আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি জানি না



(ছোটকালের হাবি জাবি লেখার খাতাটা খুলে পড়তে ভারী মজা লাগে এখন। কত কিই না লিখেছিলাম। কয়েকটা বেশ বিরক্তিকরও। ঐরকম একটা লেখা আজকে ব্লগে দিই, সবাইকে একটু বিরক্ত করা যাক। ক্লাস সেভেনে থাকতে লিখেছিলাম এই লেখাটা।

কোন কিছু পরিবর্তন না করে টাইপ করে দিচ্ছি) ২৩ জুন আমি রীমা। আপনারা আমাকে চিনবেন না। কারণ আমি ঘর থেকে বের হই না। কেন বের হই না? তা আমি নিজেও জানি না। আমি দরজা খুলে বের হয়ে যেতে চাই।

কিন্তু পারি না। দরজা খোলে না, এক চুলও নড়ে না। আমি নাড়াতে পারি না। কেন পারি না? আমি তাও জানি না। তবে জানব।

একজন আমাকে বলবে। সে কাল আসবে। আজ এসেছিল। আমাকে একটা ডায়রী উপহার দিয়েছে। আমি তাতে লিখছি।

কী লিখব? জানি না। তবুও লিখছি। কারণ সে আমাকে লিখতে বলেছে। সে কে? আমি যে তাও জানি না। আমি জানতেও চাই না।

আমি কেবল চাই এ ঘর থেকে বের হতে। কী করে তা সম্ভব, বলতে পারেন কি? ২৪ জুন আজ সে এসেছিল। সে বলেছে আমি কেন ঘর থেকে বের হতে পারি না। শুনে আমি খুব অবাক হয়েছি। সে বলেছে, আমি মানুষ নই, আমি ভূত।

তাই কোন কিছু স্পর্শ করলেও তা নাড়াতে পারি না। এজন্যই দরজা খুলতে পারি না। কিন্তু আশ্চর্য হল এই যে, আমি সবকিছু ধরতে পারি, কিন্তু নাড়াতে পারি না। কেন এমন হয়? আমি কি জানি? হ্যাঁ, জানি। কারণ আমি ভূত।

সে আমাকে বলেছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কেন ভূত? সে বলেছে আমি মারা গিয়েছি। আমি কবে মারা গেলাম? কিভাবে মারা গেলাম? আমার কিছুই মনে পড়ে না। সে বলেছে আমি পিকনিকে গিয়েছিলাম। আসার পথে অ্যাকসিডেন্টে মারা গিয়েছি।

আমি কবে পিকনিকে গিয়েছিলাম? আমার তা মনে পড়ে না। কেন মনে পড়ে না? জানি না। ২৫ জুন আজও সে এসেছিল। কিন্তু কিছু বলল না। চুপ করে রইল।

আমি তাকে বলেছি, অ্যাকসিডেন্টের কথা আমার কিছু মনে পড়ে না। সে বলল, "আগে তোমার সব কিছু মনে পড়ুক, তারপর আমি তোমার সাথে কথা বলব, তার আগে কিছু বলব না। " - এই বলে সে মিটিমিটি হাসতে লাগল আর আমার দিকে চেয়ে রইল। তার পলক পড়ছিল না। কিন্তু আমি তো জানি মানুষ পলক না ফেলে থাকতে পারে না।

তবে কি সে মানুষ নয়? আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম। চোখ খুলে দেখি সে নেই। সব সময়ই এমন হয়। আমি কোন কারণে চোখ বন্ধ করলেই সে আসে, আর চোখ বন্ধ করলেই সে যায়। সে বলেছে আমার সব কিছু মনে না পড়লে সে আমার সাথে কথা বলবে না।

কিন্তু আসবে তো? আমার যদি আর মনে না আসে, তখন যদি সেও না আসে? তখন যে আমি আবারও একা হয়ে যাব। তখন কী হবে? জানি না। ২৬ জুন আজ সে এসেছিল, কিন্তু কোন কথা বলেনি। একটিও না। আমি তাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলাম।

সে কেবল হাসল। তারপর এক সময় চলে গেল। আমি অনেক চিন্তা করলাম, মনে করতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না। কেন পারছি না মনে করতে? তবে কি ভূত হবার পর সব স্মৃতি আমার মন থেকে মুছে গেছে? না তো, সব তো যায়নি।

আমার মনে আছে আমি স্কুলে যেতাম। হ্যাঁ যেতাম। মনে আছে। আমার তা মনে আছে। তাহলে পিকনিকের কথা মনে পড়ে না কেন? আমি জানি না।

২৭ জুন আজ আমার মন খুব খারাপ। কারণ সে আসেনি। আমারও কিছু মনে পড়েনি। তবে কি আমার মনে পড়লেই সে আসবে? আমার ডায়রী লিখতে ইচ্ছা করছে না। সে কেন এল না? জানি না।

২৮ জুন আমার খুব ভালো লাগছে, আবার খারাপও লাগছে। ভালো লাগছে এই কারণে, আমার সব মনে পড়েছে। আর খারাপ লাগছে, সে আসেনি। কিন্তু আমার ধারণা, সে কালই আসবে। কারণ আমার সব মনে পড়েছে।

দিনটি ছিল শুক্রবার। এটা ছিল ফ্যামিলি পিকনিক। আমরা পরিবারের সবাই মিলে গিয়েছিলাম রাজেন্দ্রপুর। সেখানে যাওয়ার পর আরও একটি পিকনিক দলের সাথে দেখা হয়, আলাপ হয়। সেটাও ছিল ফ্যামিলি পিকনিক।

বৃটেন-প্রবাসী বাঙালী ওরা। খুবই ছোট পরিবার। বাবা-মা, দুই ছেলে আর বড় ছেলের স্ত্রী। আমরা পাশাপাশি বসে গল্প করছিলাম। তাদের ছোট ছেলেটি আমার কিছু বড় হবে।

সে হাঁটছিল। কিছুক্ষণ পর আমার দিকে ফিরে ইশারা করল তার দিকে যেতে। আমি গেলাম। ভাবলাম, সে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবে, ওর জন্ম বৃটেনেই, এই প্রথম এসেছে বাংলাদেশে। কিন্তু তেমন কিছু বলল না।

বরং হাবি জাবি গল্প জুড়ে দিল। আমার ভালোই লাগছিল। কিছুক্ষণ পর সে একটা ফুল ছিঁড়ে আমাকে দিল। আমি নিইনি। ফেরার সময় তাদের গাড়ি আমাদের গাড়ির পেছনে ছিল।

আমি দেখতে পেলাম একটা বিড়াল আর তার তিনটি বাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আমাদের গাড়িটি খাদে পড়ে গেল। তারপর আর কি কিছু জানি? না, জানি না। তারপর কিভাবে আমি মরে ভূত হয়ে এই ঘরে আটকা পড়লাম তার কিছুই আমি জানি না। আর সেই গাড়িটি, যে গাড়িতে বৃটেন-প্রবাসী পরিবারটি ছিল, তার কী হল আমি জানি না।

তবে আমার মনে হয় তাদের গাড়িও অ্যাকসিডেন্ট করেছে এবং সেই ছেলেটি, যে আমাকে ফুল দিতে চেয়েছিল সে মারা গিয়েছে। নইলে সে আমার কাছে আসবে কিভাবে? সে-ই তো রোজ আমার কাছে আসে। ২৯ জুন সে আজ এসেছিল। আমি তাকে সব বলেছি। সেও বলেছে।

বলেছে যে তাদের গাড়িটি অ্যাকসিডেন্ট করেনি। তারাই আমাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আর সে, সে আত্মহত্যা করেছিল শুধুমাত্র আমারই জন্য। এও কি সম্ভব? জানি না। সে বলল না আমি কিভাবে এই ঘরে আছি।

কারণ সে জানে, আমি তাকে পছন্দ করি না, শুধুমাত্র একা একা থাকি বলেই সে এলে খুশি হই। তাই সে যাবার সময় বলে গেল, দরজা খুলতে চেষ্টা করলে আমি খুলতে পারব। আমি এখনও চেষ্টা করিনি। ডায়রী লেখা শেষ করে চেষ্টা করব। পারব কি? আমি জানি না।

সমাপ্ত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.