আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চশমা ভূত এবং ডিকশনারির গল্প

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়| বেঁচে থাকলে বদলায়| কারণে অকারণে বদলায়........ ক্লাস এইটে থাকতে আমার একবার শখ হল ইংরেজি ডিকশনারী মুখস্থ করে ফেলব|শখটা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল হুমায়ুন আহমেদ| তাঁর দুই দুয়ারী উপন্যাসে মি.জুন নামের একটা চরিত্র ছিল, যে চরিত্রটি ডিকশনারী মুখস্থ করে ফেলেছিল মাত্র কয়েকদিনে| আমি আবার বায়ুগ্রস্থ লোক| একবার মাথায় কোন খেয়াল চাপলে সেটা করতে জান দিয়ে দিই| সেদিন থেকে নাওয়া খাওয়া মাথায় তুলে পড়ে গেলাম অক্সফোর্ড ডিকশনারীর পকেট এডিশন| ক্লাসের বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম, শেষ বিকেলের ফুরিয়ে আসা রোদে চোখ কুঁচকে পড়তাম, ভাত খাওয়ার সময়ও পড়তাম| আব্বু দেখে প্রচন্ড বকা দিত| সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি যে আমি ডিকশনারী মুখস্থ করার মতো এতটা অপ্রয়োজনীয় কাজে মগজ খাটাব| যে স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তাম, তিনিও বিষয়টা জেনে আমাকে নিরুৎসাহিত করেন| বলেন যে, ডিকশনারীতে যে সকল শব্দ আছে তার বেশিরভাগই ইউজলেস| তার কথা আসলেই ঠিক ছিল, এতদিনে সেটা ভালই বুঝতে পেরেছি| কিন্তু সেই কৈশোরের সময়টায় কে আমাকে থামায়? এখন যৌবন যার, ডিকশনারী মুখস্থ করার সময় তার| এই কাজটায় পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল এবং অনেক সহযোগিতা করেছিল আমার বাল্যবন্ধু ফাহাদ| দীর্ঘ দুই মাস পর, আমি ঘোষণা দিলাম যে আমি ডিকশনারী মুখস্থ করে ফেলেছি এবং যে কাউকে পরীক্ষা নেওয়ার উন্মুক্ত আমন্ত্রণ জানালাম| কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছিল, আমি বলতে পারব না আজ| প্রচন্ড ইচ্ছা আর দুর্দান্ত পরিশ্রম, এ দু'টো যে কত বড় শক্তি, তা এখানেও প্রমাণিত| তখন আমি যাকে সামনে পেতাম, তাকেই বলতাম যে আমাকে ডিকশনারী থেকে কোন শব্দ জিজ্ঞেস করতে| সব যে পারতাম তা নয়, তবে দশটা জিজ্ঞেস করলে আটটা-ন'টাই পারতাম| আব্বুও একদিন পরীক্ষা করল| খুশী হওয়ার বদলে সে প্রচন্ড রেগে গেল| আমার এই পরিশ্রমটুকু ক্লাসের বইয়ে না লাগানোর আফসোসে সে চরম হতাশ, দুঃখী| আমার এক বন্ধু ছিল সৌরভ| সে একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছিল| সৌরভ একদিন ডিকশনারী হাতে আমাকে ধরল| "বলো তো বাপ্পী, Oracular অর্থ কি?" "দু' অর্থ বিশিষ্ট, গোপন অর্থপূর্ণ|" "Menshevik মানে কি?" "রাশিয়ার নরমপন্থী সমাজতন্ত্রী|" "Proliferate অর্থ কি?" "দ্রুত বর্ধিত হওয়া|" "Vindicative মানে কি?" "সমর্থক|" "Mackintosh মানে কি?" "উমমম....মনে পড়ছে না|" "ধুর, এত সহজটাই পারো না| ম্যাকিনটশ মানে চশমা|" বলেই সে হা হা করে হাসতে লাগল| আসলে Mackintosh মানে হল-বর্ষাতি| যেটাকে আমরা রেইনকোট বলে থাকি| সেই সময়টাতে আমি নতুন নতুন চশমা নিয়েছি বলেই হয়তো সে এই ধরণের একটা ফান করেছিল| কিন্তু আমি নিতান্তই বোকাসোকা মানুষ ছিলাম| ডিকশনারী না দেখেই বিশ্বাস করে নিলাম যে ম্যাকিনটশ মানে চশমা| এই বিশ্বাসটা যে কি পরিমাণ কাল হল আমার জন্য, সেটা পরে বুঝলাম| পাঁচ বছর ধরে চর্চা নেই, তাই ডিকশনারী যা মুখস্থ করেছিলাম, তা যে উধাও হয়ে যাবে মগজ থেকে সেটাই স্বাভাবিক| কিন্তু সমস্যা হল, আজ পর্যন্ত আমি মাথায় ঢুকাতে পারলাম না যে Mackintosh মানে বর্ষাতি, Spectacles মানে চশমা| আজও একজনকে ইংরেজি পড়াতে গিয়ে এই ভুলটা করলাম| ভূত-প্রেত, ঝার-ফুঁক, তুক-তাক, ম্যালেডিকশন-বেনেডিকশন, সুপারস্টিশনস কোন অন্ধবিশ্বাসই মগজে আসন গাঁড়তে পারলনা, কিন্তু এটা ঠিক ঠিক গেঁড়ে বসল| কি অদ্ভূত! এই লেখাটা লেখার একমাত্র উদ্দেশ্য, এতবড় লেখা লেখার ফলে যদি মাথা থেকে চশমাভূতটা নামে, তাহলেই বাঁচি! চশমা ভূত, তুমি দূরবর্তী স্থানে গমন করিয়া মৃত্যুবরণ করো| শেয়ার করুনঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।