আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিবাস্বপ্ন



পড়ন্ত এক বিকেলে গুলশানের ভেতরের দিককার একটা রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়ে আছি । সামনে গাড়ির বিশাল বহর অতিপ্রাকৃত অজগরের মত নিথর পড়ে রয়েছে । এই দৈনন্দিন যন্ত্রণায় সবাই এতই অভ্যাস্ত হয়ে উঠেছে যে আজকাল কাউকে আর তেমন অস্থিরও হতে দেখিনা বড় । এমনকি আমি নিজেও না । রিক্সায় বসে বসে পথের পাশের দেবদারু পাতার ওপর শেষ বিকেলের আলোর কারিকুরি দেখছি মুগ্ধ হয়ে ।

হটাৎ চোখ গেল একটু সামনের একটা বাড়ির ওপর । ছোট্ট একটা সাদা বাড়ি, তাতে কি সুন্দর একটা আধ খোলা বারান্দা । পুরো বারান্দা জুড়ে কতরকম দেশি বিদেশী গাছ সাজানো । একপাশে নাম না জানা কি একটা সাদা গোলাপি ফুলের ঝাড়, আরেক পাশে একলা একটা নক্সা কাটা কাঠের চেয়ার । কী সুন্দর কী সুন্দর !! ওই বারান্দাটা দেখেই কেন যেন বুকের ভেতরে কোথায় একটু চিনচিন করে উঠল ।

বড্ড লোভীর মত মনে হল আহা, ওইরকম একটা বারান্দা যদি আমার হত কি দারুন হত ! তাহলে অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওই চেয়ারটায় বসে ডুবে যাওয়া চাঁদ দেখতাম হয়ত কখনও......অথবা খুব ভোরে উঠে বুকভরে সাদা শিউলির ঘ্রান নিতাম । শিউলি না পেলেও নিদেনপক্ষে অক্সিজেনও চলতে পারে......অথবা খুব ন্যাকামি করতে মন চাইলে হুমায়ুন আহমেদের নায়িকাদের মতো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়াও যেত । আবার কোন মন খারাপের রাতে ওই রেলিঙটা ধরে দাঁড়িয়ে খোলা বাতাসে এলোমেলো হতে হতে ভাবতাম তোমার কথা...ভাবতাম ওই বাতাসটা কত দূর থেকে এসেছে ?...তোমার থেকেও দূরে কোথাও থেকে কী ? ও কি তোমায় ছুঁয়ে আসে ?......নাকি... ও মা ! হটাত কি নিদারুন স্বর্গপতন ! দেখি আমার ভাবনার এক ফাঁকে বারান্দার একপাশের দরজাটা খুলে একজন টাক মাথা বুড়ো লোক এসে ওই চেয়ারটায় বসে হাঁটুর ওপর লুঙ্গি তুলে ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে পা চুলকোতে লাগল ! ধ্যাত ! এই জন্যেই বুঝি স্বপ্নভঙ্গ কথাটা আবিষ্কৃত হয়েছিল ?! আর ওই সময়টায় ই গাড়ি গুলো চলতে শুরু করল । দূরে চলে যেতে যেতে আরেকবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম......মনে হল...অই মানুষটা জানতেও পারলনা যে সে কারো স্বপ্নের ভেতর ঢুকে গেছল । আমরা নিজেরাও বোধ হয় কখনও কখনও অন্যের স্বপ্নের অংশ হয়ে যাই...প্রায়শই......


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।