আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামে সুফিবাদ বা ধর্মীয় সাধনা

A candy-colored clown they call the Sandman.Tiptoes to my room every night.Just to sprinkle stardust and to whisper "Go to sleep, everything is all right" অতপর তারা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম আর আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম বিশেষ জ্ঞান(১৮:৬৫) সুফি শব্দের উৎস আরবি 'সুফ' থেকে যার অর্থ উল বা পশম। মতভেদে গ্রিক শব্দ সোফিয়া(Sophia) থেকে এর উৎপত্তি বলে ধারনা করা হয় যার অর্থ জ্ঞান । খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের মত মুসলিম সাধুগন সংসার ত্যাগ করে লম্বা পশমের কম্বলকোট পরিধান করে আত্বশুদ্ধির (ফানা স্তর) মাধ্যমে নিজেকে স্রস্টার মাঝে বিলিয়ে(বাকা স্তর) দিত। বর্তমানে সংসার ধর্ম ঠিক রেখে সুফি সাধনা হচ্ছে। মহানবী নিজেও হিরা পর্বতে সাধনায় লিপ্ত ছিলেন স্রস্টাকে পাওয়ার আশায়।

যদিও তিনি বৈরাগ্যবাদ নিষেধ করেছিলেন আর যুহুদের বিপক্ষে ছিলেন । কোরানের মতে -“কিন্তু তারা বৈরাগ্যবাদ(hermetism) আবিষ্কার করল যার বিধান আমি তাদেরকে দেই নাই(৫৭:২৭)”। তবে সুফিদের মধ্যে যারা বৈরাগ্যবাদ পছন্দ করেন তারা বলেন যে এটি অনেক আগে থেকেই স্বর্গীয় বিধান কিন্তু একে নস্ট করা হয়েছে। তবে জুহুদ হল জাগতিক বিষয়গুলোর প্রতি কোন প্রকার আকর্ষন না রেখে এবাদত গুলো সম্পাদন করা । কিন্তু নফল নামাজ নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম কখনো সমর্থ্ন করে না।

খ্রিস্টানদের নান বা ফাদাররা বিয়ে করেন না কারণ বিয়ে না করে ধর্মীয় জীবন পালন করা বেশি পুন্যের। ইসলাম এ প্রকার সন্যাসবাদ নিষিদ্ধ করেছে। মহানবী বলেন ‘ বিয়ে আমার সুন্নত , যে আমার সুন্নত পালন করল না সে আমার দলভুক্ত না ’। তাই ইসলামের প্রধান সুফিগণ অনেকেই বিবাহিত ও সাংসারিক ছিলেন। অথচ তারা ছিলেন কঠোর সংযমি।

ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভের জন্য সুফিগন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন নকসবন্দী তরিকার হাল অবস্থার দরবেশগন । তারা তাদের এবাদত লোক চক্ষুর বাইরে পালন করেন। মাওলানা রুমীর তরিকার দরবেশগন নিজেদের স্পিন করা অবস্থায় একটি কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে ঘুরতে থাকে। কালান্দার তরিকার দরবেশগন দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেরায় আত্নার শুদ্ধি লাভের জন্য।

সিরিয়া ও তুর্কির দরবেশগন শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম আয়ত্ত্ব করেন জিকিরের জন্য যা কিনা ভারতের যোগ ব্যায়ামের সাথে মিল রয়েছে। সুফিবাদ আসলে বিদেশী ভাবদ্বারা প্রভাবিত এবং ইসলামের মূল তত্ত্বের সাথে বিরোধপূ্র্ণ। তারপরও ইসলামের সাথে এক নিগুর অদৃশ্য বন্ধন রেখে চলছে যুগ যুগ ধরে। কোন কোন সুফি শরিয়ত বিরুদ্ধ বা বহির্ভূত ভাবে চললে তাদেরকে বিশরিয়া বলা হ্য়। মানুষ অন্ধকারে মোমের আলো খুঁজে বেরায় কিন্তু সূর্যের আলোর পাশে মোম বাতি নিভিয়ে রাখা হয়।

তারা নিজেদের মাঝে ঈশ্বরকে খুঁজে পায় বা পওয়ার চেস্টা করে করেন কারন তিনি অদৃশ্য অথচ সর্বত্র বিরাজমান। ইসলাম মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে, তারা কাবা ঘরের কাল পাথরকে মূল্যহীন মনে করেন, এই পাথরকে ঘিরে মক্কার প্যাগানরা চক্রাকারে ঘুরত, এখনো হজ্বের সময় কাবাকে ঘিরে একই দৃশ্য দেখা যায়। মুসলিম সুফি রাবেয়া আল বসরি বলেন 'আমি শুধু এর মধ্যে ইট আর পাথর দেখতে পাই, এর থেকে আর কি আশা করা যায়'। পার্সিয়ান সুফি আল হিরি বলেন,' আনুস্ঠানিক ধর্ম পালনে পবিত্রতা থাকে না , দায়সারা গোছের হয়'। সুফিরা দাবি করেন যে তাদের শিক্ষার ধারা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে আর তারা শরিয়ার বেরাজাল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ভুবনে স্বাছন্দ্য বোধ করেন ।

ইসলামে সুফিদের আবির্ভাবের পেছনে মুসলিম যুগে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত মু্ক্ত চিন্তক সম্প্রদায়ের প্রভাব ছিল। তারা বিশ্বাস করেন তাদের নীতি ও শিক্ষা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। উদাহরন স্বরুপ ইদ্রিস নবীর সময়ে এই মতবাদের দর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। পরে ইলিয়াস, খিজির, জুলকিফি,জিরজিস এই মতবাদের প্রচার করেছেন। ঐতিহাসিক ভাবে সুফিবাদ শুরু হয় ইরাক থেকে এবং এর প্রাথমিক উন্নয়ন হয় বসরা এবং কুফা অণ্চলে।

ঐ সমস্থ অন্চলে খ্রিস্টানদের প্রবল প্রভাব ছিল। তাই খ্রিস্টান সাধুরা যেসব পদ্ধতি পালন করতো মুসলিম সুফিদের উপর তার প্রবল প্রভাব পরে । মুসলিম সুফিগন যিশুকে পবিত্র ওপুন্যবান রুপে শ্রদ্ধা করতেন। কোরানে যিশুকে 'রুহুল্লাহ' বলা হয়েছে তাই মুসলিম আধ্যাতিকদের কাছে যিশুর অবস্হান আরো উচ্চস্হানে স্হাপিত হয়েছে। নীচে কয়েকজন মুসলিম সুফিদের সংক্ষেপ আলোচনা করা হলো।

হাসান আল বসরা(মৃ:৭২৮) : তিনি যেমন একজন সাধক ও আরব স্কলার ছিলেন তেমনি ছিলেন একজন মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী। তিনি যিশুকে বলতেন লর্ড অব দি স্পিরিট এন্ড ওয়ার্ড। ইনার জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে ইনার জানাজায় সারা বসরার মানুষ শরিক হয়েছিল। ওয়াসিল ইবনে আতা(মৃ:৭৪৮) : ইনি হাসান আল বসরির ছাত্র ছিলেন। কোন এক বৌদ্ধ সাধুর বাসায় যাতায়াত করতেন, সেই বাসায় ম্যানিকিয়েন্স, জোর‌্যাস্ট্রিয়ান ও নস্টিক আসর বসতো।

দর্শন ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা হতো। ইব্রহিম ইবনে আধাম(মৃ:৭৭৭) : রুমির মাসনাভিতে উনার গাঁথা উল্লেখ আছে। সিরিয়া যাওয়ার সময় খৃস্টান সাধু সাইমনের সান্নিধ্যে আসেন এবং মেডিটেশন বা মোরাকাবা অফ মারেফাত শিখে নেন । তিনি দাবি করেন খিজির (আ: ) তাকে দুবার দর্শন দেন সুফিইজম গ্রহন করার জন্য। রাবিয়া বসরি(মৃ:৮০১) : স্বর্গীয় ভালবাসায় অনুপ্রানিত।

তিনি বলেন ,আমি একমাত্র আল্লাহর। সারা জীবন অবিবাহিতা ছিলেন। মোহাম্মদকে(স: ) ভালবাসেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন ,আমার প্রেম শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য আর কারো জন্য নয়। ইনি কাবাঘরকে পছন্দ করতেন না । তাঁর বিখ্যাত উক্তি , 'হে আল্লাহ আমি যদি বেহেস্থ লোভের আশায় তোমার সাধনা করি তবে সে বেহেস্থ আমি চাই না ,দোজখের ভয়ে যদি তোমাকে ভালবাসি সে দোজখের আগুনে আমাকে দগ্ধ কর' হারিথ আল মুহাসিবি(মৃ:৮৫৭) : ইনি বলেছিলেন আত্নিক উন্নতির জন্য ইহুদি এবং খ্রীস্টান ধর্মের উৎসের মাধ্যমেও ধ্যান করা প্রয়োজন।

পারস্য দরবেশ আল-গাজ্জালীর উপর তিনি প্রবল প্রভাব ফেলেছিলেন। জ্বুল নুন আল মিসরী(মৃ:৮৫৯) : মিশরীয় দরবেশ । রসায়নবিদ। হারমেটিসিজমের উপর পন্ডিত। প্রাচীন মিসরের হেরোগ্লিফ ভাষা বুঝতে পারতেন।

'মুক্তির জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন ,বিশ্বাস নয়'- তার বিখ্যাত উক্তি। তিনি ইসলামিক থিওজফির জনক বলে পরিচিত ছিলেন । ওমর খৈয়াম(মৃ:১১৩১) : ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহন করেন । একাধারে কবি,গাণিতিগ এবং জ্যোতির্বিদ। রুবাইয়াত তার বিখ্যাত পয়েট্রি।

রুবাইয়াতে তার সুরা এবং সাকির পয়েট্রিকে আনেকে সুফিইজমের দৃস্টিকোন থেকে দেখেন। ইবনে আরাবি(মৃ:১২৪০) : ইসলামিক গোল্ডেন এজের(৭৫০~১২৫৮) সময় ইনি বিখ্যাত থিওজফিস্ট বলে পরিচিত। নিজেকে হাতেম তাঈ এর বংশধর বলে দাবি করেন । তিনি বলতেন যে তিনি ইহুদিদের সাথে সিনেগগে, খ্রিস্টানদের সাথে চার্চে এবং মুসলিমদের সাথে মসজিদে সমভাবে এবাদত করতে পারেন । তিনি মৌলবাদীদের দ্বারা অভিশপ্তিত হন ।

তার অনেক রচনা আগুনে পুরিয়ে ফেলা হয়। ভ্যাটিকানের জনসাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ লাইব্রেরীতে তার অপ্রকাশিত রচনা থাকার সম্ভাবনা সন্দেহ করা হয়। মাওলানা রুমি(মৃ:১২৭৩) :তার বিখ্যাত কাজ 'মাসনাভি' এবং 'দিওয়ান-ই-কবির'। মাসনাভি পন্ডিতদের কাছে পার্সিয়ান কোরান বলে সন্মান অর্জন করে। অন্যান্য সুফিদের মত খ্রীস্টানদের প্রতি নমনীয় ছিলেন।

জিকিরের সময় সৌরজগতের গ্রহগুলোর মত ঘূর্ণায়মান দরবেশ --এই ফিজিকাল মেডিটেশনের প্রবর্তক। We (Allah) are nearer to him than his jugular vein সাহায্য পুস্তক: sufism an account of the mystics of islam by aj arberry ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।