আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রাবন ধারায় মনে পড়ে কেবলি তোমারে!

...............................................................................................................................................................।

বেশ কিছুদিন পর গ্রামের বাড়ি আসা। ঈদের কল্যানে যান্ত্রিক শহরকে বিদায় জানানো। সময়টা বর্ষাকাল বলেই বৃষ্টি ভয়টা সারাক্ষনের। শ্রাবনের শেষভাগে এসে যেন বর্ষা আরো পরিনত হয়ে পড়েছে।

বৃষ্টির অবিরাম ধারা দেখে মনে হয় এইতো শুরু মাত্র;বর্ষা বুঝি শুরু হল কেবল। দুদিন পেরিয়ে গেল কেবল আকাশে মেঘের ঘোঙ্গানি-ই শুনেছি বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দেখিনি। কখনো এমন ভাব এই বুঝি নামলো অঝোরে!কিন্তু না আবার উ...ধাও;আবার হুট করেই ঝরে পড়া!এটাই বোধহয় শ্রাবনের বিশেষত্ব!হইয়াও হইলনা আবার হঠাত ঝমঝমিয়ে ঝরঝর! শ্রাবনের আকাশের মন বুঝা বড় দায় ঠিক যেন নারীর মত!নারীকেও যেমন এক জনমে বুঝা সম্ভব নয় শ্রাবনকেও বোধহয় একজনমে বুঝা সম্ভব নয়। রাতভর বৃষ্টি হওয়া না হওয়ার দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সেহরি খেয়ে নামাজটা শেষ করে কেবল বিছানায় পিঠ লাগালাম।

অমনি শুরু হল ঝরঝর!আহা!একটু প্রশান্তি-ই পেলাম মনে হয়!হৃদয় জুড়ে একটু প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে যেতে লাগলো। চোখের পাতা এবার এক করি কেমন করে??বাড়ি আসার পর থেকে নিঝুম রাতে শুধু ঝিঝি পোকার ডাক শুনেছি। আজ প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে,একেবারে ঝুম বৃষ্টি;পুরো ভোরটা যেন ভিজে চুবচুবা;জানালা দিয়ে তাকালে উষার আলোয় বেশ সুনদর লাগছে;গ্রামে বৃষ্টির শব্দ শুনতে অদ্ভুত লাগে আমার,কেমন ঝমঝম ঝমঝম!রাতের বৃষ্টি আমাদের ঘুম কেড়ে নিয়ে ভাবনার অথই সাগরে নিমজ্জিত করে। আমরা ভাবনার দোলাচলে সাতরাতে থাকি। আমিও এখন আপন মনে সাতরে যাচ্ছি।

কত কিছুইতো উকি দিচ্ছে!কত ছবি-ইতো ভেসে উঠছে;কিছু ছবি কল্পনায় নিজের গড়া কিছু ছবি অতীত স্মৃতি ময় মুহুর্তের কিছু ছবি নিজের আপন মানুষকে নিয়েই নিজের মত ভাবনায়। সে ছবি দিয়ে নিজের বৃষ্টিমহলকে সাজিয়ে তোলার অবিরাম চেষ্টায় মগ্ন। ভাবনার দোলাচলে থাকতেই হঠাত ক্লান্তির ছায়ায় ঢেকে গিয়ে নিজেকে ঘুমে জড়াই। আর জানা হলনা স্বপ্নরাজ্য রাজকন্যাকে নিয়ে আমার বৃষ্টিমহলটাকে কেমন সাজিয়েছি?কোন এক কোলাহলে প্রশান্তির ঘুমটার অবসান ঘটল!ইচ্ছে করেছিল কিছুক্ষন বকা দিয়ে নিজের ঘুম ভাঙ্গানোর বিরক্তিটা প্রকাশ করবো। চোখের পাতা মেলে আবারো বাহিরে ঝুমবৃষ্টি দেখে মনটা স্থবির হয়ে গেল নিমিষেই;কাউকে আর কিছু বলা হলনা।

রাগটা বৃষ্টির জলে মিশিয়ে দিয়েছি। একি বেলাতো কম হলনা!তবে কি সেই বৃষ্টি এখনো থামেনি। অথচ বৃষ্টিকে এখনো কি তেজদীপ্ত মনে হচ্ছে,এই বুঝি মাত্রই আকাশ থেকে পড়া শুরু হল। আহা!বাউন্ডুলের সেই দলটা এখন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে;না হলে এতক্ষনে ফুটবল নিয়ে ছুটাছুটি শুরু হত সেই বহু চেনা মাঠটার কোলে। বৃষ্টিতে ভিজে কত ফুটবল খেলেছি!কখনো লুকিয়ে কখনো বা প্রকাশ্যে।

কখন এর জন্য সহ্য করতে হয়েছে বেদম প্রহার!ইসস!উঠোনে এই নব্য বাউন্ডুলে দের দলদেধে বৃষ্টিভেজা ছুটাছুটি দেখে কতনা ইচ্ছে করছে নিজেও গিয়ে তাদের শামিল হই। এখনকার বাবা মায়েরা বোধহয় সন্তানদের প্রতি অনেক সদয়!এত ছোট ছোট বাচ্চারা কেমন অবাধে ভিজে যাচ্ছে তাদের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। এই নিষ্পাপ বাচ্চাগুলো বৃষ্টিকে বেশ উপভোগ করছে,বৃষ্টিকে নিয়ে তাদের এই অবাধ ছুটোছুটি দেখে আমার তা-ই তো মনে হচ্ছে। দেখতেও ভীষন লাগছে;হঠাত একটু লাজুক হয়ে চুপসে যাওয়া;কখনো এদিক-ওদিক ভোদৌড়ে ছুটাছুটি!সেদিন যান্ত্রিক শহরেও এমন এক দৃশ্য আমার চোখে পড়েছে। মা ছাদের কোনে দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে পাহারা দিচ্ছে আর আর শিশুটি কত আনন্দ নিয়ে ভিজছে।

মা চেয়ে চেয়ে দেখছে কখনো হাসছে কখনো বা বিষন্ন মনে কোন অতীতের তাড়নায় অন্য কিছু ভাবছে। বৃষ্টি একজনের কাছে একেক রকম অনুভুতি নিয়ে আসে। এই বাচ্চা গুলোর কাছে বৃষ্টির অনুভুতি একরকম। একদল বাউন্ডুলের কাছে বৃষ্টি মানে ফুটবল নিয়ে খোলা মাঠে ছুটোছুটি;একদলের কাছে বৃষ্টি মানে তাসের আড্ডা। একদলের কাছে বৃষ্টি মানে প্রেমভরা আর্তনাদে জানালার ফাক গলে বাইরে তাকিয়ে থাকা।

একদলের কাছে বৃষ্টি মানে প্রিয়জন হারিয়ে অতীত স্মৃতিকে বুক চেপে অমোগ কান্না করা;একদলের কাছে বৃষ্টি মানে নিরব মনে দুঃখ বিলাস,আপন মনে কান্না করার একটুকু সুযোগ;যারা নিরব মনে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আঝোরধারায় কান্না করে বৃষ্টির দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যায়। কেহ রবি ঠাকুর পড়ে,কেহ বা সুরের মুর্ছনায় প্রিয়জনকে কাছে নিয়ে নিজেদের বৃষ্টিমহলকে ভালোবাসার সীমাহীন সুখে ভরে দেয়। আবার কেহবা শিশুটির মায়ের মত তার হারানো স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টি ভেজা অদ্ভুত মুহুর্তগুলোকে স্মৃতির পাতায় বার বার টেনে এনে নিজেকে আগের দিনে ফিরিয়ে নেয়…। । এইসব ভাবতে ভাবতে আমারও যেন চোখের কেন এক ফোটা জল চলে এলো।

কেউ বুঝে উঠবার আগেই পরম আদরে হাত দিয়ে অশ্রুফোটা মুছে জানালার ফাক গলে অবিরাম ঝরতে থাকা বৃষ্টির জলে মিশিয়ে হাত মেলে দিই। তবে কি আমিও কোন অতীত স্মৃতিতে ডুবে গেলাম?বুঝে উঠতে পারিনা,কেবলে শ্রাবনের বৃষ্টিতে ভেজা বহুদিন আগের অদ্ভুত এক বিকেল আমায় তাড়া করতে লাগলো। সেই ভেজা হাত,ভেজা ঠোট,পিচ ঢালা পথ,আর একটু দূরে গাছের ডালে বসে থাকে ঠিকানাহীন এক ভেজা পাখির চেহারাই আমার মনে পড়তে লাগলো। আমার এখন কিছু ভালো লাগছেনা;আমি এখন মায়ের কাছে যাবো;আমি এখন ছড়া পড়বো!কবি নির্মলেন্দু গুনের ‘বিষ্টি’ ছড়াটি। শ্রাবনের মাতাল করা বৃষ্টি এলেই আমি মায়ের কাছে গিয়ে এই ছড়াটি বলে শ্রাবনের বৃষ্টি নিয়ে আমার বিরক্তি প্রকাশ করি।

আমার শুধু কবি নির্মলেন্দুগুনের ‘বিষ্টি’ শিরোনামের ছড়াটির এই লাইনগুলো মাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে- আকাশ এতো কাঁদছে কেন কেউ কি তাকে গাল দিলো? ছিঁচকাঁদুনে মেঘের সাথে গাছগুলি কি তাল দিলো? সকাল গেল, দুপুর গেল- বিকেল হ’য়ে এলো কী? আচ্ছা মাগো তুমিই বলো মেঘেরা আজ পেলো কী???????


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।