম থাকলেও যদি ফাইল ডাউনলোড করার দরকার পড়ে, তবে এসডি কার্ডে ফাইল সংরক্ষণ করা যায়।

এসডি কার্ডের দাম এখন খুবই কম। ব্যবহার না করলে ক্রোমবুকটি বন্ধ করার প্রয়োজন নাই। শুধুমাত্র লিডটি বন্ধ করে রাখলেই হয়। তারপর আবার লিডটি খোলার সাথে সাথেই অবিশ্বাস্য দ্রুত-গতিতে ক্রোমবুকটি চালু হয়ে যায়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষার প্রয়োজন নাই।

বাসায় থাকাকালীন বাসার ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা যায়। আবার ভ্রমণের সময় থ্রি জি ব্যাবহার করা যায়। ক্রোমবুকটি বহন করা খুবই সহজ কারণ এটি ওজনে প্রায় মাত্র ৩.৬ পাউন্ড। গুগল-এর ভাষায় ক্রোমবুকে সিকিউরিটি বিল্ট-ইন আছে। এক্ষেত্রে প্রতিটা ওয়েব পেজ, অ্যাপ্লিকেশন একটি নিরাপদ পরিবেশে (একে বলা হয় sandbox) রান করে।

তাছাড়া প্রতিবার বুট হওয়ার সময় এটির সেলফ চেক ও অটোম্যাটিক আপডেট-এর ব্যবস্থা আছে। বর্তমান যুগটি ট্যাবলেট আর স্মার্টফোনের যুগ। তারপরেও আমি “পে-চেক” মুভির সেই ল্যাপটপ-টির অপেক্ষায় আছি। মনিটরের দরকার হবে না। শুধু দরকার সিপিউ।

সুইচ অন করলেই শূন্যে একটি থ্রি-ডাইমেনশনাল মনিটর হয়ে যাবে। কি-বোর্ডের দরকার আছে কি? কারণ এখনই তো গুগল ‘ভয়েস সার্চ’ বের করে ফেলেছে। সঞ্চয় রহমান জুন ২৪, ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।