আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিকশিত হোক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন

মো. মামুনুর রশীদ বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ । শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমন্ডলে অনেকটাই পিছিয়ে। শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া শুধু কৃষির উপর নির্ভর করলে কোন দেশের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প কাঠামো অনুন্নত ও দূর্বল। ব্রিটিশ আমলে এদেশে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি বরং তারা ঐতিহ্যময় কিছু শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছিল।

তারপর পাকিস্তানীদের বৈরী আচরণে এদেশে বাঙালী উদ্যোক্তরা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোন বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে পারিনি । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শিল্পোন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তার সফলতা এসেছে খুবই ক্ষীণ। বর্তমানে শিল্পোন্নয়নের উপর খুব বেশী নজর দেয়া হচ্ছে যা শিল্পখাত থেকে অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশী অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন হচ্ছে। কাঠামোগতভাবে শিল্পায়নের দিক থেকে বাংলাদেশের শিল্পখাত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাঝেই সীমাাবদ্ধ। বাংলাদেশের শিল্প আইন অনুসারে যে শিল্প কারখানা গুলোতে ২০ জন বা তার কম সংখ্যক শ্রমিক কাজ করছে সেসব কারখানাগুলোতে ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ চলে।

আর এসব কারখানা মালিকরা স্বল্প পুঁজি আর সমবায়ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম। মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্পগুলো ক্ষুদ্রায়তন আর বৃহাদায়তন শিল্পের মাঝামাঝি অবস্থান করে। তবে এ ধরনের শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৃহদায়তন শিল্পের মতো আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কেীশল অবলম্বন করা হচ্ছে বেশী। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রেশম শিল্প, চামড়া শিল্প, বিড়ি শিল্প, সাবান , লবণ , পাট শিল্প। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু কৃষি নির্ভর সেহেতু দেশের ৮০% - ৮৫% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের কৃষি মেীসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন। কৃষকদের এজন্য বছরের অধিকাংশ সময় বেকার থাকতে হয় । মেীসুমি বেকারত্ব ছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিতে ছদ্মবেকারত্ব প্রকট রুপ ধারণ করছে। কৃষিখাতের এসব বাড়তি বেকার লোকদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে কাজ করিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত দেশ।

বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৬৪ লাখ (সূত্র আদমশুমারি ২০১২)। এ বৃহৎ জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান করা মোটেও সম্ভব হচ্ছেনা। দেশে বেকার সংখ্যা ৫ কোটির উপরে। এ বিপুল বেকার জনশক্তিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ করে বেকারত্বের গ্লানি কিছুটা হলেও মোছা সম্ভব। কেননা তারা এসব শিল্পের সাথে কাজ করে বিপুল পরিমালণ টাকা রোজগার করার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালি করবে।

তবে এ বিপুল জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মহিলা। মহিলা কর্মশক্তির অধিকাংশই বেকার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের ভুমিকা খুব বেশী নয়। অশিক্ষা আর সামাজিক প্রথা এর জন্য দায়ী। কিন্তু বর্তমানে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়েছে। ফলে মেয়েরা শিক্ষিতের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।

তাই মহিলা দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু দেশ কৃষি নির্ভর সেহেতু যারা কৃষি কাজে নিজেদের সবসময় নিয়োজিত রেখেছে তাদেরকে অবসর সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাথে কাজ করে অর্থাপার্জন করার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদনের জন্য দরকার হয় কাচামালের, সুতরাং আমাদের কৃষকরা যেহেতু কাচাামাল উৎপাদন করছে সেহেতু কাচামালের সুষ্ঠ ব্যবহার হলো এবং দেশের অর্থ দেশে রয়ে যাবে তাহলে সম্ভব দেশের অর্থনীতিকে আরো সচ্ছল করা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদনের পর সেটা বাজারজাত এবং রপ্তানি করার সঠিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আর কোন আমদানি পণ্যের দামোডাল থাকবে না। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় যোগান কম তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে ভোগ্য পণ্যের যোগান বাড়ানো সম্ভব। এতে দেশের অভ্যন্তরের মুদ্রাস্ফিতি অনেকটাই কমে আসবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বসবাস দু’ধরনের প্রথমত শহুরে দ্বিতীয়ত গ্রামীণ। আর আমাদের অর্থনীতি শহুরে শিল্পের উপর নির্ভর করে বেশী মাত্রায়।

কিন্তু ক্ষুদ্র ও ম্ঝাারি শিল্পের প্রতিষ্ঠান গ্রামে করলে গ্রামীন জনশক্তি দক্ষ হবে এবং গ্রামের উন্নয়ন ঘটবে। এইসব প্রতিষ্ঠান গ্রামে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে আর তার মাধ্যমে গ্রাম থেকে উৎপাদিত সামগ্রী সরবরাহ করা যাবে। যার মাধ্যমে দেশের শিল্পোন্নয়ন আরো বৃদ্ধি পাবে জাতীয় আয়ে আরো বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এবং জাতীয় আয় ও অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুব দ্রুত সহায়তা প্রদানে সক্ষম। কেননা শিল্প নির্ভর অর্থনীতি সবসময় স্থিতিশীল থাকে কোন ধরণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করেনা।

সুতরাং দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল আর অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা। এমনকি দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের বাহিরে রপ্তানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠবে। দেশের প্রয়োজনীয় দ্রবাদি এবং মুলধন সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদিত হবে। বাংলাদেশে প্রতি বছরে আমদানি রপÍানির তুলনায় ১২ গুন বেশী থাকে ফলে প্িরতবছর লেনদেনের ভারসাম্য থাকে প্রতিকূলে। সুতরাং কৃষিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও দেশে শিল্পখাত হলো একটি সম্ভাবনাময়ী খাত।

শিল্পখাত দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালি করতে বিরাট ভুমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের অতীতের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় এদেশে একসময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিপ্লব ঘটেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পরিবর্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নতি সাধিত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূুমিকা পালন করছে। দেশের অর্থনীতিকে আরো বেশী শক্তিশালি ও মজবুত করতে এ শিল্পের ভুমিকা অনন্য।

এ খাতটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সাধারণ মানুষ কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখানে শ্রম ও যোগান দিতে খুবই উৎসাহী। কারণ কম বিনিয়োগ , কম শ্রমিক ও শ্রম দিয়ে বেশী ফল পাওয়া যায় । যার কারণে সাধারণ মানুষ এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দিকে আস্তে আস্তে ঝুঁকে পড়ছে। কারণ এটি একটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময়ী খাত।

এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব। তবে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অনেক সমস্যা রয়েছে। এত সমস্যার মাঝ দিয়ে হলেও সম্ভাবনার মাত্রা বেশী। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব। উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন, পর্যাপ্ত মুলধন সরবরাহ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা , কাচাঁমালের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিতকরণ, বৃহদায়তন শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতার অবসান, কারিগরদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা, উৎপন্ন দ্রব্যের মান নির্ধারণ, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, দালালি প্রথার অবসান, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রপ্তানি উন্নয়ন, দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করা সম্ভব।

সধসঁহযরংঃ৩৯@ুধযড়ড়.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.