আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনের শেষে -১৫



দিনে কতো কিছু ঘটে যায়। এই ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যে আমরা কতক থাকি প্রত্যক্ষদর্শী। কেউবা নিরব দর্শক। ঘটিত ঘটনায় থাকে ভিন্ন আঙ্গিক, ভিন্ন মাত্রার, আবার স্বাভাবিক মাত্রারও, নানা চিত্র সংবলিত, নানা আাবেগ সংবলিত, নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে। আমরা সবাই এসব ঘটনার আবর্তে ডুবে থাকি।

কেউ এসবের মাঝে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কেউ বিরত থেকে স্বস্তিবোধ করে। আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম যে দিন দিন কেমন যেন যান্ত্রিকময় হয়ে ওঠছি। এই পরিবেশে নিজেকে ইতোমধ্যে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। যান্ত্রিকময় জীবনকে ভালবাসি।

তাই সহজে এর মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। কতসব ঘটনার আবর্তে দিন কাটাই। তাই থাকি ব্যস্ত। ব্যস্ততাকে সঙ্গী করেনিয়েছি সেই কবে থেকে। ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ।

যখন ব্যস্ত থাকি তখন খুব ক্লান্ত মনে হয়। মনে হয় যেন বেদনাময়, কতটা কষ্টে কাটে প্রতিটি মূহৃর্ত। আসলে এটাকে পেইন হিসেবে আমরা সবাই নিই। আমরা বড় হয়েছি অব্যস্ততাময় জীবন দিয়ে। যার কারণে যখন অনেক কাজ এক সাথে করতে হয় বা একের পর এক কাজ করে যাই তখন পেইনবোধ করি।

আজকে ঘুম থেকে উঠেই একটা এ্যাসাইন্টেমন্ট লিখতে বসি। সেলিম স্যারের। এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেটিংয়ের কোর্স। কয়েক পৃষ্ঠা লিখে উঠে যাই। ঠিক সাড়ে নয়টায় একটা সংবাদ সম্মেলন আছে ।

তার পুরো দায়িত্ব আমার উপর। কাগজপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে বের হয়ে গেলাম। যাওয়ার সময় ক্যাফেটেরিয়ায় একটু দেখা করে খোজ খবর নিলাম। সাংবাদিকদের খাবার বিষয়ে ও খোজ নিলাম। সবই ঠিক আছে।

সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হবে তা লিখেছি গত রাতেই ক্নিতু প্রিন্ট দিইনি। প্রিন্ট দেয়া মাত্রই জুলহাজ্ব ভাই ফোন দিলেন সব সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের কাগজে সবার নাম ঠিক আছে কি না। প্রিন্ট দিলাম , আবার ফটোকপি করলাম ৩০ কপি। এদিকে ঘড়ির কাটা সাড়ে নয়টা পৌছা মাত্রই সকল শিক্ষকরা ক্যাফেটেরিয়াতে পৌছে গেছেন। সাংবাদিকরা কেউ এখনো এসে পৌছায়নি।

সবাইকে আবার ফোন দিতে শুরু করি। অবশ্য যখন সংবাদ সম্মেলনের সময় দেয়া হয়েছে তখন কেউ সময়মত আসতে পারবে না। আমরা বাধ্য হয়েই সাড়ে নয়টায় দিয়েছি। ক্যাফেটেরিয়া বুকিং দেয়া আছে অন্যান্য সংগঠনের। এগারটার মধ্যে এটি খালি করে দিতে হবে।

সাংবাদিকদের অনেকেই এখন চলছে পরীক্ষা, কারো ছিল ক্লাস। ইতোমধ্যে যুগান্তরের সায়েম সাবু আসলেন, নাজির আসল। একে একে বেশ কয়জন আসল। এদিকে শিক্ষকরা এসে বসে আাছেন। কোন রির্পোটার হল থেকে আসছেন।

এমন সময় আবার ক্যাম্পাস সংগল্ন কাজলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে এক ব্যাক্তির হাত – পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক সাংবাদিক ওখানে চলে যায় নিউজ করার জন্য। শীর্ষনিউজ অনলাইনের রিপোর্টার লুৎফর রহমান চলে গেলেন ওখানে । ওখানথেকে তিনি আসলেন। আরো কয়েকজন আসল।

এদিকে প্রেসক্লাবের কোন সাংবাদিকই এখনও পর্যন্ত এস পৌছায়নি। তাদের আজকে রজতজয়ন্তী হচেছ । তাই তারা কেউ আসতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য পাঁচজন রিপোর্টার আসার কথা। কি একটা মানসিক চাপে সময়টা যাচিছল ।

কেউ ওই সময় না থাকলে বুঝতে পারা যাবে না। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কয়েকটি বাক্য, তখ্যগত ছিল। সেটি আবার শুভ্রা ম্যাডাম ঠিক করে দিলেন। ল্যাপটপটা অন করে কারেক্ট করে আবার গেলাম প্রিন্ট দিতে । প্রিন্ট ও ফটোকপি করে নিয়ে আসা হলো তারপর শুরু হল সাংবাদিক সম্মেলন।

সংবাদ সম্মেলনটা হচিছল বিবর্তন এর। পহেলা বৈশাখ নিয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বহুজাতিক মোবাইল কোম্পানি রবি। সংবাদ সম্মেলনে শেষ করে গ্যাস সিলিন্ডারে আহত ব্যক্তির নিউজ করলাম। এরই মাঝে একটা ক্লাস মিছ দিলাম।

এই ক্লাসে এ্যাসাইন্টমেন্ট জমা দেওয়ার কথা। আমার তো এটা লিখাই হইনি। বিভাগে গেলাম। কোন এক রুমে বসে এ্যাসাইন্টমেন্টের বাকি অংশটা লিখলাম। লিখার সময় লুৎফর ফোন দিল।

একটা নিউজ করতে হবে। ইমা-ব্যাটারী চালিত রিক্সার সংঘর্ষের ফলে শিক্ষক আহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে । আমি বললাম ভাই পরে আসছি। এস্যাইন্টমেন্ট লেখা শেষ করে স্যারের চেম্বারে গিয়ে জমা দিয়ে আসলাম। স্যারকে জানালাম –ক্লাসে না আসার কারণ।

স্যার ঠিক আছে বলে এ্যাসাইন্টমেন্টটা জমা নিলেন। ওদিকে লুৎফর ভাই ক্যাম্পাসের মিডিয়া চত্বরে অপেক্ষা করছে আমার ল্যাপটপের জন্য। নিউজ করবেন বলে। নিউজটা করলাম। টুকি টাকি চত্বরে গিয়ে বসলাম।

আজকে বুধবার । ইত্তেফাকে ক্যাম্পাস পাতা বের হয়। আজকে বিএফডিএফে ২য় জাতীয় বিতর্কের ফিচার আসছে। বিএফডি্‌এফ’র শাওন ভাই এর সাথে দেখা টুকিটাক চত্বরে। তিনি আমার বিভাগের বড় আপু তামান্না আপুর সাথে বসে আড্ডা দিচেছন।

সাথে আছে আমার বনধু শাওন,রাকিব। শাওন ভাই আমাকে দেখা মাত্রই আমার খুব প্রশংসা করলেন। হাসির ছলে বললেন- এমন সাংবাদিক যতি হতো তাহলে কতই না ভলো হতো। পত্রিকায় নিউজ আসার পর ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। ভাই সংবাদ বা ফিচারটা আসছে একটু দেখে নিয়েন।

শাওন ভাই আমার বনধু শাওন ও রাকিব সবাই একস্বরে আমাকে আরো প্রশংসা করলেন- শাকিরের মতো ছেলে হয় না। খুবই এ্যাক্টিব একটা ছেলে। শাওন ভাই চলে গেলেন। আমি তামান্না আপু ও বন্ধুদেরে নিয়ে কথা বলছি। একসময় আপু বললেন-শাকির-ল্যাপটপটা অন করো।

ফেইসবুকটা একটু দেখব। এরই মাঝে প্রথমআলোর রাবি প্রতিনিধি কুদরাত ই খুদা বাবু ফোন দিলেন সকল সাংবাদিকরা বসবে । জরুরী বিষয়ে একটা আলোচনা হবে। আমি তামান্না আপুকে ফেইসবুকের ফেন্ড কনফার্মেশন, নোটিফেকেশন দেখিয়ে দিলাম। (এদিকে চাপ অনুভব করছি যে মিটিংয়ে যেতে হবে।

কিন্তু আপুকে তো বলতে পারি না যে আমাকে চলে যেতে হবে। আপু আবার মাইন্ড করবেন)। আবার কতগুলোতে কমেন্ট করে দিলাম। এক সময় আপুকে বললাম-আপু একটা বলি কিছু মনে করবেন না। কখনো সাংবাদিকদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখবেন না, বন্ধুত্ব করবেন না।

তারা কখনো বন্ধুত্বকে সময় দিতে পারে না। কিছুক্ষণ পর দেখি আপুর চোখ লাল হয়ে গেছে ..টলমলিয়ে পানি পড়ছে। চোখে পানির পরিমাণ এতোই যে হাত দিয়ে তা আবার মুছতেছেন। কি আশ্চর্য!! কি এমন বললাম যে এভাবে কাঁদতে হবে। আপুকে আপনি আমার ওপর রাগ করলেন কেন-তিনি বললেন রাগ করিনি।

আমি দ্রুত চলে আসলাম মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য। মিটিংয়ে বসেই আপুকে ম্যাসেজ পাঠালাম-ব্যস্ততার জন্য আমার সব বন্ধুরা আমার কাছথেকে দুরে থাকে। মিটিং চলল একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত। আমাদের ক্যাম্পাস রির্পোটারদেরমাঝে রাবিসাসের নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। জটিলতা নিরসন না হওয়ায় দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছিল।

এই সমস্যার সমাধানকল্পে মিটিংটা এতোক্ষণ চলল। শাসরুদ্ধকর মিটিংয়ে সমঝোতায় পৌছাল । নতুন একটি কমিটি প্রণয়ণ করা হল। আমাকে দেওয়া হলে ক্রীড়া সম্পাদক। এই কমিটি আগামী শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে।

রুমে চলে আসলাম রুমে নিউজ করার জন্য । কয়েকটি নিউজকরলাম। আমি ল্যাপটপ অন করলেই ফেইসবুক অন করে রাখি। নিউজ করা শেষ করে সোহেল ভাইয়ের একটা কাজ করছিলাম। এটা করে একটাপ্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করতে হবে।

কাজটা করছি। এমন সময় দেখি বিএফিডিএফের শাওন ফেইসবুকে স্টাটাস দিয়েছে-“যাচিছ আমার বন্ধু রাশেদ দেখতে” সিনেমাটি দেখতে। আমি কমেন্ট করলাম এই বলে যে –“ভাই আমারও দেখার ইচছা ছিল...ইসসস”। সাথে সাথে শাওন ভাই মোবাইলে এসএমএস পাঠালেন- যদি ফ্রি থাকো ..তাহলে চলে আসো...কাটাখালির রাজতিলক সিনেমা হলে। সোহেল ভাইয়ের কাজ পুরোপুরি না করেই চলে গেলাম আমার বন্ধ রাশেদ দেখতে।

দেখে ভালই লাগল। ছবিটাতে মুক্তিযুদেধ শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণের বিষয়টা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শাকির ইকরাম ১৩ এপ্রিল ২০১১ সময়:রাত ১০:৩০ টা শের-ই-বাংলা হল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।