আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে জানবেন আকাশের তারার নাম!



মানুষ আদিকাল থেকে আকাশের তারা দেখে আসছে। একেক সভ্যতা পরিচিত তারাগুলোকে চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন নামে। চাঁদহীন রাতের আকাশে নাম না জানা অসংখ্য তারা দেখে অনেকেরই ইচ্ছা জাগে তারাদের নাম জানার। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে তারা দেখে দিক নির্ণয় বা সময় নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা বেশ আগেই ফুরিয়ে গেছে। তাই হয়তো আলাদা করে তারাদের চেনাটা এখন আর ততটা গুরুত্বপূর্ন নয়।

তারপরও কৌতুহলী মানুষ জানতে চায় তারাদের নাম। তারা চেনার একটি সহজ উপায় হচ্ছে আকাশ-মানচিত্র। আকাশ মানচিত্রে তারাদের আপেক্ষিক অবস্থান ফুটিয়ে তোলা হয়। অনেক সময় উজ্জ্বল তারা গুলোকে সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করে যে কনস্টেলেশন বা নক্ষত্ররাজি কল্পনা করা হয় তাও দেয়া থাকে এই মানচিত্রে। সাধারণ মানচিত্রের সাথে স্কাই ম্যাপ এর পার্থক্য হচ্ছে, সাধারণ মানচিত্রে উপরের দিকে উত্তর থাকলে ডানে পূর্ব দিক থাকে, কিন্তু স্কাই ম্যাপে উপরে উত্তর হলে ডানে পশ্চিম হবে।

কারণ, আমরা উপরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখার সময় দিক উল্টে যায়। স্কাই ম্যাপ পড়তে হয় মাথার উপরে তুলে, মাটিতে রেখে নয়। অবশ্য ইনভার্টেড স্কাই-ম্যাপ পাওয়া যায়, যাতে সাধারণ ম্যাপের মত উত্তরের ডানে পূর্বদিক থাকে। এই ম্যাপ দেখার সময় নিজেকে ম্যাপের মধ্যবিন্দুতে দন্ডায়মান কল্পনা করে তারাগুলোকে সরাসরি উপরের দিকে কল্পনা করে নিতে হয়। তবে বেশিরভাগ পর্যবেক্ষণকারীর কাছে প্রথম ধরণের ম্যাপই বেশি ব্যবহার বান্ধব বলে মনে হয়।

আজ তারা চেনার দুটি অনলাইন রিসোর্স নিয়ে রিভিউ লিখবো। ১. গুগল আর্থ: গুগল আর্থ একটি অসাধারণ টুল আকাশের তারা চেনার জন্য। যারা ব্যবহার করেছেন, সকলেই অবগত আছেন এই টুলটির শক্তি সম্পর্কে। মূলত পৃথিবীর ম্যাপ এবং স্যাটেলাইট চিত্র নিয়ে গুগল আর্থ এর কার্যক্রম হলেও এতে গুগল-স্কাই নামের একটি বিশেষ সেবা রয়েছে। চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহের ম্যাপ ও রয়েছে অসাধারণ এই টুলটিতে।

গুগল আর্থ ব্যবহার করে স্কাই ম্যাপ পেতে হলে প্রথমে আর্থ মুড থেকে স্কাই মুডে যেতে হবে। এই অবস্থায় একটি ম্যাপ পাওয়া যাবে যাতে তারা, নীহারিকা, গ্যালাক্সি প্রভৃতি রয়েছে। গুগল স্কাই এর সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে জুম করার ব্যবস্থা। জুম করে করে হাবল টেলিস্কোপ থেকে নেয়া অনেক হাই ডেফিনিশন ছবি দেখা সম্ভব গুগল-স্কাই থেকে। গুগল স্কাই এর একটি অসুবিধা হলো, এতে উজ্জ্বলতা অনুসারে তারা ফিল্টার করার ব্যবস্থা নেই।

কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে আকাশে কোন কোন তারা দেখা যাবে এবং কোথায় কোনটি অবস্থান করবে জানাটা নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য কষ্টকর। কারণ এতে তারার অবস্থান রাইট এসেনশন (এরিস তারকাপুন্জ থেকে কৌনিক দূরত্ব) এবং ডিক্লাইনেশন (কতটুকু উত্তর বা দক্ষিণে হেলানো) হিসেবে দেয়া থাকে। কখন কোন তারা কোথায় থাকবে সেটা জানার জন্য একটু হিসাব করার প্রয়োজন পরে। তবে জুম আউট করে শুধুমাত্র উজ্জ্বল তারাগুলো দেখা এবং কোন একটি নির্দিষ্ট দিকে জুম ইন করে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল তারাগুলো দেখার সুযোগ রয়েছে গুগল স্কাই তে। আর তারাগুলোর বিন্যাস দেখে শনাক্ত করাও সম্ভব।

২. তারা চেনার জন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় টুল হচ্ছে 'http://www.fourmilab.ch' নামক ওয়েবসাইটের মেইক স্কাইম্যাপ সেবাটি। অটোক্যাড তৈরীকারী প্রতিষ্ঠান অটোডেস্ক এর প্রতিষ্ঠাতা জন ওয়াকার এর ব্যক্তিগত উদ্দোগে তৈরী এই বহুমাত্রিক ওয়েবসাইটটিতে মহাকাশ বিষয়ে কৌতুহলীদের জন্য অনেকগুলো টুল রয়েছে। এর একটি হলো মেইক স্কাইম্যাপ। এই লিন্কটিতে গিয়ে সময় হিসেবে 'নাউ' সিলেক্ট করে, অবস্থান হিসেবে লিস্ট হতে ঢাকা, বাংলাদেশ সিলেক্ট করে আপডেট বোতামে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবেন এই মূহুর্তে ঢাকা শহরের আকাশের মানচিত্র। চাইলে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ-তারকাগুচ্ছকে সংযোগকারী রেখা, কনস্টেলেশন এর নাম, সীমারেখা এগুলো যোগ-বিয়োগ করতে পারেন।

ম্যাপে উজ্জ্বলতা অনুসারে কোন তারাগুলো দেখা যাবে তাও নির্ধারণ করে দিতে পারেন। সাধারণত বিদ্যুত থাকা অবস্থায় ম্যাগনিচিউড ২.৫ বা এর চেয়ে কম ম্যাগনিচিউড এর তারাগুলো ঢাকার আকাশে দেখা যায়। উল্লেখ্য, যে তারার ম্যাগনিচিউড যত কম, সেটা তত বেশি উজ্জ্বল। বিদ্যুত-বিভ্রাটের সময় ম্যাগনিচিউড ৩.০ সম্পন্ন তারাও খালি চোখে দেখা যায়। আর গ্রামাঞ্চলে গেলে এর চেয়ে অনেক কম উজ্জ্বল তারাও দেখা সম্ভব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.