আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণস্বাক্ষর ক্যাম্পেইনে কিভাবে ঢুকলাম আর কিভাবে বের হইলাম

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গণস্বাক্ষর - এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেবার জন্য জামাল ভাস্কর যেহেতু আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সুতরাং আমার জানামতে এটা তার আইডিয়া। কিছু কিছু মানুষ ডাকলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও কিছু করতে ইচ্ছে করে। ভাস্কর দা এমন একজন মানুষ। এবং যেহেতু তার আগ্রহ ছিল নিজে থেকে যতটুকু সময় দেয়া যায় ততটুকুই একজন দিলে আন্দোলনটা ছড়িয়ে যেতে পারে - ভুত থেকে ভুতে, আমিও বিশ্বাস করলাম। কোন নেতার দরকার নাই, কেবল এক স্তর থেকে আরেক স্তরে, এক এলাকা থেকে আরেক মহল্লায়....ছড়িয়ে যাবে সবার সাধ্যানুযায়ী প্রচেষ্টায়।

আমি নিজের সব কিছু বাচিয়ে কিছু উদ্বৃত্ত সময় দেয়া শুরু করেছি। মুলত আমি যেক্ষেত্রে কন্ট্রিবিউট করতে পারি। যেমন একে বলা, তাকে ধরা - এইসব। অস্বস্ত্বিকর মুহূর্ত হইলো তখন যখন এসব কাজ করতে দেখে কেউ এই কাজের দায়িত্ববান মনে করতে শুরু করে বা নেতা - আরো বিব্রত হতে হয় যখন কেউ মন্তব্যে এমন প্রশংসাসূচক শব্দ ব্যবহার করে যা দায়িত্বকে কাধে নিতে বা বিস্তৃত করার একটা অবলিগেশনের মধ্যে ফেলে দেয়। কিন্তু সেরকম হইলে তো আমি নাই মানে সেরকম হইলে তো আসলে আমার পক্ষে সম্ভব না, আমার চোদ্দকাজ আছে - সব সামলাইয়া আরেকজনের প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্বের প্রদর্শনী সম্ভব না।

এইসব ভাইব্বাই ভাস্কর দা এই কমিউনিকেশনের বিষয়গুলা নিয়ে ব্লগে নতুন মুখের আমদানী করার আইডিয়া দিলেন - যাতে কেউ মনে না করে উনিই সব। মূলত এইধরণের আন্দোলনের সেইখানেই সফলতা - যখন সবাই এইটা নিজের মনে করে, কেউ একটু বেশী নিজের মনে না করে। সেইজন্য আমি যতটুকু করা যায় ততটুকু্ই ইনভলব হইলাম। কেউ রেসপনসিবল বা নেতা মনে কইরা আমার কাছ থেকে বেশী প্রত্যাশা বা সেরূপ আচরণ কামনা করলেও আমার কিছু যায় আসে না। নেতারা ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করে, কর্মীরা তাদের নিজেদের মতই কন্ট্রিবিউট কইরা যায়।

আমিও সেইরকমভাবে যারা যেখানে যেমন ভাবে ইনভলব হইছে তাদের সাথে গিয়া আমিও একটু দাড়াইছি। কারো হয়তো এমন প্রত্যাশা তৈরী হইতে পারে যে আমি আরো বেশী ইনভলব হইতে পারতাম, বা ফাকিবাজি মারছি - ভাবতেই পারে, সেইটাতে আসলে আমার মোতারও কোন আগ্রহ নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গণস্বাক্ষর এর কর্মসূচীতে রুবেল তার ফ্রেন্ডদের নিয়া কাজে ঝাপাইয়া পড়ছে - এতে আমার একটু বেশী খুশী হবার কিছূ নাই। কারণ এইটা আমার কাম সে কইরা দিতেছে এমন না। তার কাম সে করতেছে।

সে বেশী করতেছে দেইখা শ্রদ্ধা থাকতে পারে- আমার মত আরো অনেকে যারা করতে পারে নাই তারা একটু সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকাইতে পারে - ঐপর্যন্তই। কিন্তু যারা করছে তারা সেইজন্য অন্যদের কম-কাজের সমালোচনা করতে পারে না। বা উচিত নয়, কারণ সেইক্ষেত্রে আন্দোলনটার দ্বিধাবিভক্তি শুরু হয়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন গতিতে, সীমায় ইনভলভ হইবে এইটাই ব্লগের অভিজ্ঞতায় ফলপ্রসু মনে হইছে - নইলে ক্রেডিবিলিটি লইয়া কাউরাকাউরি শুরু হয়, অপরিচিত কিছু নিকে পরিচিত ঘটনার বিশ্লেষণ শুরু হয় সাথে দেখা ব্যক্তিগত মানসম্মান নিয়া টানাটানি এবং অতপর কারো বিদায় মার্কা পোস্ট। রুবেলের ফ্রেন্ড অরণ্য আনাম সবাইরে মোটামুটি দৌড়ের উপরে রাখা শুরু করলো।

পুলাডার সবকিছুই ভালো কিন্তু কথাবার্তা একটু রুক্ষ, অনেকের আবার এতে আপত্তি। আমার অবশ্য ভালই মনে হইছে এবং ঐ রুক্ষতা যে আসলে একধরণের প্রত্যাশার প্রাবাল্য থেকে তাও বুঝছি, কিন্তু তারপরেও ভাস্কর দা যখন একটু ওরে কুল হইতে কইতে কইলো আমিও তারে একটু বুঝাইয়া শুনাইয়া বললাম। সাথে শরৎও বুঝাইলো নানা যুক্তি-ফিকির দিয়া। দ্যাখো মিয়া একটু বুইঝা শুইনা কথা কও, এইখানে কেউ বাল ফেলতে আসে নাই, সবাইরে তুমি বুঝাইয়া শুনাইয়া আনো, কাউরে ঝাড়ি দিয়া বা সমালোচনা কইরা আনতে পারবা না। রুবেল তো এমনিতে শান্তশিস্ট (রিসেন্টলী আমার মডু মনে কইরা তার গরম গরম পোস্ট গুলা ছাড়া), সেও জিনিসটা বুঝলো আমি বলার পরে এবং বললো যে অরন্যরে বুঝাইয়া শুনাইয়া একটু ভালভাবে কথা বলার জন্য সে চেষ্টা চালাইবে।

কিন্তু অরন্যের এরপরেও পোস্টটোস্ট এবং কথাবার্তা শুইনা বুঝলাম যে হইবো না, বরঞ্চ এইরকম পুলার থেকে দশ হাত দূরে থাকা ভাল। অরন্যআনামের ব্লগঅনুপযোগি যোগাযোগের ভাষায় বিরক্ত হইয়া রাসেল একটা জ্বালাময়ী মেইলও দিলো অরন্যরে। রাসেলের স্বভাবজাত ভাষায়। কিন্তু লাভ হইলো না। ভাবলাম কাউরে না কইয়া সইরা পড়ি ক্রমশ।

কাজেই কমাইয়া দিলাম ওদের সাথে ক্যাম্পেইনে থাকা - একটু ওভারসি করার মাতবরীটা করাই লাগলো সাংবাদিক সম্মলেনের খরচাপতি, পেপার পত্রিকায় যোগাযোগ করতে গিয়ে। ২১ শে ফেব্রুয়ারী সকালে যখন আমি শহীদ মিনার থেকে তাদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে গেলাম তাদের আরেকটা ফ্রেন্ড মার্শাল (তার সাথেও বইমেলার ক্যাম্পেইনের সময় পরিচয়) আমারে দেইখাই এমন একটা কথা বললো যার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তার সাথে আমার এমন কোন সম্পর্কও নাই যে সে এমন কথা কইতে পারে। সে বললো, গরুডারে বাইন্ধা রাখা গেলো না, ছুইটা চইলাই আসলো! আমি কতক্ষণ থ হইয়া চাইয়া থাকলাম। তারপরে একটু সামলাইয়া কইলাম, তুমি যা কইছো সেইটা ঠিক হয় নাই, আমার পছন্দ হয় নাই, বড়ই কষ্ট হইলাম।

যাউগ্গা বিষয়টা আমি এইখানেই এন্ড কইরা দিলাম, কিন্তু তোমারে জানাইয়াও রাখলাম। এরপরে এই পুলাপানের সাথে তো থাকার প্রশ্নই আসে না। কথা কইতে জানে না, সম্মান দিতে জানে না - ফাও ফাও এদের এইসব ফাউল কথাবার্তা শুইনা তো লাভ নাই। হয়তো বয়সটার ধর্ম, ওরা সবাই আমার চেয়ে কমপক্ষে পনের বছরের ছোটো হইবে, ওদের রক্ত গরম, আন্দোলন করার জন্য রক্ত গরমদেরই দরকার। ওদের যে স্পিরিট তাতে আমার তাল মেলানো সম্ভব না।

আমি এই কথাগুলা রুবেলরে বলছি, অরন্য আনামরে বলছি। এবং বলেছি যে এজন্য তোমাদের সাথে আমি আর কোথাও যেতেও চাই না। এরপরে সংবাদ সম্মেলন হইলো - সেইখানে একটু মনে হইতেছিল আমার সামান্য ইনপুট দরকার, সেইটা দিয়াই আমি অফ হইয়া গেলাম। ভাস্কর দার ভুত থেকে ভুতে ছড়ানো আন্দোলন এরপরে ঠিকই নতুন অনেকে তুলে নিলো। তারা নিজেদের মত ডিজাইন করছে।

ভাস্করদাও এইটা চাইছিলো - যারা কাজ করবে তারা প্লান করবে - এইভাবে ছড়াইয়া যাইবে এক গ্রুপ থেকে বহু গ্রুপে। কিন্তু মূল নীতিটা অক্ষুন্ন রাখতে হবে - কেউ আন্দোলন ধইরা রাখতে পারবে না, বা কোন সভাপতি, নেতাবাচক বিশেষণ এবং সিদ্ধান্তমূলক কমিউনিকেশন আম ব্লগারদের করা যাইবে না। তাইলে সেইটা আমাদের বিগত তিনবছরের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিষ্ফল মনে হইছে। সেইজন্য এই আন্দোলনটার নকশায় এই বিষয়টা খেয়াল রাখা হইছিলো। কিন্তু তারপরে সেই আগের রোগে খাইলো।

যোগাযোগের কামগুলা আমরা করতাম এই জিনিসটা মাথায় রাইখা যে কোন সিদ্ধান্ত যেন না চাপানো হয়, কোন কমিটি যেন না করা হয়। কিন্তু পরের মিটিং এ যারা গেলো তারা প্রথমেই কমিটি করলো। এইটা আমাদেরই দোষ - আইডিয়াটা বিশ্বাসযোগ্য প্রমান্য সহকারে উপস্থাপন করার মত দৃষ্টান্ত আমাদের হাতে তখন কম ছিল। অনেকটা হাইপোথেটিকাল মনে হইতো যাদের বলতাম - কিন্তু এখন আর মনে হয় না। গণস্বাক্ষর আন্দোলনটা যেভাবে ঝিমাইতে ঝিমাইতে নাই হইয়া গেলো সেইটা প্রমাণ করে আমাদের আইডিয়া ঠিক ছিল।

নো কমিটি, নো সিদ্ধান্ত চাপানো। আরো প্রমাণ করে যারা লিড করার দায়িত্ব মাথায় নিছিলো তারা সেইটার ওজন বুঝতে পারে নাই। আমরা এইজন্য কোন লিডিংটাইপের দায়িত্ব নিতে চাইনাই। কর্মী হইতে চাইছি। এত বড় একটা আয়োজনের দায়িত্ব সবার মধ্যে বন্টন কইরা দিতে হয়।

অন্যথায় নেতাদের হইতে হইতো হাতে পায়ে ধরইন্বনা, নিজের রাগ-ক্ষোভ বিসর্জন দিয়া - কিন্তু ব্লগের চরিত্র এমন এইখানে কাউরে এমন ফ্লেক্সিবল বা ত্যাগী হবার শিক্ষা দেয় না। এইখানে সবার সতন্ত্রবোধ এত তীব্র আপনি নেতামী ফলাইছেন তো বরবাদ হইয়া গেছেন। সবাই এতো স্বাধীণতা ভোগ করে যে কমিটি হবার পরে আর গোত্রভূক্ত রাখা গেল না - গণস্বাক্ষর কর্মসূচীটা অটো সমাপ্তি হয়ে গেলো। আর আমার লিখতে বসতে হইলো ইতিহাস। যাউক এরপরের ঘটনা বড় সংক্ষিপ্ত।

আমি মোটামুটি সব ভুলে গেছি। কে রুবেল, কে অরন্য, কে মার্শাল এইসব বালছাল নিয়া আমার ভাবার টাইম নাই। একটা পুলা আমারে গরু কইয়া সম্বোধন করছিলো - খারাপ লাগছিলো, তাতো তারে সেইসময় জানাইয়া আসছি। উপরন্তু সতর্কতামূলকভাবে তার সাথে ভবিষ্যতের সংযোগের সমস্ত সম্ভাবনাও বিচ্ছিন্ন করছি। কিন্তু হঠাৎ কইরা দেখলাম তার প্রতি আক্রোশ থেকে নাকি আমি এখন তার পোস্ট মুইছা জেনারেল কইরা দিছি! জিনিসটা দেইখা বেশ কাতুকুতু লাগলো।

সেইসাথে ঐ পুলাপানের আমার উপরে আক্রোশের বহর দেইখা। তাদের পোস্ট পইড়া আমার সন্দেহ হইতেছে আমাকে সন্দেহ করার পেছনে বোধহয় আমাকে না-পছন্দের অন্য কোন কারণ আছে। কিন্তু যতদূর মনে করতে পারি রুবেল, অরন্য এবং মার্শাল কারো সাথে আমি ব্লগ বা ব্লগের বাইরে কখনও কোনরূপ খারাপ ব্যবহার করি নাই। রাসেল যখন বিরক্ত হয়ে অরন্যকে গালিজাতিয় শব্দ ব্যবহার করে মেইল দিলো তার আগে আমি খুবই ভদ্রলোকের মত কেবল জানিয়েছিলাম যে উক্ত পত্রগ্রুপ থেকে আমার ই-মেইল যেন বাদ দেয়া হয় ইভেন এটাও উল্লেখ করি নাই অনুরোধ পত্রে যে অরন্যের ধমকী-ধামকী মার্কা মেইলগুলো বিরক্তির উদ্রেক করছে। তাইলে বাপ কেন আমারে তাদের এত অপছন্দ হইলো? সামহোয়ারের মডু যে আমি না সেইটা তারা কিন্তু একটু ভালোমত তালাশ করলেই বের করতে পারে - আর নো মডারেশন - নো ব্যানের আমি এখনও অন্যতম একজন সমর্থক, কাউরে ব্যান করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করার তো প্রশ্নই আসে না।

এখন আবার ২১ তারিখ আমাকে হদাহুদি অসম্মান করে মার্শাল যে কথা বললো সেটার প্রতিশোধ হিসাবে তার ব্যানকে মনে করছে। অথচ আমি মার্শালকে সামনাসামনি খারাপ লাগাটা জানিয়েছিলাম- এবং সেখানেই সেটা শেষ হয়েছিল আমার দিকে থেকে। এরপরে কারো সাথে এটা আমার আলাপ করতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না যে পনের বছরের ছোট একটা ছেলে আমাকে গরুর সাথে তুলনা করেছে গণস্বাক্ষর ক্যাম্পেইনে যাবার কারণে অথবা এইকারণ দেখিয়ে মডুকে আমি রিকুইস্ট করি মার্শালকে ব্যান করে দিতে। গণস্বাক্ষর ক্যাম্পেইন নিয়ে এই ছিল আমার ইতিহাস।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.