আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামুর দুর্গম পাহাড়ে পুলিশ-ডাকাত বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনি : নিহত ১১ : ৯ পুলিশসহ আহত ৩০ : অস্ত্র উদ্ধার

নাজমুল ইসলাম মকবুল

রামুর দুর্গম পাহাড়ে পুলিশ-ডাকাত বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনি : নিহত ১১ : ৯ পুলিশসহ আহত ৩০ : অস্ত্র উদ্ধার কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের বন্দুকযুদ্ধ ও জনতার গণপিটুনিতে ১০ ডাকাত ও এক গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। নিহত গ্রামবাসী হলেন রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং নয়াপাড়া এলাকার হাজী আবুল খায়েরের প্রবাস ফেরত ছেলে জসিম উদ্দিন (২৭)। এ ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে এক ডাকাত ও দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

তারা হলেন কনস্টেবল রাশেদুল হক ও টুটুল এবং আহত ডাকাতের নাম আবুল কাশেম। সে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার নুরুল আলমের ছেলে। আহত গ্রামবাসীর মধ্যে ধোয়াপালং নয়াপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম, শফিউল্লাহ, কলিম উল্লাহ, ছৈয়দুল্লাহ, ফরিদ আলম, এরশাদউল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, শরীফ হোসেন, রুবেল, ফারুক রয়েছেন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

উখিয়া উপজেলার ছাদৃকাটা এলাকা থেকে পুলিশের তাড়া খেয়ে ৩০ কিলোমিটার দূরে রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা ধোয়াপালংয়ের নয়াপাড়ায় আশ্রয় নিলে ডাকাত-পুলিশ বন্দুকযুদ্ধ ও গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ১০ ডাকাতের কারও পরিচয় পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের মধ্যে ৩ জনই রাখাইন। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার গভীর রাতে ২৫-৩০ জনের মুখোশ পরা ডাকাত দল উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের ছাদৃকাটা গ্রামের দুবাই প্রবাসী হাজী নুরুল আলম, ব্যাংক কর্মচারী ছৈয়দ আলম ও তার ভাই উলা মিয়ার বাড়িসহ ৪ বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তারা প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লক্ষাধিক টাকা ও ১০-১২টি মোবাইল ফোনসেট লুটে নেয়।

তাদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন গৃহকর্তা ফজলুল করিম, শহিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, রফিক উদ্দিন ও গৃহবধূ হাছনাহেনা। ডাকাত দল এ সময় একটি লাইসেন্স করা বন্দুকও নিয়ে যায়। পরে তা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও আহত এক ডাকাতকে গ্রেফতার করে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ডাকাত দল পালাতে শুরু করে।

এ সময় পুলিশও তাদের পিছু ধাওয়া করে ভোর রাতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং নয়াপাড়া পৌঁছলে ডাকাত দলের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ডাকাত ও এক গ্রামবাসী মারা যান। ওই সময় পুলিশের ৮ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে গণপিটুনিতে দুই দফায় আরও ৮ ডাকাত মারা যায়। খুনিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম কালু বলেন, উখিয়ায় ডাকাতির পর ভোর রাতে ডাকাত দল খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং নয়াপাড়া এলাকায় ঢুকে পড়ে।

এ সময় তাদের হাতে অস্ত্র দেখে গ্রামবাসীর সন্দেহ হলে মসজিদ থেকে ডাকাত দলের গ্রামে প্রবেশের বিষয়টি ঘোষণা করেন। পরে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে তাদের তাড়া করলে ফাঁকা গুলি করতে করতে পাশের একটি পাহাড়ে লুকায়। পরে পুলিশ পৌঁছলে ডাকাত দলের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। থেমে থেমে তা দীর্ঘ সময় চলতে থাকে। চেয়ারম্যান আবদুস সালাম কালু দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে দুই ডাকাত ঘটনস্থলেই মারা যায়।

পরে ৪ জনকে জনতা হিমছড়ির কাছে ও অপর ৪ জনকে ধোয়াপালং নয়াপাড়া এলাকায় গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়। উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক জানান, নিহত ১০ ডাকাতের কারও পরিচয় জানা যায়নি। এলাকাবাসীও তাদের চেনে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এদের অধিকাংশই মিয়ানমারের নাগরিক। তিনি জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোবিন্দ শুক্লদাশ, উপ-পরিদর্শক ফজলুল হক, রামু থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তফা কামাল, উখিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রমিজ আহমদ, নায়েক মুবিন, কনস্টেবল টুটুল, রাশেদুল হক, মোশাররফ ও মহসিন।

তাদের মধ্যে উপ-পরিদর্শক গোবিন্দ শুক্লদাশ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন মিয়া জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক ডাকাতকে গ্রেফতার ও ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এসআই ফজলুল হক জানান, উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে বেলজিয়ামের তৈরি দুইনলা একটি বন্দুক রয়েছে। এদিকে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, একদল পুলিশ গুরুতর আহত ডাকাত আবুল কাশেমকে পাহারা দিচ্ছে। তার কথা বলার শক্তিও নেই।

ওসি গিয়াস উদ্দিন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ডাকাতরা ১৪ জন ছিল। এদের মধ্যে ১০ জন নিহত ও একজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। বাকিদের গ্রেফতারে রামুর ধোয়াপালং এলাকায় অভিযান চলছে। সুত্রঃ আমার দেশ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.