আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বাজেট পেশ এবং বাজেট ঘাটতি

সব কথা বলা যাবে, সত্যটা বলা যাবে না। ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স শেষ করেছি। নিজের মধ্যে পরিচালক ভাব ঢুকে গেছে। কিন্তু কেউ ডাকছেন না। টিভি চ্যানেলে যাচ্ছি।

সেখানে মামা খালুওয়ালারা পকেটে বলপেন আর প্যান্ট ইন করে ঘুরে। দেখে বোঝা যায়, সদ্য গ্রাম থেকে এসে চাকরিতে জয়েন করেছে। তাদের কাছে গেলে বলে স্ক্রিপ্ট কি জিনিস চিনি না। সিডি নিয়ে আসুন। জমা দিন, আর মালপানি ছাড়ুন।

ব্যবস্থা করব। অনেক দেনদরবার করে সিদ্ধান্ত নিলাম নাটক একটা বানিয়ে দেখাব। আমাদের মধ্যে ফরহাদ ভাই টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষ। শেয়ার মার্কেটে ভালো ইনভেস্ট আছে। তাছাড়া নাটক-সিনেমার প্রতি তার আলাদা দুর্বলতা আছে।

ঘরভর্তি বাংলা ছবির সিডি। তাকে অনেক বোঝালাম। এক শর্তে রাজি হলেন তিনি। তাকে নায়ক বানাতে হবে। ফরহাদ ভাই চিকন মানুষ।

তাছাড়া চেহারার মাঝে বলদ বলদ ভাব আছে। বলদ টাইপের স্বামী মেয়েদের নাকি পছন্দ! তাহলে তিনি হিট নায়ক হতে সমস্যা কি। কথা বলেন হেলেদুলে। আমরা রাজি হলাম। কারণ হিমেশ রেশমাইয়্যা নিজেই একজন সাইলেন্স প্রডিউসার।

তাছাড়া ফরহাদ ভাই আমাদের পাড়ার হামিদাকে ভালোবাসে। তার রবিউল বডির কারণে হামিদা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আমরা হামিদাকে অনেক বুঝিয়েছি। কাজ হয় না। এবার তিনি হামিদাকে দেখিয়ে দেবেন।

আমাকে বললেন বাজেট তৈরি করে দিতে। সারারাত খেটে বাজেট তৈরি করলাম। দু’দিন অনেক কাটাকাটির পর বাজেট এক লাখ বিশ হাজার টাকায় এসে ঠেকল। আর এক্সট্রা খরচ সঙ্গে পাঁচ হাজার। ফরহাদ ভাই শেয়ার বেচে টাকা ম্যানেজ করে ফেললেন।

নাটকের শুটিং হবে। কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। একজন খল অভিনেতাকে ধরলাম। তার নামটি বললে সবাই চিনে ফেলবেন। ধরুন তার নাম বশির খান।

বশির ভাই নিজ কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিলেন সব ব্যবস্থার। শুটিং কক্সবাজারে হবে। প্রথম তাকে নিয়ে টিকিট কাটতে গেলাম। বশির ভাই বললেন, আর্টিস্টের জন্য এসি বাসের টিকিট কাট। আর স্টাফরা আসবে নন এসি বাসে।

—সবাই এক সঙ্গে যাই। সবাই এসি বাসে গেলে ভিআইপির মর্যাদা থাকবে? আমরা আর্টিস্টরা হলাম ভিআইপি। আমাদের এসি বাসের ব্যবস্থা কর। নয়তো দেখবে নায়িকা যেতে চাইবে না। বশির ভাই, নায়িকা ও তার দুই বান্ধবীসহ এসি বাসে চড়ে চলে গেলেন।

আমরা টাকা বাঁচিয়ে কম টাকার টিকিটের গাড়িতে উঠলাম। হোটেলেও ভিআইপিদের জন্য এসি রুম। আর আমরা নন এসি। ফরহাদ ভাইকে চাইলাম ভিআইপির মর্যাদা দিতে। তিনি খরচে কোটেশন দেখে ভয়ে অস্থির।

তিনি পারলে হোটেলের বারান্দায় থাকেন। বশির ভাই আমাকে ডেকে বললেন, কক্সবাজার এসেছি কি নোনা পানি খাইতে? —আমি মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা করছি। —তুই পানি আনতে তিন হাজার টাকা দে। —এখানে মিনারেল ওয়াটারের এত দাম! —এই লাইনে আসছ জান না। পাগলা পানি ছাড়া এই লাইন অচল।

বশির ভাই দু’বোতল পাগলা পানি নিয়ে নায়িকার রুমে ঢুকলেন। আর বের হচ্ছেন না। তাকে রিকয়েস্ট করেও লাভ হলো না। আমি হলাম বই পড়া ডিরেক্টর। কোথাও পাইনি।

পাগলা পানি খেয়ে শুটিং করতে হবে। নায়িকার এক বান্ধবী আমাকে একটু পরপর বলে চলেন সাগর থেকে গোসল করে আসি। আপনি পেরেশানির মধ্যে আছেন। মাথা ঠাণ্ডা করেন। আমার পেরেশানি ধরতে পারল মেকআপম্যান আব্বাস ভাই।

তিনি বললেন, যান মাথা ঠাণ্ডা করে আসেন। আমি ডিরেকশন দিই। আমি একটা রিকশা নিয়ে একজন নায়িকাসহ চলে গেলাম সাগরের দিকে। মেকআপম্যান আব্বাস ভাইয়ের ডিরেকশনে শুটিং চলছে। তিনি গুণী মানুষ, চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফরহাদ ভাই অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝরাতে নতুন নাটক শুরু হলো। প্রোডাকশন বয় আর সহকারী ক্যামেরাম্যান পাশাপাশি রুমে শুয়েছে। তাদের টয়লেট একটা। এই টয়লেট নিয়ে দুই দলের মধ্যে শুরু হলো মারামারি।

মারামারি করে হোটেলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে নির্বিচারে। আতঙ্কিত লোকজন হোটেল ছেড়ে পালাল। পুলিশ এলো। রুম তল্লাশি। শেষে ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল থানায়।

শুটিং বন্ধ। আমরা থানায় গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলাম। যেখানে এক্সট্রা খরচ ধরেছিলাম ৫ হাজার টাকা, শুটিং শেষে দেখি ৭৫ হাজার টাকায় ঠেকেছে। ঢাকা শেয়ারবাজার শুয়ে পড়েছে। ফরহাদ ভাই অলরেডি নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

টাকার অভাবে এডিটিং করাতে পারছি না। ফরহাদ ভাই থামবার পাত্র না। তিনি চাচার বাসায় থাকেন। চাচার কাছ থেকে আরও ৩৫ হাজার টাকা ধার নিলেন। চাচাকে কথা দিলেন, নাটক অনএয়ার হলেই তার টাকা ফেরত দেবেন।

এখন নাটক নিয়ে আমরা সমানে বিভিন্ন চ্যানেলে দৌড়াচ্ছি। চ্যানেলগুলো আমাদের যা টাকা দিতে যাচ্ছে তা দিয়ে নাটক বানানো তো দূরের কথা, পাগলা পানির দামও উঠবে না। কৃতজ্ঞতায়ঃ আমার দেশ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.