আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বীরগঞ্জে ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশ গণধোলাইয়ের শিকার : ডিসি-এসপি অবরুদ্ধ : উদ্ধার করল বিজিবি, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে আহত ৩৫, পুলিশের ৬ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

নাজমুল ইসলাম মকবুল

বীরগঞ্জে ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশ গণধোলাইয়ের শিকার : ডিসি-এসপি অবরুদ্ধ : উদ্ধার করল বিজিবি, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে আহত ৩৫, পুলিশের ৬ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘাসিয়ারা গ্রামে সোমবার রাতে ডাকাতি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় সংঘর্ষে ৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩৫ জন আহত হয়েছে। গুলিবর্ষণ, থানা ঘেরাও, পুলিশ পিকআপ ও মাইক্রোবাস জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল দফায় দফায় দিনভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বীরগঞ্জ এবং কাহারোল থানার দুই ওসিসহ ৩৫ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে এ ঘটনায় ক্লোজড করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দুই ওসিসহ ৬ কর্মকর্তাকে রংপুর ডিআইজি অফিসে, বীরগঞ্জ থানার অবশিষ্ট ২৯ স্টাফকে দিনাজপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। পুলিশ সদস্যদের ক্লোজড করার ঘোষণায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। সরেজমিন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জেলার বীরগঞ্জ থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৩৩৩২) ভাড়া করে এসআই তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে ১০ পুলিশের একটি দল বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়কের কাহারোল উপজেলার বলেয়া হাটের কাছে ঘাসিয়ারা গ্রামের পল্লীচিকিত্সক রাজেন্দ্র দেবনাথের বাড়ির গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢোকে। পুলিশ রাজেন্দ্র দেবনাথ ও তার ভাইয়ের ছেলে কিশোরকে মারপিট করে আলমারি ভেঙে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২ লাখ টাকা লুট করে।

ডাকাতির খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘেরাও করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় সংঘর্ষে বীরগঞ্জ থানার এসআই তাজুল ইসলাম, শাহাজান আলী, এএসআই সুকুমার রায়, জাবেদ আলী, গৃহকর্তা রাজেন্দ্র দেবনাথ, তার ভাতিজা শরত্ চন্দ্র দেবনাথ, তাপস দেবনাথ, কিশোর দেবনাথ, নাইটগার্ড মফিজুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। ডাকাতি করে পুলিশ মাইক্রোবাসযোগে বীরগঞ্জে পালিয়ে আসার চেষ্টাকালে বলেয়া হাটে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধ জনতা মাইক্রোবাসটি আটক করে। খবর পেয়ে বীরগঞ্জ থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান বলেয়া হাটে গিয়ে অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে কাহারোল, বোচাগঞ্জ ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বলেয়া হাটের বিক্ষুব্ধ জনতা কাঠের গুঁড়ি ফেলে বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়ক অবরোধ ও মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করে।

খবর পেয়ে কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার, নির্বাহী অফিসার খন্দকার আজিম আহম্মেদ, বীরগঞ্জ এএসপি সার্কেল খায়রুল আলম, কাহারোল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান স্মৃতি রানী, কাহারোল থানার ওসি শহিদুল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। উত্তেজিত জনতার দাবি অনুযায়ী পুলিশদের গ্রেফতার না করায় কাহারোল থানার পুলিশ পিকআপ ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত মাইক্রোবাসটি জ্বালিয়ে দেয় এবং কাহারোল থানা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ খবর পেয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দিন গতকাল বেলা ১১টায় ডাকাতির ঘটনাস্থলে যান এবং বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা বীরগঞ্জ থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান ও কাহারোল থানার ওসি শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার এবং জনতার ওপর কোনোরকম হয়রানিমূলক মামলা না করার দাবি জানায়। জেলা প্রশাসক ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার এবং বরখাস্ত করার আশ্বাস দেন।

বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা প্রশাসকের আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় দুই ওসিকে গ্রেফতারের দাবি জানায়। জেলা প্রশাসক ৩য় দফা বৈঠক শেষে কাহারোল থানা পুলিশকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এদিকে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা বীরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে এবং থানা ক্যাম্পাসে ঢুকে ভাংচুর চালিয়ে মোটরসাইকেলসহ থানা ক্যাম্পাস জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। জনতা ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক ও বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়ক অবরোধ এবং বীরগঞ্জ থানা অবরুদ্ধ করে রাখে।

দফায় দফায় পুলিশ-জনতার সংঘর্ষে আহত হয় নুর ইসলাম, বাবুল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মোজাম্মেল। এসময় একটি দ্রুতগামী পিকআপের চাপায় সুজালপুর ইউনিয়নের চাকাই গ্রামের শহিদুল আলম নিহত হন। দিনাজপুরের দাঙ্গা পুলিশ বিজিবি, র্যাব-৫, ডিজিএফআই, এনএসআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনা শান্ত করার চেষ্টা করেন। তাত্ক্ষণিকভাবে রংপুর অঞ্চলের ডিআইজি লুত্ফর রহমান মণ্ডল, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার দিনাজপুরের সালেহ আহম্মেদ, ঠাকুরগাঁও বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মাহফুজ আলম ও রংপুর-৫ র্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং উত্তেজিত জনতার সামনে বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আকতারুজ্জামান প্রধানসহ এসআই ফজলুল হক, মো. শাহজাহান আলী, এসআই মনছুর আলী, এএসআই জাভেদ আলী ও এএসআই সুকুমার রায়কে বীরগঞ্জ থানা থেকে ক্লোজ করে রংপুর বিভাগীয় ডিআইজি লুত্ফর রহমান তাদের সাসপেন্ড করে নিয়ে যান। এছাড়া বীরগঞ্জ থানার সব স্টাফকেও দিনাজপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার তদন্ত অফিসার আনিছুর রহমানকে বীরগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ পদক্ষেপকে বীরগঞ্জ ও কাহারোলবাসী জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সুত্র: আমার দেশ Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.