আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদালতে জয়ের জবানবন্দি



সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০১১ স্টাফ রিপোর্টার,মানব জমিন, রাজশাহী থেকে: র‌্যাব ও পুলিশের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করার পর এবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নাটোরের ব্যবসায়ী রাসেলের আত্মস্বীকৃত খুনি জ্যোতির্ময় সরকার জয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র জয় গতকাল সন্ধ্যায় নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মোর্শেদ সিদ্দিকীর কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে খুনের বর্ণনা দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার এসআই লুৎফর রহমান জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে জয়কে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করা হয়। বিকেলে শুরু হয় জবানবন্দি রেকর্ড। এ সময় জয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে।

পুলিশ জানিয়েছে এর আগে জয় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য জানিয়েছিল পুলিশকেও গত দ’ুদিনে একই বর্ণনা দেয়। মূলত টাকা পরিশোধ না করার উদ্দেশ্যেই জয় ও তার সহপাঠী সাব্বির মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তাদের বন্ধু ব্যবসায়ী রাসেলকে। জবানবন্দি রেকর্ডের পর সন্ধ্যায় জয়কে নাটোর কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চত্বর থেকে লাশ উদ্ধারের পর থেকে এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও চলছে গুঞ্জন।

সেই সঙ্গে সাব্বির ও জয় সম্পর্কেও বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছে। দুই মেডিকেল ছাত্রের হাতে ব্যবসায়ী রাসেল খুন হওয়ার পর লাশ চারু মামার ক্যান্টিনের পেছনে পুঁতে রাখার ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ সর্বত্রই আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবার মুখে একই প্রশ্ন, শান্তির নগরী রাজশাহীতে এসব কি হচ্ছে? গত ১০ই এপ্রিল অপহরণের পর নগরীর আলুপট্টি এলাকায় ব্যবসায়ী আমিনুলকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে হত্যার পর লাশ নয় টুকরো করে ঘাতকরা। ১২ই এপ্রিল দিবাগত রাতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার নগরীতে উদ্ধার করা হলো আরও এক ব্যবসায়ীর মাটিতে পুঁতে রাখা গলিত লাশ।

গত শুক্রবার এই লাশ উদ্ধারের পর নগরীর সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন আলোচিত বিষয়ও এটিই। চারু মামার ক্যান্টিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি দিনই বিকেল তিনটার মধ্যে ক্যান্টিনটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে সেখানে চলতে থাকে আড্ডা। মূলত মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাই সেখানে আড্ডা দেন।

তবে সন্ধ্যার পরে জায়গাটি ফেনসিডিলসেবীদের দখলে চলে যায়। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে টানা আড্ডা। তারপর জায়গাটি ফাঁকা হয়ে যায়। অনেকের ধারণা, ওই জায়গাটি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পরই খুনিরা ব্যবসায়ী রাসেলকে হত্যার জন্য ওই জায়গাটি বেছে নেয়। চারু মামার ক্যান্টিনের পেছনের ওই অংশটিতে কেউ বসে থাকলেও বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকার কথা নয়।

এই নির্জনতাকে পুঁজি করেই খুনিরা হত্যার জন্য সেই জায়গাটি বেছে নেয়। এদিকে, ঘটনা শোনার পর অনেকেই চারু মামার ক্যান্টিন দেখতে যাচ্ছে। তবে আগে যেমন সেখানে আড্ডা বসত আপাতত তা হচ্ছে না। মেডিকেল ছাত্রদের হাতে বন্ধু খুনের ঘটনা নিয়ে চিকিৎসকরাও হতবাক হয়েছেন। বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আফসোস করে প্রশ্ন করেন আমরা কাদের ডাক্তার বানাচ্ছি? ক্যান্টিন বন্ধ করে দিতে চান চারু মামা আর ক্যান্টিন চালাতে চাচ্ছেন না চারু মামা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজে দীর্ঘ ৫ দশক ধরে ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিন চালাতে গিয়ে মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রইস উদ্দিন (চারু)। ছাত্রছাত্রীরা তাকে মামা বলেই সম্বোধন করেন। এই কারণে তার ক্যান্টিনের নামও হয়ে যায় চারু মামার ক্যান্টিন। এই ৫ দশক ক্যান্টিন চালাতে গিয়ে মেডিকেল কলেজের অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি।

কিন্তু জীবনে কখনও তিনি এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখেননি। তার ক্যান্টিনের পেছনেই মেডিকেল কলেজের দু’জন ছাত্র মাহাবুব আলম রাসেল নামের ব্যবসায়ীকে হত্যার পর ক্যান্টিনের পেছনে লাশটি পুঁতে রাখে। এই ঘটনা তাকে তাড়া করে ফিরছে। তার ক্যান্টিনের পেছনেই লাশ পোঁতা; এর পরও তিনি ক্যান্টিনে বসে ক্যান্টিন পরিচালনা করেছেন। এটা ভাবতে গিয়েই কষ্ট পাচ্ছেন চারু মামা।

তিনি কখনও ভাবতেই পারেননি যে তার ক্যান্টিনের পেছনেই ঘটে গেছে এত বড় একটা লোমহর্ষক ঘটনা। গত শুক্রবার ক্যান্টিনের পেছন থেকে লাশ উদ্ধারের পর প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন বয়োবৃদ্ধ এই ব্যক্তি। শুক্রবারের পর মেডিকেল কলেজের অনেক ছাত্রকেই তিনি বলেছেন, ‘মামা আমার শরীরটা ভাল নেই, মনটাও ভাল নেই। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল! আমি ভাবতেও পারিনি, আমি আর ক্যান্টিন চালাতে চাই না। ’ তিনি জানান, গত দুই বছর ধরে অসুস্থতার কারণে বিকেল ৩টাতে তিনি ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়ে চলে যান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.