আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যতিক্রমী ঘুরাঘুরি

বর্ষায় সুন্দরবন
তুমুল বৃষ্টি, আবার খাঁখাঁ রোদ। উপরে ঝকঝকে নীলাকাশ। এখানে রোদ, একটু দূরেই ঘন বরষা। বৃষ্টিস্নাত বনের গাছপালা যেন আরও সবুজ রংয়ে মোড়ানো। এই রকম সুন্দরবন দেখতে চাইলে যেতে হবে বর্ষাতেই।


বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে আমাদের সুন্দরবন। দুশ’ বছর আগে সুন্দরবনের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭শ’ বর্গকিলোমিটার। সংকুচিত হতে হতে বর্তমানে এর প্রকৃত আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াশংই পড়েছে বাংলাদেশে। বাকিটা ভারতে।

এ হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশে অংশের আয়তন প্রায় ৫ হাজার ৮শ’ বর্গকিলোমিটার। ভারতের অংশে প্রায় ৪ হাজার দুশ’ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার একশ’ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও ১ হাজার ৭শ’ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি। পূর্ব ও পশ্চিম, দুটি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে সুন্দরবন। রেঞ্জগুলো হল- চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা।


১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে প্রথম সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার ৪শ’ হেক্টর এলাকা বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ৭৯৮ তম স্থান হিসেবে জায়গা করে নেয়।
এক হিসেব মতে সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ’ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও ত্রিশ হাজারেরও বেশি চিত্রাহরিণের বসবাস। এছাড়া মায়াহরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুঁইসাপ, ভোঁদর, শুশুক, লোনাপানির কুমির, কিং কোবরা (শঙ্খচূড়), বেঙ্গল কোবরা (গোখরো), অজগর ইত্যাদি বন্য প্রাণীর দেখা মেলে এই বনে।

  
রয়েছে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-- সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশি, বলা, হেতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হরগোজা ইত্যাদি।
স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলে সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে বড়সাদা বক, শঙ্খচিল, ভুবনচিল, সিন্ধুঈগল, বাজ, মাস্ক ফিনফুট (প্যারাপাখি), বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, ফিঙে, সুঁইচোরা, কাঠঠোকরা ও বনমোরগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রায় চারশ রকম মাছ পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।


সুন্দরবনের করমজল, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, পক্ষীর চর, ডিমের চর, তিনকোনা, হারবাড়িয়া, কোকিলমোনি প্রভৃতি জায়গাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি।
সুন্দরবন ভ্রমণ একেবারেই বিচ্ছিন্ন একটি ভ্রমণকেন্দ্র এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ভেতরে থাকার জন্য নেই কোনো হোটেল-মোটেল। তাছাড়া এখানে ভ্রমণের জন্য কিছু নিয়মকানুনও আছে। তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বনে ভ্রমণ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।

তাই সুন্দরবন ভ্রমণে অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণসংস্থার সহায়তা নিতে পারেন।
ঈদের মৌসুমে ভ্রমণসংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস দুটি ভ্রমণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রফিকুল ইসলাম নাসিম জানান,  “১২ থেকে ১৪ অগাস্ট এবং ১৫ থেকে ১৭ অগাস্ট দুটি ভ্রমণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ”
খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা, ৩ দিন ২ রাতের ভ্রমণমূল্য ১১ হাজার টাকা। এর মধ্যে আছে নিজস্ব জাহাজে সুন্দরবনে ভ্রমণ, থাকা-খাওয়া, বনে প্রবেশ মূল্য, বনপ্রহরী, গাইড ইত্যাদি।

কেউ চাইলে ঢাকা-খুলনা যাতায়াতের ব্যবস্থাও কর্তৃপক্ষ করে দেবে। যোগাযোগ: ০১৭৭৫১০৫৩৫১।
বর্ণিল সৈকত টেকনাফ
বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সমুদ্র সৈকত টেকনাফ। দেশের অন্যান্য সৈকতগুলো থেকে একেবারেই আলাদা। এখানকার জেলে নৌকাগুলোও অন্যরকম।

এত রংবাহারি জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোনো সমুদ্রসৈকতে দেখা যায় না। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রংয়ের পতাকা দিয়ে জেলেরা নৌকাগুলো সাজিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে থাকে রংতুলির বর্ণিল আঁচড়। সৈকতে কিছুদূর পরপরই আছে ঘন ঝাউবন।
টেকনাফ শহর ছাড়িয়ে দক্ষিণে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই সৈকত।

নির্জনতার সঙ্গে বর্ষা যেন রূপের মাধুর্য বাড়ায়। এই সময় পর্যটকের আনাগোনাও কম থাকে। আছে সৈকত লাগোয়া জেলেদের বেশ কিছু বসতি। বর্ষায় পূর্ণিমার জোয়ারে বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ টেকনাফ সৈকতে একেবারে তীরে আছড়ে পড়ে।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের মূল প্রবেশ পথ থেকে হাতের বাঁ দিকে চলে গেলে শাহ পরীর দ্বীপের কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়।

এছাড়া হাতের ডান দিকে চলে গেলে যাওয়া যাবে হাজামপাড়া, শিলখালী কিংবা শামলাপুর সৈকতের দিকে। উত্তর দিকে সৈকতের পাশ দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে তৈঙ্গা পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের এত সুন্দর বন্ধুত্ব কেবল এখানেই দেখা সম্ভব।  
সতর্কতা :  টেকনাফের কোনো সমুদ্র সৈকতেই নেই লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা। তাই জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোনো চিহ্নও থাকে না।

  সমুদ্র স্নানে নামলে আগে থেকেই নিজ দ্বায়িত্বে জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন। কোনো অবস্থাতেই ভাটার সময় বা একাকী সমুদ্রে নামবেন না। জোয়ার-ভাটার সময় জানার জন্য স্থানীয় জেলেদের সহায়তা নিতে পারেন।  
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যায় সেন্টমার্টিন সার্ভিস। এছাড়া সিলভার লাইন পরিবহনের এসি বাস যায়।

ভাড়া ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে শ্যামলি, এস আলম, সৌদিয়া, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে সাধারণত এ পথের বাসগুলো ছাড়ে। ভাড়া ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
থাকবেন যেথায় : সৈকত লাগোয়া রিসোর্টে থাকা যায়।

এখানে আছে বেশ সাজানো গোছানো ‘সেন্ট্রাল রিসোর্ট লিমিটেড’।  রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার ৩শ’ টাকা। যোগাযোগ : ০১৭১১৫৩৪২০৫।
ছুটিতে হাওর
ঈদের আনন্দ নিয়ে বর্ষা উপভোগ করতে যেতে পারেন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে। বর্ষা মৌসুমে এসব হাওরে যেন প্রাণ ফিরে আসে।

শীতে শুকিয়ে যাওয়া হাওরগুলো বৃষ্টির পানিতে কানায় কানায় ভরে যায়। কোথাও কোথাও এ সময়ে সমুদ্রের মতো কুল-কিনারহীন মনে হয়।
নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি ও কলমাকান্দা উপজেলা জুড়ে কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুকনো মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা।


মোহনগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় বাবলিকোনা গিয়ে এখানকার ডিঙ্গাপোতা হাওরে প্রবেশ করা যায়। ইঞ্জিন নৌকায় হাওরের বিভিন্ন গ্রামে যেতে পারেন। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলি একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। নেত্রকোনা থেকে ইঞ্জিনবোটে ৩ ঘন্টায় যাওয়া যাবে হাওরের মাঝখানে ছোট্ট গাগলাজোড় বাজারে। সারাদিন এ বাজারে মেলে হাওরের নানান মাছ।

গাগলাজোড় বাজারের কাছে ছোট্ট গ্রাম জালালপুরে আছে এ অঞ্চলের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব উকিল মুন্সির বসতভিটা।
এছাড়াও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে বর্ষা মৌসুমে লঞ্চে চড়ে যেতে পারেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায়। বর্ষাকালে এ পথের লঞ্চগুলো হাওরের পথ ধরেই চলাচল করে থাকে।   
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জে সম্প্রতি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়েছে। হাওর এক্সপ্রেস নামে এ ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর থেকে রাত ১১টা ৫০মিনিটে এবং মোহনগঞ্জ থেকে রাত ৮টা ৩০মিনিটে ছাড়ে।


এছাড়া ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সরাসরি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ যায় বিআরটিসি, নেত্র পরিবহন, ইকোনো পরিবহন, রফরফ ইত্যাদি বাস। বিআরটিসির বাস ছাড়ে কমলাপুর থেকে। আর অন্য বাসগুলো ছাড়ে মহাখালী থেকে। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।
থাকার জায়গা : হাওর ভ্রমণে গেলে অবস্থান করতে হবে মোহনগঞ্জ থানা শহরে।

এখানে থাকার জন্য সাধারণ মানের দু-একটি হোটেল আছে। যেমন- স্টেশন রোডে হোটেল শাপলা, হোটেল পাঠান ইত্যাদি।
তবে ভালোভাবে হাওর উপভোগ করতে চাইলে কয়েকজন মিলে মোহনগঞ্জ থেকে ভালো মানের একটি ইঞ্জিননৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন। রাতে নিরাপদ কোনো স্থানে থামিয়ে নৌকাতেই অবস্থান করতে পারেন।
ছবি : লেখক


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.