আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিমান করে চলে গেলেন নিশাত

আমারে দিবো না ভুলিতে

আব্বু যেদিন থেকে আমি আপনার সাথে কথা বলা বন্ধ করছি, সেদিন থেকে আমি আপনাকে প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখছি। বারবার মনে হয়েছে আপনাকে বলি আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও, আপনার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করে। আব্বু আব্বু বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। ’ একটি চিরকুটে লেখা এই কথাগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নিশাত ফারহাত ওরফে টুম্পার (২০)।

গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে রাজশাহী নগরের হেতেম খাঁ এলাকার প্যারাগন ছাত্রীনিবাসের কক্ষ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই কক্ষ থেকে নিশাতের লেখা তিনটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করার পর নিজের ওপর অভিমান করে নিশাত আত্মহত্যা করতে পারেন। নিশাত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জুয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের ছোট মেয়ে। পুলিশ ও প্যারাগন ছাত্রীনিবাস সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে নিশাতসহ দুই ছাত্রী থাকতেন।

শনিবার ওই মেয়েটি বাড়ি যান। এই দুই দিন নিশাত ওই কক্ষে একাই ছিলেন। গতকাল সকালে নিশাত কক্ষের বাইরে না এলে ছাত্রীনিবাসের অন্য মেয়েরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। খবর পেয়ে ছাত্রীনিবাসের মালিক এসে জানালার কাচ ভেঙে দেখেন, ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় নিশাতের লাশ ঝুলে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বোয়ালিয়া থানায় খবর দেন।

বোয়ালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান জানান, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহরিয়ারসহ তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ডেকে আনেন। পরে দরজা ভেঙে নিশাতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসআই হাফিজুর জানান, নিশাতের বিছানা থেকে লাল কালি দিয়ে তাঁর লেখা তিনটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। এর একটিতে লেখা ছিল, ‘আব্বু আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি ছোট থেকে তোমাদের অনেক জ্বালিয়ে এসেছি।

দিদি আমি এরকম করতে চাইনি। সত্যিই চাইনি। কিন্তু আমি আর পারছি না। দিন দিন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। বার বার মনে বাধা দিচ্ছে।

কিন্তু না এভাবে আর সম্ভব না। আমার লাশটা জেনো কাটা না হয়। ’ খবর পেয়ে নিশাতের মা রাফিজা হক ও বড় বোন আনিকা রায়হানা রত্না প্যারাগন ছাত্রীনিবাসে ছুটে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে শোকার্ত কণ্ঠে রাফিজা হক সাংবাদিকদের জানান, ‘নিশাত প্রথমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। এক বছর পর সে বিষয় পরিবর্তন করে চারুকলা বিভাগে ভর্তি হয়।

এ নিয়ে তার বাবা বকাঝকা করে। এর পর থেকে অভিমান করে নিশাত তার বাবার সঙ্গে কথা বলত না। ’ রাফিজা জানান, অসুস্থ থাকায় নিশাতের বাবা আসেননি। এ ব্যাপারে নিশাতের মা বোয়ালিয়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছেন। গতকাল রাত নয়টার দিকে বড়াইগ্রামের মৌকোড়া হাটে জানাজার পর নিশাতের মরদেহ দাফন করা হয়।

তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা মোজাম্মেল হক জানান, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চারুকলা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করাটা পছন্দ করি না। তাই আমরা টুম্পাকে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে বলি এবং চারুকলায় পড়তে বারণ করি। কিন্তু টুম্পা আমাদের কথা শোনেনি। এর পর থেকে তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ’ Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।