আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনের শেষে ২৬, এখনও দিনের আলো আছে

১. গাঢ় অন্ধকার। দিনের অপক্ষোয় আছি। এতো অন্ধকারে বের হওয়া ঠিক হবে না। ওইদিকে ট্রেন সাড়ে ৬টায়। আসলামকে বললাম-আমাকে এখনই বের হতে হবে।

তুই আমাকে মেইনরোড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয়। ও যাবে না বলে আমাকে জানিয়ে দেয়। ঘুম ঘুম চোখে ও আমাকে বলল। ওকে বললাম তুই গেটে এসে দাড়া আমি বেতার মাঠ দিয়ে মেইন রোড না পৌছা পর্যন্ত আমার দিকে তাকিয়ে থাক। আচ্ছা যা তুই আমি তোর দিকে তাকিয়ে আছি।

এতো রাতে তোর উপর কেউ হামলা বা ছিনতাই করতে আসবে না। আমি বললাম- যারা আসার দরকার তারা ঠিকই আসবে। বেতার মাঠ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেটে দাড়িয়ে আছি অটো বাইকের জন্য। বেশকিছুক্ষণ পর একটি বাইকে করে রেলস্টেশনে পৌছলাম ট্রেন ছাড়ার অনেক সময় আগেই। সময় আছে বলে নাস্তা করে নিলাম।

৬টা ৩০মিনিটে ট্রেন ছাড়ল পঞ্চগড়, চিলাহাটীর উদ্দেশ্যে। ওইদিকে সাইদুর কিছুক্ষণ পর পর মোবাইল করে খোঁজ নিচ্ছে আমি ঠিক মত ট্রেনে পৌছেছি কিনা, ঠিক ট্রেনে উঠেছি কিনা। সাইদুর রহমান আমার বন্ধু। ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ে। বাড়ি পঞ্চগড়ে।

বাংলাদেশের শেষ সীমানায়। ওর বাসায় যাচ্ছি অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে। ক্যাম্পাসে ঈদুল আযহা ও পূজার ছুটি শুরু হয়েছে ১৯ অক্টোবর থেকে। ক্লাস,রির্পোটিং, ডিবেট, আবৃত্তি নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকি। ঘোড়ার সময় তেমন একটা পাইনা ।

তাই এবারের ছুিিটতে বাড়ি যাওয়ার আগে সাইদুরদে বাড়ি যেতে ইচ্ছে হল। যেই ইচ্ছে সেই কাজ। আমি তিতুমীর এক্সপ্রেসের ক বগির ৭ নং সীটে করে যাচিছ। ট্রেন চলছে তার নিজ গতিতে। আমি বই পড়ছি।

সাপ্তাহিকের ঈদ সংখ্যা, গণযোগাােযগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রকাশিত ষান্মাষিক পত্রিকা ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’, তারা শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসসহ আরো অনেক বই রয়েছে আমার সফর সঙগী হিসেবে। ইতিমধ্যে সাপ্তাহিক পড়ে শেষ করলাম। আমি সীটে বসে আছি ওখানে আরো পাঁচজন রয়েছে। কারো সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। আমার সামনে সীটে বসে আছেন তিনজন।

মাহমুদা খাতুন, তিনি রাবি স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক। উনার সাথে তার ছোট বোন , আমাদের ক্যাম্পাসেই বাংলাতে পড়ে। আরেকটি ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। এই তিনজনই যাবেন চিলাহাটীতে। আমার সাথের দুইজন উনারা যাবেন নীলফামারীতে।

একই ট্রেনে রাফি যাচ্ছে। ও জ বগির ৬৮ নং সীটে আছে। ট্রেনে উঠার সময় ওর সাথে দেখা। ওর বাড়ি জয়পুরহাটে। ওঠার সময় আমি বললাম আমার বগিতে আছিস , দুজনে আড্ডা দিব।

একা একা যেতে খারাপ লাগবে। রাফি আমার বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র। ওর বগিতে ঘন্টাখানেক আড্ডা দিলাম। আড্ডাতে নানা বিষয় উঠে আসল। আমার সবচেয়ে ভাল লাগে ট্রেনে চলাকালে গ্রামের দৃশ্য, দুধারে ধান ক্ষেত।

ছোট ছোট গ্রামগুলো। গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে রাস্তার মেঠো পথ ধরে লোকজনের হাটা-চলা। কেউ ক্ষেতে কাজ করছে। কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছে। ছোট ছেলেমেয়েরা বই হাতো নিয়ে স্কুলের পথে যাওয়া।

খুব ভালো লাগে আমার এই দৃশ্যগুলো। রাফিকে বললাম । গ্রামের কৃষকের ছেলেরা পড়াশোনা করে কখনো এই পেশাতে ফিরে আসতে দেখিনি । সবাই অন্য পেশাাতে চলে যা। বিশেষ চাকরীকেই জীবনধারনের প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয়।

যুগ যুগ ধরে যারা চাষাবাদ করছেন তারাই অবৈজ্ঞানিক উপায়ে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই । যে জমি এত উর্বর, এতো ফসল ফলায়, যার উপর ভিত্তি করেই আমাদের দেশের অর্থনীতি চলে। সেই পেশাাকে আমরা কেউ গুরুত্ব দিই না। বাংলাদেশে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

ওখানথেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকরী, ব্যাংক, পুলিশ, প্রশাসনে চাকরী করছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই হতাশাজনক। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পাশ করে ঐ সেক্টরে কাজ না করা আমাদের দেশ পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। রাফিকে উদ্দেশ্য করে বললাম-তোমাদের গ্রামের কৃষকের ছেলেরা ঢাকা থেকে পড়াশোনা করে আর গ্রামে ফিরে না। গ্রামকে নিয়ে কেউ ভাবে না।

কেউ উন্নয়নের কথা চিন্তা করে না। রাফি আমাকে বলে-কি করবে এছাড়া কোন উপায় নেই। আমি বলি- উপায় তোমাদের বের করতে হবে। এভাবে যুগ যুগ ধরে চলতে পারে না। গ্রামে করার কিছু নেই ।

আসলে অনেক কিছুই করার আছে। সমস্যা হল আমাদের গ্রাম নিয়ে আমরা কখনো ভাবি না। এসব কথা বলতে বলতে আমরা জয়পুরহাটে এসে পৌছলাম। রাফি নেমে গেল। আমি আমার সীটে গিয়ে বসলাম।

ম্যাজিক লণ্ঠন পড়তে থাকি। এরকিছুক্ষণ আমাদের ট্রেন হিলি বন্দরে এসে পৌছল। দেখলাম রেললাইন ঘেষে বিজিবি’র সদস্যরা কড়া পাহাড়ারত অবস্থায় আছে। মাহমদুা আপু কে জিজ্ঞাসা করলাম। এরা এভাবে দাড়িয়ে কেন? তিনি বললেন-ঐ যে দেখতে পাচ্ছেন ঘড়বাড়িগুলো ঐ অংশটুকু ভারতের।

আমি দেখে হতবাক। ভারতের এতকাছ দিয়ে আমাদের রেললাইন। ঐপাড়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দেখতে পাচ্ছি। ওরাও আমাদের ট্রেন দেখছে। কিন্তু ওরা বিজিবি সদস্যদের অতিক্রম করে এদিকে আসতে পারছে না।

কোন বিএসএফ সদস্যকে চোখে পড়ল না। শুধু আমাদের বিজিবি সদস্য ছাড়া। বিএসএফ ওরা আমাদের শুধু গুলি করে মারতে জানে। ওরা চোরকারবারীরর দোহাই দেয়। চোরাকারবারীর তো আইনে শাস্তি আছে।

গুলি করে মারার তো কোন আইন নেই। কোন বিধান নেই। হিলি স্থল বন্দর শেষে আমরা পৌছলাম ফুলবাড়ি। একে একে আমরা সৈয়দপুর, নীলফামারী , বিরামপুর পার হতে লাগলাম। ঐদিকে আমার বন্ধু সাইদুর আমাকে ফোন দিয়ে বার বার খোজ নিচ্ছে।

আমি কোথায় আছি। ও চিলাহাটী তে আমাকে রিসিব করার জন্য অপেক্ষা করছে। আমারও বিরক্তি ভাব চলে এসেছে। সেই সকাল সাড়ে ৬টায় ট্রেনে উঠেছি। এখন দেরটা বাজে।

এখনও ট্রেন চিলাহাটী তে পৌছেনি। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ২টা ৫১মিনিটে । ট্রেন থামল চিলাহাটীতে। সাইদুরের সাথে দেখা হল। কুশল বিনিময় শেষে মটর সাইকেলে করে আমরা দু’জনে চলে গেলাম পঞ্চগড়ের দেবীধস থানার চিলাপাড়া গ্রামে।

মটরসাইকেলে দিয়ে একেবারে ওদের বাড়ির ওঠোনে গিয়ে নামলাম। বাড়ির সবার সাথে কুশলবিনিময় । নাস্তা, খাবার দাবার। অবশেষে বিশ্রাম। ২. বিশ্রাম শেষে ঘুম থেকে উঠে ওদের গ্রামের বাউলাগঞ্জ বাজারে গেলাম।

বাজারটি অনেক বড়। সাইদুর আমাকে পুরো বাজারটি ঘুরেঘূরে দেখাল। আমরা সাথে ছিলাম তিনজন, সাইদুর, ওর ভাই ছোট ভাই সুজন ও আমি। পরের দিন বাড়ি ফিরব। এই জন্য ঢাকার টিকেট ক্রয় করতে গেলাম।

বাসকাউন্টার থেকে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারল না। বাস যথাসময়ে আসবে কিনা। ঢাকার প্রচন্ডো জ্যামের কারনে বাস ঠিক সময়ে আসতে পারছে না। তাই যখন রওয়ানা দিবো তখন টিকেট করব বলে আর ঐদিন টিকেট ক্রয় করা হল না। আমরা তিনজনে বসে মিষ্টির দোকানে বসে বনরুটি দিয়ে রসমালাই খেলাম।

ভালই লাগল। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা ৭ টা বেজে গেল। বাজারে বিদ্যুত আছে । কিন্তু সাইদুরের গ্রাম পর্যন্ত এখনও বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়নি। বাজারেই কোন টিভির দোকানে বসে সন্ধ্যার সাতটার খবর শুনে নিলাম।

তারপর বাড়ি ফেরা। গ্রামের পথ ধরে হাটতে আমার খুব ভাল লাগে। সন্ধ্যা রাত। গ্রামে নেই বিদ্যুত। চাদের আলোয় আমাদের পথকে আলোকিত করছে।

মেঠো পথ ধরে হাটছি। রাস্তার ধারের ঝোপ ঝাড়ে ঝিঝি পোকারা নাচানাচি করছে। বাশঝাড় দেখা যাচ্ছে। ওদের ওখানে সবাই হলুদ চাষ করে। হলুদ গাছ, আদা গাছ রাস্তার ধারেই এসব দেখা যাচ্ছে।

বাজার থেকে বাড়ি যেতে বুড়ি তিস্তা নদীর উপর ৭৫.১০ ফুটের একটি ব্রিজ পড়ে। ব্রিজে কিছুক্ষণ বসলাম। মনে হয় না যে এখানে বিদ্যুত নেই। চাদের আলো আমাদের দু’জনকে আলো দিয়ে বেড়াচ্ছে। নীচে হাটু সমান পানি।

উপরে চাদের আলো। ব্রীজের এপার ওপার ঘেষে অনেক বাশঝার। এসব দৃশ্য উপভোগ করতেই আমার এতদুর আসা। বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে আবার ঘুম। ৩. সকালে উঠে তালের গুড় দিয়ে মুড়ির নাস্তা।

সাথে আছে বিস্কুট, চা। কিছুক্ষণ গরুর দুধ ও দিল ওর মা। আপ্যায়নে যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল ওদের। আমি শহরের ছেলে বলে খুব সতর্কভাবে আমাকে খাইয়ে দাইয়ে রাখছে। ওদের বাড়ির প্রতিটি মূহুর্ত আমার খুব ভাল লাগছিল।

নাস্তা শেষে সাইদুরের বাবা আমাকে ডাকলেন আমার সাথে গল্প করবেন বলে। অনেক কথা হল উনার সাথে। উনি আমাকে নিজে ঘুড়িয়ে বাড়ির সবকিছু দেখালেন। গরু, ধানি জমি, নিম গাছের সারি, হলুদ ক্ষেত, পুকুর। আমাকে পুকুর দেখানোর সময় বললেন –পুকুরটিকে আরো বড় করব।

কিছুদিনের মধ্যে পাড় কাটা শুরু হবে। আমি বললাম যেহেতু পুকুর বড় করবেন-তাই বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করার পরামর্শ দিলাম। উনি সায় দিয়ে বললেন-হ্যা , তা করা যায়। আমি আরো বললাম –যদি পারেন, তাহলে পুকুরের উপর দিয়ে বাশের মাচা দিয়ে মুরগি, হাস পালন করতে পারেন। এতে অনেক লাভবান হওয়া যাবে।

হাস-মুরগির উচ্ছিস্ট মাছের খাবার হবে, অন্যদিকে ডিম বিক্রি করতে পারবেন। খাওয়া তো যাবেই। ঐ গ্রামে অনেক পুকুর দেখলাম। কিন্তু কাউকেউ এ কাজটি করতে দেখলাম না। তাই উনাকে আমি এই পরামর্শ দিলাম।

উনি এতেও সায় দিলেন। আরেকটি পরামর্শ দিলাম-যেহেতু সাইদুরদের গরু আছে। তাই গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস দিয়ে করতে বললাম। কিভাবে করা যায়, কতটাকা খরচ হতে পারে সব কিছু বললাম। আমি সাইদুরকে বিশেষ করে এব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বললাম।

এতে করে ওর আম্মুর কষ্ট অনেকটা লাগব হবে। পরক্ষনে গোছল শেষে আবার বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম দেখার জন্য। প্রায় ২ ঘণ্টা ঘুড়লাম। ওদের ইদগাহ মাঠ, ওর ছোটবেলা প্রাইমারি স্কুল। ওদের দাদার বাড়ি, নানির বাড়ি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখলাম গেলাম।

ওর দাদী তিনটা। নানী তিনটা। অর্থাৎ ওর দাদা ও নানা একাধিকবিয়ে করেছেন। গ্রামে অবশ্য এই বিষয়গুলো দেখা যায়। গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাটলাম।

ধান ক্ষেত, সুপারি বাগান, হলুদ গাছ, আদা গাছ। রাস্তায় হাটার সময় দেখি কৃষকরা আদা তুলছেন-আদার ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। দারুন ঘ্রাণ। যে মেঠো পথ ধরে হাটছিলাম, রাস্তার সাথে একপাশে সুপারি বাগান অন্য পাশে বাশঝার থাকে। এই দৃশ্য প্রতিটি গ্রামেই দেখা যায়।

বেলা সাড়ে এগারটার দিকে বাড়ি ফিরে এসে ভাত খেয়ে রওয়ানা দিলাম পঞ্চগড় শহরের দিকে । ওদের গ্রাম থেকে পঞ্চগড় শহরের দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার। মটরসাইকেল যোগে গ্রামের পথ মাড়ি দেয়ার অনুভূতি বেশ অন্যরকম। রাস্তার দুধারে শুধু ধান ক্ষেত চোখে পড়ে। যতদুর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত।

শহরে পৌছলাম বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। অল্পকিছুক্ষণ শহরটা দেখলাম। বেশী বড় না। ছোট শহর। জেলা শহর।

গাড়িতে তেল ভরে আবার রওয়ানা দিলাম। বাংলাবান্ধার দিকে। শহর থেকে বাংলাবান্ধার দূরত্ব ৫৭ কিলোমিটার। সাইদুর যেতে চাচ্ছিল না। গড়িমসি করছিল।

আমি ওকে জোর করে নিয়ে গেলাম। এত কাছে এসে বাংলাবান্ধা ঘুড়ে না গেলে কেমন দেখায়। আর কবে আসব তার কোন ইয়ত্তা নেই। না যেতে চাওয়ার কারণ ছিল-আমাদের সাথে গাড়ির কোন লাইসেন্স নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নেই।

যদি হাইওয়ে পুলিশ ধরে। তাহলে কি করব। এই একটা ভয় ছিল। আমি ওকে অভয় দিলাম-চল দোস্ত, কিছু হবে না। পুলিশ ধরলে আমি ম্যানেজ করে নিবো।

অনেকটা ভীতু মন নিয়েই আমরা রওয়ানা দিলাম। হাইওয়ে রোড। রোডটি দারুন। গাড়ি চালিয়ে সাইদুর খুব ভালোবোধ করছিল। ও বলছে-রাস্তা ভাল তাই গাড়ি চালিয়ে ভাল লাগছে।

কখনো ৬০ কখনো ৭০ গতিতে চালাচ্ছে গাড়ি। কয়েক কিলোমিটার করে পার হচ্ছি আর নতুন গ্রাম , বাজার, এলাকা চোখে পড়ছে। সাইদুর গাড়ি চালাচ্ছে। ও আমাকে বলল –জায়গাগুলোর নাম লিখে রাখ। জায়গাগুলোর নাম আমি গাড়িতে বসে সাইদুরের পিঠে ডায়েরি রেখে লিখছি।

ভজনজপুর বাজার, বুড়াবুড়ি বাজার, রনচন্ডী, সিপাইপাড়া। পথের ধারে দেখছি, চা বাগান, কমলা বাগান। যতদুর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। পাথরের অনেক স্তুপ ও দেখতে পেলাম। শ্রমিকরা মেশিনে করে পাথর ভাঙছে।

দারুন দৃশ্য। আমরা ২ টা ২৪ মিনিটে বাংলাবান্ধা পৌছলাম। ছবি উঠালাম। ওখানথেকে ঢাকার দূরত্ব ৫০৩ কিলোমিটার। আর বাঙলাবান্ধা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ৯৯২ কিলোমিটার।

বিজিবি’র সদস্য রুহল ও ফারুকের সাথে কথা বললাম। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা সম্পর্কে নানা কথা বললাম। কেন হত্যা করা হয় বাংলাদেশীদেরকে, কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, বিএসএফ রা হত্যা না করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে, তা না করে কেন পাখির মতো গুলি করে মারছে এসব কারণ জানতে চাইলাম। বিজিবি সদস্য ফারুক কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। শুন্য দিয়ে ওখানে একটি সাদা স্মৃতি ফলক তৈরী করা হয়েছে।

ওখানে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের একটি কবিতার লাইন খোদাই করা আছে এরকম-‘এস তুমি এস নতুন অতিথি/উষার মতন প্রদীপ জ্বালি/রৌদ্র এখনো হয়নি অসহ/এখনো তাতেনি পথের বালি’। আমরা প্রায় ৩০ মিনিট সীমান্ত এলাকা দেখে রওয়ানা দিলাম পঞ্চগড় শহরের দিকে। শহরে এসেএটিএম বুথ থেকে টাকা নিয়ে ছুটলাম ওদের গ্রামের দিকে। সন্ধ্যা নেমে আসছে দ্রুত গতিতে। আমাকে আজকে সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে যেতে হবে।

বাড়ি থেকে তাড়া দিচ্ছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। দিনের আলো নিভে যাচ্ছে। রাতের আলো আগ্রাসন চালাতে চাচ্ছে। এই সময় আমরা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। সাইদুরকে বললাম এখনও দিনের আলো আছে , তুমি ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাও।

সন্ধ্যায় ভাওলাগঞ্জ বাজারে গিয়ে পৌছলাম। কিন্তু কোন বাসের টিকেট পেলাম না। টিকেট পেলাম না বলতে বাস নেই বলে তারা টিকেট দিচ্ছে না। বলছে ঢাকায় জ্যামের কারনে বাস এখনও ঠিক সময়ে পৌছতে পারছে না। তাই পরের দিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ সকাল সাতটার একটা টিকেট কাটলাম।

খুব ক্লান্ত শরীর। এদিকে সাইদুরের ছোট ভাই সুজন বাজারে আসছে আমার ল্যাপটপ নিয়ে আসছে চার্জ দেয়ার জন্য। মোবাইলে ও কোন চার্জ নেই। ওরকাছে মোবাইল আর ল্যাপটপ দিয়ে আমরা বাড়িতে গেলাম। খাওয়া দাওয়া করে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বাসায় পৌছলাম রাত সাড়ে ১০ টায়। খুব উপভোগ করলাম বাংলাবান্ধা ট্যুরটি। # শাকির ইকরাম ২৬ অক্টোবর ২০১২ বিকাল, সময়:৩:৫৪ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।