আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহনা আর এক গাধার কাহিনি

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

১। প্রতিদিন সকালে ক্লাস এ যেতে চরম মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তারপর ও যেতে হয় অনেক কষ্ট করে। ৮ টা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও স্যার আসতে অন্তত মিনিট দশেক দেরি করেন। আমি অবশ্য একটু তারাতারি যাওয়ার চেষ্টা করি।

যদিও প্রচুর কষ্ট হয়। আমার সমস্যা নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে গেলেই টিপন্নী মারতে থাকে সবাই। তাই পারতো পক্ষে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যাই না। সেটা যে বিষয়ই হোক না কেন। এদিকে গত কয়েকমাস ধরে পড়াশোনা তেও মন বসছে না।

রাতে ঘুম হচ্ছে না ঠিক মত। ক্লাস এ গেলেই কি জানি হয় আমার। এরকম হয় সাধারণত ক্লাস এ যদি অহনা থাকে। হ্যা, অহনা। আমার ক্লাস এর এক বান্ধবী।

যদিও তার সাথে আমার তেমন কথা হয় না। টুকটাক কথা যাও হয় তা নিতান্তই কম বলা চলে। বরাবরই শান্ত শিষ্ট ঘরনার মেয়ে অহনা। চালচলন অতি সাধারণ। দেখতে বেশ সুন্দরী কিন্তু মনের ভিতর কোন রকম অহমিকা নেই বললেই চলে।

তাকে কখনও দেখি নি ক্লাস এ দেরিতে আসতে। এমন কি ছুটির পর দেখিনি বেশি সময় থাকতে। তার সাথে কথা যা হত তা শুধু ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই। তবে একটা অদ্ভুত ব্যপার খেয়াল করেছি তার মধ্যে যখন সে আমার সাথে কথা বলতো তখন তার অপলক চাহনি। তার চোখে চোখ রেখে বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে তাই পারতাম না।

একটা সংকোচ কাজ করতো মনের ভিতর। মাঝে মাঝে খেয়াল করেছি সে আমার সাথে কথা বলতে চাইতো কি একতা বিষয়ে। কিন্তু পারতো না। ক্লাসের অন্য সবার সাথে তার তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ২।

দুই বছর এভাবে করেই চলে গেল চোখের সামনে দিয়ে। টের পেলাম না কিছুই। সময়ের পরিক্রমায় অহনার সাথে আমার বন্ধুত্তটা বেশ ভাল হয়েছে। তবে একটা ব্যপার খেয়াল করেছি সেই প্রথম থেকেই। অন্য সবার থেকেই আমাকে সে আলাদা ভাবে সময় দিত।

আমি না চাইলেও সে দিত। আমার উপর আলাদা একটা পান্ডিত্ত ফলাতো। যা আমার কাছে বিরক্তিকর ব্যপার ছিল একটা। কিন্তু আস্তে আস্তে তা গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে একটানা ক্লাস করে যখন ক্লান্ত হয়ে যেতাম তখন ক্লাস এর ভিতর বসেই এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতাম বন্ধুরা কে কি করে।

বলাই বাহুল্য যে অহনাও সেই সময় থাকতো ক্লাসে। হঠাৎ হঠাৎ তার দিকে মাঝে মাঝে আমার চোখ চলে যেত। একটা ব্যপার খুব বেশি লক্ষ করতাম তার মাঝে। সে এক নাগাড়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমার প্রতিটা মুভমেন্ট সে দেখতো।

যা আমাকে বেশ অপ্রস্তুত করে তুলতো। মাঝে মাঝে সে ক্লাসের বাহিরে গেলেও আবার ফিরে আসতো তারাতারি। অহনা খুব সুন্দর গান গাইতে পারতো। ইউনিভার্সিটির প্রায় প্রতিটা অনুষ্ঠানেই তাকে গান গাইতে হত। অহনার গলা খুব মিষ্টি।

আর এ কারণে ইউনিভার্সিটিতে তার কদর আছে। ছোটবেলা থেকেই নাকি তার গান গাওয়ার প্রতি ঝোকটা বেশি ছিল। যত যাই হোক, কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে সে আমার কাছ থেকে তার বেস্ট ইউশ নিয়ে যেত। তার ধারণা ছিল আমি যদি তাকে উইশ করি তাহলে তার সবকিছু ভালোয় ভালোয় হবে। আমি অবশ্য তার এসব কথা খুব একটা পাত্তা দিতাম না।

৩। অহনার প্রিয় গান ছিল বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে একটা ছিল “আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘুরে আসতে চাই......” আরো আছে - “এর বেশি ভালবাসা যায় না” ২টা যে আমারও প্রিয় গান সেটা অহনা ভালমতই জানে। এই গান দুটো গাইলে তার চেহারায় এক অদ্ভুত আভায় ছেয়ে যেত। আর কেউ খেয়াল করতো কি না জানি না তবে এটা আমি ভালই বুঝতে পারতাম।

ওই সময় সে আমার দিকে অপলক চেয়ে থেকে গান গাইতো। দূর থেকে তাকে উৎসাহ দেয়া ছাড়া আমার সে সময় আর কিছুই করার থাকতো না। ৪। আমার জন্মদিন কবে সে সেটা মনে রাখতো খুব ভালভাবেই। তার সাথে পরিচয়ের ৪ বছরে সে আমাকে প্রতি জন্মদিন এই উপহার দিয়েছে।

এমন কি রাতে এস এম এস দিয়ে ইউশ করেছে। ইউশ করার কোন তালিকা যদি এখন আমি করি তাহলে তার নাম সবার আগে থাকবে। অথচ কি আশ্চর্য!! আমি তার জন্মদিন এ তাকে উইশ করতে একেবারেই মনে থাকতো না। এ নিয়ে সে কখনও আমার সাথে ঝগড়া বা অভিমান করে নি। ইউনিভার্সিটি লাইফের শেষ বছরে এসে অহনাকে খুব চিন্তিত লাগতো সব সময়।

কি একটা বিষয় নিয়ে সে সারাদিন ধ্যানমগ্ন থাকতো। আমি কিছু জানতে চাইলে সে কিছু না বলে উদাস ভাবে চেয়ে থাকতো। তার চোখের নিচে যে কালির দাগ পড়েছে সেটা স্পষ্ঠ বুঝা যেত। তার এমন অবস্থা দেখে তার প্রতি আমার বেশ খারাপই লাগতো। কিন্তু কখনও তাকে নিয়ে আমি অন্যকিছু ভাবতাম না।

স্রেফ একজন বন্ধু হয়েই পাশে থাকতাম। ৫। পহেলা ফাল্গুন। ক্যাম্পাসে আজকে মেয়েরা সবাই শাড়ি পড়ে এসেছে। অহনাও পড়েছে।

অসাধারণ লাগছে তাকে আজকে। জানি না, কেন জানি তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। সে আমার কাছে এসেই একটা চিমটি কেটে বললো - অহনাঃ এই ভাবে কি দেখছো? আমিঃ তোমাকে দেখি। সুন্দর লাগছে অনেক। অহনাঃ ৪ বছর ধরে তো দেখেই আসলা শুধু।

দেখা শেষ হয় না? আমিঃ (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শুধু। ) অহনাঃ কালকে তোমাকে নিয়ে ঘুড়তে যাবো। আমিঃ কোথায়? অহনাঃ এখন বলবো না। আগামীদিন বলবো। আমিঃ কেন সেদিন কি? অহনা কিছু না বলে রহস্যের একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।

আমি তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম। ৬। সকাল ১১টা। ক্যাম্পসে এসে সোজা ক্যান্টিনে চলে গেলাম। সকালে নাস্তা খেয়ে আসি নাই।

তাই পেট চো চো করছে। কেন্টিনে যেয়ে দেখি এলাহী কারবার। সবাই লাল জামা পরে এসেছে। আমি তো অবাক। কি ব্যপার? আজকে সারা ক্যাম্পাস লালে লাল হয়ে গিয়েছে কেন? এক বন্ধু কে জিজ্ঞেস করতেই সে আমাকে একটা থাপ্পর গালে মেরে টিপ্পনী কেটে বললো যে আজকে নাকি ভালবাসা দিবস! আমি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আর এক কান দিয়ে বের করে দিলাম।

খাওয়া শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বের হয়েই অহনার মুখোমুখি পরে গেলাম। সে আজকে লাল সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছে। আমি খুবই অবাক হলাম তাকে দেখে। এই প্রথম তাকে খুব প্রাণখোলা মনে হল। যা ৪ বছরেও আমি দেখি নাই।

আমাকে দেখে একটা স্মিত হাসি দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলো। ক্লাসে যাবো এটা বলতেই সে আমাকে বললো আজ ক্লাস না করে তার সাথে ঘুড়তে। আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত ধরে সে টেনে নিয়ে রওনা দিল। ক্যাম্পাস থেকে দূরে এক বাগানে বসলাম দুজনে। চারপাশে অনেক কপোত কপোতি বসে আছে।

এমন সময় আমার হাত টা আলতো করে ধরলো অহনা। আমি চমকে তার দিকে তাকালাম। অহনাঃ তোমাকে একটা কথা বলবো। আমিঃ বল। তা এখানে কেন আনলে? ...।

। আর কিছু বলার আগেই আমার গালে জোরে একটা চড় বসিয়ে দিল অহনা। আমার গালে হাত দিয়ে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। আমিঃ আমাকে মারলে কেন? অহনাঃ তোমাকে ভালবাসি তাই। আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, তুমি একটা গাধা!! তাই বুঝো নি এতদিন।

অনেক চেষ্টা করেও তোমাকে বুঝাতে পারি নি। বেকুব একটা। আমি কিছু না বলে তার হাতে হাত রাখলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।