আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলম্বিত প্রত্যাবর্তন শেষ পর্ব (ছোট গল্প)

আকাশ ভরা গাঙচিল
১৫ বছর পর... ধনন্জয় বেসরকারি ব্যাংকের এরিয়া ম্যানেজার। অনেক বেতন প্রতিপত্তি। বিয়ে করে সংসার পেতেছে। বিয়ের দু বছরের মাথায় ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে এক মেয়ে। এক অনাবিল আনন্দ ছুঁয়ে যায় ধনন্জয়কে।

মেয়ের নাম রাখে রিমি। রিমি এখন হাটতে পারে। আধো আধো মুখে বাবা বাবা বলে ডাকে। ধনন্জয় ঠিক করেছে একবার তার গ্রামের বাড়িতে রিমিকে নিয়ে যাবে। তার নিজের শৈশব খুঁজে দেখবে রিমির মাঝে।

অনেক পরিবর্তন হয়েছে তার গ্রামের। নতুন নতুন ঘর বাড়ি। কত্ত দোকান পাট। সব কিছুই বাজারে পাওযা যায়। আজ কোনো সমস্যায় শহরে ছুটতে হয় না।

গ্রামের চৌমুহনীর বাজার এখন জেলা শহরের মতো আলোকোজ্জ্বল। বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে ধনন্জয় তাদের কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কলেজটি ঠিক আগের মতোই আছে। শুধু একটা নতুন টিন শেড ঘর উঠেছে। সেখানে কতোগুলো ক্লাসরুম।

ক্লাসরুমের পিছনে দাঁড়িয়ে ধনন্জয় দেখতে পায় সেই পুরোনো ভাঙ্গা অফিস ঘর। এখন আরো ভেঙ্গে গেছে। ঘরের চারপাশে অনেক বড় বড় পাকুর গাছ চারপাশ থেকে ঘরটিকে চেপে ধরে রেখেছে। কিছু ইট খসে পড়েছে। ঘরের ভেতরে অনেক আগাছা।

ছোট বড় অনেক গাছ। বারান্দায় অসংখ্য ঘাস, লতা। পলেস্তারা নেই কোথাও। শুধু জীর্ণ ইট গুলো বিষণ্ন লেগে আছে দেয়ালের গায়ে। বিকেলের পড়ন্ত রোদের রক্তিম আভা এসে পড়ছিল পাশের ছোট্ট ডোবাটায়।

ঘন কচুরিপানা ঠেলে শেষ সূর্য রশ্মি পানিতে ফিরে যেতে চাইছিল। তার ব্যর্থ প্রয়াস অনেক ক্ষণ ধরে দেখছিল ধনন্জয়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে ভাঙ্গা বারান্দাটার দিকে। ধনন্জয়ের চোখে জল। সময় অনেক গড়িয়েছে আজ।

আজ সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এলেও ঐ ভাঙ্গা ঘরটি তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে আজও। কোনো কিছু কখনো ভাঙ্গা যায় না। যায়ও হয়তো বা কখনো কিন্তু মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। রিতুর নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে হয় ধনন্জয়ের। সে পারে না ডাকতে।

চাপা ক্রন্দনে তার চোখ বুজে আসে। ধনন্জয় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক ক্ষণ ধরে রিমি ছোটাছুটি করছে এদিক সেদিক। বাবাকে কাছে পেয়ে চিৎকার করে ডেকে ওঠে,বাবা. . . .। রিমির ডাকে চোখ মেলে তাকায় ধনন্জয়।

রিমির চোখে বিস্ময়। বাবার চোখে জল দেখে সে অবাক। একবার তার বাবাকে দেখছে আর একবার ভাঙ্গা অফিস ঘরটা দেখছে। ধনন্জয় চোখের জল মুছে কোলে তুলে নেয় রিমিকে। রিমির গালে আলতো করে চুমু খায়।

রিমি খুশিতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে। ধনন্জয় রিমিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে তার নিজের গন্তব্যের দিকে। শুধু অতিত আর বর্তমানের সাক্ষী হয়ে পড়ে থাকে ভাঙ্গা অফিস ঘর। ছবি: ইন্টারনেট থেকে।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.