আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদি আরব ডায়েরি –১ম বছর, শেষ পর্ব (মজার কিছু টুকরো গল্প)

... ১। একদিন অফিসে বসে আছি। এক সৌদি স্টুডেন্ট আসলো। সে ইংরেজি জানেনা, সাথে ইংরেজি জানা একজনকে নিয়ে এসেছে। "... দক্তর, আমি হার্ভাড ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যেতে চাই ... দোভাষী'র মাধ্যমে জিজ্ঞেস করলাম সে কিসে পড়ে, জানলাম সে Law তে পড়ে।

তার কোন TOEFL বা GRE score নেই। প্রসঙ্গতঃ সৌদি Law সাবজেক্টে বিভিন্ন রকম শরীয়াহ আইন পড়ানো হয়, যা প্রচলিত আন্তঃজার্তিক আইন পড়াশোনা হতে ভিন্ন। এরকম একজন স্টুডেন্ট হার্ভাড ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যেতে চায়, আমি কি বলব ভেবে পেলামনা। ২। বিকেলে ঘরে বসে আছি।

হঠাৎ করেই কেমন যেন অন্ধকার মনে হলো। বারান্দায় গেলাম … চারপাশে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি দোতলায় থাকি। বারান্দা, ঘর মেঘে ঢেকে গেল। হাত দিয়ে মেঘগুলোকে ছুঁয়ে দেখলাম।

৩। মনির মাহাইল ক্যাম্পাসে পড়ায়। ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে। একদিন সকালে দেরীতে হন্তদন্ত করে এক স্টুডেন্ট আসল। … দক্তর, প্লীজ আমার এ্যটেন্ডেসটা দিয়ে দাও ("তুমি বাক্য" ব্যবহার করছি সিচুয়েশটা ঠিকভাবে বুঝানোর জন্য)।

মনির দেখল সে প্রায়ই সকাল বেলা দেরীতে ক্লাশে আসে। -তুমিতো সবসময়ই দেরী করে আসো, ব্যাপারটা কি? -দক্তর You married? Married? -হ্যাঁ, তো? -দক্তর তুমিই ঠিকমতো বুঝবা। Problem, Problem, You know সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠা খুব Problem। ৪। আদিল ভাইয়ের কাছে একদিন একজন স্টুডেন্ট অভিভাবক সহ আসলো।

অভিভাবকে বেশ রাগান্বিত মনে হচ্ছিল। বাবা ছেলের রেজাল্ট সম্পর্কে জানতে এসেছে, তার ধারণা ছেলে খুব খারাপ রেজাল্ট করেছে। -দক্তর, আমার ছেলের রেজাল্ট কেমন? - আপনার ছেলেতো বেশ ভালো করেছে। লিসেনিং এ ৭৮% পেয়েছে। বাবা সাথে সাথেই রাগান্বিত চোখে ছেলের দিকে তাকালেন … ৭৮%? - রাইটিং এ পেয়েছে ৮৫% বাবা আবারো ছেলের দিকে কটমট করে তাকালো।

-বাকী দুটি পার্টেও ৮০% এর উপরে আছে… বাবা হায়হায় করে উঠে, পারলে ছেলেকে ভষ্মীভূত করে ফেলে। আদিল ভাই বিষ্মিত। ৫। শাকিলা'র কোর্সের একজন স্টুডেন্ট মিড-১ মিস করে। বেশ কিছুদিন পর সে ক্লাশে আসলে শাকিলা এবসেন্ট থাকার কারন জিজ্ঞেস করে।

-মিস, আমি রিয়াদ গিয়েছিলাম। আমার Baby Uncle মারা গেছে। শাকিলা বুঝতে পারে না। - Baby Uncle? Your youngest uncle? - No, No .. son … My uncle শাকিলা বুঝলো তার cousin মারা গেছে। ৬।

ইশরাতের ক্লাশে এক মেয়ে হাত তুললো ... মিস, You go to toilet … ইশরাততো হতবাক। ... পরে বুঝতে পারলো ওরা i ও you নিয়ে কনফিউজড হয়ে যায়। ৭। মনিরের ক্লাশে আরেকজন স্টুডেন্ট অনেকদিন যাবত আসেনা। কি সমস্যা? একদিন স্টুডেন্টকে ধরলো।

-দক্তর, my baby hospital, মুস্তাসফা (হাসপাতাল)come মুস্তাসফা go; come go, go come, I no come …এইভাবে সারাদিন হাসপাতালে যাওয়া আসা করতে হয় বলে সে ক্লাসে আসতে পারছে না। ৮। লিসেনিং exam। মনির আগে ব্লাকবোর্ডে কোশ্চেন গুলো লিখল। প্যাসেজ শোনানোর জন্য টেপরেকর্ডার অন করার জন্য ঘুরতেই দেখতে পেল সবাই খাতা জমা দেবার জন্য তৈরি।

মনিরতো আকাশ হতে পড়লো, এখনওতো রেকর্ড শোনানোই হয়নি। … স্টুডেন্টরা রেকর্ড শুনতে নারাজ, তাদের সবকিছু কমন পড়েছে, আন্সার দিয়ে দিয়েছে তাই রেকর্ড শুনার দরকার নাই। ৯। দিবা exit, re-entry ভিসা’র জন্য apply করেছে। একদিন Admin Office হতে একটা mail পেল।

… “Your Visa is ready. Please cool me.” আমরা এরপর হতে তাকে ক্ষেপাতাম- Unless you cool him, you will not get your visa. ১০। মনির ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে জব করতো, সে সেখান হতে ১ বছরের ছুটি নিয়ে এসেছিল। কিং খালিদ ইউনিভার্সিটিতে সে আর কন্টিনিউ করবেনা। জুলাইয়ে দেশে ফিরে আগের ইউনিতে জয়েন করবে। সে তার ক্যাম্পাসে অনেক জনপ্রিয়।

সবাই তার রিজাইনের কথা শুনে মনঃক্ষুন্ন হলো। একদিন কয়েকজন ছাত্র এল। -দক্তর, তুমি চলে যাচ্ছ, We are very hungry। মনির সাথে সাথে চিন্তায় পড়ে গেল। খাইছে!! এরাতো মান্দি ছাড়া কিছু খেতে চায় না।

কমপক্ষে ১০০০ রিয়ালের মামলা। পরে কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর বুঝল, সে চলে যাচ্ছে বলে সবাই বিমর্ষ। They are very angry। মনির হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, যাক তারা hungry না। নোটঃ এটাই আমার এ বছরের সৌদি ডায়েরি’র শেষ লেখা।

আগামী ২৯ জু্ন ২ মাসের ছুটিতে দেশে যাচ্ছি। আবার নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবো ইনশাল্লাহ। আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো থেকেছি, সবাই মিলে খুব মজা করেছি। মনির চলে যাবে। তাকে আমরা খুবই মিস করবো।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.