আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প: ফারিয়া

ভাল আছি ১ একে তো রান্না ঘরে যাওয়ার অভ্যাস নেই তৃষার। তার উপর আবার ড্রাইভারের জন্য চা বানাতে একটুও ইচ্ছা করছেনা। রাগে মাথা পুরা গরম হয়ে আছে। নিজেকে ফারিয়ার বান্ধবি ভাবতেও লজ্জা লাগছে। বড়লোকের মেয়ে ফারিয়ার গরিবের প্রতি ভালোবাসার অভাব কখনোই ছিলনা, তাই বলে এভাবে ড্রাইভারের সাথে প্রেম , মানুষের বিলাসিতার একটা লিমিট থাকা উচিত।

তৃষা কেবল এক কাপ চা বানাবে এবং ফারিয়া কে দেবে। আর কাউকে নয়। এভাবে ড্রয়িংরুমে বসে বাসার ড্রাইভারের সাথে প্রেম করছে তার বান্ধবি ! ভাগ্যিস বাসায় কেউ নেই । ভাইয়া যে কেনো আসছেনা? অন্যদিন তো এসময় গাড়ি ভাইয়ার অফিসে থাকে, আজ ভাইয়ার যেন বাসায় আসার কোনো তারা নেই। ইদানিং ভাইয়া প্রায়ই অন্য এক কলিগের গাড়িতে চলে আসে।

চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই উঠে দাঁড়ালো সাব্বির ভাই( ড্রাইভার)। ভাইয়ার আদেশ তাকে আবার ড্রাইভার বলা যাবেনা, সাব্বির ভাই বলতে হবে কারন সে ভাইয়ার কোনো এক বন্ধুর দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। তিনি নাকি আবার গ্রাজুয়েট। গ্রাজুয়েট তো বাবা অফিসে চাকরি কর না, অন্যের গাড়ি চালাস কেন? যদিও ভাইয়ার ড্রাইভারের যা বেতন হয়ত অফিসিয়াল জব করেও এতটা বেতন সে পেতনা। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতোনা ছেলেটাকে, ভাইয়ার বয়সই হবে, স্মার্ট, দেখতে সুন্দর, লম্বা-ফর্সা।

একদম জেন্টলম্যান টাইপের একজন মানুষ, ড্রাইভার হিসাবে ঠিক মানায়ই না । কিন্তু এভাবে ফারিয়ার সাথে নিজেকে জরানোর পর থেকে তৃষার আর একটুও ভালো লাগছেনা। ফারিয়া না হয় অবুঝের মত কাজ করছে কিন্তু সাব্বির ভাই তো আর অবুঝ না। থ্যন্কস গড। ভাইয়া ফোন করেছে।

সাব্বির ভাই ফারিয়া কে বাসায় ড্রপ করে ভাইয়া কে আনতে যাবে। ভালোই হয়েছে ভাইয়া ভাবি আসার আগেই আপদ বিদায় হয়েছে। ফারিয়া চা না খেয়েই রওনা দিয়ে দিল। আসলে চা খেতে চাওয়াটা ছিল ওকে ওখান থেকে সরে যেতে বলার একটা বাহানা। প্রেমে পড়লে মানুষগুলো সব ছাগল হয়ে যায়।

আরে আমি কি ওদের মাঝে বসে থাকতাম নাকি? নাহ্‌ মাথাটা কিছুতেই ঠান্ডা রাখতে পারছেনা তৃষা । চা হাতে নিজের বেডরুমের দিকে রওনা দিতে যাবে হঠাৎ নীল খামটার দিকে চোখ গেল। লুবন সবসময় নীল খামে চিঠি পাঠায়। চিঠি পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। লুবনের সাথে বিয়ের পর তৃষা খুব অবাক হয়েছে।

তৃষার জিবনে প্রেমের কোনো অভিজ্ঞতা ছিলনা। তবে লুবনের সাথে বিয়ের পর মনে হচ্ছ যেন সে লুবনের প্রেমেই পড়েছে। তৃষার মনে হয় বিয়ের আগেও ওকে দেখলে প্রেমে পড়ে যেত। এত সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করে। গানের গলাও চমৎকার।

পাত্র ইউনিভার্সিটির টিচার শুনে তৃষার বিয়েতে একটু আপত্তি ছিল। মনে হয়েছিল খুব বুকিশ টাইপের মানুষ হবে নিশ্চই। কিন্তু প্রথম দিন দেখা করেই সব ভুল ভেঙে গিয়েছে। এত রোমান্টিক ছেলে লুবন যে তৃষা আর না করতে পারেনি। বিয়ের আ্যরেন্জমেন্ট হতে হতে লুবনের ছুটি শেষ হয়ে এসেছিল।

তাই বিয়ের তিন দিন পরই লুবন অকল্যান্ড ফিরে গিয়েছে। ও সেখানে পি, এইচ, ডি স্টুডেন্ট। যাবার পর থেকে দু এক দিন পরপরই লুবনের চিঠি আসে। ফোন করে প্রতিরাতেই। মাঝে মাঝে সারারাত কেটে যায় দুজনে কথা বলে।

সামনের মাসে পরীক্ষা। এবার রেজাল্টের কিযে অবস্থা হবে। তার উপর আবার ফারিয়া যা শুরু করছে। তাকে বাসা থেকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে যাওয়া , বাসায় পৌছে দাওয়া সব মিলিয়ে রাস্তায়ই চলে যাচ্ছে অনেক সময়। চা টেবিলে রেখে বিছানায় চলে গেল তৃষা।

খুব টায়ার্ড লাগছে। শুয়ে শুয়ে লুবনরে চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরও পায়নি। ঘুম ভাঙলো লুবনেরই ফোনে। রাত তখন প্রায় বারোটা বাজে। ২ সকাল সকাল ফারিয়া এসেছে।

সকাল আর কই এগারোটা বাজে ঘড়িতে। কিন্তু বিছানা থেকে উঠতেই ইচ্ছা করছেনা। দুদিনের জ্বরে শরীরটা খুব দুর্বল হয়ে গেছে। রাতে ফোনে লুবনের সাথে কথা বলতে বলতে কখন কিভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই। ছি ছি লুবন কি ভাববে ।

বেচারা হয়ত কথা বলতে বলতে লক্ষ করেছে এপাশে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। ভাবতেই লজ্জা লাগছে এখন। লুবন এসময় ব্যস্ত থাকবে, ফোনে পাওয়া যাবেনা। একটা মেইল অন্তত করে রাখা দরকার। ফারিয়া পাশে বসে মিট মিট করে হাসছে।

কাল বিকেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় দেখলাম পুরোনো ড্রাইভার হাসেম ভাই ফিরে এসেছে। তার মানে কি ফারিয়া সাব্বির ভাই কে নিজের গাড়ি চালানোর জন্য আ্যপয়নমেন্ট দিয়েছ । ও কি এটাই জানাতে এসেছে। ব্রেকফাস্ট ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, মেইল টা না করা পর্যন্ত মাথা কাজ করছেনা। চা হাতে কম্পিউটারের সামনে এসে মেইলবক্স ওপেন করে অবাক লাগছে।

রাতে মেইল করেছে লুবন। তৃষা চিঠিটা যখন লিখছি তখন তুমি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরছ। প্রতিনিয়ত তোমার কন্ঠস্বরের যে পরিবর্তন হচ্ছে আমি যেন তা থেকে তোমার একটা ছবি আঁকছি। মনে হচ্ছে তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাচ্ছ আর আমি তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে কখনও বোঝানো যাবেনা।

একটা কথা তোমাকে কদিন ধরে বলব বলব ভাবছি, অপেক্ষা করছিলাম একেবারে কনফার্ম হয়ে তারপর বলব। নেক্সট উইকটা খুব ব্যস্ত কাটবে আমার। তোমাকে হয়ত এতটা সময় দিতে পারবোনা। বুধবার যাচ্ছি রোম, একটা কনফারেন্স আ্যটেন্ড করতে। যাবার আগে রিসার্চ এর একটা পার্ট সাবমিট করে যেতে হবে ।

এখনও কিছু কাজ বাকি আছে । দোয়া কর পেপার জমা দিয়ে যেতে পারলে রোম থেকে সোজা ঢাকা। লুবন ফারিয়ার সাথে গত দুদিন কোনো যোগাযোগ হয়নি। ফারিয়াও ফোন করেনি। এখন হঠাৎ এসে বলছে সন্ধ্যায় ওর এংগেজমেন্ট।

এখনি ওর সাথে বের হতে হবে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। বিয়ে কার সাথে জানতে চাইলে বলল বাবার সেই বন্ধুর ছেলে, বাংলাদেশে ইউ এন ডি পির কান্ট্রি ডিরেকটর। স্ট্রেন্জ ফারিয়া (নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলোনা তৃষা) এই সেদিন বললি এভাবে না দেখে কাউকে বিয়ে করবিনা। বাবা কে বলে দিয়েছিস তার বন্ধুকে না বলে দিতে।

তারপর সাব্বির ভাইয়ের সাথে জড়ালি নিজেকে, এখন আবার সেই ছেলেকে বিয়ে করছিস। আমি সাব্বির ভাইয়ের ব্যাপারটা পছন্দ করিনি ঠিকই তবে এবার তুই যা করছিস তা আরও বড় ভুল করছিস। ফারিয়া: উহ তৃষা এত জ্ঞান দিসনা তো। আ্যকচুয়ালি আই আ্যম আউট অফ কন্ট্রোল নাউ। তুই এখন আমার সাথে যাবি।

একটা জামদানী শাড়ি কিনব। এংগেজমেন্ট রিং কিনবো। তারপর সোজা পার্লারে। বসুন্ধরা সিটি থেকে কেনাকাটা শেষ করে গাড়ি ছুটছে ধানমন্ডি ২৮ এ ফারজানা শাকিলস্‌ এর উদ্দেশ্যে। ফারিয়া: জানিস এর মধ্যে একদিন মেঘনা রিসোর্ট গিয়েছিলাম।

রিসোর্ট পর্যন্ত ইনফ্যাক্ট যেতে পারিনি। বর্ষায় চারিদিকে পানির মধ্যে ভেসে থাকা একটা দ্বীপের মত লাগছিল। নৌকায় যেতে সাহস হয়নি তাই দূর থেকে দেখেই চলে এসেছি। এত সুন্দর যে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতামনা আমাদের দেশে এমন ট্যুরিস্ট স্পট আছে। লুবন ভাই আসলে একবার ঘুরে আসতে পারিস।

তৃষা: সাব্বির ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলি? ফারিয়া: হুমম। হি ইজ সো রোমান্টিক । ফারিয়া: তৃষা তোর কাছে লোকটাকে একবারের জন্যও কেমন অস্বাভাবিক মনে হয়নি? তৃষা: অস্বাভাবিক মনে হবার কি আছে। ভালোই তো ছিলেন । একজন পারফেক্ট জেন্টলম্যান টাইপের মানুষ।

ড্রাইভারের চাকরি নেয়াটা ভদ্রলোকের ঠিক হয়নি। ফারিয়া: হুমম । ৩ পার্লার থেকে তৃষা সোজা বাসায় চলে এসেছে। শরীরটা একটুও ভালো লাগছেনা। মনে হয় আজকেও জ্বর আসবে।

মনটাও ভালো লাগছেনা। এইতো মাস কয়েক আগের কথা, ফারিয়া একদিন গল্প করলো ওর বাবা তার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। তখন তৃষাই বলেছিল রাজি হয়ে যেতে । ফারিয়া কিছুতেই রাজি হলনা। গিজার অন করে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে গেল তৃষা।

খুব ভালো লাগা John Denver এর গান গুলো সিলেক্ট করে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। তৃষার ভালো লাগে শাওয়ার ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে। মনে হয় যেন ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার একটা অনুভূতি। জ্বরের ভয় থাকলেও শাওয়ার বন্ধ করতে ইচ্ছা করছেনা । বৃষ্টির সাথে John Denver এর সুর মিলেমিশে মনে হচ্ছে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা কোনো এক ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

You fill up my senses like a night in the forest like the mountains in springtime, like a walk in the rain like a storm in the desert, like a sleepy blue ocean you fill up my senses, come fill me again ভাবির ডাকাডাকিতে হঠাৎ চমকে উঠলো তৃষা। তাড়াতাড়ি বের হয়ে দেখে ভাবি বেশ পরিপাটি করে সেজে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবি: কি ফারিয়ার এংগেজমেন্টে যাবেনা? কি করবে তৃষা ঠিক বুঝতে পারছেনা। না গেলেও ফারিয়া রাগ করবে আবার যেতেও ইচ্ছা করছেনা। ভাবি: জলদি তৈরী হয়ে নিচে এসো, তোমার ভাইয়া তোমার জন্য ওয়েট করছে।

ফারিয়া নিশ্চই ফোন করেছিল বাসায়। তা না হলে ভাবি জানলো কোথা থেকে। এখন না গেলে ভাইয়া কারন জানতে চাইবে। সাব্বির ভাইয়ের ব্যাপারটা কোনো ভাবেই ভাইয়াকে বুঝতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু তৃষার বার বার সাব্বির ভায়ের কথা মনে পরছে।

অনেকদিন পর আজকে ভাইয়া ড্রাইভ করছে। একটা সুন্দর পান্জাবি পরেছে ভাইয়া। ভাবিকেও খুব ভালো লাগছে। ভাবি অবশ্য সবসময়ই হলকা সাজগোজ করে আর সেজন্যই হয়ত ভাবিকে তৃষার এত ভালো লাগে। সংসার জীবনের কথা চিন্তা করতে গেলে ভাবিই তৃষার একমাত্র আইডল্‌।

হোটেল র্যা ডিসন ওয়াটার গার্ডেনে ফারিয়ার প্রোগ্রাম। তৃষার আসতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। এর মধ্যে তিনবার ফোন করেছে ফারিয়া। ভাইয়া ভাবিকেও ইনভাইট করেছে মেয়েটা। ফারিয়া কে গোল্ডেন জামদানিতে কিজে সুন্দর লাগছে।

কিন্তু পাত্র দেখে তো তৃষার আর একটু হলেই সেন্সলেস হয়ে যাবার মত অবস্থা। স্টেজে ফারিয়ার পাশে সাব্বির ভাই। ভাইয়া ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। তার মানে ফারিয়ার আ্যরেন্জ ম্যারেজ এ আপত্তির কারনে সাব্বির ভাইয়ের এই ড্রাইভার সাজা। ভাইয়া সবই জানে।

তৃষার খুব লজ্জা লাগছে। ফারিয়া নিজেই স্টেজ থেকে নেমে এসে তৃষা কে সাথে করে নিয়ে যেয়ে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল ড্রাইভার সাহেবের সাথে । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।