আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামুর ঘটনা, মহানবী (সাঃ) এর বানী এবং আমার কিছু কথা।

স্বপ্ন দেখি এবং চেষ্টা করি সত্যি করার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময় এক অনন্য উদাহরণ। এ দেশে সব সময় হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করে। একে অন্যর সুখে দুখে পাশাপাশি অবস্থান করেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরকে সহযোগিতা করেন। ঈদ পূজা পাশাপাশি সময়ে হয়, একে অপরকে এসব অনুষ্ঠানে অভিনন্দিত করেন। কিন্তু কিছুদিন আগের রামুর ঘটনা বাংলাদেশ এর মতো এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে এক কলঙ্কজনক ঘটনা।

ধর্মের নাম নিয়ে কিছু মানুষের অন্য ধর্মাবলী মানুষের উপর এমন অমানবিক অত্যাচার যেন এক ন্যাকারজনক অধ্যায়। আসুন দেখি আমাদের ইসলাম ধর্মে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে। মহানবী (সাঃ) তার বিদায় হজ্জ এর বক্তব্যতে বলেছিলেন "হে লোকসকল, তোমরা শোন- কোন আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোন অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোন কালোর উপর সাদার এবং সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া ।

" অর্থাৎ যেখানে মহান আল্লাহ্‌তায়ালার প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে, তিনি নিজেই যেখানে সাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উদাহরণ সেখানে আমরা তাঁর উম্মত হয়ে কেন এমন কাজ করি যেটা ইসলাম কখনই সম্মতি দিবে না। রামু তে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আর যাই হোক না কেন মুসলমান না। ধর্মের নাম ধারী কিছু মানুষ। ফেসবুক এ যে পোস্ট এর কারনে যে এই ঘটনা ঘটল তাতে ওই বৌদ্ধ ছেলেটা কিভাবে দোষী হল। কেউ যদি আপনাকে কোন পোস্ট এ ট্যাগ করে সে জন্য তো আপনি কিছু করতে পারেন না।

যে অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যাগ করা হল তাঁকে না ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বেবস্থা না নিয়ে কেন এতো গুলো নিরিহ মানুষ কে এমন অমানুষিক অত্যাচার করা হল। আর যারা এমন অত্যাচার করলো এরা কারা । সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহানবী (সাঃ) আরও বলেছেন, "যদি কোন ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা মুসলিম দেশে অবস্থানকারী অমুসলিম দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না, যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বৎসরের দুরত্ব থেকে লাভ করা যায়। " সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ৬/২৫৩৩ তিনি আরও বলেন, "বিধর্মীকে হত্যা করা তো দূরের কথা, বিধর্মীদের সাথে অভদ্র আচরণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস বা উপাস্যদেরকে গালি দিতেও নিষেধ করা হয়েছে।

মুসলিম তার নিজের বিশ্বাসের শ্রেষ্টত্ব বর্ণনা করবেন, তবে কারো অনুভূতিকে আহত করবে না। " পবিত্র আল কুরআন, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার এক অসীম নিদর্শন যাতে কোন ভুল নাই। এই কুরআন কে গবেষণা করে কত কিছু আবিষ্কৃত হল, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। পৃথিবীর বড় বড় মনীষী, বিজ্ঞানী সবাই এক বাক্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে এটা একটা নির্ভুল কিতাব। এই মহাগ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা অনেক কিছু বলেছেন।

যা এক অনন্য দলিল। পবিত্র কুরআন এ মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, " আল্লাহ্ কে ছেড়ে যাদেরকে তাঁরা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না; কারণ এতে তারাও সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্কে গালি দিবে। " ঃ আল-আন'আম, আয়াত ১০৮ "সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ।

বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়" ঃ সুরা বাকারা, আয়াত ২১৭ " আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।

আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি। আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু।

আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর।

আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। " : সুরা বাকারা, আয়াত ১৯০-১৯৪ "আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা। " : সুরা নিসা, আয়াত ৮৪ ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম এই ধর্মের ধর্ম গ্রন্থ এতো সুন্দর করে দেয়া আছে যে আমরা কিভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে চলব, এর পর ও কেন এতো হানা হানি।

অনেকেই দেখছি একটা নির্দিষ্ট দল কে দায়ী করার চেষ্টা করছে। আমি বলছি না তাদের কোন দোষ নেই আবার আমি এটাও বলছিনা যে তাদের ই দোষ। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এটার সুরাহা না করতে পারলে অদুর ভবিষ্যতে দেখা যাবে বাংলাদেশ এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কে বা কারা এমন করছে আর তাদের পেছনে কে আছে সেটা বের করা টাই অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা চাই না ধর্মীয় সম্প্রীতির এই দেশ টা আবার কোন আফগানিস্তান, পাকিস্থান, আর ইরাক এর মতো ধ্বংসস্তূপ এ পরিনত হোক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.