আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সিসা লাউঞ্জে’ নতুন নেশা!


লাল-নীল আলো। চারদিকে হৈহুল্লোড়। এমন পরিবেশে সোফায় বসে বড় বড় হুক্কায় সিসা টানছে ৭-৮ তরুণ-তরুণী। একটু পরপরই হাতবদল হচ্ছে হুক্কা। হিন্দি গানের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে হুক্কায় সিসা টানার গভীর নেশা।

চার দেয়ালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি অভিজাত হোটেলে প্রতিরাত ৮টার পর বসে সিসার এমন জমজমাট আসর। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। শুধু উত্তরা নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গজে উঠেছে সিসা লাউঞ্জ। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে ২০০ সিসা লাউঞ্জ রয়েছে।

অভিজাত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের কাছে নেশার নতুন ক্রেজ হুক্কায় সিসা টানা। সিসার উপাদান : বিভিন্ন ফলের নির্যাসই সিসার মূল উপাদান। আপেল, আঙ্গুর, আনারস, কলা, পেঁপে থেকে শুরু করে নানা ফলের নির্যাসে তৈরি হয় সিসার উপাদান। এসব উপাদান শুকনো আকারে থাকে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি সিসার উপাদান তৈরি করছে না বলে জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

বাংলা-দেশে মূলত দুবাই থেকে এর উপাদান আসে। এখন দুটি কোম্পানি এসব উপাদান আনছে। সিসার উপাদান হিসেবে বিভিন্ন ফলের শুকনো নির্যাসবিশেষ কলকেতে ভরা হয়। স্টিলের তৈরি কারুকার্যময় এসব কলকে দেখতে অনেকটা হুক্কার মতো। তবে এর সাইজ অনেক বড় এবং একাধিক ছিদ্রযুক্ত।

এসব ছিদ্রে লম্বা পাইপ থাকে। কলকের নিচের অংশে বিশেষ তরল পদার্থ থাকে, উপরিভাগে থাকে কলকে। এ কলকেতেই সিসার উপাদান দেওয়া হয়। [ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মোগল আমল থেকেই সিসার প্রচলন চলে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে দুবাইয়ে এর প্রচলন বেশি।

অভিজাত এলাকা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সিসা লাউঞ্জ গড়ে উঠছে। বার ও ক্লাব ছাড়াও চাইনিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালে সিসা লাউঞ্জ গড়ে উঠছে। সিসার আড়ালে মাদকবাণিজ্য : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, সিসা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত শ্রেণীর একটি নেশা হলেও বাংলাদেশে এর আড়ালে চলছে মাদক ব্যবসা। অধিকাংশ লাউঞ্জে সিসার উপাদানের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেটের গুঁড়া, হেরোইন ও বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ নেশাজাতীয় নানা ট্যাবলেটের গুঁড়া। এছাড়াও গাঁজার বিশেষ রাসায়নিক অংশ মিশিয়ে এর উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে।

যারা যায় লাউঞ্জে : বাংলাদেশের লাউঞ্জগুলোতে মূলত অভিজাত ঘরের উঠতি তরুণ-তরুণীরাই বেশি যায়। এছাড়াও মধ্য বয়স্ক কর্মজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর যুবক-যুবতীরও আনাগোনা রয়েছে এসব লাউঞ্জে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণ-তরুণীরা এসব লাউঞ্জে গিয়ে ভিড় করে। ৫০০ টাকায় পাইপে একবার মুখ লাগিয়ে বুঁদ হয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক (গুলশান সার্কেল) হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, এটি মূলত মাদক নয়।

ফলে তাদের করার কিছু থাকে না। তবে লাউঞ্জকে কেন্দ্র করে মাদকসেবন ও বিক্রির সন্ধান পাওয়া গেলে তারা অভিযান চালান। গুলশান এলাকার বিভিন্ন লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে এর বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক তালেবুর রহমান সমকালকে বলেন, লাউঞ্জে গিয়ে ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। তবে লাউঞ্জগুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বলে তারা কিছু করতে পারছেন না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মূলত অন্যান্য ব্যবসার মতো ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে লাউঞ্জ গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মদের বৈধ ও অবৈধ বার, পাঁচতারকা হোটেল এবং বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের লাইসেন্সের আড়ালেও লাউঞ্জ গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে এর কত লাউঞ্জ রয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব বা তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রায় ২০০ লাউঞ্জ রয়েছে। সৌজন্যেঃ সমকাল
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.