আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদা শীতকালের পাগলের পাল্লায়। "হক মাউলা" "হক মাউলা" অতঃপর ছাইড়া দে বাপ কাইন্দা বাঁচি অবস্থা!!!

টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। বাতাসের চলার গতি রুদ্ধ করে বের করে আনবো ধূলো জমা বিবর্ন সময়টাকে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবো অসহায় মুহূর্তগুলো। তারপর... অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে মুখোশের অন্ত

ছোট বেলায় যেই এলাকাটিতে থাকতাম ওখানে আমার চেয়ে বয়সে দুই বছরের বড় বাঁধন নামের আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল। ওরা ঐ এলাকার স্থানীয় ছিল এবং অনেক প্রভাবশালী ছিল।

ওর এক মামা ছিল চল্লিশের মত হবে বয়স। উনি খুবই গোবেচারা টাইপের লোক ছিল। কারো সাথে তেমন একটা কথা বলতেন না। নিজেদের বাড়ি ছিল এবং বাড়ির নিচে অনেকগুলা দোকান ছিল বলে কোন কাজ কর্ম করতেন না। বাড়ির ভাড়া উঠিয়ে শুয়ে বসে খাইতেন।

হাতে সবসময় একটা বেনসনের প্যাকেট থাকত আর একটা ম্যাচ বক্স থাকতো। সারাদিনের কাজ বলতে সবসময় সাদা রংয়ের লুঙ্গি আর শার্ট পরে রাস্তায় টো টো করে ঘুরাঘুরি করা আর সিগারেট ফুঁকা। উনার একটাই প্রবলেম ছিল সেটা হল শীতকাল আসলেই উনার মাথা আউলাইয়া যাইতো তখন লুঙ্গি কাছা দিয়ে খালি গায়ে বেনসনের প্যাকেটের বদলে বিড়ি পোটলা আর ম্যাচ নিয়ে হাটতেন আর... "হক মাউলা" "হক মাউলা" বলে চিৎকার করতেন। রাস্তায় যাকেই পাইতেন তাকেই ধরে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করতেন। মাঝে মাঝে দৌড়ানি দিতেন।

এলাকার এমন কেউ নাই যে তার কাছে দৌড়ানি খায় নাই। এলাকার অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতেও পারতেন না। শীতকালে উনাকে কেউ দেখলেই দৌড়ের উপর থাকতেন। "ব্যাপারটা এমন ছাইড়া দে বাপ কাইন্দা বাঁচি অবস্থা। " আমরা পারতপক্ষে ফ্রেন্ডরা কেউই শীতকালে বাঁধনদের বাসায় যেতাম না ওর মামার ভয়ে।

ওদের বাসাটা ছিল গলির একেবারে মুখে। তাই সন্ধ্যার পর বেরও হতাম না। একদিন সন্ধ্যার পর আম্মু আমাকে জোর করে দোকানে পাঠালো কিছু জিনিস কেনার জন্য। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি বয়সও কম আর ওর বাঁধনের মামাকে অনেক ভয়ও পেতাম। অনেক বুঝানোর পরও আম্মু আমার কথা শুনে নাই।

বলে যে আরে তোরে তো ওর মামা চিনে কিছু বলবে না। একদৌড়ে যাবি আর এক দৌড়ে আসবি। যত কিছু হোক পাগলের কি আর ঠিক ঠিকানা আছে কখন কি করে বসে। আমি ভয়ে ভয়ে ওদের বাসার সামনে উঁকি দিলাম ওর মামা আছে কিনা। মামাকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এর পর এক দৌড়ে দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় যাবো।

মোড়ের কাছা কাছি গিয়ে মাত্র মোড় ঘুরলাম... আর দেখি সামনেই মামা খালি গায়ে লুঙ্গি কাছা দেওয়া দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন... "হক মাউলা" "হক মাউলা" উনার চিৎকার শুনে আমার মূর্ছা যাবার অবস্থা। দৌড় দিবো দেখি পা চলে না। -আমাকে বলে ঐ তুই কে? -মামা আমি চশমখোর ( সঙ্গত কারনে আমার আসল নাম এখানে বলা হল না) -তুই এত রাইতে এইখানে কি করছ? -হাতের জিনিসগুলো দেখিয়ে বললাম মামা আমি দোকানে আসছি। -আমি তোর মামা হইলাম কবে? হাত পা কাঁপতে কাঁপতে মনে হইলো ঐখানেই পইড়া যামু কোন রকমে বললাম আপনি বাঁধনের মামা তাই ঐ হিসাবে আপনি আমারও মামা।

-মামা বলে বাঁধন? কোন বাঁধন? ও তো আমার ম্যানেজার ( মামার যখন মাথা খারাপ হয়ে যায় তখন তিনি নিজেকে অনেক বড় বিজনেস ম্যান মনে করেন আর তার একমাত্র ভাগিনাকে মনে করেন তার ম্যানেজার) এবার আমি কিছু বলতে না পেরে চুপ করে দাড়িয়ে আছি আর অসহায়ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি সাহায্যের আশায়। রাস্তার সবাই আমার এই অবস্থা দেখে দূর থেকে হাসতেছে কেউ এগিয়ে আসছে না। -এর মধ্যে মামা একটা বিড়ি ধরিয়ে বলে যে তোরে কি জিগাইছি? -কথা কইলাম তোর কানে যায় না? আমি চুপ কইরা আছি দেইখা ডান হাতটা তুলে চিৎকার করে বলে উঠলো "এক থাপ্পড়ে উত্তরে পাঠামু আরেক থাপ্পড়ে দক্ষিনে। " এইবার আমার প্যান্ট ভিজাইয়া দেবার অবস্থা। কোন রকমে বুক ভইরা দম নিয়ে দিলাম এক দৌড়।

আর পিছন থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম... মামা বলেই যাচ্ছে "হক মাউলা"!!! "হক মাউলা"!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।