আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তাক্ত রাজপথ জাতিসত্তার ভিতকে বিনষ্ট করে

রক্তাক্ত রাজপথ জাতিসত্তার ভিতকে বিনষ্ট করে ফকির ইলিয়াস ================================= আবারো কালো মেঘের ঘনঘটা। আশা, বাঙালি জাতির শেষ সম্বল। তা নিয়েই আছে মানুষ। কিন্তু আর কতো! আর কতো হানাহানির রাজনীতি! আর কতো ধ্বংসের লীলাখেলা! আরেকটি হরতাল হয়ে গেলো। বিএনপি বলেছে- সফল হরতাল হয়েছে।

মহাজোট সরকার বলেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই হরতাল হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নাকি ইংল্যান্ড, আমেরিকাতে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। এরা কারা? কার কার সঙ্গে দেখা করলেন তিনি? তা জাতি জানতে চায়। বিস্তারিত জাতিকে জানানো হোক। হ্যাঁ, দেশ এখন আবার সংঘাতের মুখোমুখি।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা সংসদে হতে পারে। এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনেই তত্ত্বাবধায়ক প্রথা বাতিল করা হচ্ছে। সেটাই যদি হয়, তবে আলোচনা কার সঙ্গে? বেগম জিয়া বলেছেন আলোচনার প্রস্তাব সরকারকেই দিতে হবে লিখিতভাবে।

এদিকে সংসদীয় বিশেষ কমিটি বলছে তারা সমঝোতার পথ খোলা রেখেই পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে । কিন্তু কিভাবে সেই সমঝোতা হতে পারে? যদি বিএনপি সংসদেই না আসে তবে কার সঙ্গে হতে পারে আলোচনা? এমন অনেক কথাই এখন দানা বাঁধছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির সুপারিশ করা হলেও বহুল আলোচিত এই ব্যবস্থাটি আগামীতে সংবিধানে থাকবে কি থাকবে না তা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তের ভার সংসদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ ও তাঁর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বহাল রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকছে প্রতিবেদনে। অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ উল্লেখ করে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে দুজন নির্বাচন কমিশনার বৃদ্ধি করে চারজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কমিটির ২২ নম্বর সুপারিশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে ‘২ক’ পরিচ্ছেদে (অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ কমিটির দুই সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আরো দুই মেয়াদে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তাঁরা এ বিষয়ে বিরোধী দলকে আলোচনায় আনার কথাও বলেছেন। এই দুই সদস্য সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ রাখায় প্রতিবেদনে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছেন । পত্রপত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, এই বিশেষ কমিটি ৫১ দফা সুপারিশমালা পেশ করছে মহান জাতীয় সংসদের কাছে। এর উল্লেখযোগ্য বিষয়াদির মধ্যে রয়েছে ’৭২ সালের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম রাখা হয়েছে। দেয়া হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগও।

তবে একই সঙ্গে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে এনে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কথাও বলা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও সুপারিশে সে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তাছাড়া বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ-িত হলে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা হারানো ও সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথাও বলা হয়েছে। কমিটির ২২ নম্বর সুপারিশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে ‘২ক’ পরিচ্ছেদে (অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ) বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে ৪৭ নম্বর সুপারিশে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ থেকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা’র সংজ্ঞা এবং অন্যান্য উপদেষ্টার অভিব্যক্তির সংজ্ঞাও বাতিল করা হয়েছে।

একইভাবে আরো যে কয় জায়গায় ‘প্রধান উপদেষ্টা’ এবং ‘উপদেষ্টা’ শব্দগুলো আছে সবই সংশোধন করা হয়েছে। বিশেষ কোনো অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া না হলেও কমিটি কয়েকটি সুপারিশের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে বলেছেন। চার নম্বর সুপারিশে সংবিধানের ৪নং অনুচ্ছেদের ক ও খ দফায় এ বিষয়ে উল্লেখ আছে। একইভাবে ৫১ নম্বর সুপারিশেও বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কমিটির সাত নম্বর সুপারিশে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নতুন অনুচ্ছেদ ‘৭ক’ যোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ। কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান বা তার কোনো অংশ রদ, বাতিল বা স্থগিত করলে বা এমন ষড়যন্ত্র করলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। তাছাড়া এ কাজে তাকে যারা সহযোগিতা করবেন, তার কাজের অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করবেন তিনিও একই অপরাধে অপরাধী হবেন।

প্রথম সুপারিশে সংবিধানের প্রারম্ভে, প্রস্তাবনার ওপরে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’ সংযুক্ত করা এবং একই সঙ্গে তার বাংলা অর্থ সংযোজন করতে বলেছেন। বাংলা অর্থ হিসেবে দুটি বিকল্প দেয়া হয়েছে। এতে ‘দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহের নামে/পরম করুণাময়, সৃষ্টিকর্তার নামে’ সংযোজন করা হয়েছে। সুপারিশে সংবিধানের ‘২ক’ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। ’ এর পাশাপাশি কমিটি একই সঙ্গে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ ৭২ সালের সংবিধানের মতো করে হুবহু ফিরিয়ে এনে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কথাও বলা হয়েছে।

এখানে কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হয়েছে। সংবিধানের এই অংশে রাজনৈতিক উদ্দেশে ধর্মীয় অপব্যবহার বন্ধের কথা বলা হলেও একই সঙ্গে ৩৮ অনুচ্ছেদে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে এছাড়াও প্রস্তাবনায় জলবায়ু সংক্রান্ত পরিবর্তন বিষয়ক সুপারিশ করা হয়েছে। সংবিধানের সুপারিশ অনুসারে ‘১৮ক’-তে এটি যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণের সুপারিশও করা হয়েছে। এর বাইরে সংরক্ষিত নারীর আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করার কথা বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বর্তমান সংসদ থেকেই এটি কার্যকর করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা ৩৪৫ থেকে বেড়ে ৩৫০-এ দাঁড়াবে। কমিটির ৫০ নম্বর সুপারিশে চতুর্থ তফসিলের ৩ক, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২ এবং ২৩ বিলুপ্ত করা হয়েছে। তার ফলে সব সামরিক ফরমান বাতিল হয়ে যাবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে সংসদ সদস্যদের কথা বলার স্বাধীনতার কথা বলা হলেও সুপারিশে তেমন কোনো ছাড় দেয়া হয়নি।

এর আগে কমিটি অনাস্থা, বাজেট ও অর্থ বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয় ছাড়া যে কোনো বিষয়ে সদস্যদের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সুপারিশে এর কিছুই রাখা হয়নি। তার ফলে যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সেই দল থেকে পদত্যাগ করলেও সংসদে সদস্যপদ চলে যাবে। প্রস্তাবনায় সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতিকেই সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হলেও তাঁরা সংসদের কাছে দায়বদ্ধ হবেন না।

বরং প্রধান বিচারপতি দুজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত কাউন্সিল যে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁদের প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন। একই সঙ্গে ৯৮ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর আর যাতে আইন পেশায় ফিরতে না পারেন সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। এই সুপারিশ গ্রহণ করা হলে অবসর গ্রহণের পর বিচারপতিরা বিচারবিভাগীয় বা আধা-বিচার বিভাগীয় পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদেও নিয়োগ লাভ করার অযোগ্য হবেন। তবে হাইকোর্টের বিচারকরা অবসরের পর আপিল বিভাগে ওকালতি করতে পারবেন। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে কিছুটা পরিবর্তন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও আরো চারজন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা দুজন। তাছাড়া বিদ্যমান আইনে কমিশনারদের সংখ্যা বেঁধে দেয়া নেই। যার কারণে ২০০৬ সালে সরকার ইচ্ছে মতো কমিশনার নিয়োগ দিতে পেরেছে। সরকারসহ বিশেষ কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বললেও এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ এখানে দেয়া হয়নি। সুপারিশে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে খানিকটা পরিবর্তন করে এক সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে।

দুই. এই লেখাটি যখন লিখছি তখন যে কোনো মুহূর্তে এই প্রস্তাবনা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রশ্ন হলো, এই প্রস্তাবনাগুলো কাদের অনুকূলে যাবে আর কাদের অনুকূলে যাবে না। বিষয়গুলো দেশের সাধারণ মানুষ বেশ ভালো করেই বোঝেন। কারণ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা দিক ইতোমধ্যেই দেখেছেন। আমরা খবর থেকে জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে এরশাদ জানিয়েছেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চান না। তবে মহাজোট যদি নতুন ফর্মুলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখতে চায়, তাহলে জাতীয় পার্টির সমর্থন থাকবে। ৭ জুন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী আবারো স্পষ্ট বলেছেন, মাননীয় এমপিদের উচিত হবে না উচ্চ আদালতের রায়ের বিপক্ষে কিছু করা। শেখ হাসিনা বলেছেনÑ সর্বোচ্চ আদালতের রায় যতোটুকু তিনি দেখেছেন, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর উপায় নেই। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিচারপতিদের সম্পৃক্ত না করার জন্য রায়ে বলা হয়েছে।

এই ব্যবস্থা রাখতে হলে নতুন ফর্মুলায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলকে সংসদে এসে প্রস্তাব দিতে হবে। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন,আগামী সংসদ নির্বাচন হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিংয়ে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে জনসমর্থনহীন কোনো পক্ষ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে বিষয়ে সরকার সতর্ক থাকবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরো শক্তিশালী করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ক্ষমতা দেবে। সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুব ভালোর দিকে গড়াচ্ছে তা বলা কঠিন। কারণ এ পর্যন্ত মহাজোট সরকার যা বলেছে, প্রধান বিরোধী দল তার সিকিভাগও মানবে বলে মনে হচ্ছে না। কথা হচ্ছে, তা হলে দেশের ভবিষ্যৎ কী? বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধন কমিটি গত ১০ মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে ২৭টি বৈঠক করেছে।

তবে তাদের কোনো সুপারিশই তারা আমলে নেয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, সরকার যাদের সঙ্গে আলোচনা করলো তাদের কোনো সুপারিশই গ্রহণ করলো না, সে ক্ষেত্রে বিএনপি প্রস্তাব দিলে যে গ্রহণ করবে তার নিশ্চয়তা কী? মনে রাখা দরকার রক্তাক্ত রাজপথ কোনো সমস্যার সমাধান দেবে না। আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আর এজন্য সহনশীলতার বিকল্প নেই। জাতিসত্তার ভিতকে বিনষ্ট করে, এমন কোনো কর্মই রাজনীতিকদের জন্য শোভনীয় নয়।

আবারো বলি, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে জাতির দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। ৮ জুন ২০১১ -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা / ১১ জুন ২০১১ শনিবার ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।