আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুদীর্ঘ দা তুমি বৃহৎ কাজের জন্য আরো বেশী কাজের বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে, তোমায় লাল সালাম

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে সুদীর্ঘ দা খুন হলেন। সুদীর্ঘ দা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের একজন কর্মী। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা অংশের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি এবং আরো দুইজন আজ ১২ মার্চ সকালে রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলার মধ্যপাড়া নামক গ্রামে খুন হন। আজ দুপুরে যখন এই খবরটি জানলাম তখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। এবং এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম যেন খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু হায়, তা হলো না। এক ফেসবুক বন্ধুর লোড করা ফটো দেখে একদম নিশ্চিতই হতে হলো যে সুদীর্ঘ দা নেই।

মনটা খুব খারাপ এবং খুব একা একাই লাগছিলো। তাঁর সাথে পরিচয় ইউপিডিএফএর সাথে জেএসএসএর একটি অংশ যখন ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বাবোধকে মেনে নিয়ে কাজ করছিলো তখন থেকেই। সেই থেকেই তাঁর সাথে দেখা হতো। এক সময় তাঁর বাসায় আমরা যেতাম, নানা কথা বলতাম। আমার ছোটোভাইয়ের কাছে তিনি নিয়মিত যেতেন।

ছোটোভাই হোমিও ডাক্তারী পেশায় জড়িত। সুদীর্ঘ দা এবং তাঁর পরিবার ঔষধ আনতে মাঝে মাঝে আমার ছোটো ভাইয়ের কাছে যেতেন। সেই সূত্রেও তাঁর সাথে অন্তরঙ্গ ভাব গড়ে ওঠে। আমার ছোটোভাইও তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। বলতে গেলে তিনি আপন কোনো আত্মীয় না হলেও আমরা পারিবারিকভাবে দুই ভাই তাঁকে আপনই মনে করতাম।

তিনি এবং তাঁর পরিবারও আমাদের আপনের মতই ভাবতেন বোধকরি। তা না হলে এত আপ্যায়ন তো করতেন না! সুদীর্ঘ দা’কে কে খুন করেছে? রাজনৈতিকভাবেই বলি। তাঁকে সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই খুন করেছে। এই খবরটি পাবার পর আমার এক ছোটো ভাইয়ের সাখে কথা হচ্ছিল। সে বললো, এই খবরটি শোনার পরে জেএসএসএর সন্তু লারমা পক্ষের কর্মীদের অনেকের মধ্যেও তাঁর মৃত্যুতে আফশোশ বা হতাশা প্রকাশ করেছেন, তারা খুবই মর্মাহত হয়েছেন।

আর আমরা যারা একসাথে বিভিন্ন সময় কাজ করেছি, যারা তাঁকে চিনতাম তারা সবাই এখন শুধু আফশোশই করছেন না। বরং পাশাপাশি ক্ষোভ-রাগও প্রকাশ করছেন। এখন যারা তাঁর সহযোদ্ধা তারা কি এই হামলা ও মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শপথ নেবেন, অর্থাৎ আমরা কি রক্তের বদলে রক্ত ঝরতে দেখবো? আমি কার্যত জানি না এই সংঘাতের শেষ কোথায়। এই সংঘাতের তাত্ত্বিক ভিত্তিই বা কী আমার এখনো জানা নেই। আমার মতে এই সংঘাতের আদর্শিক বা তাত্ত্বিক ভিত্তি যা, তা হচ্ছে সমাজের গভীরে প্রোথিত সামন্তীয়-লুপ্ম্পেন সাংস্কৃতিক আর্থ-রাজনৈতিক ভিত ও চেতনাবোধ।

এই সংঘাতের এটিই মৌল ভিত্তি এবং পাশাপাশি শাসকগোষ্ঠীর ‘জুম্ম ধ্বংসের নীল নকশা’র ফাঁদে তো আমরা পা দিয়েছিই। আমার আজ আর রাজনৈতিক কোনো বিশ্লেষন করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সুদীর্ঘ দা’র ‘চুকচুক’ নামে এক ৭/৮ বছরের ছেলে রয়েছে। পারিবারিক আন্তরিকতার সূত্রেই জানি তাঁর স্ত্রী গর্ভে রয়েছে আরেক সন্তান। আজ আমার এক ছোটোভাই খাগড়াছড়ির মাহজন পাড়ায় তাদের বাসা থেকে ফোন করলো।

শুনলাম সুদীর্ঘ দা’র স্ত্রী-র আর্তনাদ। এর আগেও এই ধরনের আর্তনাদ শুনেছি। এখন দেখি মনটা এমন পাথর হয়ে যেতে বসেছে। কী আর বলবো! সবাইকে অনুরোধ জানাবো এই মৃত্যুর মাঝে যেন থাকে শক্তি। অনুরোধ থাকলো, যেন আমরা লড়াইকে আরো আপন করতে পারি।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.