আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চশমা

ধরি না মাছ, ছুঁই না পানি, জানি শুধু বকবকানি ! কিছু মানুষ আছে, যাদের কাজই হল মাতব্বরি ফলানো । যা জানে, তাতে তো বটেই । যা জানে না, তাতে আরো কিছু বেশীই, ঘটনাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ! মামার বিয়ে হল কয়েকদিন আগে । বিয়ের দিন নানুর বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি, বাবা, ভাইয়া, একটা নানুসহ আরো কয়েকজন এবং সাথে ওই মাতব্বরি ফলানো খালু । ভাইয়া অফথালমিক রিফ্র্যাকশনিস্ট ।

নানুটার তেমন পড়ালেখা জানা নেই, তবে খুব্বি ভাল এবং সরল-সোজা মানুষ । নানু ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসলেন । কাঁধে হাত রেখে বললেন, "আচ্ছা নাতি, যদি কেউ চোখে কম দেখে, তাইলে তো চশমা দাও তোমরা । কিন্তু কেউ যদি বেশী দেখে, তাইলে কি দাও?" হেয়ালি স্বভাব বলে, এটা শুনেই আমি ফিক করে হেসে দিয়েছি । ভাইয়াও মোটামুটি হা করে আছে ।

আমার পাশে বসা খালু তখন ব্যাখ্যা করলেন, "শাকিল, ধরো যা উনি দেখতে চাইতেছেন, তা একটু বেশী দেখেন আর কি । " আমি বললাম, "এইটা কি হয় নাকি?" ছোট থেকে দেখছি, নানুর বাড়িতে আমার কথা কেউ আমলে নেয় না । ভাইয়ার একচেটিয়া আধিপত্য । দাদুর বাড়িতে আমাকে কিছুটা গুণে, তবে তাতেও ভাইয়ার দৌড়ই বেশী । ছোটবেলায় ভাবতাম, আমি কালো বলেই এমন করে ।

ভাইয়া তো ফর্সা আর সুন্দর । এখন ভাবি, ওসব কিছু না হয়তো । ভাইয়া আমার ৫ বছরের বড় বলেই হয়তো এমন । তো খালুজান আমার কথার কাউন্টার দিয়েছেন এভাবে, "চোখে কম দেখা গেলে, বেশী দেখা যাবে না ?" পরে ভাইয়া বুঝিয়ে বলল যে, এমন কিছুই হয়না । আর আদতে নানুর চশমার লেন্সটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নি ।

তো খালুজানের ওকালতি কি প্রমাণ করলো ! আজ ভাইয়া চশমা পাঠিয়েছে আমার জন্য । বেশী দূরের কিছু দেখি না । এটা হয়তো স্কুলের শেষ বা কলেজের শুরুর দিক থেকে । সুবোধ ছিলাম সেসময় । ক্লাসের প্রথম দিকের সারিতে বসতাম, লেকচার তুলতে বেগ পেতে হত না ।

এটা ‘’সমস্যা’’ হয়ে দাঁড়ায় মেডিকেলে ঢোকার পর থেকে, পেছনে বসতে শিখেছি, লেকচার দেখি না চোখে । ব্যাপারটা এমন না যে আমি লেকচার তুলতে দিওয়ানা । বরং, ম্যাডামরা ক্লাসের মাঝে দাঁড় করিয়ে পড়া জিজ্ঞেস করত । চোখে তো দেখিই না কি লেখা আছে স্লাইডে, কি উত্তর দেওয়া যায় তখন ! এটাই মদ্দা কথা ! ভাইয়ার কাছে যারাই গিয়েছে, মোটামুটি চশমা নিয়েই ফিরেছে । বাবার ধারণা, চশমা দেওয়া ছাড়া আর কোন ট্রীটম্যান্ট শিখেনি এই ছেলে ! এ নিয়ে বাবা খুব মর্মাহত ! যাই হোক, চশমা পড়েই দেখি আজ থেকে . . আমার ধারণা, চূড়ান্ত অদ্ভূত দেখাবে আমাকে ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।