আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেম প্রতারণার প্রতিশোধ

নাজমুল ইসলাম মকবুল প্রেম প্রতারণার প্রতিশোধ (আজকের মানবজমিন থেকে সংকলিত) ভালবাসার মানুষকে আপন করে নিতে চেয়েছিল নাদিয়া। দীর্ঘদিনের প্রেম, ভালবাসা এক সময় রূপ নেয় শারীরিক সম্পর্কে। বিয়ে না করেও প্রেমিক মতিন রাতের পর রাত কাটিয়েছেন নাদিয়ার সঙ্গে। আর যখন বিয়ের সময় আসে তখনই নাদিয়া জানতে পারেন মতিন বিবাহিত, তার সন্তান রয়েছে। প্রেম রূপ নেয় আক্রোশে।

ক্ষুব্ধ নাদিয়া প্রতিশোধ নিতে মতিনের ৩ বছরের সন্তান লাবণ্যকে জবাই করে। মর্মন্তুদ এ ঘটনা ঘটে গতকাল রাজধানীর কলাবাগান এলাকায়। নাদিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সে অকপটে স্বীকার করেছে ঘটনার আদ্যোপান্ত। পুরো নাম বিলকিস আক্তার নাদিয়া।

বাড়ি রংপুরে। পেশায় নার্স। চাকরি করে ধানমন্ডির ডিফান্ড হাসপাতালে। এ হাসপাতালের পাশে একটি দোকান থেকে নিয়মিত মোবাইল ফোনে ফ্লেক্সিলোড করতো নাদিয়া। এ দোকান থেকেই নাদিয়ার ফোন নাম্বার নিয়ে মতিন ভাব জমায় তার সঙ্গে।

তারপর মন দেয়া-নেয়া। কথা ছিল দু’জন বিয়ে করবে। সুখের সংসার গড়বে। কিন্তু বিয়ের কথা বলতে গিয়ে ফাঁস হয়ে পড়ে সব। কলাবাগান থানা হাজতে বসে নাদিয়া জানায়, দু’বছর আগে মতিন নামের জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়।

দু’বছরের সম্পর্কে মতিন তার সঙ্গে স্ত্রীর মতো আচরণ করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের কথা বললেও রাজি হয় না। রোববার মতিনকে বিয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বলে সে। কিন্তু মতিন তাকে জানিয়ে দেয় তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এতে নাদিয়া প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট পায়।

নাদিয়া বলে, এরপর আমি নানা পরিকল্পনা করতে থাকি। সিদ্ধান্ত নিই এমন কিছু করবো যাতে মতিন সারাজীবনের জন্য কষ্ট পায়। আমার ফাঁসি হয় হোক। আমি অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করি মতিনের বাচ্চাকে খুন করবো। খুনের দায়ে আমার ফাঁসি হবে।

মতিনও সারাজীবন কষ্ট পাবে। সে অনুযায়ী ব্যাগে একটা ধারালো ছোরা ভরে রাখি। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় মতিনের ৮৩ ক্রিসেন্ট রোডের বাসায় যাই। দেখি কাজের মেয়ে মতিনের মেয়ে লাবণ্যকে দুধ খাওয়াচ্ছে। মতিনের স্ত্রী রিতা বাজারে গেছে বলে জানায় কাজের মেয়েটি।

আমি তাকে এক গ্লাস পানি আনতে বলি। সে যখন পানি আনতে অন্য ঘরে যায় তখনই ছুরি বের করে লাবণ্য’র গলায় চালিয়ে দিই। এর মধ্যেই কাজের মেয়ে পানি নিয়ে চলে আসে। সে ঘরে রক্ত দেখে চিৎকার করতে শুরু করে। মতিনের ভাই আজাদ বলে, কাজের মেয়ের চিৎকার শুনে আমি অন্য ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি লাবণ্য’র গলা কাটা।

রক্তে ঘরের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। তখনই নাদিয়াকে ধরে ফেলি। এরপর অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন পুলিশ ডেকে আনে। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। লাবণ্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।

নাদিয়া বলে, গত ২০শে মে মতিন আমাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যায়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে আমরা হোটেল লংবিচে ৩ রাত কাটাই। আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়। কিন্তু মতিন একবারও বলেননি সে বিবাহিত এবং তার স্ত্রী সন্তান রয়েছে। রোববার মতিন আমাকে নিয়ে রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরতে যায়।

তখন আমি তাকে বলি, ‘তুমি আমার সঙ্গে স্ত্রীর মতো আচরণ করেছ। তুমি আমাকে বিয়ে না করলে কে বিয়ে করবে? তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে বলি। মতিন আমাকে বলে, রাতে সে সিদ্ধান্ত জানাবে। পরে অনেক রাতে সে ফোন করে বলে, সে বিবাহিত। তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।

তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তখন তাকে আমি বলি, তুমি আমার সঙ্গে এত বড় প্রতারণা কেন করলে? সে বলে, তোমাকে আমার ভাল লাগে। তাই ভালবেসেছি। কিন্তু বিয়ে অন্য জিনিস। মনের আবেগে অনেক কথা বলা যায় কিন্তু বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

মতিনের কথা শুনে আমার মাথায় খুন চেপে যায়। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তখনই আমি ওর বাচ্চাকে খুন করার পরিকল্পনা করি। মতিনের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ার বর্ণনা দিয়ে নাদিয়া বলেন, আমি যে হাসপাতালে চাকরি করি তার পেছনে একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান আছে। সেখান থেকে আমি নিয়মিত ফ্লেক্সিলোড করতাম।

একদিন ওই ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে মতিন আমার নাম্বার নিয়ে ফোন করে বলে, সে আমার বন্ধু হতে চায়। এরপর সে প্রতিদিনই ফোন করতো। এক পর্যায়ে আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাকে সে কোনদিনই বলেনি, সে বিবাহিত। কলাবাগানের ৮৩ ক্রিসেন্ট রোডের ওই বাসার দারোয়ান আবদুল কুদ্দুস জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি মেয়ে এসে বলে, সে মতিন সাহেবের আত্মীয়।

তার ফ্ল্যাটে যাবে। মেইন গেইট খুলে দিলে সে তেতলায় মতিনের ফ্ল্যাটে যায়। এর কিছুক্ষণ পর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমি উপরে গিয়ে দেখি রক্ত। কলাবাগান থানার ওসি এনামুল হক বলেন, পরকীয়ার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। নাদিয়া অকপটেই সব দোষ স্বীকার করেছে।

এ বিষয়ে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন মতিনের স্ত্রী। ওদিকে মতিন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। সুত্র: মানবজমিন Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.