আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিবিয়ার সমর কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে

আমরা মনে করি রাজাকারদের পুরো বাহিনীকে ধরনী থেকে নিশ্চিহ্ন না করা পয'ন্ত আমাদের যুদ্ধ থামানো যাবেনা-তাই সবার প্রতি আহবান, আসুন- নিজ বাড়িতে নব নব প্রজন্মকে উদ্ভুদ্ধ করি। মনে রাখবেন, পরিকল্পিত আর সংগঠিত বাংলা'র শক্তি অপ্রতিরূদ্ধ। এই লড়াইয়ে বিজয় আমাদের হবেই

ফ্রিডম পার্টি বলে একটি পার্টির কথা দেশের মানুষ ভাল ভাবেই জানে । দলটির কাজ কর্মের উল্লেখযোগ্য যে অংশটি সকলেরই জানা তা হলো এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত । সামরিক বাহিনীর যে সকল জুনিয়ার কর্মকর্তা (ফারুক, রশীদ, ডালিম) ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন তাদের হাতেই দলটি জন্ম লাভ করে ।

ফ্রিডম পার্টির প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তেমন বেশী কিছু জানা যায় না তবে খন্ড খন্ড যে সব তথ্য জানা যায় তার কোনটি খুব কল্যানকর নয় । ফ্রিডম পার্টির গঠন সম্পর্কে কতটা আলোচিত হয় ? কবে, কোথায় এর জন্ম অথবা এর লক্ষ্য কি ইত্যাদি বিষয় । অথবা দলটি কি কি কাজ করে, কিভাবে করে, কারা এই দলে সাহায্য করে ? দেড় বছর আগে হটাত করেই এই পার্টির কিছু তথ্য গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয় । পাঠকদের হয়ত মনে আছে সময়টির কথা । হ্যা সেটি হয়েছিল ফজলে নুর তাপস হত্যা চেষ্টার ঘটনার পর পর (২০০৯ এর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে) ।

কর্নেল রশীদের কন্যা মেহনাজ রশীদ তখন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন । সে সময়কার তথ্য থেকে জানা যায় যে মেহনাজ রশীদ শুধু মাত্র তার দলের কর্মকান্ড বিস্তার করার জন্য সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারীর সাথে সংসার বেধেছিলেন যা তিনি করেছিলেন তার পূর্বের স্বামীকে ত্যাগ করে । ডিজিএফআই এর সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযোগ আছে যে তিনিই এক এগার খ্যাত রাজাকারপন্থী ফকরুদ্দীন সরকারের সময় রাজনীতিতে টানা হেচড়া ও যাবতীয় ক্ষতিকর কাজ কর্মের প্রধান হোতা । পেছন থেকে এসব কাজ়ে বুদ্ধি পরামর্শ কতটা মেহনাজ রশীদের মাথা থেকে এসেছে তা নাহয় নাই আলোচিত হলো কিন্ত উস্কানিদাতাদের মধ্যে তিনিও যে একজন ছিলেন তা বলা সহজ । মেহনাজ রশীদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমাদের সামরিক বাহিনীর কিছু জুনিয়ার অফিসারও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যারা সরাসরি তাপসে উপর হামলার স্পটে উপস্থিত ছিলেন ।

পরবর্তীতে সেই সব জুনিয়ার অফিসারদেরও বিচার হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাওয়ায় তাদের সকলের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে – এ কথাটি হয়ত সকলেই জানেন । তবে যেটি ঘটেছে তা হলো কাউকেই সেনা বাহিনী থেকে চিরতরে বহিস্কার বা মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি । সবারই বিভিন্ন মেয়াদে জ়েল দেয়া হয়েছে । প্রশ্ন রয়েই গেছে এই ব্যক্তিরা তো তাপসকে হত্যাই করতে চেয়েছিল উপরন্ত তারাতো স্পটে থেকে পুরো অপারেশন বাস্তবায়নেই নিয়োজিত ছিল – যদি এটি প্রমানিতই হয় তাহলে তার পরও তাদের সেনা বাহিনীতে পূনরায় কাজ়ের সুযোগ রাখাটি কতটুকু যুক্তি যুক্ত হলো । যা হোক হয়ত সেনাবাহিনীতেই কেউ আছে যারা তাদের বাচিয়েছে এবং কোর্ট মার্শালে এই জুনিয়ার অফিসারদের পক্ষও নিয়েছে ।

আর তারা এদের রেখে দিয়েছে পরবর্তীতে এদের আরও বড় কোন কাজ়ে যেন ব্যাবহার করা যায় সেজন্য । তাপসের উপর আক্রমনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি না হলে হয়ত বিষয় গুলো মিডিয়াতেও সেভাবে আসতনা । মেহনাজ রশিদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এরও কিছু প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশিত হয় যেমন ফ্রিডম পার্টির বর্তমান অবস্থান ও কাজকর্ম । জানা যায় যে দলটিতে সদস্যদের মধ্যে মত বিরোধের কারনে কিন্দ্রিয় সদস্যদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে , মেহনাজ রশিদ দলটির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নিয়ন্ত্রন করেন আর তা সবই করেন প্রবাসে থাকা তার বাবা কর্নেল রশিদের পরামর্শ ও নির্দেশে । বলে রাখা প্রয়োজন যে এই মেজর রশীদ ৭৫ এর পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে লিবিয়াতে অবস্থান করেছে ।

সে সময় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যে ফ্রিডম পার্টি তাদের দল ও মানসিকতা বিরোধীদের একটি হিটলিস্ট তৈরী করেছে যাতে রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিকসহ এক হাজার তিনশ বার (১৩১২) জনের তালিকা পাওয়া গেছে । সে সময় তাপসের এপার্টমেন্ট ভবনের অন্য একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফারুকের আপন ভাই স্বপনকে । একই এপার্টমেন্টে থাকায় তাপসের উপর নজর রাখা তার জন্য সহজ ছিল । স্বপন ও মেহনাজ রশীদ সে সময় কার গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত দুই প্রধান ব্যক্তি । মেহনাজনাজ রশিদের ফ্ল্যাটে তল্লাশি করে গুরুত্বপূর্ণ যে সব কাগজ পত্র পাওয়া যায় তার মধ্যে পাওয়া যায় ব্রিগেডিয়ার বারীর নিজ হাতে লেখা একটি চিঠি যাতে তিনি (ব্রি. বারী) লিখেছিলেন কর্নেল রশীদকে , সে খানে তিনি লেখেছেন যে কর্নেল রশীদের সাথে পরিচিত হয়ে তিনি (ব্রি. বারী) নিজকে ধন্য মনে করেছেন, ১৫ ই আগস্টের ঘটনাকে এক ইতিহাস সৃষ্টি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন সেই ঘটনার দিন তিনি (ব্রি. বারী) এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে আনন্দে সেই খবরটা (মুজিব হত্যাকান্ড) সবাইকে দিয়ে বেরিয়েছেন ।

সে সময়ে খবর প্রকাশিত হয় যে তাপস বিষয়ক অপারেশনের আগে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরী করা হয় দেশের বাইরে । প্রথমে মেহনাজ রশীদ যায় লিবিয়ায় কিছুদিন পর মেহনাজ ও তার বাবা কর্নেল রশীদ পৌছান পাকিস্তানে সেখেনে উপস্থিত হয় ডালিম আর তাতে যোগ দিতে আমেরিকা থেকে পাকিস্তন পৌছান ব্রিগেডিয়ার বারী। (উল্লেখ্য রাজাকারপন্থি ফখরুদ্দীন সরকার তাকে আমেরিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামরিক এটাশের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয় )। তাপস বিষয়ক কাজটির জন্য সহায়ক হিসেবে পাওয়া যায় আইএসআইকে (পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) তবে কাজের পুরো অর্থ আসে লিবিয়া থেকে । মোট কত পরিমান অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করা না হলেও লিবিয়া থেকে একটি একাউন্টে পাচ লক্ষ ডলার পাঠানোর বিষয়টি ধরা পড়ে (সূত্র ২৪-৩০ শে অক্টোবর ২০০৯ সমকাল, যুগান্তর, প্রথম আলো) ।

সন্দেহ করা যেতেই পারে যে প্রাথমিক পরিকল্পনা খসড়া তৈরী হয় লিবিয়া ও আমেরিকাতে যা নিয়ে আলাদা দুই দিক থেকে দুটি ইউনিটের মুখপাত্ররা আইএসআইয়ের সাথে যোগ দেয় । শেখ মুজিব হত্যা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য থেকে স্পষ্টই জানা যায় যে জ়েনারেল জিয়ার সথে ফারুক, রশীদ, ডালিমদের ঘনিষ্টতা ছিল ১৫ ই আগস্ট সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহনের পর্যায়েও । ঘটনার পরবর্তীতে খালেদ মোশাররফের কাছে এই ফারুক, রশীদ, ডালিমেরা ছিল অপরাধী তাই খালেদ মোশাররফ এদের মেজরদের ( তখন তারা মেজর র‍্যাঙ্কেই ছিলেন) বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে চেষ্টা করেছিলেন , অবস্থা বেগতিক দেখে খন্দকার মোস্তাকের সহায়তায় এই মেজরেরা দেশ থেকে পালিয়ে যায় । খন্দকার মোস্তাক তখন খালেদ মোশাররফকে এক প্রকার অনুনয় করে বলেছিলেন যে এই ব্যাক্তিরা আর দেশে আসবেনা – এরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে এই অবস্থায় যেন তাদের উপর আক্রমন করা না হয় । সেই যাত্রায় ঘাতকদের শায়েস্তা না করাটা ছিল একটি বড় রাজনৈতিক ভুল যা ঠিক সেই সময়েই খালেদ মোশাররফ হয়ত বুঝতে পারেননি ।

পরবর্তীতে সেই ঘাতকেরা ঠিকই দেশে এসেছিলেন । তারা তাদের পরবর্তী মিশনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও তৈরী করতে ভুল করেননি । হ্যা তা হলো একটি রাজনৈতিক দল তৈরী । জিয়া পরবতী সময়ে এই পার্টির কার্যক্রম চলে কিছটা গোপনে কিন্ত জোরেশোরেই । নব্বয়ের দশকে এরশাদের পতনের কাছাকাছি সময় ফ্রিডম পার্টির জন্য দুটো চীনা জাহাজ ভর্তি অস্ত্র আগমন নিয়ে বেশ হৈ চৈ পড়ে যায় ।

পরবর্তীতে রহস্য জনক ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থেমে যায় । এরশাদ শাসন আমলে ফ্রিডম পার্টির অন্যতম ট্রেইনিং এলাকা ছিল লিবিয়া । শুধু তখনই নয় এটিকে সর্বশেষ বছর পর্যন্ত তাদের দলের ক্যাডারদের প্রশিক্ষনের কেন্দ্র । এটি কোন ভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা যে লিবিয়ার সেনাবাহিনীর সহায়তায় দলটি তার ক্যাডারদের প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করে । গাদ্দাফি যে বিদেশী সৈন্য ব্যাবহার করে প্রাথমিক গনহত্যা চালিয়েছিলেন (এ বছর ফেব্রুয়ারী থেকে) তাতে এশিয়ান বা বাংলাদেশী কারও নাম এখন পর্যন্ত জানা যায়নি ।

যদি এরকম কারও খবর প্রকাশিত হয় তবে তাকে কর্নেল রশীদের রুট হিসেবে মনে করার কারন থাকবে । যা হোক এবার আসি ফারুক-রশীদের যুদ্ধকালীন সময়ের কিছু ঘটনায় । পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিরূদ্ধে যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে তখন এই ব্যাক্তিরা মধ্যপ্রাচ্যেই ট্রেইনিংএ ছিলেন ( তবে লিবিয়ায় নয়) । যুদ্ধ শেষের এক মাস আগে তারা ফিরে যান পাকিস্তানে সেখানে পাকিস্তান সেনা ইউনিটে ধারাবাহিক ভাবে তাদের বেশ কিছু সভায় উপস্থিতির অভিযোগও আছে । যা হোক এর পর তারা ভারতে পৌছান সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে ডিসেম্বরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ।

প্রশ্ন হলো ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেতো যুদ্ধ শেষই হয়ে গেছে তাহলে তারা কি যুদ্ধ করল । নাকি এটিই ছিল পাকিস্থানের পরবর্তী মশনের শুরু তা কে জানে । ১৫ই আগষ্টের ঘটনার পর পরই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘটনায় এসব বিষয় সন্দেহ তৈরী করে । কর্নেল শাফায়াত জামিলের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায় এই ফারুক-রশিদ-ডালিমদের নিয়ে যুদ্ধ পরবর্তী সেনা বাহিনীতে বিরুপ মনোভাব ছিল যেমনটি ছিল পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশের জন্য যুদ্ধে অংশ নেয়নি । শাফায়াত জামিল সহ বহু মুক্তিযোদ্ধা জোড়ালো ভাবেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাড়াবাড়ির সমালোচনা করেন ।

সামরিক সুত্র মতে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্য ফারুক-রশীদ-ডালিমদের পাঠানো হয় ভারতে । সামরিক অনেক কর্মকর্তারই সন্দেহ যে ক্যু এর প্লট সেখানেই রচিত হয় । যা হোক ভারতীয় সরকারের সাথে বা ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাথে গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর সমঝোতা রয়েছে কিনা তা জোড়ালো ভাবে জানা না গেলেও গাদ্দাফি যে তাদের খুব বিরোধী কেউ নয় তা কিন্ত বলাই যায় । মধ্যপ্রাচ্যের খুব ব্যাতিক্রমধর্মীদেশ গুলোর সাথে ভারতের এ জাতীয় সম্পর্কের বিষয় চোখে পড়ে । এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম অপরাধী এবং ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ব্যাক্তিদের সাথেই এই যোগাযোগ দেখা যায় ।

আবার ভারতের হাতে প্রশিক্ষন নিয়ে ক্যু করা রশিদদের আশ্রয়, প্রশিক্ষন অস্ত্র সরবরাহ এসবও করে যায় গাদ্দাফিরা । এবার ফারুক-রশীদের আশ্রয়দাতা দেশটির দিকে একটু নজর দেই । তার আগে একটু বলে নিতে চাই যে- আন্তর্যাতিক রাজনীতিতে কে কোন interest পূরণ করতে কখন কার বন্ধু হয়ে ওঠে তা আগে থেকে বোঝা যায়না । আবার নিরুপায় হয়ে সেই বন্ধুকে ত্যাগ করার রীতিও প্রায়ই দেখা যায় । জাতি সংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ধরে নেয়া যায় আন্তর্যাতিক মুরুব্বীদের সর্বোচ্চ কেন্দ্র যেখানে খুব সামান্য কয়টি দেশের মধ্যে ভারত, চীন, রাশিয়া, জার্মানিও স্থায়ী সদস্য ।

গাদ্দাফি যখন তার দেশে ব্যাপক গন হত্যা চালাচ্ছে তখন প্রথম দিকেই সারা পৃথিবী ব্যাপী বিরুপ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে তখন ভারতে অবস্থিত লিবিয়ার রাষ্ট্রদুত পদত্যাগ করেন । তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন যে লিবিয়াতে যে গনহত্যা চলছে তার প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন । পদত্যাগের দুদিনের মাথায় তিনি সমালোচনার সাথে বলেছেন লিবিয়াতে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে সারা পৃথিবী কেবল সমালোচনা করছে এটি কোন ভাবেই দেশের মানুষের কাজ়ে আসছে না , যা প্রয়োজন তা হলো সরাসরি Action এ নামা । বিষয়টি নিয়ে সকল আন্তর্যাতিক কমিটিতেই সমালোচনা ও করনীয় নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলতে থাকে । যা সর্ব শেষে জাতি সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গড়ায় ।

নিরাপত্তা পরিষদের চুড়ান্ত ভোটাভোটির দিন ভারত, রাশিয়া, চীন, জার্মানির মত দেশ গুলো ভোট দানে বিরত থাকে । তবে সভায় আলোচ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়া বা ভেটো দেয়ার কাজটি কেউই করেনি । আজ হটাত করেই ভারত, রাশিয়া সমালোচনা শুরু করেছে যা সরাসরি দ্বিমুখী নীতিই মনে হয়েছে । একটি প্রস্তাব পাশ হওয়ার টেবিলে চুপ চাপ বসে থেকে পরে সমালোচনা করা ভন্ডামি ছাড়া কিছু নয় । আর তার চেয়েও বড় অন্যায় যেটি সেটি হলো গনহত্যাকে পরোক্ষ ভাবে চালিয়েই যাওয়ার মতন রাজনৈতিক কপটতা প্রদর্শন ।

যা অন্তত রাশিয়ার কাছ থেকে কোন ক্রমেই আশা করিনি । হতে পারে পৃথিবীর কূটিল রাজনৈতিক খেলা তারাও চর্চা করতে চাইছে কিন্ত এটি সমর্থন যোগ্য নয় । একটি মানুষ আপনাদের প্রিয় হতে পারে কিন্ত তার মানে এই নয় যে মানুষটি যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবে আর কেবল মাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব করবে । গাদ্দাফি যা করেছে এবং যা করে বেড়াচ্ছে তা যে কোন মূল্যে প্রতিরোধ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই । মানুষ হচ্ছে প্রথম বিষয় তাদের রক্ষার জন্য যা করনীয় তা করতে হবে ।

লিবিয়ার সাধারন জনগন কচু কাটা হবে আর এই কাজ করে যাওয়ার জন্য গাদ্দাফির মতন নিষ্ঠুর ব্যক্তিকে উস্কানি দেয়াটাও একটা অপরাধ মনে করি । যা হোক গাদ্দাফি তার উপর বিমান হামলার প্রায় পাচ দিন পর টেলিভিশনের সামনে এসেছেন । তার কম্পাউন্ডের ভাঙ্গা ভবনে দাডিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন । এখনও বানোয়াট কথা বলতে থামেননি । তিনি ও তার পরিবার এখন সত্যি সত্যিই সেই কম্পাউন্ডে থাকে কিনা তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ কিন্ত আছেই, তবে তিনি এখনো যে হামলা অব্যাহত রেখেছেন তা কিন্ত অপরাধের উপর আরও অপরাধ বলতে হবে ।

বিভিন্ন সুত্রের সংবাদ থেকে যা জানা যাচ্ছে তা হলো তার গ্রাউন্ড ট্রুপস এখনও ট্যাঙ্ক ও মর্টার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় । তার বাহিনীর আধিক্য আছে এমন স্থান গুলোতে তিনি বিভিন্ন বাড়ীতে অস্ত্রধারী পাঠিয়ে মানুষকে জোর করে রাস্তায় জড়ো করে তাদের হাতে তার(গাদ্দাফির) ছবি ও তার পতাকা দিয়ে মিছিল করতে বলছেন । বিভিন্ন সেনা ব্যারাকে যেসব মরদেহ লুকিয়ে রেখেছিলেন সেসব মরদেহও তৈরী রাখা আছে যাতে হামলার পর পরই তা প্রদর্শন করা যায় । এতে তার কয়েক দিক থেকে লাভ যেমন একঃ হামলার সময় হামলাকরীদের স্বাভাবিক ভাবেই থেমে যেতে ক্ষেত্র তৈরী করা; দুইঃ হামলা হলে জনগনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়াও হবে আবার তাদের লাশ দেখিয়ে রাজনৈতি কাজও হবে সেই একই সময়ে পুরোনো লাশ গুলোকেও তার বিরোধীদের হামলায়ই নিহত বলে দেখানো যাবে । এসবের বাইরে এখনও জনগনকে শায়েস্তা করতে তিনি বিভিন্ন শহরে স্নাইপার ব্যাবহার করছেন যারা সাধারন মানুষকে দেখলে দূর থেকে গুলি করছে ।

দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের অনেককে হত্যাও করেছেন তিনি । যেসব স্থানে হামলা চালাচ্ছেন সেসব স্থানে হামলা চালানোর আগে তিনি মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিচ্ছেন । উল্লখ্য, দেশটির মোবাইল নেটওয়ার্ক এখনও তার এক পুত্রের হাতেই আছে । অবস্থা দেখে যেটি মনে হয়েছে তা হলো আপাদত তিনি ভারি অস্ত্র ব্যাবহারের পরিবর্তে কিছুটা হালকা অস্ত্রের ব্যাবহারের দিকে ঝুকেছেন । টেলিভিষনে প্রপাগান্ডা চালানোও তিনি থামাননি ।

এদিকে পশ্চিমারা বলছে এই হামলা অল্প কদিনের মধ্যেই শেষ হবে কিন্ত দেশটিতে অনেক কিছু এখনও নির্ভর করছে দেশটির পরির্তনকামী জনগনের উপর । তারা আসলে আগে বুঝতেই পারেনি যে সমর শক্তিতে তারা কতটা দুর্বল থেকে লড়াইয়ে নেমেছে । গাদ্দাফি খুব unpredictable লোক এমনই বলা হয় একই সাথে তনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও চরম মিথ্যার আশ্রয় নেয়া এক ব্যাক্তি তাই তার প্রতিটি বক্তব্য ও কাজ়ে একাধিক ফাদ থাকতে পারে এমনটা ধরেই নিয়ে এগোতে হবে । গাদ্দাফির উপর আক্রমনের পরিশেষে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হলে এক রকম হবে; আবার তিনি যদি হটাত করে নতুন কারো হাতে ক্ষমতা দেবেন এমন ঘোষনা দেন তবে পরিস্থিতি হবে আরেক রকম । সে যাই হোক, যুদ্ধ শেষে তার সামরিক কাঠামোতে হাত দিতেই হবে ।

আর এটা পরিস্কার ভাবে অনুমান করা যায় যে তার বাহিনীর হাতে বহু দেশের বহু ঘাতক ট্রেইনিং নিয়েছে যার প্রমান পত্র বহু কিছুই সামরিক দপ্তরে ও সামরিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা সম্ভব হবে । এসব জ়েনে কেবল চুপ করে বসে থাকলে হবেনা বরং কোন কোন বিদেশি ঘাতক তার রাজনৈতিক ও সামরিক পৃষ্ঠপোষকতায় থেকেছে তার রেকর্ড প্রকাশ করতে হবে । বিদেশি ঘাতকদেরও সাজার ব্যাবস্থা করতে হবে । এবং রশীদের মতন ঘাতকরা কোথায় আছে তা খুজ়ে বের করে সাজা কার্যকর করতে । বিদেশি ঘাতকদের শাস্তির জন্য তাদের মূল দেশে ফেরত পাঠানোর কাজও করতে হবে ।

আর সর্বোপরি এমন একটি সরকার গঠন করতে হবে যে সরকার কোন বিদেশি ঘাতক ট্রেইনিং এর কেন্দ্র হতে না পারে । এটি পরিস্কার ভাবেই মনে রাখতে হবে মধ্য প্রাচ্য থেকে আন্তর্যাতিক ঘাতক তৈরী ও পৃষ্ঠপোষকতার প্রকৃয়া বন্ধ করা গেলে পৃথিবীর বহু দেশে অভ্যন্তরীন সংঘাত কমে আসবে । তখন হয়ত আর ১৫ ই আগস্ট ঘটিয়ে লিবিয়াতে পালিয়ে যাওয়া কিংবা সেখানে বসে তাপস হত্যার প্লট তৈরী এবং কাজের জন্য অর্থ সরবরাহ করতে পারবেনা । আমরা সেই দিনের প্রত্যাশায় রইলাম ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.