আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘৃনা

ফোনে নীলাকে আমি আবার বললাম : নীলা,তোমার মেয়ের খুব জ্বর। -তোমার মেয়ে বলছ কেন?মেয়ে কি আমার একার? নীলা খুব বিরক্ত হলো বলে মনে হলো। ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে,নীলা কাকে যেন হেসে হেসে কি বলছে। বাড়িতে সম্ভবত খুব বড় কোন উৎসব চলছে। -নীলা,প্লিজ,একটু শুনো....... -আমি এখন একটু বিজি ,তোমার সাথে পরে কথা বলব।

হঠাৎ ফোনের লাইনটা কেটে যায়। আমি বারবার হ্যালো হ্যালো করতে থাকি। ২ বছর হয়ে গেছে নীলা আমাকে ফেলে তার বড়লোক দু:সম্পর্কের এক চাচাত ভাইকে বিয়ে করেছে। নীলা আমার মতই গরীব ঘরের সন্তান। নীলার খুব শখ ছিল :তার খুব সুন্দর একটা নিজের গাড়ি থাকবে,সে সেই গাড়ি নিয়ে যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াবে,শপিং করবে,মানুষ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।

তার আরো অনেক শখই ছিল,কিন্তু আমি তার কোন শখই পূরন করতে পারিনি। তাই সে যখন একদিন আমাকে ফোন করে বলল: আমি যেন কোন ঝামেলা না করে ডিভোর্স লেটার এ সাইন করে দেই,আমি তখন খুব কষ্ট পেলেও মেনে নিয়েছি। কিন্তু সে যে তার ৪ বছরের ছোট মেয়েটিকেও একদম ভুলে যাবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। সে কি তার নতুন পৃথিবীতে তার মেয়েকে ঝামেলা মনে করছে? গত ২ বছর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে একেকটা দিন কাটিয়েছি,নীলাকে একটিবারের জন্য ডিস্টার্ব করিনি,আমার সেই অধিকার নেই। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি খুব অসুস্থ হয়ে গেল,ডাক্তার বলল: জরুরি অপারেশন করাতে হবে।

বেশ কিছু টাকা লাগবে। পরিচিত সবার কাছে গিয়ে যখন ব্যর্থ হলাম,তখন হঠাৎ নীলার কথা মনে হল। শত হোক নিজের মেয়ে,নীলা কিছু একটা অবশ্যই করবে। কিন্তু.... হাসপাতালে মেয়ের বেডের পাশে আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম,পৃথিবীর সব কিছু অর্থহীন মনে হতে থাকল। আমি বেচে থেকেও আমার ছোট বাচ্চাটির জন্য কিছুই করতে পারলাম না,আমার ভেতরটুকু দুমড়ে-মুচড়ে একেবারে ভেঙ্গে যেতে থাকে।

৪ বছর পরের কথা। হঠাৎ এক জায়গায় নীলার সাথে দেখা হয়ে গেল। আগের থেকে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাকে দেখে চেনাই যায় না। চেহারায় আভিজাত্যের এক অন্যরকম আভা ছড়িয়ে পড়েছে।

আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল,জিজ্ঞেস করল: কেমন আছো? আমি আস্তে করে বললাম :ভাল। তুমি? -আমি এইতো। শপিং করতে এলাম। বলে অনেক কথা বলতে থাকল। আমি চুপচাপ শুনে যেতে লাগলাম।

হঠাৎ কথা থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল: মিতু কেমন আছে? আমি কিছু না বলে এক তীব্র ঘৃনা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম,দেখে সে কিছু একটা বুঝে ফেলে। হঠাৎ তার চোখে মুখে ভয়ংকর এক অপরাধবোধ ফুটে উঠে, কিছু একটা বলতে চায়,কিন্তু বলতে পারে না। মুখ ঢেকে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে থাকে। এই ঘটনার ৩ মাস পর আমি খবর পাই যে নীলার নাকি মাথা নস্ট হয়ে গেছে,তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোন এক অদৃশ্য জগতের এক অদৃশ্য বাচ্চার সাথে খেলা করে তার এখন সময় কাটে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.