আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈশাখি ঝটকা, পহেলা বৈশাখে

আমার ব্যক্তিগত ব্লগ

আগে বড়দের মুখে শুনতাম, আমাদের আর আনন্দ কি, বাচ্চাদেরই তো উৎসব। ঠিক মানতাম না। বড় হলে কি আর আনন্দ করতে নেই। সে তো আছেই, তবে বাচ্চা কিভাবে সেটা করতে দেয় সেটাও একটা কথা। পহেলা বৈশাখে বড় আপা বলল, আজ দুই ভাইকে উপটান দিয়ে আজ গোসল দিব।

শাফিন (আমার ২ বছরের ছেলে) আর তামিম (বড় আপার ৯ বছরের ছেলে) দুজনকেই বাথরুমে ২টা বোলে বসানো হলো আর উপটান মেখে গোসল দেয়া হলো। এরপর দুজনকেই পহেলা বৈশাখের পোশাক পরিয়ে দেয়া হলো, ওরা খেলতে লাগল। শাফিন খাটের পাশে মেঝেতে বসে খেলছিল। আমি খাটে বসে বড় আপার সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ দেখি শাফিন নেই।

আমি সাড়া ঘরে ঘুরে ঘুরে খুজলাম, নেই। আম্মাকে বললাম, শাফিন কোথায়? আম্মা চমকে বললেন, দরজা খুলে দেখ। আমি ছুটে গেলাম, বড়পা আগে দরজা খুলে খোজা শুরু করলো। আম্মা আমাকে বললেন, আগে নিচে দেখ, এরপর রাস্তায়। বড়পাকে পাঠালেন উপরের দিকে।

আমি দৌড়ে নিচে যেতেই বড় আপা ডাকলো, শাফিন সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গিয়েছে। আবার দৌড়ে উপরে গিয়ে দেখি কাঁদছে আর নিচে নামছে। কোলে নিয়ে চোখ মুছে অনেক কষ্টে ঠান্ডা করলাম। ভেবেছিলাম বৈশাখি ঝটকা এখানেই শেষ, আসলে তা নয়। বিকালে সবাই মিলে খেয়ে গিয়েছি।

বসেছি রেস্টুরেন্টের দরজার পাশের টেবিলে। শাফিন টেবিলে বসে কোন কাজ না পেয়ে চামচ দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে তবলা বাজাতে লাগল। সবার কানে তালা লাগার যোগার। তাই ওকে নিচে নামিয়ে দিলাম, তামিম গেল সাথে পাহাড়া দিতে। এক চক্কর দিয়েই তামিম হয়রান হয়ে বসে পড়ল।

শাফিন একাই পুরো রেস্টুরেন্ট ঘুরতে লাগল। আর অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খাতির করতে লাগল। আমি দারোয়ানকে বললাম, একটু দেখবেন, বাচ্চা যেন বাইরে না যায়। সে হা বোধক মাথা নাড়ল। আমি দেখেছি, এদেশে দারোয়ান বা গার্ড শ্রেনীর লোকরা বেশ বোকা হয়।

এদের যদি কোন বাসার ঠিকানা জিগ্যেস করা হয় তো কখনই বলতে পারেনা, এমনকি পাশের বাড়ির নাম্বারও বলতে পারেনা, অথচ সাড়াদিন গেটের সামনে থাকে। যাই হোক, এই লোকই এর ব্যতিক্রম না সেটা কিছুক্ষন পরে টের পেলাম। এ আমাকে বলবে না, যে রেস্টুরেন্টের পিছনের দিকেও গেট আছে! শাফিন ঘুরছে আর কিছুক্ষন পর পর আমার কাছে আসছে। এক বার বলল, নানুবাড়ি গিয়েছিলাম। আমি বুঝিনি কি বলছে, ভাবলাম নানুর মতোন বয়স্ক কাউকে দেখেছে হয়তো।

মায়ের মন বলে কিনা জানিনাহ, একটু পর নিজেই দেখতে বের হলাম কোথায় যাচ্ছে। দেখি রেস্টুরেন্টের পিছনের দিয়ে একটা গেট, খোলা, লোকজন আসছে, যাচ্ছে। সেই সাথে দোতলা ওঠার সিড়ি। শাফিন মাঝে দাড়িয়ে ভাবছে কোন দিকে যাবে। একবার যদি বাইরে চলে যেত তো আর পাওয়া লাগত না।

জোর করে ধরে নিয়ে বসিয়ে রাখলাম। ভাবছেন ঝটকার শেষ এখানেই? নাহ তা নয়। রেস্টুরেন্টের বাইরেই সিমেন্টের কুয়ার মতোন করে ফোয়ারা বানিয়েছে এরা। শাফিন বের হয়েই ফোয়ারার পাশে দাড়িয়ে ফোয়ারা দেখতে লাগল। কে ভাববে যে ও পানিতে লাফ দিয়ে গোসল করার ধান্দা করবে।

হঠাৎ লাফ দিল। টারজান ভাই পাশে থাকাতে ঝট করে ধরে ফেললেন। বৈশাখী ঝটকার শেষ এখানেও না। রেস্টুরেন্টে গাড়ি দিয়ে দলে দলে লোক আসছে। এক সময় একটা বড় কালো গাড়ি এসে থামলো, লোকজন নেমে গেল, দরজা বন্ধ হবে, এমন সময় শাফিন দিল দৌড়, এক মুহূর্তে গাড়ির দরজার সামনে।

গাড়িতে ওঠার ঠিক মুহূর্তে ওকে কোন মতে ধরে আনা হলো। ওর ছোট খালু বললেন, আজ তো বেবিস ডে আউট হয়ে যেত। ড্রাইভার তো এতো ছোট বাচ্চা দেখতে পেতনা, নিয়ে যেত। রাতে বাধ্য হয়েই আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম, আজ আর না। লাইফটা এবার একদম বোরিং বানিয়ে দাও।

আল্লাহ দোয়া কবুল করলেন। রাতে শাফিন খুব ভদ্রভাবে রইল। ওকে একা রেখে আমি গোসল করলাম, বিছানা করলাম, তারপর ওর হাতমুখ ধুইয়ে খাওয়ালাম। চুপচাপ সব কাজ করলো। মনে মনে ভাবলাম ভালই কাটলো পহেলা বৈশাখ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.