আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্দরবানে একদিন: ২য় পর্ব

শাদা পরচুল অন্ধকার

আমার ভ্রমণপোস্টের আগেরটা আপনাদের ভাল লেগেছে বলে আমি আনন্দিত । আগের পর্বের লিঙ্ক - বান্দরবানে একদিন (১ম পর্ব) । এবারে আসুন আমরা আবার ঘুরতে শুরু করি । লেকের জল দেখতে দেখতে আমরা গত পর্ব শেষ করছিলাম । এবারে আমরা বগা লেক থেকে আরো সামনে আগাতে থাকবো ।

পথের দৃশ্যাবলী অতি মনোরম । আসুন হাটতে শুরু করি । দেখি সামনে আমাদের দুচোখ ভরাবার জন্য প্রকৃতি কি পসরা সাজিয়ে বসে আছে । হাটতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই আমরা এসে উপস্থিত হলাম দুই পাহাড়ের মাঝখানে । এখানে দু পাশে পাহাড়চূড়ো আর আমরা মাঝে দাড়িয়ে ।

খুব সুন্দর লাগছিল দেখতে । আরেকটু সামনে যাবার পরেই আমি খুবই আনকোরা একটা ফুল দেখলাম । যদিও ফুল বিষয়ে আমার জ্ঞান প্রায় শূণ্যের কোঠায় কিন্তু তবুও আমার মনে হয় অনেক পরিবেশ বিজ্ঞানী এটা আগে দেখেননি । আপনারা কেউ যদি জানেন, তো আমাকে বলুনতো কি নাম এর ?? এরপরে আমার হাটতে থাকলাম বেশ খানিকটা পথ । প্রবেশ করলাম বনের গহীনে ।

কি যে মনোরম লাগছিল । স্বপ্ন পথের পথিকেরা বোধহয় এই পথেই হেটেছিল । আমার মনে পড়ে যায় ওদের কথোপকথন । যদি কোনদিন পৃথিবীর পথ ধরে- হেটে চলতাম, এই আমরা দুজনে অনাদিকাল ব্যাপী! কপোতের মতন, ডানা দুটি মেলে দিয়ে আদিগন্তে! আমি সত্যিই সেদিন কবিতাটা নতুন করে উপলব্ধি করেছিলাম । যাই হোক, হাটার গতি খুব বেশি দ্রুত ছিল না কারণ আমি প্রচুর ছবি তুলে সবাইকে থামিয়ে দিচ্ছিলাম ।

পথের ধারে বেশ কিছু লতানো গাছের ঝোপ ছিল । বেশ সুন্দর দেখতে । সে রকমই একটা । যত দেখি তত বিস্ময় । এবারে উপস্থিত আমার জন্য সেরা বিস্ময় ।

আমার সবাই মাকড়শার জাল দেখেছি কিন্তু এটা কত শক্ত হতে পারে সে বিষয়ে অনেকেরই কোন ধারণা নেই । নিচের ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে । যাই হোক আমরা যে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্থাৎ ঝরণার কাছে চলে এসেছি সেটা বোঝা যাচ্ছিল । কেমন যেন একটা জলধারার পতনের শব্দ কানে আসছিল । আর পাথরের গায়ে গায়ে জলের ধারা ।

প্রায় দু ঘন্টার ঢিমেতালে হাটাহাটির পড়ে আমরা গিয়ে পৌছলাম ঝর্ণা তলায় । এটা বেশি বড় না হলেও ভরা বর্ষায় এটা বেশ সুন্দর আর বড় লাগছিল । ঝরণাটা প্রায় শত ফুট লম্বা কিন্তু জলের পরিমান একটু কম । গরমে পাহাড় বেয়ে উঠবার পরে সামনে যদি পড়ে ঝরণা । না নেমে পড়ে উপায় আছে ? আমরা নেমে পড়লাম এবং গোসল সেড়ে নিলাম ।

ঝরণার আরো একটি ছবি । আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে । অনেক হল ঝর্ণাজলে অবগাহন এবারে ফেরার পালা । আমাদের রাত্রিযাপনের জন্য বেছে নেয়া স্থানের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু হল । কিছু দূর হেটে একটু উপরে আসতেই দেখি রুদ্র রোষে ফুসে ওঠার প্রস্তুতি সমগ্র আকাশ জুড়ে ।

আমার মনে জাগল শঙ্কা । পাহাড়ে বৃষ্টি অতি ভয়ংকর । আমরা দ্রুত পা চালাতে শুরু করলাম । আরো কিছু দূর আগাতেই দেখি কি কৃষ্ণ ঘন ঘোর মেঘের ধারা । সমগ্র আকাশ ছেয়ে গেছে কাল কাল মেঘে ।

এই অবস্থাতেও ছবি তোলা কিন্তু থেমে থাকল না । সবাই বোধহয় ভাবছেন ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছিল । আসলে ঘটনা তেমন নয় । কিছুই হয়নি । মেঘেদের বোধহয় অন্য কোন কাজ ছিল তাই হন্তদন্ত পায়ে তারা অন্য কোথাও চলে গেল ।

যাইহোক সবাই হাটছি । ইতিমধ্যে বেশ কিছু আদিবাসী লোক হাটতে হাটতে আসলেন । আমরা তাদের ছবি নিলাম হাটবার ফাকে ফিরে আসবার সময় হাটতে খুব ভাল লাগছিল এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম সময়ে আমরা ফিরে এসেছিলাম । যাই হোক পাহাড়ের উপর থেকে কেমন লাগে বগা লেক কে দেখতে দেখুন । ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমরা প্রায় চলে এসেছি ।

তাই বেশ আনন্দ বোধ হচ্ছিল । যা হোক পথের ধারে একটা মজার দৃশ্য । খুব সুন্দর লেগেছে কলা ক্ষেতটাকে । আপনাদের কেমন লাগছে ? যাই হোক আবার হাটা শুরু । একটু দূরেই বগালেকের বমপাড়া চোখে পড়ল ।

আমরা যখন প্রায় পৌছে গেছি তখন এক মাংশওয়ালা হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন । তাকে জিজ্ঞেসে করতেই জানা গেল, তিনি হরিণের মাংশ নিয়ে রওনা হয়েছেন বাজারে । বিক্রি করবেন । বাজার বলতে উনি বোঝাচ্ছেন রুমা বাজার । এখান থেকে উনাদের জন্য চার ঘন্টার পথ, আমাদের ছঘন্টা ।

জীবন কতটা সংগ্রামের, এখানে বাস না করলে বোঝা শক্ত । আমাদের যাত্রা ফুরোলো । আমরা আবার পৌছে গেলাম লেকের ধারে । খেয়েদেয়ে উঠেই ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিলাম বিছানায় । আমার মনে আবার চিন্তা স্নধার দিকে পাহাড়টা কেমন লাগে দেখতে হবে ।

কিছুক্ষণ ঘুমিয়েই উঠে পড়লাম । বিষণ্ন সন্ধায় পাহাড়টাও কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়েছিল । এর পরে নামল রাত । বারবিকিউ হল । ভালই লেগেছিল খেতে ।

আপনাদের সাথে ছবি শেয়ার ছাড়া আর কোন উপায় করতে পারছি না বলে দু:খিত । রাত নটা । গহীন পাহাড়ে এটা অনেক রাত । হাজার তারার মেলা । সেদিন আকাশে চাদ না থাকায় আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ।

এত সুন্দর লাগছিল কি বলব । কিন্তু পরদিনের কথা স্মরণ করে শুয়ে পড়লাম বিছানায় । ঘুমের আগে ভাবছিলাম জীবন এখানে সেজেছে নিজের মতন করে । নিজের মতন করে সে ঐশ্বর্যবান । আমরা তার ঐশ্বর্য গ্রহণ করেই যাচ্ছি ।

যে দেনা হচ্ছে তার পাওনা মেটাবার চেষ্টা আমাদের কই । ভাবতে ভাবতে ঘুমের গ্রাসে আমি .................. আজ আর নয় । আগামী পর্বে দেখবেন ফেরার পথে ঝিরি পথের সৌন্দর্য । ততক্ষণ সবাই সুখে থাকুন । আর নিজের দেশকে জানুন, সবার প্রতি আমার অনুরোধ ।

দেখার আছে অনেক কিছু শেখার আছে অনেক কিছু .................... বি.দ্র: কাল পোস্ট টা বিচিত্র কোন কারণে প্রথম পাতয় আসেনি । এবং ডিলিট হয়ে যায় । যারা কমেন্ট করেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।