আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুকরো টুকরো বৈশাখি ঝড়



টুকরো টুকরো বৈশাখি ঝড় এজি মাহমুদ বৈশাখ মানেই এলোমেলো টাইপ রুটিনছাড়া ঝড়। ধরুন, রাস্তা দিয়ে ছাতা মাথায় হেটে যাচ্ছেন। এক ঝড় এসে আপনার ছাতাটিকে ছিনতাই করে উড়িয়ে নিয়ে গেল। অবশ্য আপনি একটু হালকা পাতলা হলে ছাতাসহ আপনিও ছিনতাই হয়ে যেতে পারেন। এরকম হুটহাট ঝড় কারোই ভালো লাগার কথা নয় (ছাতা ব্যাবসায়ী ছাড়া)।

কিন্তু এক বৈশাখে যখন ঝড়ো বাতাস আমাদের প্রাইমারি স্কুলের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেল তখন আমরা স্কুলের পোলাপান ব্যাপক আনন্দিত হয়েছিলাম। অবশ্য মাসখানেক পর যখন স্কুল খুলে গেল তখন পড়ার চাপে ঘুম, খাওয়া দাওয়া এমনকি টয়লেটে যাবার সময় নিয়েও টানাটানি পরে গিয়েছিল। সেদিন কাশেমের দোকানে বসে চা খাবার সময় মনে হল চায়ের দুধ-চিনিতেও টানাটানি পরে গেছে। বৈশাখে টানাটানির বিষয়টা আমার জন্য মোটেও শুভ নয়। আমার দাম দিয়ে পাঞ্জাবীগুলো কে যেন বৈশাখেই নানাভাবে টান খেয়ে ছিড়ে যায়।

এভাবে আচমকা একবার এক বৈশাখে টান খেয়ে প্রায় ছিড়েই গিয়েছিল একটি সম্পর্ক। সেই বৈশাখের বিকেলে আমার এক বান্ধবী মুখোশ কিনবে বলে কেওমেও শুরু করে দিল। তাকে অনেক বুঝালাম, মুখোশ কিনলে কিনো গিয়া- কিন্তু আমি কেন ? আমার চেহারা কি মুখোশের মত ? জীবনে সে কোন কিছুই কখনো আমার সাথে কিনে নাই। কিন্তু আজ সে আমাকে নিয়ে মুখোশ কিনবেই। তার এসব কথা শুনে মনে মনে ভ্রু কুচঁকালেও বাস্তবে ভ্রু কুচঁকাতে সাহস পেলাম না।

তার ঘ্যান ঘ্যান থামাতে রওনা হলাম তার সাথে। মুখোশ কিনতে গিয়ে দেখি মুখোশওয়ালা মহা ফাজিল। সে নিজেই একটা কিম্ভূত মুখোশ পরে বসে আছে। বান্ধবী মুখোশ পছন্দ করা শুরু করলো। বান্ধবী মুখোশওয়ালার কাছ থেকে এটা নেয়, ওটা নেয়।

একসময় একটা বিদঘুটে মুখোশ নিয়ে বললো, দেখতো এটা কেমন ? আমি সামনে পিছনে কিছু না ভেবেই বলে দিলাম, মনে হচ্ছে তোর মতই। পাশে দাঁড়ানো আরো দুটি মেয়ে দাঁড়িয়ে মুখোশ দেখছিল। তাদের মুখে হাসির শব্দ শুনে বান্ধবীর মুখে প্রায় সাইবেরিয়ার চেরনোবিল দূর্ঘটনা ঘটে গেল। মুখোশওয়ালা হেসেছিল কি-না ঠিক বোঝা যায়নি। ভাগ্যিস ব্যাটার মুখে মুখোশ ছিল, না হলে তিন নাম্বার হাসিটাও আমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের সময়সীমা বাড়িয়ে দিত।

পান্তাবুড়ির পাল্লায় আমি সাধারণত খুব সময় মেপে কোথাও যেতে পারিনা। দেখা যাবে, পহেলা বৈশাখে রমনায় যাবার কথা ভোর ছয়টায়। আর আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি সকাল আটটায়। একবার কিভাবে যেন এক বৈশাখে টাইমলি রমনায় পৌছে গিয়েছিলাম। মানিব্যাগটাকে জবাই দিয়ে চুপচাপ চোরের মত পান্তা খাচ্ছি।

এমন সময় এক ভদ্রোলোককে দেখলাম, পান্তা বিক্রেতা বলছেন, কি হে, তোমার ইলিশের টুকরার সাইজ মনে হয় ছোট হয়ে গেছে। পান্তাওয়ালা সহজ গলায় বললো, ইলিশের টুকরার সাইজ বড় হয়নি। একবছরে আপনার মুখের সাইজ মনে হয় বড় হয়ে গেছে। ব্যাস বেধে গেল বিশাল হাউকাউ। আমি হাউকাউ দেখছি আর আগের মতই পান্তা খাচ্ছি।

এমন সময় দেখি আরেক ভদ্রলোককে তার ছোট্ট মেয়েটা খুব জ্বালাতন করছে, পান্তাবুড়ি দেখবে বলে। ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত হচ্ছেন, এই যুগে তিনি পান্তা বুড়ি পাবেন কোথেকে ? হঠাৎ এক বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে আড়চোখে মেয়েকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে চুলপাকা মহিলা, উনিই পান্তাবুড়ি। ছোট্ট মেয়েটা একছুটে মহিলার কাছে গিয়ে বললো, অ্যাই পান্তাবুড়ি, তোমার পান্তা চুরি করে খেত সেই পান্তা চোরটা এখন কোথায় ? মহিলা প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে আঙুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিলেন; অবিশ্বাস্য! মেয়েটি আমার সামনে এসে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো, কি তুমি পান্তাবুড়ির চুরি করা পান্তা খাচ্ছ বুঝি ? আশপাশের সবাই কৌতুহলী হয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো। এদেশে চোর পেটানোর মানুষ বেশি, ধরার মানুষ কম। আমাকে অবশ্য পেটানোর ব্যাপারে তেমন কারও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেল না।

কিন্তু সবার সামনে এভাবে প্রেস্টিজ নিয়ে টানটানি-কার ভালো লাগে বলুন ? ইচ্ছা করছিল পান্তাবুড়ির সামনে গিয়ে প্লেটটাকে সামনে বাড়িয়ে বলি, দাও ফিরিয়ে আমার প্রেস্টিজ / লও এ তোমার বাসি পান্তার পাত্র। কিন্তু আমি একটি লাজুক শ্রেণীর প্রাণী বলে কিছু করতে পারিনি। তবে মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল সেদিন। দাঁড়ান, আপনাদের মেজাজটাকেও খারাপ করে দিচ্ছি। মনে করুন, আপনি পহেলা বৈশাখের দিন আপনার বন্ধুর বাসায় পান্তা খেতে গেছেন।

পান্তা খাচ্ছেন, এমন সময় দেখলেন বন্ধুর পোষা কুকুরটা আপনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। বন্ধুকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করতেই বন্ধু বললো, ব্যাটা মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে ওর প্লেটে তোকে খেতে দেয়া হয়েছে। হাঃ হাঃ হাঃ। ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা আঁষটে গন্ধের কারণে অনেকেই ইলিশ মাছ খেতে পারেন না। তবে কর্কট রাশির জাতকেরা আঁষটে পাশুটে সবরকম গন্ধের মাছই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন।

কর্কটের জাতকরা মাইন্ড করবেন না মাছ খাওয়াটা মোটেও খারাপ কিছু নয়। তাই বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তার সঙ্গে ভাজা ইলিশ না হলে জমে না। ভাজা কিংবা রান্না-ইলিশের বডিতে কিন্তু মাত্র তিরিশটি কাঁটা থাকে না। সন্দেহ হলে গুণে দেখতে পারেন। তিরিশ কাঁটা মানে তিরিশ রকম যন্ত্রণা।

ব্যাপারটা একটু ভেঙ্গে চুরমার করে দিলে সহজ হয়ে যাবে। ইলিশ মাছ, বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও কোথাকার ইলিশ আইমিন জন্মকোষ্ঠি নিয়ে নানান সন্দেহ দেখা দেয়। সন্দেহ দূর হয়ে গেলেও পছন্দের সাইজটা মেলে না। সাইজমত পেলেও দামে বনে না।

দামে বনলে রান্না করে খেলে স্বাদ পাওয়া যায় না। স্বাদ পেলেও কাঁটা বেছে খেতে হয়। কাঁটা বেছে না খেতে পারলে কাঁটা গলায় বিধে যায়। সেই কাঁটা নামাতে বিড়াল ধরে আনা। তারপর বিড়ালের পা ধরে কান্নাকাটি করা।

অতঃপর বিড়ালের খামচি খেয়ে টিটেনাসের টিকা নিতে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি শুরু করা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ইলিশ মানেই তিরিশ.... বৈশাখি অনুসন্ধান পহেলা বৈশাখ কবে ? কত তারিখ ? বৈশাখের আগে এই প্রশ্নটা খুবই কমন। আমরাও স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দেই, ১৪ এপ্রিল। কিন্তু এর মাঝে যে খানিকটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে সেটা আমাদের নজরে পড়ে না। অস্বাভাবিকতাটুকো হলো পহেলা বৈশাখ কবে সেটা জানতে আমরা বাংলা মাসের তারিখ হিসাব করে বের করতে পািের না।

ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিলকে দিয়ে আমদের পহেলা বৈশাখেকে চিনতে হয়, ব্যাপারটা আসলেই বেশ লজ্জাজনক। তবে এই লজ্জাটা বেশ লাভজনক। লাভটা হচ্ছে বাংলা সন কত বছরে পা রাখছে সেটা এই সুযোগে জেনে নেয়া যায়। বাংলা সন জিনিসটা এক বছরের জন্য স্থায়ি হলেও বাংলা তারিখ ঘন ঘন প্রেমিকা বদলের মত পরিবর্তনশীল। মেমোরির জোর ঘটিয়ে বছর শুরুর পরের কয়েকদিন বাংলা তারিখ বলা গেলেও তারপরই সব আউলা লেগে যায়।

কোন ফাঁক গলে ভাদ্র-কার্তিক ক্রমাগত পার হয়ে যায় সেটার কোন খোঁজ আমরা রাখি না। আমরা বাঙালিরা প্রয়োজন ছাড়া কিছুই করতে চাই না। প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনে কাজ করা লোকের সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকজন। সেই কয়েকজনের একজন আমার পরিচিত যিনি একদিনে সকাল বিকাল দাঁড়ি কামান। অবশ্য তার দাঁড়ি হাইব্রিড প্রজাতির, স্বল্প সময়ে অধিক ফলনশীল কিনা সেটা আমি বলতে পারি না।

বাংলা সন তারিখ আমারা যে ঠিকমত বলতে পারি না তার পেছনে ক্যালেন্ডারের আইমিন দেয়ারপঞ্জিকাগুলোর একটা ছোটখাট চক্রান্ত রয়েছে। সেটা হল, ইংরেজি সন-তারিখের পাশাপাশি বাংলা সন-তারিখ না দেয়া কিংবা দিলেও খুব ছোট করে দেয়া যাতে বাংলা তারিখ আমাদের ঠিকমতো আমাদের চোখে না পড়ে। সময় সবারই কম তাই শেষকালে শর্টকাটে বিদায়। দূর হয়ে যাক সব হতাশা কষ্ট...আসুক ভালোবাসা.... প্রভাতি স্বপ্ন...শুভ নববর্ষ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.