আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রাবন দুপুর সন্ধ্যা রাত


বা'য়ে বিল আর ডানে সবুজ দেখতে দেখতে চলছি উত্তরার পথে। আশুলিয়ার নতুন পথ ধরে আমার বেবি ট্যাক্সি ছুটে চলেছে জ্যাম ছাড়া, ধুলো ছারা শান্তি মতন। নিপো ভাইয়ার কাছে নতুন শেখা মিরপুর টু উত্তরার পথটা আমিই বেবি ট্যাক্সিওলাকে শেখালাম। সবুজ আর নদির গন্ধে মন ভাল হয়ে যায় এমনিতেই এপথ দিয়ে চলতে গেলে। নুমা আপু আর নিপো ভাইয়ার সাথে ৮ বছর পরে দেখা হলো।

এযে কত বড় পাওয়া এবারে আমার। এই মানুষ দুজন আমার খুব প্রিয় মানুষদের লিস্টে। নিপো ভাইয়াটা তো পৃথিবীর সবচাইতে ভাল মানুষদের মধ্যে একজন। ভাবি এত চমৎকার জ্যাম মুক্ত রাস্তাটা রেখে কেন সবাই যায় ঢাকার ধুলো ওঠা রাস্তায় উত্তরা যাবার জন্য?এবার ঢাকা গিয়ে প্রথম যে জিনিসটা আমাকে আশাবাদী করল বা....... উমমমম...... বলা যায় ভাল লাগালো তা হলো বেবি ট্যাক্সি মিটারে চলে। দশ বিশ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার যে আবদার টা ওরা করে তা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়নি তবুও।

ঠিকানা খুজে বের করতে গিয়ে বা গন্তব্য একটু এদিক ওদিক হলে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করতে হবে না এই ভাললাগাতেই মন আমার খুশি হয়ে গেল । বিলে নৌকা দেখে খুব চড়তে ইচ্ছে করল। ভাবলাম একদিন নিশ্চই এখানে এসে চড়তে হবে যাবার আগে, কতদিন নৌকা চড়িনি...... যাবার কি আর সময় হলো শেষে? সব সময় ঢাকা গেলে সময় যেন ছোটে আলোর গতিতে আর বড়ই আভাব আর টানাটানি থাকে সেখানে। অনেক কিছু করব ভেবেও করা হয়না শেষে। ইচ্ছে ছিল পারভিন আপুকে দেখতে যাব বেচারার শরীর ভালনা তেমন ........ হলোনা।

যাবার সময় হয়ে এলো অনেক কিছুই করা হয়নি এখনও দেখা হয়নি অনেকেরই সাথে। খাওয়া হয়নি কালোজাম আর হাজির বিড়িয়ানি । তবু দাদার জন্য নিরবের খাবার বহু বছর পরে খাওয়া হলো আর পুরনো ঢাকার সেই কাটলেট!! দাদাকে যে কি বলে থ্যাক্স জানাব জানিনা। এমনকি সেদিন দুপুরে খিদে পেটে খাওয়া উনার বাসার পাবদা মাছের ঝোল এখনও আমাকে খিদে পাইয়ে দেয় মনে হলেই। উত্তরার কাজটা শেষ হলে বেবি ট্যাক্সিওলা কে শ্রাবনের বাসার ঠিকানা দিয়ে খুজে বের করতে অনুরোধ করলাম।

চমৎকার মানুষ এই ট্যক্সিওলা। কোন ঝামেলা না করে আমাকে চমৎকার ভাবে বাসাটা খুজে দিল। দারোয়ানকে জাফনার নাম বলতেই ম্যাজিক কাজ করল বুঝলাম মেয়ে আমাদের খুবই বিক্ষ্যাত । মুখে ঝলমলে হাসি নিয়ে শ্রাবন আর জাফনা দরজা খুলে দিল । সকাল থেকেই মনটা আজ কোথাও পালিয়ে গিয়ে শান্তিতে এ ক'দিনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি চাইছিল।

মিষ্টি হাসি গুলো দেখে মন ভাল হয়ে যাচ্ছে অনুভব করতে পারলাম ভেতরে ভেতরে । জাফনার লাজুক/মিষ্টি হাসি আর এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে মা'কে ব্যস্ত রাখা - ভাবলাম মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজেই শাওয়ার নিয়ে চমৎকার করে চুল আচড়িয়ে কার্টুনে জমে গেল। কি লক্ষ্যি মেয়েরে বাবা! আমার আর শ্রাবনের গল্প সেই যে শুরু হলো......বসার ঘরে, বারান্দায়, শোবার ঘরে, রান্না ঘরে......সর্বত্র। বেড়াল ছানার মত ওর পিছে পিছে আমি ঘুরি আর দুজন গল্প করি ননস্টপ চমৎকার করে ওর ঢেড়স ভাজি, করলা ভাজি আর ছোট মাছ রান্না দেখলাম।

মুখে পানি চলে আসা গন্ধে সারা বাড়ি মৌ মৌ। ছোটমাছ আমার যে কি প্রিয়! তিনজন লাঞ্চ করে বাংলাদেশের খেলা দেখতে বসলাম। তাই বলে আমাদের গল্প বন্ধ হয়নি কিন্তু। খেলা দেখার চাইতে যেন কথা বলতেই বেশি ভাল লাগছিল। জাফনা ঢাকার ইল্যুমিনেশন দেখতে বন্ধুদের সাথে বেড়িয়ে যেতেই আমাদের গল্প আরো জমে উঠলো।

দাদাকে ফোন দেয়া হলো আমাদের সাথে আড্ডা দেবার জন্য কিন্তু দেখা গেল উনি ব্যাস্ত খেলা দেখা নিয়ে । পারভিন আপাকে ফোনে সঙ্গে নেয়া হলো আড্ডায় এর ফাকে বিকেলে একবার বেরিয়ে আমার চিটাগাং যাবার টিকেট টা করে ফেললাম দুজনে। হেটে হেটে কিছুটা দেখা হলো পুরোন উত্তরাকে নতুন করে। ভাল লাগলো। খুবই ভাল লাগলো।

এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। কেমন করে যে একটা চমৎকার দিন পার হয়ে গেল!! দিনটার শুরুতে ভাবিনি এমন একটা চমৎকার দিন পাবো সেদিন। অনেক সময় অনেক কিছু না চাইতেও পেলে যে কি ভাল লাগে!
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।