আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিরাজ শিকদারঃ বিপ্লবের কবি

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই। বিপ্লবের কবি সিরাজ শিকদার তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন, "আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের; জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়। " মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষাকারী পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী পুর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের অধিকাংশের উপর নির্ভর করে পূর্ববাংলাকে উপনিবেশে পরিণত করেছে এবং একে শোষণ ও লুন্ঠন করছে। পূর্ববাংলার সমাজ তার বিকাশের নিজস্ব নিয়মেই জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বৈদেশিক শোষণের অবসান এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্তবাদকে উত্খাত করে পূর্ববাংলায় বুর্জোয়া বিকাশের শর্ত সৃষ্টির লক্ষ্য সামনে রেখে এগুচ্ছে।

সিরাজ শিকদার তার লক্ষ্য এমনভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথাগত আন্দোলনের বাইরে গিয়ে সূচনা করেছিলেন এক নতুন ধরণের সংগ্রাম। বাংলাদেশের মুক্তির জন্য, বাংলার অসহায় মানুষের মুক্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। সিরাজ শিকদার অধ্যায়কে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। সিরাজ শিকদারের অস্তিত্বকে মুছে ফেলা হয়েছে বাংলার ইতিহাস থেকে।

কিন্তু ইতিহাস কখনো মিথ্যে বলেনা। ইতিহাস তার নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্যটা একদিন প্রকাশ করবেই। কি চেয়েছিলেন সিরাজ শিকদার? ১৭ ই এপ্রিল গঠিত হল মুজিবনগর সরকার, সিরাজ শিকদার নতুন গঠিত সরকারকে তাঁর অভিপ্রায় জানালেন, "পূর্ববাংলার জনগণ ও পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন মনে করে, পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থের সত্যিকার প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের নিম্নলিখিত সর্বনিম্ন সুনির্দিষ্ট নীতিসমূহ পালন করতে হবে। *এই সরকার অবশ্যই একটি কোয়ালিশন সরকার হবে যেখানে সংগ্রামরত পূর্ববাংলার বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, ধর্মীয়-ভাষাগত-উপজাতীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। *পূর্ববাংলার সর্বস্তরে এ সরকার স্থাপনের নিমিত্ত পূর্ববাংলার সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রামের পরিচালনা ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য পারস্পরিক স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যতার ভিত্তিতে একটি জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট স্থাপন করা; এতে সংগ্রামরত পূর্ববাংলার সকল প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, ধর্মীয়-ভাষাগত ও উপজাতীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি গ্রহণ করা।

*এ সরকার ও মুক্তিফ্রন্ট কর্তৃক পূর্ববাংলার পরিপূর্ণ মুক্তির জন্য গণযুদ্ধের পথ গ্রহণ করা ও তাতে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকা। " মুক্তিযুদ্ধে সিরাজ শিকদারের অবদান কতটুকু তা নিয়ে কারো চিন্তা করার অবকাশ হয়নি। অনেকেই অনেক খেতাব পেয়েছেন, কিন্তু সিরাজ শিকদার দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হলেন ইতিহাসের কাছে। সিরাজ শিকদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের রুখে দাড়াতে বললেন। "পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও তার পদলেহী কুকুর পূর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতকরা পূর্ববাংলার অধিকাংশ জেলা, মহকুমা শহর দখল করেছে এবং সেখানে নিজেদের দখল বজায় রেখেছে।

যে কয়টি জেলা বা মহকুমায় তাদের অধিকার কায়েম হয়নি তা অচিরেই তারা দখল করবে। শহরে আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই.পি.আর, পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ছে। শহরে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী তাদের ফ্যাসিবাদী বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে এবং ভেঙ্গে যাওয়া বেসামরিক প্রশাসন পুনরায় চালু করার জন্য এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য-লুন্ঠন চালাবার চেষ্টা করছে। পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা সাহসী হোন, জাতীয় মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলুন। ইয়াহিয়া-টিক্কার ধ্বংস অনিবার্য।

আমাদের বিজয় অনিবার্য। " স্বাধীনতা এলো। সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ-বাঁধা অবস্থায় ঢাকাস্থ রমনা রেসকোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয়। তারপর ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পরদিন পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। এখন যেমন ক্রসফায়ার নিয়ে খবর লেখা হয় ঠিক তেমনি লেখা হয়েছিল। ইতিহাস একদিন সত্য উদঘাটন করবে সময় সেই প্রতীক্ষায়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.