আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু বিদেশী মানুষ এবং দেশী আমি

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই বাংলাদেশের বাইরে পড়তে আসার অন্যতম বড় উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নরকমের মানুষ ভজন করা। আমরা গানে শুনেছি মানুষ ধর , মানুষ ভজ। একেকটা মানুষ একেকটা রহস্য। ভাজের পর ভাজ খুলতেই থাকে তবু কোন মানুষ পুরোপুরি উন্মোচিত হয় না। তবে ধারনা পাওয়া যায়।

ঢাকার পোলাপান অনেক আগে থেকেই ক শুনলেই কলকাতা বুঝতো, তসলিমা নাসরিনের ক বের হবার পরেও চেঞ্জ হয় নাই বরং এখন ক্যালিফোর্নিয়া বুঝি। সব মানুষেরই একটা "আউট লাইন" থাকে। দেশ, শহর, ভাষা এবং বয়স এরকম তথ্যের উপর ভিত্তি করে মানুষ সম্পর্কে আইডিয়া করা যায়। যাইহোক, মানুষের কথা বলি। বিদেশীদের সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল যে ওরা আমাদের ধারনার বাইরের চরিত্র।

এত চমক থাকবে যে বুঝতে হয়তো সময় লেগে যাবে। তবে আজ পর্যন্ত বিদেশীদের অস্বাভাবিক আচরনে চমকিত কমই হইছি বরং দুনিয়ার সব মানুষই যে খুব কাছাকাছি টিউন করা এটা দেখে বেশী অবাক হই। -------------------------------------------------------------------- যাই হোক, কিছু চমকের কথা বলি, প্রথমে চমক পাই চাইনিজ ছাত্র সু এর কাছ থেকে একদিন কিচেনে শুনতেছি, কি য্যান প্যানপ্যান করতেছে, "ইশু কুয়েছু আনায়,কিনিটু ছননআ" কিন্তু সুর পুরা মাইলসের "ফিরিয়ে দাও" গানটার। কান খাড়া করে শুনি সে আসলেই মাইলসের গান গাইতেছে!!! সুরটা এত ভাল ছিল যা অনেক বন্ধুর গলায়ও পাই নাই। পরে জানলাম বাঙ্গালিদের সাথে বন্ধুত্বের কারনে বেশ কিছু গানই সে জানে।

এটাই প্রথম তব্দা খাই বিদেশী'র আচরনে! প্রথম সেমিস্টারে পরিক্ষা দিতে গেলাম। হলে আমি ডানে-বামে, জানালা দিয়া বাইরে তকিয়ে দেখতেছি, হঠাৎ সু আমার পাশে এসে ঘাড় নিচু করে বলে, ছিন্না খওও, ছিন্না খওও! আমি বুঝতেছি না। আবার বলে, ছিন্তা খরোও। এবার বুঝলাম "চিন্তা করতে" বলতেছে!!!! আজ পর্যন্ত বিদেশী মানেই বাংলা জানে, আমে তোমাকে ভালাবাশি অথবা ক্যাওন আছো। কিন্তু চিন্তা করো!!!! চাইনিজের মুখে এরকম একটা কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না একদমই।

সু ই আমাকে সবচেয়ে বেশী সারপ্রাইজড করেছে বিদেশীদের মাঝে। =================================== সাধারন মানুষই বেশী- --এক ব্রিটিশ কেন যেন আমাকে গোয়ান্দা নিয়োগ দিতে চাইছিল। ওর বউ পরকীয়া করে কি না ? এটা বের করার জন্য সাহায্য চেয়েছিল। আমি বিরাট নৈতিকতার লেকচার দিয়েছিলাম ওকে। --অস্ট্রিয়ায় এক বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত অবস্থায় বাসস্ট্যান্ডে লাগানো এ্যাডটা খুটিয়ে দেখছিলাম।

১ মিনিট পরই ঐ ছবি'র মডেল সেখানে এসে হাজির। তাকে জানাইলাম যে আমার কাছে এ্যাডটা ভাল লাগছে, পরে একটা বাস মিস করে সে আমাকে কফি খাওয়ায় এবং জোরপূর্বক আমার বিলও পরিশোধ করেছিল। --আরেক ব্রিটিশ মেয়ে একবার ২০ টাকা ধার চাইছিল। কিন্তু দেই নাই কারন সুন্দরী যদি ফেরৎ না দেয় তাহলে আমি চাইতে পারতাম না! আর আমার সন্দেহ ছিল সে ফেরৎ দিবে না। --আর এক আরব আমার কাছ থেকে ৫ ইউরো ধার নিয়ে পালায়ে গেছে।

ওরে দেখতেছিনা কোথাও ইদানিং। ভাবতেছি নাইজেরিয়ানটার মত ওরে দেখা মাত্রই মোবাইল সিজ করমু। --এক জার্মান কনভার্ট মুসলিম লোক প্লেনে বলছিল, বাংলাদেশ পাপীস্থান থেকে আলাদা হলো কেন? মুসলিম দেশ হিসেবে একসাথে থাকলে ভালো হইতো -সাড়ে ৩ ঘন্টা'র ফ্লাইটের অর্ধেকটা সময় ধরে তারে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার পর সে বললো, আমি দুঃখিত এবং জীবনে কোনদিন পাপীস্তানের পক্ষে কিছু বলবো না। -- কুর্দিশ কিছু গান শুনার অভিজ্ঞতা এবং কুর্দিদের প্রতি আমার ও সাবেক বিচারপরতি হাবিবুর রহমানের সমর্থনের কথা জানার পর এক কুর্দি ওয়াদা করছে যে, কুর্দিস্থান হলে আমারে অনারারি সিটিজেন করবে। ===================================== এখন আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে পৃথিবী'র সব মানুষের চিন্তা চেতনা আসলে একই রকম, শুধু ভাষাগত কারনেই বুঝতে সমস্যা হয় নইলে সবাই একই অনুভুতি সম্পন্ন মানুষ।

তবে, এটা স্বীকার করতেই হয় বাঙ্গালিদের বুঝার মত ক্ষমতা এখনো হয় নাই আমার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।