আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় এসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সদম্ভে বলেছিলেন যে, উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। হাজার মাইল ব্যবধানের দুই অংশ মিলে যে রাষ্ট্র, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেও এই মুসলমানদের মধ্যে ছিল স্বাভাবিক বৈচিত্র, পাকিস্তানের মুসলমান নানা ভাষা ও জাতিসত্তার মানুষ, ধর্মের নামে তো জাতি-বাস্তবতা ভুলে থাকা কিংবা মুছে দেওয়ার কোনো জো ছিল না। কিন্তু পাকিস্তান জাতিসমূহের সমন্বিত রাষ্ট্র হওয়ার বদলে পা বাড়ালো জাতীয় অধিকার পদদলনের দিকে। ফলে শুরু থেকেই পাকিস্তান হয়ে উঠলো পীড়নমূলক রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের মার্চ ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারেরর শপথ অনুষ্ঠানে "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

/ চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥" গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। ২৫শে মার্চ মাঝরাতে ইয়াহিয়া খান তার রক্তলোলুপ সাঁজোয়া বাহিনীকে বাংলাদেশের নিরস্থ মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যে নরহত্যাযজ্ঞের শুরু করেন তা প্রতিরোধ করবার আহ্বান জানিয়ে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রাত দেড়টার দিকে সেনাবাহিনী মুজিবকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ( যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ) "এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চেঙ্গিস খানকেও হার মানাবে", ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে বললেন এক পশ্চিমা কুটনীতিবিদ।

“এক সকালে পাকি হানাদারবাহিনীর সহযোগী দালালরা প্রায় ১৫শ’ পুরুষ লোককে বরইতলা (কিশোরগঞ্জ) গ্রামের রেল লাইনের ধারে জড়ো করে। ...... উপস্থিত লোকদের একজনের বাহু অন্যের বাহুর সঙ্গে বেঁধে লাইনে দাড় করিয়ে দেয়া হয়। তারপর হুকুম দেয়া হয় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করার। কিন্তু এত লোককে এভাবে হত্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে তাদেরকে রেল লাইনের উপর বসিয়ে ত্রিশ কেশি ওজনের বিশেষ ধরনের শাবলের আঘাতে একে একে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা হয় তাঁদের প্রত্যেকের মাথা। এরপর মৃতদের উপর ব্রাশ ফায়ার করা হয়।

এত কিছুর পরও যাঁদের দেহ একটু আধটু নড়াচাড়া করছিল তাঁদেরকে বেয়নেট চার্জ করা হয়। এদিন বরইতলায় পাকি হানাদারদের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের নির্মম শিকারে পরিণত হয় ৩৬৬ জন গ্রামবাসী, মারাত্বক আহত হয় আরও ১৩৪ জন। ” ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগের আগে বাংলার মাটি রক্তে রাঙিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিলি্লতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের নেতা। বাংলাদেশ প্রশ্নে রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে নয়, তাঁর সঙ্গেই আলোচনা করা উচিত।

শ্রীমতী গান্ধী এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচুর খবর প্রকাশ পেয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর দ্য গার্ডিয়ানে সংবাদ প্রকাশিত হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা মুক্ত বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেছেন। কোটি কোটি মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে শারিরীক-মানসিক অত্যাচার, চার লক্ষ নারীকে হতে হয়েছে ধর্ষণের শিকার।

লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, স্থাপণা ধ্বংস হয়েছে অগণিত। এসবের সাক্ষী বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ। “৭১-এর সকালে তেজগাঁওয়ে নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক শিশু বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়। রাস্তায় টহলরত পাকিবাহিনী এই স্লোগান শুনে সাথে সাথে ছেলেটির বাসার মধ্যে ঢুকে যায় এবং পতাকার লাঠিটি তার মাথার তালুতে সজোরে সেঁধিয়ে দেয়। এরপর বাসায় অবস্থানরত ছেলেটির বাবা ও দাদাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাদের সামনেই মা ও দাদীকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।

ধর্ষণ শেষে হতভাগ্য দাদা ও বাবাকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে রেখে চলে যায়। ” (যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ, ডা. এম এ হাসান, পৃষ্ঠা ৯) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসব্যাপী গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটিয়ে পরিসমাপ্ত হয় কাপুরুষতা ও অমানবিকতার চরম নৃশংস ও রোমহর্ষক, কলঙ্কময় ও ন্যাক্কারজনক, অসম্মান ও অপমানকর, মসীলিপ্ত ও কুখ্যাত অধ্যায়। এই দিন বর্বর, পাশবিক ও নৃশংস পাকিস্তান সেনাবাহিনী—উর্দি-পরিহিত ৯৬,০০০ পশু—আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।