আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ অপসারণ



বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম আমরা ৫ জন ব্যাচেলর একসাথে থাকি। আমাদের সবার মধ্যেই রয়েছে বাকি সবার প্রতি ভালবাসা, মমতা ও শ্রদ্ধা। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মতামতকে গুরুত্ব দেই। আমাদের মধ্যে রাজু একমাত্র হিন্দু। বাজার করার সময় কেউ গরুর মাংসের প্রস্তাব করলে সেই প্রথম সাপোর্ট দেয়, কখনো হয়ত সে নিজেই প্রস্তাব করে।

নিজের জন্য নয়, এই চিন্তা থেকে যে ওটা আমাদের বেশিরভাগের পছন্দ। এটাই হওয়া স্বাভাবিক যদি না একজন লোক inferiority complex - এ ভোগে। সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তার মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে মেনে নেবে যতক্ষণ সেটা তার ধর্ম বা আদর্শের সরাসরি বিরোধিতা না করে। অধিকাংশের পছন্দকে মেনে নেয়াকে কেউ অধিকার হরণ মনে করলে সেটা তার হিংসার বহিপ্রকাশ। আবার কোনো বিষয় যদি মাইনরিটির জন্য একান্তই গুরুত্বপূর্ণ হয়, মেজরিটির পছন্দ না হলেও তারা সেটা মেনে নেবে।

উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে - এটাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূলনীতি। বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এখানকার বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেকোনো দেশের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। স্বাধীনতার কিছুপর থেকে বর্তমান অবধি বেশিভাগ সময় ধরেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা বা বিসমিল্লাহ দিয়ে সংবিধান শুরু হওয়া এর সম্প্রীতিকে কোনভাবেই প্রভাবিত করেনি। মূলত বিসমিল্লাহ দিয়ে সংবিধান শুরু করে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে উল্লেখ করলেও এর তেমন কোনো প্রায়োগিক দিক নেই।

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা কোনকিছুতেই এর কোনো প্রভাব নেই। থাকার মধ্যে শুধু এটুকুই আছে যে, নব্বুইভাগ লোক নিজেদের মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক চিন্তা করে সুখী। বাকি দশভাগেরও এ বিষয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব অসুবিধা হয়েছে বলে জানা যায় না। একজন বলছিল ৪টি মেজর ধর্মের বাণীও যুক্ত করার প্রসঙ্গে. প্রশ্ন হলো, ৪ টি কেন? ৫, ৬, ৭ নম্বর ধর্মের বাণীও নয় কেন? কারণ তারা শতকরা হিসেবে খুবই কম. এটাই যদি যুক্তি হয় তাহলে আমার মতে মেজর বিবেচনায় ৮৮% এর পাশে বাকি কেউই মেজর নয়। এছাড়াও, গণতন্ত্রের দাবীই হলো "অধিকাংশের" মতকে কার্যকর করা; "সবার" আবদার রক্ষা করা নয়, সেটা সম্ভবও নয়।

যদি এমন হত, সংবিধানে এই দুটি বিষয় নেই, যোগ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাহলে বিবেচনা করতে হত যোগ করার পক্ষে যুক্তি কতটুকু, কিন্তু বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এটা আছে, অপসারণের প্রস্তাব হচ্ছে, অতএব বিবেচনা করতে হবে বাদ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। যদি এর কোনো মারাত্বক অপব্যবহার হত বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সৃষ্টি হত, যেমন - জনগনের বিরাট একটা অংশ অমুসলিমদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকায় অমুসলিমদের চাকরি/ব্যবসা/নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে অসুবিধা হচ্ছে বা অমুসলিমদের স্বাভাবিক ধর্ম-কর্ম করতে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাহলে এটি বাদ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার ছিল। যেকোনো পরিবর্তনের গুরুত্ব অনুধাবনের ক্ষেত্রে সাধারনভাবে বিবেচ্য বিষয় হলো - ১. পূর্বাবস্থা (pre-condition) ২. বিদ্যমান সমস্যা (existing problem) ৩. ফলাফল (post-condition) এখানে পূর্বাবস্থা হলো বন্ধুত্বপূর্ণ সাম্প্রদায়িক পরিবেশ, বিদ্যমান সমস্যা - বিসমিল্লাহ/ইসলাম থাকার কারণে কোনো দৃশ্যমান সমস্যা হচ্ছেনা। ফলাফল - যারা সংবিধান সংশোধন চাচ্ছেন তারাই ভালো জানেন তারা আসলে কি চাচ্ছেন। আচ্ছা, দেশের কোথাও তো এই পরিবর্তনের দাবিতে জনগণ আন্দোলনে নেমেছে বলে শুনিনি! তাহলে এই "তারা" আসলে কারা? কাদের ইচ্ছা/চেষ্টা/মতামতের ভিক্তিতে এটা করা হচ্ছে? বিশিষ্টজন? কারা এই বিশিষ্টজন? আপামর জনসাধারণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? সংবিধান পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অধিকার এবং যোগ্যতা কতটুকু? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণের স্থান হলো সংসদ।

এখানে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রয়োজনে সংসদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে বাছাইকৃত "বিশিষ্ট"দের মতামতে এতবড় সিন্ধান্তে আসাটা অস্বাভাবিক। যেসব সাংসদরা প্রত্যক্ষভাবে এই অপসারণের পক্ষে, তারা সংসদে সরাসরি কিছু করছেননা কেন? তাদের পরে ভোট পেতে অসুবিধা হবে বলে? কিছু লোক একজায়গায় বসে যখন "বিশিষ্ট" নির্বাচন করবেন, তখন পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন থেকেই যায়। এভাবে কিছু বিশিষ্ট বেছে নিয়ে এরকম কঠিন সিন্ধান্ত নেওয়া গেলে এত টাকা খরচ করে নির্বাচনের দরকার কি ছিল? এধরনের বৈঠকের কথা শুনলেই একটা ডায়লগ মনে পড়ে যায়, "Squares and Triangles agree: Circles are pointless". অফিসে কথা হচ্ছিল বিষয়টা নিয়ে. কেন এটা করা হচ্ছে, এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেল (যদিও এর কোনটাই হয়ত সঠিক নয়) যেমন - - সংবিধান থেকে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ এর সবরকম অবদান মুছে দিতে - ভারতকে খুশি করতে, কারণ বাহাত্তর এর সংবিধান এ তাদের ভুমিকা আছে - সরকার শেষপর্যন্ত এটা করবে না। কেবল ধর্মভিক্তিক কিছু দলকে উস্কে দিয়ে রাজপথে নামানোই এর উদ্দেশ্য।

আসল কারণ যাই হোক, এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। সম্ভাব্য খারাপ প্রভাব বিষয়ে একজন বলল, এটা কার্যকর হলে সাথে সাথে পশ্চিমা ভাবধারার ও অন্যান্য কিছু মিডিয়া এভাবে প্রচার করতে পারে যে, আরো একটা দেশে ইসলামের পতন হলো - যেটা আদৌ সত্যি নয়। অথচ দেশের বেশিরভাগ লোকের জন্য বড়ধরনের আঘাত হবে যে আমরা ইসলামকে আমাদের ধর্ম হিসেবে স্বীকার করতে আর রাজি নই। অন্য একজন বলল, এটা যদি হয় তাহলে কিছু লোক নিজেকে ফোকাসে আনার জন্য বিভিন্ন রিট আবেদন করতে পারবে যেগুলো সাধারণ মুসলিমরা মানতে চাইবে না। যেমন কেউ বলবে, সংসদসহ বিভিন্ন সরকারী অনুষ্ঠান কোরান তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হয় কেন? এটার কোনো ভিত্তি নেই।

এটা বন্ধকরা হোক। সাংবিধানিক সাপোর্ট না থাকার কারণে হয়ত আদালত এর পক্ষে রায় দেবে যেটা ৮৮% মানুষকে কষ্ট দেবে বা তারা মানবে না, ফলে তারা অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে পড়বে। এরকম আরো অনেক কিছুই হতে পারে যা জন্ম দেবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত। একটা সাম্প্রদায়িকভাবে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল দেশকে দাঙ্গার দিকে ঠেলে দিতে পারে এরকম অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই দেশের মানুষের ভালো চাইতেন, তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন - তাকে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ "বাঙালি"।

এজন্য তার আদর্শে রাজনৈতিক দল করা যাবে। ঠিক তেমনিভাবে করা যাবে জিয়াউর রহমান বা হু, মু, এরশাদের আদর্শেও। তাহলে যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানুষের জন্য যার দরদ সবচাইতে বেশি, অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে যিনি স্রষ্টা কতৃক নির্দেশিত তার আদর্শে কেন রাজনৈতিক দল করা যাবে না? একজন মানুষ যত বড় জ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক বা রাজনীতিক হন না কেন - তার চিন্তাভাবনা, আদর্শ তার পারিপার্শিকতা দ্বারা প্রভাবিত। একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিসরে একজন মানুষের আদর্শ ভালো সমাধান হতে পারে, কিন্তু সময় এবং পারিপার্শিকতা পরিবর্তনের সাথে সাথে তা গ্রহণযোগ্যতা ও প্রায়োগিকতা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শকে আল্লাহ স্বয়ং সর্বোত্তম আদর্শ বলেছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু সুরা আহযাবে (৩৩ : ২১) বলেছেন - "যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। " এই আদর্শও কি সময়ের সাথে সাথে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে? না। কারণ তার আদর্শ তার নিজের চিন্তাভাবনা থেকে নয়, বরং ওহীর মাধ্যমে স্রষ্টা প্রদত্ত জ্ঞান থেকে তৈরী। সেই স্রষ্টা যিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব জানেন; যার জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পদ্ধতি যে স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা তাও খুব স্পষ্ট - "আর তিনি (রসুল) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।

তাই বলেন যা ওহীর মাধ্যমে প্রত্যাদিষ্ট হয়। " - [সুরা নাজম ৫৩ : ৩-৪] সঠিকভাবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর আদর্শ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল অনুসরণ করে কিনা আমার জানা নেই, কিন্তু অন্তত এটূকুতো বলে - “আসুন আমরা সবাই মিলে মুহাম্মদের আদর্শের অনুসরণ করি!” ধর্মভিক্তিক রাজনৈতিক দল বন্ধের নামে এ কথাটা বলার রাস্তাটা যেন বন্ধ না করা হয়। যে মার্ক্সকে মানে সে মিছিলে লাল ঝান্ডা নিয়ে ঘুরতে পারবে, যে আব্রাহাম লিঙ্কনে বিশ্বাস করে সেও জনসভায় তা বলতে পারবে, আর যে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অনুকরণ করে সে রাজনীতি করতে পারবে না, এটা কেমন গণতন্ত্র? একদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়তে বাড়তে নাক পর্যন্ত ডুবে যায়, শ্বাস নেওয়ার আর উপায় থাকে না। হাজার হাজার নব নির্মিত ভবন গ্যাস/বিদ্যুতের সংযোগের অভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকে। যানজটে আটকে পরা লোকাল বাসে অসহায় লোকজন ঘামতে ঘামতে নিজেকে, নিজের চৌদ্দ গুষ্ঠীকে গালি দেয় এই দেশে জন্মগ্রহণ করার অপরাধে।

দলীয় সন্ত্রাসীদের এগ্রুপ ওগ্রুপের কাটাকাটিতে দেয়াল রক্তে ভিজে যায়। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এসে রক্ত ধুয়ে দিলে দেখা যায় তার নিচে লেখা ছিল "সন্ত্রাসীরা কোনো দলের নয়..."। আর অন্যদিকে "বিশিষ্ট"জনেরা মিটিংয়ে বসেন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ(!) সমস্যা নিয়ে; ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন, "বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করতে হবে কেন?" পোস্ট টা ভাল লাগলো তাই শেয়ার দিলাম। মূল পোস্ট টি একটি নোট। লিখেছেনঃ http://www.facebook.com/ajaxray


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.