আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিকশার নগরী ঢাকাঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

রিকশার নগরী ঢাকা টিংটিং টুং টাং। রাজধানী ঢাকার অলিগলি, প্রশস্ত সড়কে একটি অতিপরিচিত শব্দ রিকশার ঘন্টি। লাখো রিকশার ভারে ভারাক্রান্ত ঢাকা নগরী। যাত্রাবাড়ি, টিকাটুলি, মতিঝিল নবাবপুর, বংশাল, ফুলবাড়িয়া, নিউমার্কেট, গ্রীণ রোড, কলাবাগান, ফার্মগেট, মগবাজার, মৌচাক একথায় নগরীর প্রতিটি সড়কের সর্বাত্মক দখল নিয়েছে রিকশা। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য।

যে দিকে চোখ যায় শুধুই রিকশা আর রিকশা। বলা যেতে পারে রিকশাতেই ঢাকা পরে আছে রাজিধানী ঢাকা। কিছুদিন পুর্বে খবরের কাগজে পড়েছিলাম- ডি সিসি'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিটি করপোরেশন অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ৮৮ হাজার, বিভিন্ন মালিক সমিতির পরিচালিত ১ হাজার অর্থাৎ মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার রিকশা চলাচল করে রাজধানীতে। কিন্তু আসলে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা কত? রাস্তায় মানুষের চেয়ে রিকশার সংখ্যা বেশি দেখে অনেকের মনেই এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে মোগল সম্রাট আকবর ও তার পারিষদ মোল্লা দো-পেঁয়াজার সেই গল্পের কথাই মনে পড়ে।

দো পেঁয়াজাকে কাবু করার জন্য সম্রাট আকবর প্রশ্ন করেছিলেন- “দিল্লিতে কত কাক বাস করে তোমাকে বলতে হবে”। দোপেঁয়াজা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছিলেন দিল্লিতে কাকের সংখ্যা এক লাখ এক হাজার একশ একটি। সম্রাট হতবাক হয়ে বলেছিলেন- তোমার এ হিসাব যদি ভুল হয়? বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে না গিয়ে মোল্লা বললেন, আমার হিসাব ভুল হতে পারে না। তবে যদি দেখা যায়, কাকের সংখ্যা কম হয়েছে, বুঝে নিতে হবে, কিছু কাক আত্মীয় বাড়ী গেছে বেড়াতে। আর বেশি হলে বুঝবেন অন্য যায়গার কাক দিল্লিতে তাদের আত্মীয় বাড়ি এসেছে।

মোল্লা দোপেঁয়াজার এই হিসাবের মত ঢাকা নগরীতে কারো মতে ৫ লাখ, কারো মতে ১০ লাখ, আবার কারো ধারণা ১৫ লাখ। আমার ব্যাক্তিগত ধারনা ঢাকার রাস্তায় কমপক্ষে ১২ লক্ষ রিকশা চলাচল করে। রিকশা চলাচলের উপর সিটি করপোরেশন এবং সিটি ট্রাফিক ব্যবস্থার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন উদ্যোগও চোখে পড়ে না। ৪৫/৫০ হাজার রিকশাকে নতুন লাইসেন্স প্রদানের জন্য ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর রিকশা ভ্যান মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সাথে সরকারের এক চুক্তি সম্পাদিত হয়।

রিকশার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে মনে করে এ চুক্তি এখনো বাস্তবায়ন করা না হলেও গত ১০ বছরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ৮/১০ লাখ নতুন রিকশা ডুপ্লিকেট নম্বর বা ভুয়া নম্বর নিয়ে চলাচল করছে। ঢাকায় পাঁচ হাজারের বেশি রিকশার গ্যারেজ বা কারখানা আছে। সেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রিকশা। রাজধানী ঢাকায় কবে থেকে সাইকেল রিকশার যাত্রা শুরু হয়েছে, তার কোন সঠিক ইতিহাস নেই। ইতিহাসবিদ নাজির আহমেদের “ঢাকার ইতিহাস” বই পড়ে জানা যায়, দেশ বিভাগের সময় ১৯৪৭ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল ১৮০ টি।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানে ভারত বিভাগের জ্বালানি সংকটের কারণে তেলবিহীন পায়ে টানা রিকশার চাহিদা বেড়ে যায়। ১৯৭১য়ের আগে রাজধানী ঢাকায় রিকশার সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত হয়। ষাটের দশকে কম জ্বালানির বেবি ট্যাক্সি আমদানির পর মানুষের কায়িক শ্রমে চালানো রিকশা ঢাকা থেকে তুলে দেয়ার প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। একাত্তরের স্বাধীনতার পর রাজধানী ঢাকার চিত্রপট দ্রুত পাল্টাতে থাকে। বাড়তে থাকে মানুষের চাপ।

একই সঙ্গে বাড়তে থাকে রিকশা এবং যান্ত্রিক যানবাহন। ১৯৭৪ সালে রিকশার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার। তখন সমবায়ের মাধ্যমে বেবিট্যাক্সির আমদানি বাড়িয়ে রিকশা আবার বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। পাঁচ হাজার বেবিট্যাক্সি ঢাকার শহর পথে চালু করা হলেও বন্ধ হয়নি রিকশা। বরং এর সংখ্যা বাড়তেই থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে।

৮০'র দশকে কর্নেল (অবঃ) আব্দুল মালেক যখন ঢাকার মেয়র ছিলেন, তখন অবৈধ রিকশা বন্ধ করার কথা ব্যাপকভাবে বলা হলেও তখনই ৮০ হাজার নতুন রিকশার লাইসেন্স দেয়া হয়। এরপর অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে লাইসেন্স বিহীন রিকশার সংখ্যা। পরিবেশ দূষণের কারণে বেবিটেক্সি বন্ধ করে দিয়ে রিকশার বিকল্প সিএনজি চালু করা হয়েছে। কিন্তু রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। নগরীর সাধারণ বাসিন্দাদের বাস যাতায়ত ভাড়া কিছুটা সহনীয় হলেও অফিস টাইমে বাসে চড়া কতটা বিড়ম্বনাদায়ক ভুক্তভোগি ছাড়া কেউ ধারণা করতে পারবে না।

ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও রিকশাই একমাত্র নিরাপদ বাহন এবং অলিগলি-বাজার-অফিস সবখানে যাতায়ত করা যায়। বাস মালিকদের বক্তব্য, নগরীর সড়কে অত্যধিক রিকশা চলাচলের কারণে এমন তীব্র যানজট হয় যে বাসের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। রিকশাকেই নগরীর যানজটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বাস মালিকরা। সাধারণ লোকজনের মতে, হরতাল-অবরোধে যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকলে রিকশাই নগরবাসির একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। তখন কিন্তু রাস্তায় কোনোই জ্যাম থাকেনা! ধারণা করা হয়, ঢাকায় ১০/১২ লাখ শ্রমজীবী মানুষ জীবন ধারণে রিকশার উপর নির্ভরশীল।

পশ্চিমা দাতাদের চাপে ঢাকা থেকে রিকশা উচ্ছেদের চিন্তা-ভাবনা হলেও বিশাল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের পথ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সরকার চাইলেই ১০/১২ লক্ষ রিকশা চালকদের শুধু মাত্র গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে কৃষি খাতেই পুণর্বাসন করতে পারেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.